আমরা অনেকেই আছি শরীরে ট্যাটু করাতে পছন্দ করি। হাতের কব্জিতে একটা ট্যাটু থাকলে মন্দ কী! বেশ তো, যেই ভাবা সেই কাজ! করিয়ে ফেললাম একটা ট্যাটু! মনে হচ্ছে, বেশ ভালই লাগছে দেখতে।
বিপত্তি বাধলো তখনই, যখন প্রেমিকা বলে বসলো, “এরকম ভাবে চললে তোমার সাথে আমি আর নেই। হয় তোমার ট্যাটু থাকবে নাইলে আমি”। আমি পড়লাম আকাশ থেকে। বলে কী! কত কষ্ট করে গাঁটের পয়সা ফেলে করালাম, আর এখন কিনা তুলে ফেলতে হবে! তাও না হয় তুলে ফেলা যেত। কিন্তু ট্যাটু যে স্থায়ী!
তাহলে এখন উপায়? কাহিনী বললাম বন্ধুকে। বন্ধু বললো, “উপায় একটা অবশ্য আছে, পুনরায় আবার ট্যাঁক খালি করে আরো ৩গুণ বেশি কষ্ট সহ্য করে তুলে ফেলার একটা উপায় আছে।” জানতে চাইলাম… বন্ধু বলে, ট্যাটুর সাথে নাকি ফিজিক্স, থারমোডায়নামিক্স, অপটিক্স, ক্যামিস্ট্রি, বায়োলজি সব যুক্ত হয়ে গেছে। আমি বলি, “যাহ বাবা”!
ট্যাটুতে যে রঙ ব্যবহার করা হয় সেটা দেখতে তো দারুণ! কিন্তু তৈরি হয় কী দিয়ে?
পরে জানলাম – ক্যাডমিয়াম, থোরিয়াম, কপার, কোবাল্ট, লেড, ম্যাগনেসিয়াম, এলুমিনিয়াম ইত্যাদি দিয়েই নাকি তৈরি হয়। এক এক রঙের কালির জন্য এক এক ধরনের বা ২/৩ ধাতুর যৌগের মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ সব রঙের কালিই ভারী ধাতু থেকে তৈরি।
এখন ট্যাটু করার সময় যেটা হয় তা হল অনেকগুলো সূঁচের সাহায্যে ধাতু থেকে তৈরি তরল রঙ আমাদের চামড়ার উপরের স্তর (এপি-ডারমিস) ভেদ করে একটু নিচের স্তর (ডারমিস) এর ভিতরে এই রঙের কণাগুলো ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।
রঙের কণা (পিগমেন্ট) মূলত ধাতুরই কণা। এগুলো বিভিন্ন আকারের হতে পারে – কোনোটা ছোটো, কোনোটা মাঝারি, কোনোটা বড়।
কিন্তু আমাদের শরীর এরকম অনধিকার-অনুপ্রবেশকারীকে সহজে মেনে নেবে তা কী হয়? তাই আমাদের শরিরের শ্বেত রক্তকণিকা সাথে সাথে যুদ্ধং-দেহী মনোভাব নিয়ে এগিয়ে যায় শরীরে প্রবেশ করানো এই রঙের কণিকাগুলোর দিকে।
আমাদের শ্বেত রক্তকণিকাগুলো প্রবেশ করানো ধাতুর(রঙের) কণাগুলো গিলে খেয়ে ফেলার চেষ্টা করে।
কিন্তু যুদ্ধে গেলে কী হবে! জোর যার মুল্লুক তার। যার শরীর স্বাস্থ্য ভাল সেই তো ক্ষমতাবান নাকি? তাই শ্বেতকণিকা নিজেদের সাইজ থেকে ছোট ধাতুর কণাগুলোকে টেনে-হিঁচড়ে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারলেও, বড় ধাতুর কণাগুলোকে সরিয়ে ফেলতে পারে না। দীর্ঘ দিন শরীরের ভিতরে থাকা রঙের কণাগুলো যদি কোনো কারণে ভেঙ্গে ছোট হয়ে যায়, তাহলে সেই ছোট কণাগুলো আবার শ্বেত রক্তকণিকা যেয়ে সরিয়ে ফেলে। এই ব্যবস্থা চলতেই থাকে। এজন্য ট্যাটু করার কয়েক বছর পর ট্যাটুর উজ্জ্বলতা কমে যায়। কিন্তু কখনোই একদম মুছে যায় না। তাই কেউ যদি ট্যাটু করার পর তুলে ফেলতে চায় তাহলে তাকে কোনো একটা উপায়ে এই বড় রঙের কণাগুলোকে ভেঙে ছোট করতে হবে, বাকি কাজ আমাদের শ্বেত কণিকারাই সেরে ফেলতে পারবে।
লেজার রশ্মি ব্যবহার করে ধাতুর বড় কণাগুলোকে ভেঙে ছোট করে ফেলা যায়। খুব কম সময় ধরে (পিকো সেকেন্ড) যদি অবলোহিত (infrared) তরঙ্গের লেজার রশ্মি দিয়ে নিয়ন্ত্রিত ভাবে ধাতুর কণার উপরে আলো ফেলা যায় তাহলে ধাতুর বড় কণাগুলো ভেঙে ছোট কণায় পরিণত হয়।
কারণ হলো, খুব অল্প সময় নিয়ে আলো ফেলার কারণে ধাতুর কণার উপরের পৃষ্ঠ গরম হয়ে যায়, কিন্তু উপরর পৃষ্ঠ ছাড়া তলার দিকে বা অন্য অংশ শীতল থাকে। তাই কণার ভিতরের আভ্যন্তরীণ টান সমান না হওয়ায় ধাতুর কণা টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে ছোট কণায় পরিণত হয়। আর ছোট কণাগুলোকে শ্বেত রক্তকণিকা বয়ে নিয়ে লিভারের দিকে নিয়ে যায়। লিভার সেগুলোকে দেহের বাইরে পাঠানোর বাকি কাজ সেরে ফেলে। এর কিছুদিন পর আস্তে আস্তে ট্যাটু সম্পূর্ণ মুছে যায়।
কিন্তু আমি এখনো ঠিক করে উঠতে পারছি না, এত দারুণ একটা ট্যাটু রাখবো নাকি তুলে ফেলবো। এদিকে গার্লফ্রেন্ড তো রেগে আছে। বোধ হয়, চকলেট দিয়ে এ যাত্রা ম্যানেজ করা যাবে।
সূত্রঃ
https://www.youtube.com/watch?v=D0B7F5UbTOQ
চমৎকার ভাবে লিখেছেন অল্পকথায় !