নভেম্বরের চব্বিশ তারিখ ছিলো ডারউইনের বই “অরিজিন অফ স্পিসিস” প্রকাশিত হওয়ার বর্ষপূর্তি, যাতে বর্ণনা করা হয়েছিলো কীভাবে সময়ের সাথে প্রাণের বিবর্তন ঘটে। প্রাণ আর পৃথিবী সবসময়েই একে অপরের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। আর সেটার রেকর্ড নিয়ে ২৫ বছর ধরে চালানো রোমাঞ্চকর এক গবেষণার কাহিনী শুনতে ঢুকে পড়ুন The Earth Story এর একটি লেখার অনুবাদ থেকে।
ভূ-তাত্ত্বিক দিক থেকে বিবর্তনের সবচেয়ে অসাধারণ জিনিসটা হচ্ছে জীবাশ্ম দলিল, বা ফসিল রেকর্ড। এখানে, পাথরের মুখ থেকে শোনা যায় বিলিয়ন বছর আগের ফসিলের গল্প। বিশেষ কিছু রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি ব্যাখ্যা করে প্রাণের বিবর্তনের চরিত্র এবং কীভাবে প্রাণ এই পাথরগুলোকে আজকের জায়গায় নিয়ে এলো।
চমকপ্রদ এক জিনিস এই ফসিল রেকর্ড, যেন বিলিয়ন বছর ধরে চালানো একটা এক্সপেরিমেন্টের দলিল। সব প্রজাতির ফসিল রেকর্ড পাওয়া যায় না, কারণ তাদের মধ্যে শক্ত হাড় নেই, অথবা তারা এককোষী জীব। এস্টিমেট করার সময় ভুলের মার্জিনের ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হয়। আমরা খুব কাছাকাছি যেতে পারি, কিন্তু মাঝে মাঝে সেটার রেঞ্জ এক মিলিয়ন বছর পর্যন্ত হতে পারে। আর যখন হঠাৎ পরিবর্তন ঘটে, সেটার অনুমান লাগানো আরো কষ্টের ব্যাপার।
২৫ বছর আগে, ডক্টর রিচার্ড লেনস্কি (এখন মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত) একটা গবেষণা শুরু করেছিলেন। তিনি ১২টা ফ্লাস্কে ই. কোলাই (E. Coli) ব্যাকটেরিয়া রেখেছিলেন কিছু চিনিসহ, আর ওদের যা ইচ্ছা, তাই করতে দিয়েছিলেন। প্রতিদিন, প্রত্যেকটা স্যাম্পল থেকে ক্ষুদ্র একটা অংশ নতুন একটা ফ্লাস্কে আলাদা করা হতো, এবং প্রত্যেক ৭৫ দিনে একবার একটা অংশ নিয়ে রেকর্ড রাখার জন্য ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করা হতো।

Image credit: Science Magazine (reproduced for education and outreach): http://www.sciencemag.org/content/342/6160/790.full
এখন, ২৫ বছর পর, জিনিসটা হয়ে গেছে চোখ ধাঁধানো বৈজ্ঞানিক দলিল। কারণ ই কোলাই প্রতিদিন বেশ কয়েক প্রজন্ম পার করে। সেই হিসাবে, তারা এ পর্যন্ত ৫৮,৫০০ প্রজন্ম পার করেছে। মানুষের হিসাবে, সেটা এক মিলিয়ন বছরের বিবর্তনের সমান।
ভিন্ন ভিন্ন ফ্লাস্ক র্যান্ডম মিউটেশনের ফলে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্র প্রদর্শন করেছে। সাইট্রেট বা এ জাতীয় রাসায়নিক পদার্থ প্রসেসিং এর ক্ষমতা বিবর্তিত হয়েছে অনেকবার, বিভিন্নভাবে। ব্যাপারটা বুঝলেন? যে গ্র্যাজুয়েট স্টুডেন্ট এই প্রসেসিং এর ব্যাপারটার দায়িত্বে ছিলো, সে আসলে তাকিয়ে ছিলো ফসিল রেকর্ডের দিকে।
একটা ফ্লাস্ক থেকে দুটো স্বাধীন গোষ্ঠী তৈরি হয়েছিলো, যাদের আচার-আচরণ ছিলো স্বতন্ত্র – একটা বড় কলোনি তৈরি করলো, আরেকটা ছোটো, এবং এভাবেই এখন পর্যন্ত চলছে। কার্যত, এই গবেষণাটা একটা নিখুঁত ফসিল রেকর্ড। আসল ফসিল রেকর্ডের মধ্যে আমরা যে জিনিসগুলো পাই না (যেমন একটা নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের বিবর্তন, নতুন প্রজাতির উদ্ভব এবং কিছু প্রজাতির বিনাশ), সেগুলো এখানে সংরক্ষণ করা হয়েছে একদম পুংক্ষানুপুংক্ষভাবে। ঠিক যেভাবে পৃথিবীতে প্রাণের মধ্যে বিবর্তন ঘটছে প্রতিনিয়ত, এই ফ্লাস্কগুলোর মধ্যেও বিরামহীনভাবে চলছে টিকে থাকার লড়াই।