প্রথমে ২০১৬ রিও অলিম্পিকে এথলেটদের শরীরে লাল গোলাকার দাগ পরবর্তীতে অনলাইন নিউজে “হিজামা” শব্দটি- ফেসবুকে ঘুরপাক খাচ্ছে সারাদিন ধরেই। কৌতুহলী হয়ে ইন্টারনেটের কল্যাণে অনেকেই ইতিমধ্যে জেনেও ফেলেছে পেপেরোনির মতো দাগগুলো আসলে “কাপিং” নামক ‘অলটারনেটিভ’ চিকিৎসা পদ্ধতির চিহ্ন। আর যথারীতি কেউ কেউ বাড়িয়ে দিচ্ছে অনলাইন নিউজের হিট সংখ্যা।
কাপিং হচ্ছে এক ধরনের প্রাচীন চিকিৎসা পদ্ধতি। প্রাচীন মিশরীয় চিকিৎসা সংক্রান্ত বই Ebers Papyrus থেকে সর্বপ্রথম কাপিং এর ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৫০ অব্দে মিশরীয়রা কাপিং পদ্ধতি ব্যবহার করতো। অনেকেই কাপিংকে চীনের চিকিৎসা পদ্ধতি আকুপাংচারের সাথে মিশিয়ে ফেলছেন, যা আসলে কিন্তু একই না। আকুপাংচার পদ্ধতিতে সূঁচ ফুটানো হলেও কাপিং পদ্ধতিতে গরম কাপের মাধ্যমে রক্ত শুষে নেয়া হয়। এই পদ্ধতিতে বিশেষভাবে তৈরি কাপ প্রথমে আগুনে গরম করা হয়। সাধারণত এই কাপগুলো বাঁশ কিংবা কাঁচের তৈরি হয়ে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে অবশ্য মাটির তৈরি কাপও ব্যবহার করা হয়। কাপের ভিতরের আগুন নিভে যাওয়ার পরপরই বায়ুশূন্য কাপ ত্বকের উপর বসিয়ে দেয়া হয়। যা শরীর থেকে রক্ত শুষে নেয়। কোনো স্থানে কাপ সাধারণত পাঁচ থেকে দশ মিনিটের বেশি রাখা হয় না। দাবী করা হচ্ছে, উষ্ণ কাপ রক্ত শুষে নিয়ে রক্ত প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়। এতে কায়িক পরিশ্রমের কারণে উদ্ভব মাংসপেশির ব্যথা উপশম হয়। আর যে গোলাকার লালচে দাগের কারণে আপনি এই লিখা পড়তে আগ্রহী হয়েছেন, সেগুলোর কারণ নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে গিয়েছেন! হ্যাঁ, এই কাপগুলো রক্ত শুষে নেয়ার সময় ত্বকে দাগ রেখে যায়।
আধুনিক কাপিং পদ্ধতিতে রাবার পাম্পসম্বলিত মেডিকেল-গ্রেড সিলিকন কাপ ব্যবহার করা হচ্ছে যেন সহজেই কাপের ভিতর বায়ুশূন্য করা যায়।
২০১৬ রিও অলিম্পিকের আমেরিকান দলের বেশ কিছু ক্রীড়াবিদ স্বীকার করেছেন যে কাপিং পদ্ধতি ব্যায়ামের পর তাদের মাসল পেইন দূর করতে কাজ করছে। বারবার কাপের জায়গা পরিবর্তন করায় এতে মাংসপেশিতে মালিশের মত আরামদায়ক অনুভূতি হয়। এর আগেও ভিক্টোরিয়া বেকহাম, জেনিফার এনিস্টনের মতো সেলিব্রেটিরা এই পদ্ধতির কাছে ধরণা দিয়েছিলেন।
অনেকেই বলতে পারেন হাজার বছর ধরে চলে আসছে কাপিং পদ্ধতি, কোনো সুফল তো অবশ্যই আছে। তাহলে আপনাদের আশাভঙ্গ করা ছাড়া আর কিছুই বলার নেই। বিজ্ঞানীরা কাপিং পদ্ধতিকে “অপবিজ্ঞান” থেকে শুরু করে “হাস্যকর” বলে ব্যাখ্যা করেছেন। এখন পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণা কাপিংকে বৈজ্ঞানিক এবং যুক্তিসংগত বলে প্রমাণ করতে পারেনি। ইউনিভার্সিটি কলেজ অব লন্ডনের ফার্মাকোলজির প্রফেসর ডেভিড কোলকুহন পরিষ্কার ভাবে বলেছেন “এই পদ্ধতির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।”
তাহলে কেন কাপিং নিয়ে এত হৈচৈ? কেনই বা লোকজন দাবী করছেন কাপিং আদতে খুব ভালো কাজ করে? এখন পর্যন্ত যে উত্তরটি পাওয়া গেছে তা হল, প্লাসিবো ইফেক্ট। Placebo মানে হচ্ছে এমন এক পদার্থ যার কোনো রোগ প্রতিকার ক্ষমতা নেই। সেখান থেকেই, placebo effect এর মানে হচ্ছে – একজন রোগীকে যদি জানানো হয় যে তাকে শক্তিশালী কোনো চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে, রোগী অনেকটাই সুস্থ অনুভব করে। কাপিং এর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে।
দিন শেষে সম্পূর্ণ ব্যাপারটাই হাজার বছর ধরে চলে আসা চোখ বন্ধ করে বিশ্বাসের দোহাই!
অসম্পূর্ন রয়ে গেল। প্লাসিবো ইফেক্ট সম্পর্কে এখানে ভাল একটা অংশ থাকলে ভাল হত।
প্লাসিবো ইফেক্ট নিয়ে লিখতে গেলে এই পোস্টের মূল আলোচনা অর্থাৎ কাপিং পদ্ধতি থেকে সরে যাওয়ার সুযোগ বেশি। তবে মূল ধারণা এখানেই দেয়া আছে। বিস্তারিত পরে ভিন্ন পোস্টে লিখবো সময় সুযোগ করে।
কোন কিছু সম্পর্কে ভালো করে না জেনেই মনে যা আসে তাই লিখে দেওয়ার অপর নাম কি বিজ্ঞান? যদি তাই হয় তাহলে আপনাদের মতো বিজ্ঞানমনস্কদের নমস্কার। আশাকরি পরবর্তীতে কিছু লেখার আগে ঐ বিষয়ে ভালো করে জেনে বুঝে তারপর লিখবেন…
পোস্টের কোন অংশে জানার ভুল আছে তা উল্লেখ করে দিবেন কি? কিংবা আপনার যা জানা আছে, তাই নিয়ে নাহয় লিখুন। অপেক্ষায় থাকলাম, ধন্যবাদ।
কষ্ট করে এই লেখাটা পড়বেন। আর এর প্রতিউত্তর আশা করছি। আমিও আপনাদের এই লেখাটা আমার এক কাপিংএর উকালতি করা ব্যাক্তিকে পাঠিয়েছিলাম। উনি বিপরীতে এই লিঙ্কটি দেন। আমার আর কিছু বলার ছিল না।
এই লিংকে তো কাপিং এর পক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়া নাই। বলেছে, এটার কনট্রোল বা ডাবল ব্লাইন্ড এক্সপেরিমেন্ট করা সম্ভব না। আর এরা নিজেরাই আকুপাংচারিস্ট।
একজন একটা লিংক ধরিয়ে দিলেই তো হবে না, লিংকে আসলে কী আছে সেটাও দেখতে হবে। পোস্টে যে জার্নালের উদ্ধৃতি দেয়া জয়েছে, সেই জার্নালেরই শেষ কথায় বলা হয়েছে কোনো ডেফিনিট উত্তর তারা দিতে সক্ষম নয়। আরো বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন। জার্নালটি ২০১৫র আর এখন ২০১৯এও বিস্তারিত বা সংশ্লিষ্ট কোনো ফলো-আপ রিসার্চ নেই। দ্বিতীয়ত, কাপিংকে প্লাসিবো বলছে না কারণ ব্যক্তি “ব্লাইন্ডেড” হয় না। মূলতঃ একারণেই তো কাপিংকে বিনা দ্বিধায় প্লাসিবো বলা যায়। ব্যক্তি নিজ চোখে দেখছে “খারাপ রক্ত” বের হয়ে যাচ্ছে। শেষ এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, পুরো নিবন্ধে ঘিরে ফিরে বলছে “এতটা দেশে ” “অতটা বছর ধরে” কাপিং হচ্ছে। *জ্ঞান কোনো গণতন্ত্র নয়* এমনকি… আরো পড়ুন