এই লেখাটার মূল উদ্দেশ্য হল বিকিরণ বা বিকিরিত শক্তি যে চাপ প্রয়োগ করতে পারে সেটা সহজে বোঝানো, বিকিরণকে কেন স্থির তরঙ্গ দিয়ে বর্ণনা করা যায় এবং তার সাথে তাপগতিবিদ্যা ব্যবহার করে কিভাবে বিকিরণ-চাপের মান বের করা যায় সেটা দেখানো। সবশেষে বিকিরণ চাপের মান ব্যবহার করে স্টিফেনের বিখ্যাত বিকিরণ সূত্রের প্রমাণ।
মূল অংশে যাওয়ার আগে কিছু ছোট ছোট বিষয় সম্পর্কে ধারণা দিয়ে রাখি। তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র বলে যে কোন বস্তুকে যদি তাপ দেয়া হয় তাহলে সেই তাপ দু’টি অংশে ভাগ হয়ে যেতে পারে। তাপের কিছু অংশ ব্যবহার করে বস্তুটি কাজ করতে পারে- বাকি অংশটুকু বস্তুর মাঝে অন্তর্নিহিত শক্তি হিসেবে জমা থাকে। বস্তুটিকে যদি কোন কাজ করতে দেয়া না হয় তাহলে তাপের পুরো অংশটুকুই তখন তার ভেতরে গিয়ে জমা হয়-অর্থাৎ বস্তুর অন্তর্নিহিত শক্তি বেড়ে যায়। কিন্তু তাই বলে আবার উল্টাটা হয় না- অর্থাৎ পুরো তাপকে বস্তু কাজে পরিণত করতে পারে না (তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র)। সুতরাং যদি বস্তুটি তাপ ব্যবহার করে তার কিছু অংশ কাজে পরিণত করে তাহলে অবশ্যই সাথে সাথে তার ভেতরকার অন্তর্নিহিত শক্তিও বেড়ে যাবে। যদি ΔQ পরিমাণ তাপ দেয়ার ফলে বস্তুটি ΔW পরিমাণ কাজ করে এবং তার অন্তর্নিহিত শক্তি ΔU পরিমাণ বেড়ে যায় তাহলে তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র মতে
ΔQ = ΔU + ΔW
বস্তুটি অনেক ভাবেই এই কাজ করতে পারে- তার মাঝে আয়তন বৃদ্ধিজনিত কাজই আমাদের মূল আলোচনার বিষয়, কারণ তাপ দিলে যেকোন বস্তুর আয়তন বেড়ে যায়। আয়তন বৃদ্ধির ব্যাপারটুকু খুব প্রকটভাবে বোঝা যায় বায়বীয় জিনিসপত্রের বেলায়। (এখানে একটা মজার ব্যাপার হল সরাসরি গ্যাসীয় না বলে ‘বায়বীয় জিনিসপত্র’ বলেছি। কথাটা কেন বলেছি তা আমরা সামনে অগ্রসর হলেই টের পাব।) যদি খুবই সামান্য পরিমাণ তাপ বস্তুতে দেয়া হয় এবং তার আয়তন সামান্যই বাড়ে তাহলে এই আয়তন বৃদ্ধিকে ধরে নেয়া হয় যে সেটি আসলে স্থির চাপে হয়েছে। এই ধরে নেয়াটা তত সময় পর্যন্ত ঠিক থাকবে যত সময় পর্যন্ত তাপের পরিমাণ এবং আয়তন বৃদ্ধির মান খুবই ছোট হবে। এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরিবর্তন দেখানোর জন্য আমরা পরবর্তিতে Δ চিহ্নের বদলে ‘d’ ব্যবহার করব। এখন স্থির চাপ ‘P’ তে যদি কোন বায়বীয় পদার্থের আয়তন ΔV বাড়ে তাহলে খুব সহজেই দেখানো যায় যে সেটি আয়তন বৃদ্ধিজনিত PΔV পরিমাণ কাজ করে। (প্রমাণ নোটের শেষে ছবিতে বোঝানো হয়েছে) সুতরাং ΔW = PΔV , ফলে ΔQ = ΔU + PΔV। এই সম্পর্কটি ঠিক দু’টি অবস্থায় সঠিক হবে। এক, যদি সব ধরণের পরিবর্তনের মান খুবই ছোট হয়- কারণ তখন চাপকে মোটামুটি স্থির ধরা যায়, এবং, দুই, যদি আগে থেকেই আয়তন বৃদ্ধির পুরো প্রক্রিয়াটি স্থির চাপে হবার ব্যবস্থা থাকে। এই ব্যাপারটা মাথায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এমন প্রক্রিয়াও আছে যেখানে তাপ দিলে আয়তন বৃদ্ধির সাথে সাথে চাপও বেড়ে যায়। তাই কোন কিছু উল্লেখ করা না থাকলে আমরা লিখি
dQ = dU + dW এবং dW = P dV
সুতরাং, dQ = dU + P dV
এখন বিকিরণের বেলাতেও আমরা এই সম্পর্ক ব্যবহার করতে পারি। বিকিরণ বা বিকিরিত শক্তি আলোর বেগে চলাচল করে। যদিও বিকিরণকে স্থির অবস্থায় পাওয়া যায় না- তারপরও তা যেহেতু শক্তি বহন করে তাই তা দিয়ে কাজ করা যায়। আর যেহেতু কাজ করতে গেলে বল (Force) প্রয়োগ করতে হয় তাই বিকিরিত শক্তি যদি কোন তলে (surface) গিয়ে পড়ে তাহলে সেটা সেই তলের উপর বল প্রয়োগ করতে পারে। আর যেহেতু একক ক্ষেত্রফলের উপর লম্বভাবে যতটুকু বল প্রয়োগ করা হয় তাকে চাপ নামে অভিহিত করা হয় – তাই বিকিরিত শক্তিও যেই তলে পড়ে তার উপর চাপ প্রয়োগ করতে পারে। তাই বিকিরণের সাথে একটা চাপ জড়িত এটা ধরে নেয়া যায়। এই চাপকে বিকিরণ-চাপ (Radiation Pressure) বলে। বিকিরণের আরো একটা বৈশিষ্ট্য হল এটি বাইরে থেকে কোন রকম শক্তির সরবরাহ ছাড়াই নিজে নিজে ছড়িয়ে পড়তে পারে- ফলে আগে সেটি যতটুকু জায়গা নিয়ে ছিল ছড়িয়ে পড়ার পরে সেটি আরো বেশি জায়গা নিয়ে থাকে, অর্থাৎ সেটির আয়তন বেড়ে যায়। তাই যদি ধরে নিই যে dV পরিমাণ আয়তন পরিবর্তনের ফলে বিকিরণের মধ্যকার অন্তর্নিহিত শক্তির dU পরিমাণ পরিবর্তন হয় এবং এই পরিবর্তনগুলো খুবই ছোট তাহলে তার সাথে সম্পর্কিত চাপ P কে স্থির ধরা যায়। কিন্তু বাইরে থেকে কোন শক্তির সরবরাহ ছাড়াই যেহেতু ব্যাপারটা ঘটতে পারছে তাই সরবরাহকৃত শক্তি dQ=0 । সুতরাং, বিকিরণের বেলায়
dU + P dV = 0
বা, P = – dU/dV ————–(1)
এপর্যায়ে এসে আমরা বিকিরণের সাথে তরঙ্গের সম্পর্কিত হবার ব্যাপারটার সূচনা করব। তরঙ্গের সংজ্ঞা হল যে তা একস্থান থেকে অন্যস্থানে শক্তি বহন করে নিয়ে যাবে। বিকিরণও একস্থান থেকে অন্যস্থানে শক্তি বহন করে নিয়ে যায় বলে বলা হয় বিকিরণও তরঙ্গের মত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এখন তরঙ্গের দুটি মূল শ্রেণীবিভাগ হল ১) অগ্রগামী তরঙ্গ (Progressive wave) ও ২) স্থির তরঙ্গ (Standing wave ) । যে তরঙ্গ কেবল সামনের দিকে এগিয়ে যায় তাকে অগ্রগামী তরঙ্গ বলে। আর যদি কোন তরঙ্গ সামনের দিকে চলতে চলতে কোন এক সময় তার চলার পথের দিক পাল্টে উল্টা দিকে যায় তখন যে অংশ সামনে যাচ্ছিল এবং যে অংশ তার মুখ ঘুরিয়ে উল্টা পথ ধরেছে-এই দুই অংশ মিলে তার যাত্রা পথের উপরই তরঙ্গের উপরিপাতন নীতি অনুযায়ী একটা সম্পূর্ণ নতুন রকম তরঙ্গ তৈরি করে যেটা আসলে তার জায়গা পাল্টে আর সামনের দিকে যায় না- বরং যাত্রাপথের উপরই অবস্থান করে তরঙ্গের সবরকম বৈশিষ্ট্য প্রদর্শন করতে থাকে। নতুন রকম এই তরঙ্গ-যেটা আসলে একি রকম দুটি বিপরীতমুখী অগ্রগামী তরঙ্গের একে অন্যের উপর পড়ার মাধ্যমে সৃষ্টি, স্থির তরঙ্গ নামে পরিচিত। উপরিপাতন নীতি বোঝা খুব সহজ। ধরা যাক দুটি তরঙ্গ একই সময়ে একটা বিন্দুকে একে অন্যের বিপরীত দিক থেকে অতিক্রম করবে। যদি প্রথম তরঙ্গ সেই বিন্দুতে যেকোন দিকে (উপর-নীচ কিংবা ডাম-বাম) ‘a’ পরিমাণ সরণ ঘটায় (অর্থাৎ, হয় বিন্দুটিকে ‘a’ পরিমাণ সরায় অথবা তরঙ্গের মান তার সাম্যাবস্থা থেকে a পরিমাণ পরিবর্তিত হয়) এবং দ্বিতীয় তরঙ্গ সেই বিন্দুতে প্রথম তরঙ্গ যে দিকে সরণ ঘটাচ্ছিল তার বিপরীত দিকে ‘b’ পরিমাণ সরণ ঘটায় এবং a>b হয়, তাহলে নতুন সৃষ্ট তরঙ্গ প্রথম তরঙ্গের দিকে (a – b) সরণপ্রাপ্ত হবে। একে অন্যের বিপরীতে যাচ্ছিল বলে সরণের যে মানটা বড় তার থেকে সরণের ছোট মানটা বিয়োগ করা হয়েছে এবং নতুন তরঙ্গের দিক ধরা হয়েছে দুটি সরণের মাঝে যে দিকে বড় মান তার দিকে। যদি a<b হত তাহলে নতুন সৃষ্ট তরঙ্গ দ্বিতীয় তরঙ্গের দিকে (b-a) সরণপ্রাপ্ত হবে। আর যদি তারা একই দিকে সরণ ঘটাতো তবে ওই বিন্দুতে (a+b) সরণ পাওয়া যেত।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে চারিদিকে ছড়িয়ে পরতে থাকা বিকিরণকে কী ধরা হবে? অগ্রগামী নাকি স্থির তরঙ্গ? ছড়িয়ে পরছে বলে সাধারণ চোখে দেখলে যে কারো মনে হতে পারে যে এটি অগ্রগামী তরঙ্গ- কিন্তু তা নয়। ব্যাপারটা বোঝা খুবই সহজ। ছড়িয়ে পড়তে থাকা বিকিরণকে সেটি যতটুকু স্থান জুড়ে আছে তার সবখানেই খুঁজে পাওয়া যায়, কিন্তু বিকিরণকে অগ্রগামী তরঙ্গ হিসেবে ধরে নিলে একটা খুব বড়সড় গণ্ডগোল দেখা দেয়। অগ্রগামী হলে যে তরঙ্গ এক জায়গা দিয়ে চলে গেছে সে জায়গায় সে আর কখনো ফিরতে পারবে না- ফলে ছড়িয়ে পড়তে থাকা তরঙ্গ যে জায়গা ফেলে এসেছে সেখানে আর কোন তরঙ্গকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু বিকিরণের বেলায় এটা কখনোই হয় না। ছড়িয়ে পড়তে থাকার পরও বিকিরণের অস্তিত্ব তার নতুন কিংবা পুরাতন সব স্থানেই পাওয়া যায়, শুধু তার তীব্রতা বা ঘনত্ব কমে যায়। এখান থেকেই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে ছড়িয়ে পরতে থাকা বিকিরণকে মোটেই অগ্রগামী তরঙ্গ দিয়ে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যাবে না। এখন বিকিরণের আরো একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য হল এটি যেসব জায়গায় থাকবে সেসব জায়গার প্রতিটি অংশ থেকে ইচ্ছামত সবদিকে ছড়াতে থাকে। তাই আয়তনে বাড়তে থাকা বিকিরণ তার সীমানা থেকে যেমন বাইরের দিকে অগ্রসর হবে ঠিক তেমনি সেটা সমানভাবে ভিতরের দিকেও যাবে। এর ফলে সীমানার দিক থেকে ভেতরের দিকে আসা বিকিরণের বিভিন্ন অংশ একে অপরের মুখোমুখি হবে এবং তরঙ্গের উপরিপাতনের নীতি অনুযায়ী স্থির তরঙ্গ উৎপন্ন করবে। একমাত্র এভাবে করে চিন্তা করলেই খুব সহজেই বোঝা যায় যে কেন বিকিরণের অস্তিত্ব তার সমগ্র আয়তন জুড়ে পাওয়া যায়। এভাবেই বিকিরিত শক্তি স্থির তরঙ্গ আকারে যেকোন মূহুর্তে তার ছড়িয়ে পড়া আয়তনের সব জায়গায় অবস্থান করে।
এখন যেহেতু বিকিরণের ধর্মকে খুব সুন্দরভাবেই স্থির তরঙ্গের সাথে তুলনা করা যাচ্ছে তাই যেকোন নির্দিষ্ট মূহুর্তে তা যতটুকু জায়গা জুড়ে আছে সেই জায়গাটুকুকে এমন একটা আবদ্ধ পাত্রের সাথে তুলনা করা যায় যার ভেতরের গায়ে বিকিরিত রশ্মি প্রতিফলিত হয়ে একই রকম স্থির তরঙ্গ উৎপন্ন করছে। যদি বিকিরণের তরঙ্গদৈর্ঘ্য λ হয় এবং এসময়ে যদি বিকিরিত রশ্মি L দূরত্ব অতিক্রম করে তাহলে স্থির তরঙ্গের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী এই L দৈর্ঘ্য হবে আসলে কতগুলো অর্ধতরঙ্গের সমষ্টি। চিত্র থেকে ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে।
অর্ধতরঙ্গের সংখ্যা যতটাই হোক না কেন তা অবশ্যই পূর্ণসংখ্যা হতে হবে। তাই গাণিতিকভাবে বললে,
L=m λ/2 , যেখানে m হচ্ছে পূর্ণসংখ্যা।
বিকিরণ আলোর বেগ c তে ছড়িয়ে পড়ে। তার কম্পাংক f হলে তরঙ্গের সাধারন বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী-
c=f λ
বা, λ=c/f
λ এর মান L এর সমীকরণে বসালে, L= m c/2f
বা, f= (m c)/2×1/L ———————-(2)
ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের সূত্র বলে যে বিকিরণ মূলত গুচ্ছ গুচ্ছ শক্তির প্যাকেট আকারে ছড়ায় এবং প্রতিটি প্যাকেটের শক্তি বিকিরণের কম্পাঙ্কের সমানুপাতিক। যদি n সংখ্যক প্যাকেট দিয়ে f কম্পাংকের U অভ্যন্তরীন শক্তির বিকিরণ থাকে তাহলে প্ল্যাঙ্কের সূত্র মতে, একটি প্যাকেটের শক্তি হল h×f , যেখানে h হল প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক। সুতরাং মোট আভ্যন্তরীণ শক্তি
U=n×hf ————————(3)
(1) নং থেকে f এর মান (2) নং এ বসিয়ে,
U=n×h× (m c)/2×1/L ————————(4)
n, h, m, c রাশিগুলোর মান নির্দিষ্ট, তাই
n×h× (m c)/2 = ধ্রুবক = k (ধরি)
সুতরাং, U=k×1/L ————————(5)
এখন, বিকিরণ যেহেতু সবদিকে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে তাই L দৈর্ঘ্যের মাঝে থাকা স্থির তরঙ্গ উৎপন্নকারী বিকিরণ আসলে L ব্যাসের একটা গোলক তৈরী করে যার আয়তনই হল বিকিরণের সেই মূহুর্তের আয়তন।
সুতরাং, বিকিরণ-চাপ বিকিরণ শক্তির ঘনত্বের তিন ভাগের একভাগ।
চাপের সাথে শক্তি ঘনত্বের এই সম্পর্ক জানা হয়ে গেলে খুব সহজেই তাপগতিবিদ্যার প্রথম ও দ্বিতীয় সূত্র ব্যবহার করে আমরা একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোন বিকিরণের মাঝে মোট কতটুকু শক্তি থাকে তা বের করে ফেলতে পারি। মূলত এটাই হল স্টিফেনের বিকিরণ সূত্র।
ধরা যাক যে কোনো মূহূর্তে V আয়তন জুড়ে থাকা P বিকিরণ চাপ বিশিষ্ট T পরম তাপমাত্রায় থাকা বিকিরণের মাঝে বাইরে থেকে dQ পরিমাণ তাপ দেয়া হল। ফলে বিকিরণের মাঝের মোট অন্তর্নিহিত শক্তি dU পরিমাণ বেড়ে গেল এবং সাথে সাথে স্থির চাপ P তে তার dV পরিমাণ আয়তন বেড়ে গেল। তাহলে তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্র অনুযায়ী
dQ = dU + P dV
মনে রাখতে হবে যে খুব অল্প তাপ দেয়া হয়েছে বলেই একমাত্র স্থির চাপ ধরে নেয়া গেছে।
এখন যদি তার এন্ট্রপির পরিবর্তন dS হয় তাহলে
dS = dQ/T বা,dQ = T dS
সুতরাং, T dS =dU + P dV ————-(8)
এখন , বিকিরণের শক্তি ঘনত্ব u=U/V , তাই, U= uV
এবং চাপ P= 1/3 u
U এবং P এর মান (8) নং সমীকরণে বসিয়ে পাওয়া যায়
T dS =d(uV) + 1/3 u dV
বা, T dS=( u dV +Vdu )+ 1/3 u dV
বা, T dS = 4/3 u dV + Vdu
বা, dS = 4/3 (u )/T dV+ V/T du ——————–(9)
(9) নং থেকে দেখা যাচ্ছে যে এন্ট্রপি (S) সরাসরি শক্তি ঘনত্ব (u) এবং আয়তন (V) এর সাথে সম্পর্কিত। তাই এন্ট্রপি S কে যদি শক্তি ঘনত্ব (u) এবং আয়তন (V) এর সাথে কোন ফাংশন f দিয়ে প্রকাশ করা হয় তাহলে ব্যাপারটা ভুল হয় না। অর্থাৎ, S= f(u,V)
এখন এই জায়গায় ক্যালকুলাসের একটা সাধারণ বিষয় আমরা ব্যবহার করব। এই অংশটুকু যে বুঝতে পারবে সে এর পরের অংশে অনায়াসে যেতে পারবে।
যদি S= f(u,V) এ u কে চলক ধরে অন্তরীকরণ করা হয় তাহলে তাকে বলে u এর সাপেক্ষে S এর আংশিক অন্তরীকরণ। একে প্রকাশ করা হয় ∂S/∂u দিয়ে। একই ভাবে যদি S= f(u,V) এ V কে চলক ধরে অন্তরীকরণ করা হয় তাহলে তাকে বলে V এর সাপেক্ষে S এর আংশিক অন্তরীকরণ। একে প্রকাশ করা হয় ∂S/∂V দিয়ে।
ক্যালকুলাসের সাধারণ নিয়ম হল দুটি চলক u এবং V উপর নির্ভরশীল কোন ফাংশন S এর অন্তরক সহগ dS হলে [Total derivative- ব্যাখ্যা নোটের শেষে দেয়া আছে]
dS= (∂S/∂V) dV+ (∂S/∂u) du —————-(10)
এখন (9) ও (10) থেকে দেখা যাচ্ছে এই দুটি সমীকরণ আসলে একই রাশি S এর অন্তরক সহগ নির্দেশ করছে। সাথে সাথে সমীকরণ দুটির ডান পাশের রাশি গুলোও একই রকমভাবে সাজানো। তাই dV ও du এর সহগগুলো একে অন্যের সমান হবে। অর্থাৎ,
∂S/∂V = 4/3 (u )/T ———-(11)
∂S/∂u = V/T ———-(12)
এখন যেহেতু S একই সাথে u ও V এর ফাংশন তাই S কে প্রথমে V এর সাপেক্ষে অন্তরীকরণ করে তারপর সেটাকে আবার u এর সাপেক্ষে অন্তরীকরণ করলে যা পাওয়া যাবে [ ∂/∂u (∂S/∂V) ] এবং S কে প্রথমে u এর সাপেক্ষে অন্তরীকরণ করে তারপর সেটাকে আবার V এর সাপেক্ষে অন্তরীকরণ করলে যা পাওয়া যাবে [ ∂/∂V (∂S/∂u) ] – তারা পরস্পর সমান হবে।(এই ব্যাপারটা Schwarz’ theorem or Young’s theorem নামে পরিচিত- যে কেউ চাইলে নেটে দেখে নিতে পারেন।)
সুতরাং,
∂/∂u (∂S/∂V) = ∂/∂V (∂S/∂u) ———–(13)
(ক্যালকুলাসের এই অংশটুকু আরো বিস্তারিত ভাবে নোটের শেষে বর্ণনা করা হবে এবং কিছু ওয়েব রিসোর্সও দেয়া হবে। উল্লেখ্য যে, গণিতের এই অংশটুকু কোনোক্রমেই না বুঝে অগ্রসর হওয়া উচিত হবে না।)
(11) ও (12) নং থেকে মানগুলো (13) এ বসালে
∂/∂u ( 4/3 (u )/T) = ∂/∂V ( V/T) ———-(14)
(14) নং সমীকরণের উভয়দিকে অন্তরীকরণ ব্যবহার করার আগে এটা নিয়ে কিছু কথা বলা দরকার। এই সমীকরণের বামদিকে দেখা যাচ্ছে যে শক্তি ঘনত্ব u এবং তাপমাত্রা T সম্বলিত একটা রাশিকে ( 4/3 (u )/T) শক্তি ঘনত্ব u এর সাপেক্ষে অন্তরীকরণ করতে হবে। এখন কোনকিছুর তাপমাত্রা মূলত তার মাঝে শক্তি কতটুকু ঘন সন্নিবেশে আছে সেটাই নির্দেশ করে- সোজা কথায় শক্তি ঘনত্বের ব্যাপারে আমাদের ধারণা দেয়। তাই তাপমাত্রা T নিজেই শক্তি ঘনত্বের একটা ফাংশন। তাই ( 4/3 (u )/T) রাশিটিকে u এর সাপেক্ষে অন্তরীকরণ করলে তার উপর ‘দুটি ফাংশনের গুণফলের অন্তরীকরণ’-এর নিয়ম প্রয়োগ করতে হবে ।
(যেমন;d/dx (ab)=a db/dx+b da/dx)
কিন্তু সমীকরণের ডানদিকে দেখা যাচ্ছে যে আয়তন V ও তাপমাত্রা T সম্বলিত একটা রাশিকে ( V/T) আয়তন V সাপেক্ষে অন্তরীকরণ করতে হবে – যেখানে তাপমাত্রার সাথে মৌলিকভাবে আয়তন সম্পর্কযুক্ত নয়। মৌলিকভাবে কথাটা বলার কারণ হল কোন বস্তুর আয়তন সেটা কতটুকু জায়গা দখল করে সেটার ধারণা দেয়- কিন্তু তা বোঝার জন্য তার মাঝের শক্তি সম্পর্কিত কোন তথ্য দরকার হয় না। সুতরাং ডানপক্ষে তাপমাত্রা T আয়তন V এর সাথে সম্পর্কবিহীনভাবে বা ধ্রুবকের মত কাজ করবে।
সুতরাং, ∂/∂u ( 4/3 (u )/T) = ( 4/3×(1 )/T) + ( 4/3 u)(-1/T^2 ) ∂T/∂u
এবং, ∂/∂V ( V/T) = 1/T
এখান থেকে দেখা যাচ্ছে যে বিকিরণের অভ্যন্তরীণ শক্তির মানও পরম তাপমাত্রার চতুর্থঘাতের সমানুপাতিক।
অর্থাৎ, U∝T^4
আর এটাই হল স্টিফেনের বিকিরণ সূত্র।
—————————————————
– দীপায়ন তূর্য
(আরো সহজে বর্ণনা করার কোন উপায় জানা থাকলে নিঃসঙ্কোচে জানানোর অনুরোধ রইল।)
পরিশিষ্ট
Total derivative: https://en.wikipedia.org/wiki/Chain_rule
রেফারেন্সঃ
১)General Relativity and Cosmology for Undergraduates – J. Norbury
২ ) Statistical Mechanics – Gupta,Kumar
স্টিফেনের বিকিরণ সূত্রের প্রমাণ: বিকিরণ ও তাপগতিবিদ্যা
এখানে বিকিরন ও তাপগতিবিদ্যার প্রমান আলাদা আলাদাভাবে দেওয়া উচিত ছিল
দুটি বিষয় অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত বলে একসাথে দেয়া হয়েছে।