স্যাটেলাইটহলো একটি কৃত্রিম বস্তু যা তথ্য সংগ্রহের জন্য অথবা যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে পৃথিবী বা চাঁদ বা অন্য কোনো গ্রহের চারপাশে কক্ষপথে স্থাপন করা হয়। মনুষ্যনির্মিত হাজার হাজার স্যাটেলাইট পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরছে। এদের মধ্যে কোনোটি বিভিন্ন গ্রহের ছবি সংগ্রহ করে, কোনোটা আবহাওয়াবিদদের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়া সহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের আভাস দিতেও সাহায্য করছে। কিছু স্যাটেলাইট অন্যান্য গ্রহ, সূর্য, কৃষ্ণবিবর বা দূরবর্তী ছায়াপথ এর ছবি নিতে কক্ষপথে ঘুরছে। এছাড়াও এমন কিছু উপগ্রহ রয়েছে যারা যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে মূলত ব্যাবহার করা হয়; যেমন টিভি সিগন্যাল, বিশ্বজুড়ে ফোন কল এর সংযোগ স্থাপন, ইত্যাদি কাজে ব্যাবহার করা হয়। ২০টিরও অধিক স্যাটেলাইট ব্যাবহার করা হয় জিপিএস সিস্টেম এর কাজে। জিপিএস সিস্টেম আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কী কাজে আসে সে কথা বিস্তারিত আমরা এখানে নাই বলি।
স্যাটেলাইট এর বার্ড আই ভিউ (পাখির মত ভূ-পৃষ্ঠের অনেক ওপর থেকে দেখা) এর কারণে আমরা উপর থেকে পৃথিবীর একটি বৃহৎ অংশ দেখতে পাই। এই কারণে ভু-পৃষ্ঠে স্থাপিত কোনো যন্ত্রের চেয়ে অধিক দ্রুত এবং নিখুঁত তথ্য সংগ্রহ করতে পারে স্যাটেলাইট। এমনকি কোনো বস্তু পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে স্যাটেলাইট টেলিস্কোপ এর চেয়ে অধিক কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। স্যাটেলাইটকে এত উপরে স্থাপনের মুল কারণ হল যাতে মেঘ, ধুলাবালি কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করতে পারে। স্যাটেলাইট স্থাপনের পূর্বে টিভি সিগন্যাল বেশি দূর যেতে পারতো না। কারণ, টিভি সিগন্যাল সরলরেখা বরাবর কাজ করে। এখন টিভি সিগন্যাল, ফোন কল প্রথমে পৃথিবী থেকে স্যাটেলাইটে পাঠানো হয়। স্যাটেলাইট সিগন্যাল গ্রহণের পর তৎক্ষণাৎ সেটি আবার পৃথিবীতে আমাদের প্রত্যাশিত স্থানে ফেরত পাঠায়।
স্যাটেলাইট এর গঠন
স্যাটেলাইট বিভিন্ন আকৃতির হতে পারে। প্রত্যেক স্যাটেলাইট এর ২টি সাধারণ অংশ থাকে ঃ অ্যান্টেনা এবং শক্তির উৎস। অ্যান্টেনা তথ্য গ্রহণ ও সংগ্রহের কাজ করে থাকে। সোলার প্যানেল অথবা ব্যাটারি, উভয়েই শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে। নাসা’র স্যাটেলাইটে ক্যামেরা এবং কিছু সেন্সর লাগানো থাকে ।
স্যাটেলাইট কিভাবে পাঠানো হয়
কক্ষপথে স্যাটেলাইট স্থাপন করার জন্য আলাদা মহাশূন্য যান রয়েছে। একে বলা হয় “উৎক্ষেপণ যন্ত্র (Launch Vehicle)“। কক্ষপথে স্যাটেলাইট স্থাপনের ক্ষেত্রে যে বিষয়ে সবচেয়ে বেশি মাথা ঘামাতে হয়, তা হলো অভিকর্ষজ ত্বরণ এবং মহাশূন্য যানটির গতির সমতা রক্ষা করা। কারণ অভিকর্ষজ ত্বরণ আমাদের উৎক্ষেপণ যন্ত্রকে পৃথিবীর দিকে টানতে থাকে।
দুই ধরনের উৎক্ষেপণ যন্ত্র রয়েছে – অপচয়যোগ্য রকেট এবং মহাশূন্য শাটল। অপচয়যোগ্য রকেটগুলো স্যাটেলাইট স্থাপন শেষে ধ্বংস হয়ে যায়। অপরদিকে মহাশূন্য শাটলগুলো স্যাটেলাইট স্থাপনের কাজে বারবার ব্যবহার করা যায়। উৎক্ষেপণ যন্ত্রের গতিবেগ উচ্চতার উপর অনেকটা নির্ভর করে। কম উচ্চতার কক্ষপথে (Low Earth Orbit = LEO) এর বেগ ৭.৮ কি.মি./সেকেন্ড, বেশি উচ্চতার কক্ষপথে (Geostationary Earth Orbit =GEO) এর বেগ ৩.১ কিমি/সে ।
স্যাটেলাইটের প্রকারভেদ
কক্ষপথ এর ভিত্তি করে স্যাটেলাইট সিস্টেম কে কয়েক ভাগে ভাগ করা যায়।
- LEO ( Low Earth Orbit ) – পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ১৬০-২০০০ কি.মি. উপরে অবস্থিত। সাধারণত পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণকারী স্যাটেলাইটগুলো এই কক্ষপথে থাকে। পৃথিবী পৃষ্ঠের খুব কাছে থাকায় এই কক্ষপথে থাকা স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীকে খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারে। আন্তর্জাতিক স্পেস ষ্টেশন এই কক্ষপথে অবস্থিত।
- MEO ( Medium Earth Orbit) – পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ২০০০০ কি.মি. উপরে অবস্থিত। সাধারণত জিপিএস স্যাটেলাইট গুলো এই কক্ষপথে থাকে। এই কক্ষপথের স্যাটেলাইট গুলোর গতিবেগ মন্থর। এই স্যাটেলাইটগুলো পাঠাতে অনেক শক্তির প্রয়োজন হয়।
- GEO (Geostationary Earth Orbit) – GEO পৃথিবী পৃষ্ঠ থেকে ৩৬০০০ কি.মি. উপরে অবস্থিত। এই কক্ষপথে অ্যান্টেনা এর অবস্থান নির্দিষ্ট থাকে। সাধারণত রেডিও এবং টিভি এর ট্রান্সমিশনের কাজে ব্যাবহার করা হয়।
স্যাটেলাইট এর অন্যান্য ব্যবহার
- স্যাটেলাইট খামার গুলোর ডিজিটাল মাপ তৈরি করে । ফলে কৃষক দের মাটির গুনাগুণ , ফসলের ফলন সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেয়।
- সড়ক দুর্ঘটনার কারণে প্রতি বছরই অনেক মানুষ মারা যায়। স্যাটেলাইট এর মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন সড়কের খুঁতগুলো বের করতে পারি।
- নগরায়ন এর কাজে অনেক অনেক উপকারে আসে।
- এখন পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নানাবিধ পণ্য আমদানি রপ্তানি হয়। ঘরে বসেই এদের অবস্থান ট্র্যাক করতে স্যাটেলাইট আমাদের সাহায্য করে ।
- বাতাসের বেগ এবং বায়ু দূষণের পরিমাণ নির্ণয়ে স্যাটেলাইট আমাদের সাহায্য করে থাকে।
- প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্য করার কাজে স্যাটেলাইট সবচেয়ে বেশি কাজে আসে।
বিশ্বের ১০ টি দেশের স্যাটেলাইট লঞ্চ করার ক্ষমতা রয়েছে।
Order | Country | Date of first launch | Rocket | Satellite |
---|---|---|---|---|
1 | Soviet Union | 4 October 1957 | Sputnik-PS | Sputnik 1 |
2 | United States | 1 February 1958 | Juno I | Explorer 1 |
3 | France | 26 November 1965 | Diamant-A | Astérix |
4 | Japan | 11 February 1970 | Lambda-4S | Ōsumi |
5 | China | 24 April 1970 | Long March 1 | Dong Fang Hong I |
6 | United Kingdom | 28 October 1971 | Black Arrow | Prospero |
7 | India | 18 July 1980 | SLV | Rohini D1 |
8 | Israel | 19 September 1988 | Shavit | Ofeq 1 |
– [1] | Russia | 21 January 1992 | Soyuz-U | Kosmos 2175 |
– [1] | Ukraine | 13 July 1992 | Tsyklon-3 | Strela |
9 | Iran | 2 February 2009 | Safir-1 | Omid |
10 | North Korea | 12 December 2012 | Unha-3 | Kwangmyŏngsŏng-3 Unit 2 |
সোর্স ঃ উইকিপিডিয়া
স্যাটেলাইট নিয়ে আরো কিছু কথা
- ১৯৫৭ সালের অক্টোবর মাসে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন স্পুটনিক-১ নামে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে
- ১৯৫৭ সালের নভেম্বর মাসে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন স্পুটনিক-২ নামে আরেকটি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে যাতে ছিল লাইকা নামে একটি কুকুর।
- ১৯৫৮ সালের ১-লা জানুয়ারি আমেরিকা প্রথম স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে এক্সপ্লোরার-১ নামে।
- একটি স্যাটেলাইট কে কক্ষপথে তার অবস্থান ধরে রাখার জন্য একটি নির্দিষ্ট গতিবেগ দরকার। এটি হচ্ছে ২৮,২০০ কিমি/ ঘন্টা ।
- ২০০৯ সালে একটি আমেরিকান এবং একটি রাশিয়ান স্যাটেলাইট এর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে।
- স্যাটেলাইট খুব ছোট ও হতে পারে। যেমন ১০ সেন্টিমিটার সাইজ এর।
- স্যাটেলাইট কে মিসাইল এর মাধ্যমে ধ্বংস করাও যেতে পারে।
আশার কথা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু-১ নামে একটি স্যাটেলাইট প্রথম বাংলাদেশী ভূ-সমলয় যোগাযোগ স্যাটেলাইট যা বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন দ্বারা পরিচালিত হবে। এটি ২০১৭ সালে উৎক্ষেপণ করা হবে। এটি 119° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে ভূ-সমলয় স্লটে অবস্থিত করা হবে বলে আশা করা হয়। ফ্রান্সের থেলাস এলেনিয়া স্পেস কোম্পানি এটি তৈরি করবে। এটি তৈরিতে খরচ হবে ২৪৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (১৯৫১ কোটি টাকা)। সুদূর ভবিষ্যতে হয়তো আমাদের দেশ থেকেই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা যাবে ।
আপনার লেখার ধরন ভাল লেগেছে। অহেতুক অতিরিক্ত ভাষা-সাহিত্যের ব্যবহার নেই, অল্প কথায় তথ্য উপস্থাপিত। ধন্যবাদ।
স্যাটেলাইট কি পৃথিবী থেকে দেখা যায় অথবা তার কোনো আলো?