“অ্যালান ম্যাথিসন টুরিং” একজন কিংবদন্তী গণিতবিদ। গণিত নিয়ে তার আগ্রহ শৈশব থেকে থাকলেও, গণিতের পাশাপাশি তিনি অবদান রেখেছেন কম্পিউটার বিজ্ঞান, যুক্তিবিদ্যা, দর্শন, গাণিতিক জীববিজ্ঞান, গোপন তথ্য বিশ্লেষণ ইত্যাদি নানা শাখায়। তাকে আধুনিক কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক বলা হয়! তারপরেও আমাদের স্কুলের টেক্সট বইগুলোতে তার নাম ছিলো না কোথাও। কেন ছিলো না, কেন তাকে এভাবে অবহেলা করা হয়েছিলো, সেটা নিয়ে যথাসময়ে লিখছি।

টুরিং মেশিন
যাই হোক – তিনি বিশ্বাস করতেন, “যে কোনো গণনাযোগ্য গাণিতিক সমস্যাই কোনো যন্ত্র দ্বারা সমাধানযোগ্য, যদি তা অ্যালগরিদমে দেওয়া হয়”। এর ফলস্বরুপ তিনি পরবর্তীতে ” ইউনিভার্সাল টুরিং মেশিন” নামে একটি যন্ত্র তৈরি করেন যা” টুরিং মেশিন” নামেই অধিক পরিচিত। পরবর্তীতে এই টুরিং মেশিনের আধুনিক রুপান্তরই হচ্ছে আজকের কম্পিউটার!
শৈশব ও শিক্ষা
টুরিং যখন তাঁর মায়ের গর্ভে আসেন, তখন তার বাবা মা দুজনই ভারতের লোক প্রশাসনে কাজ করতেন। তারা চেয়েছিলেন তাদের সন্তান যাতে ইংল্যান্ডের শিক্ষা, সংস্কৃতিতে বড় হয়। তাই তারা ইংল্যান্ডে চলে আসেন এবং ১৯১২ সালের ২৩শে জুন ইংল্যান্ডের লন্ডনে অ্যালান টুরিং জন্মগ্রহণ করেন।
শৈশব থেকেই টুরিংয়ের পড়ালেখার প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল। আর সেই ঝোঁকটা ছিল মূলত বিজ্ঞানের বিষয় গুলোতেই, আর বিশেষ আকর্ষণ ছিলো গণিতে। কিন্তু তৎকালীন শিক্ষা ছিল সাহিত্য নির্ভর। তাই ডরসেটের শেরবর্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষক টুরিংয়ের এই অবস্থা দেখে, তার অভিভাবককে তার ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্নতার কথা লিখেছিলেন। এমনকি এই সাহিত্য চর্চার অনাগ্রহের জন্য তাকে কেমব্রিজের ট্রিনিটি কলেজ ছেড়ে দিয়ে কিংস কলেজে ভর্তি হতে হয়েছিল।

King’s College, Cambridge, United Kingdom
টুরিংয়ের শৈশবটা ছিল অগোছালো, বন্ধুত্বহীন, একাকীত্বে ভরা৷ শৈশবে তিনি ছিলেন লাজুক স্বভাবের; ছিলেন শান্ত, চুপচাপ, অনেকটা আত্মকেন্দ্রিক একটা ছেলে। সহপাঠীদের সাথে তিনি তেমন একটা মিশতেন না। হাতের কাছে যা পেতেন তাই নিয়েই ভাবতেন, আর তার সাথে গণিতকে জুড়ে দেয়ার চেষ্টা করতেন। তার সহপাঠীরা কিন্তু তার এসব কাজ আর সাথে টুরিংকে মোটেও পছন্দ করতো না।তাই তারা তাকে নিয়ে নানা রকম মজা, ঠাট্টা, বিদ্রুপ করতো। একাকীত্ব কী, তা টুরিং এসবের মাঝে পড়ে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন।

টুরিং, আর ডানে ক্রিস্টোফার মরকম
এমন সময় তার সাথে পরিচয় হয় ক্রিস্টোফার মরকমের। তিনি টুরিং এর এক ক্লাস ওপরে পড়তেন। বন্ধুত্বহীন টুরিংয়ের জীবনে ক্রিস্টোফার তখন সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেয়, টুরিং সেই হাতকেই গভীর আবেগ নিয়ে
আঁকড়ে ধরেন। ক্রিস্টোফারই টুরিংকে জ্ঞানের উচ্চতর শাখা, জ্যোতির্বিদ্যা, সংখ্যাতত্ত্ব সহ আরো অনেক কিছুর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। ধীরে ধীরে ক্রিস্টোফারের প্রভাব পড়তে শুরু করে টুরিং এর উপর, টুরিং ভালোবেসে ফেলেন তার একমাত্র বন্ধুটিকে। ১৯৩০ সালে বোভাইন টিউবারকুলেসিসে আক্রান্ত হয়ে ক্রিস্টোফারের মৃত্যু টুরিংয়ের জীবনকে একেবারে তছনছ করে তোলে। তবুও তিনি ঘুরে দাঁড়ান, ব্যথিত মন নিয়েই আবার শুরু করেন পড়াশোনা। ১৯৩৭ সালে টুরিং চলে আসেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে, সেখানে তিনি গাণিতিক যুক্তিবিদ্যার উপর গবেষণা করেন আলোনজো চার্চের অধীনে। ১৯৩৮ সালে পিএইচডি লাভের পরের বছরেই তিনি চলে আসেন সরকারি কোড ও সাইফার স্কুলে যোগদানের জন্য।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও টুরিং
শুরু হলো দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ। জার্মান নাৎজি বাহিনীর চাতুর্যে প্রায় অসহায় হয়ে পড়েছিল ইংল্যান্ড। ওরা কোনোভাবেই নাৎজি বাহিনীর পরিকল্পনা বুঝে উঠতে পারছিল না, কারণ তাদের সমস্ত পরিকল্পনা “এনিগমা” নামের একটা মেশিন দিয়ে কোড করা অবস্থায় আদান-প্রদান করা হতো। আর সে সময় এনিগমা দ্বারা কোডেড মেসেজের অর্থোদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব ছিল। বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে নাৎজি বাহিনী নিজেদের মধ্যে এনিগমার মাধ্যমে যুদ্ধের সকল পরিকল্পনা আদান প্রদান করতো। কিন্তু ইংল্যান্ড কে জিততে হলে এনিগমার সংকেত বুঝতেই হবে। কারণ, যুদ্ধে জিততে হলে তথ্যই শক্তি! প্রতিপক্ষের পরিকল্পনা জেনে ফেললে ফন্দি এঁটে তাদেরকে কাবু করা সহজ!

অ্যানিগমা মেশিন
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এনিগমা মেশিনে প্রায় ১৫ মিলিয়ন মিলিয়ন মিলিয়ন কনফিগারেশন ছিল। অর্থাৎ একটা এনিগমা সংকেতকে সমাধান করলেও সম্ভাব্য ১৫৯ মিলিয়ন মিলিয়ন উত্তর আসতো। এতো বিশাল উত্তরের মঝে কোনটা যে আসল সংকেত, সেটা বুঝে ওঠাই চিন্তার বাইরে কঠিন। রাতের বেলা উত্তরদিক নির্ধারণ করার জন্য যেমন ধ্রুবতারা লাগে, কোডেড মেসেজের অর্থোদ্ধার করার জন্যও একটা ধ্রুবতারা লাগবে। কালেভদ্রে, একদিনের জন্য সেই ধ্রুবতারা পাওয়া গেলেও ১২ ঘণ্টা পর জার্মানরা এনিগমার কনফিগারেশন বা কি-বোর্ড পরিবর্তন করলে সেই ধ্রুবতারা মোতাবেক কাজ করা আর সম্ভব হতো না। এনিগমা বোঝা এতোটাই দুর্বোধ্য ছিলো যে, “১০ জন মানুষ যদি প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা ১টি কনফিগারেশন ১ মিনিট করেও মিল খোঁজে, তবে সময় লাগবে ২০ মিলিয়ন বছর!”
এনিগমার কোড বিশ্লেষণের জন্য ইংল্যান্ডে আগেই একটি দল ছিলো। পরে এই দলে যুক্ত হন অ্যালান টুরিং। তিনি মনে করতেন “এনিগমা মানুষের পক্ষে বোঝা অসম্ভব, যন্ত্র এর সৃষ্টি এনিগমা, বুঝতে হলে উপযুক্ত যন্ত্রেরই প্রয়োজন”। এর পর তিনি ও আর তার দল মিলে, পোল্যান্ডের বিজ্ঞানী মারিয়ান রেজোস্কির আবিষ্কৃত “বোম্বা” মেশিন নিয়ে গবেষণা শুরু করে। কিন্তু টুরিং একটি সার্বজনীন ডিক্রিপ্টিং মেশিন আবিষ্কার করতে চেয়েছিলেন। অবশেষে তিনি ‘বোম্বা’ মেশিনের এর সার্বজনীন রুপ দেন “বোম্বে (Bombe)” নামে। অনেকে মনে করেন তিনি তার মেশিনের নাম “বোম্বে” না রেখে “ক্রিস্টোফার” দিয়েছিলেন। সে যাই হোক……..

বোম্বে মেশিন
টুরিং একটা ভুল আবিষ্কার করেছিলেন এনিগমা মেশিনের মধ্যে। মেশিনের কোডিং সিস্টেমের একটা নিয়ম ছিলো। যেমন ধরুন, এনিগমা মেশিনে আমি লিখতে চাইছি ALAN TURING. তাহলে মেশিন একটা কোডেড আউটপুট দিলো KHZP GPDKDL” – নিয়মটা হলো A এর কোড কখনো A হতে পারবে না, বাকি ২৫টা অক্ষর হতে পারবে, কিন্তু A না। এতে করে সম্ভ্যাব্য কোডের সংখ্যা অনেকটা কমে গেলো। তবুও সম্ভাব্যতা এখনো অনেক, আর অনেক কষ্টের পরেও সফলতা আসছিলো না। কারণ, এই মেশিনে মেসেজ ডিকোড করে তথ্য পেতে পেতে যতক্ষণ লাগতো, ততক্ষণে সেই তথ্য আর কোনো কাজে লাগতো না। আরো দ্রুত ডিকোড করার জন্য একটা উপায়ের জন্য মরিয়া হয়ে গেলো বিজ্ঞানীদের দল। তখন টুরিং আরেকটা বুদ্ধি করলেন। তিনি লক্ষ্য করলেন যে জার্মানরা প্রত্যেক মেসেজের শেষে Heil Hitler লেখে, অবশ্যই সংকেতের মাধ্যমে। সেটাকে ধ্রুবতারা ধরে অনেক কম সময়ের মধ্যে তারা কোডের অর্থোদ্ধার করতে সক্ষম হলেন।
ধারনা করা হয়, টুরিং এর এই যন্ত্রের ফলে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ প্রায় দু বছর আগেই শেষ হয়েছিলো এবং কয়েক কোটি মানুষের প্রাণ রক্ষা হয়েছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হলে, ব্রিটিশ সরকার তার এই অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৪৬ সালে তাকে ” Order of the british Empire” উপাধি দান করে। যদিও ব্রিটিশ সরকার সেটা পরবর্তীতে গোপন করে গিয়েছিলো!
টুরিং টেস্ট
তার আর একটি উল্লেখযোগ্য আবিষ্কার হল “টুরিং টেস্ট”। ১৯৫০ সালে তার প্রকাশিত গবেষণাপত্র “Computer Machinery & Intelligence”- এ প্রথম Turing Test এর কথা উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে তার এই গবেষণাপত্রকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা Artificial Intelligence এর মূল ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। Turing Test বা imitation game একটা মজার খেলা। এটা এমন যে –
প্রথম ধাপে দুটি ঘরের একটিতে মেয়ে অপরটিতে ছেলে থাকবে। কিন্তু তৃতীয় একজন ব্যক্তিকে নির্ণয় করতে হবে, কোন ঘরে ছেলে আর কোন ঘরে মেয়ে আছে, শুধু লিখিত কিছু শব্দের দ্বারা।

টুরিং টেস্টের সাংকেতিক দুটি ধাপ
দ্বিতীয় ধাপে এক ঘরে থাকবে মানুষ আর অন্যটাতে থাকবে একটা যন্ত্র। তৃতীয় মানুষটি দুই ঘরেই কিছু লিখিত প্রশ্ন পাঠাবে, যদি দুজনের উত্তরই কাছাকাছি হয়, তবে ধরা হয় যন্ত্রটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন, আর উত্তরে গরমিল আসলে বুঝে নিতে হবে যন্ত্রটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন না।
ব্যপারটা অনেক জটিল মনে হলেও, আমরা প্রতিদিন প্রতিনিয়ত Turing Test এর সম্মুখীন হচ্ছি অনেকটা না বুঝে। অনেক সময় ফেসবুকে লগইন করতে, কোনো নিবন্ধন ফরম পূরণ করাতে, ই-মেইল বা যে কোনো অ্যাকাউন্ট খুলতে ক্যাপশা’র (CAPTCHA – Completely Automated Public Turing test to tell Computers and Humans Apart) ব্যবহারের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয় সত্যিই কি ঐ নিদির্ষ্ট ব্যক্তি লগইন করার চেষ্টা করছে নাকি বাইরের কোনো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা প্রোগাম অযাচিতভাবে ঐ অ্যাকাউন্টে ঢুকতে চাচ্ছে। ক্যাপশা’তে এলোমেলোভাবে যে বর্ণগুলো থাকে সেগুলোর Font থাকে আলাদা। যা মানুষ দেখে বুঝলেও, যন্ত্রের পক্ষে বুঝে ওঠা সম্ভব নয়।
এতোসব কিছু পরিচয়ের বাইরেও তিনি একজন দৌড়বিদ ছিলেন। অবসাদগ্রস্থতা দুর করার জন্য তিনি দৌড়ানোকেই বেছে নিয়েছিলেন। এমনকি বিভিন্ন দৌড় প্রতিযোগিতায় তার অনেকগুলো দৌড়ের রেকর্ডও আছে।
সমকামিতা এবং সকল গবেষণাপত্র বাজেয়াপ্তকরণ
ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালের প্রযুক্তিবিদ বন্ধু আর্নল্ড ম্যুরের সাথে টুরিংয়ের সমকামিতার সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি এক সময় জানাজানি হয়ে যায়। তখন ইংল্যান্ডে সমকামিতা নিষিদ্ধ ছিল। টুরিংকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়। টুরিং ব্যাপারটি সম্পূর্ণরূপে স্বীকার করে নেন। কোনোরূপ বিরুদ্ধাচরণ করেননি তিনি, এমনকি এর স্বপক্ষ সমর্থন করে কোনোরূপ বিবৃতিও দেননি। আইন অনুযায়ী তাকে হয় জেলে যেতে হবে, না হয় এস্ট্রোজেন হরমোন সেবন করতে হবে। বহু চিন্তার পর টুরিং এই সিদ্ধান্তে আসলেন যে, তার অসমাপ্ত কাজগুলোয় মনোনিবেশ করার জন্য এস্ট্রোজেন হরমোন সেবন করাই উত্তম হবে। কিন্তু এস্ট্রোজেন টুরিংকে শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক দুর্বল করতে শুরু করে। কিন্তু তবু তিনি তার কাজ থেকে পিছিয়ে পড়েননি। সে সময়টাতে তিনি গবেষণা করছিলেন কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে। কিন্তু সমকামিতার জন্য ব্রিটিশ সরকার একে একে তার সব গবেষণা পত্র, স্বীকৃতি সব গোপন করতে শুরু করে।
টুরিং এই ব্যপারটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি। তিনি ভেবেছিলেন হয়তো তাকে আর কেউ বিশ্বাস করছে না। দিন দিন এভাবে তার একাকীত্ব বাড়তে থাকে এবং এক সময় তিনি আত্মহত্যার পথটাই বেছে নেন। নিজের ৪২তম জন্মদিনের ১৬ দিন আগে, ১৯৫৪ সালের ৭ই জুন তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ময়নাতদন্তে ফলাফলে আসে তিনি সায়ানাইড খেয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এভাবেই টুরিং হারিয়ে গিয়েছিল কালের গর্ভে।
সম্মাননা ও স্বীকৃতি
অনেকদিন ধরে কেউ মনে রাখেনি যে এই লোকটার কী অসামান্য অবদান ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে! যার জন্য মানুষ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো জিনিস নিয়ে ভাবার সাহস পেয়েছিলো, কম্পিউটার বিজ্ঞানকে যিনি দেখিয়েছিলেন অধুনিক যুগ, তার চর্চা হয়নি কোথাও।
কিন্তু সত্য চাপা থাকে না, পরবর্তীতে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ২০১৩ সালে টুরিংয়ের মৃত্যুর ৬০ বছর পর রাজকীয় ক্ষমার দলিলে স্বাক্ষর করেন এবং এর তিন বছর পর ২০ অক্টোবর ২০১৬ সালে ব্রটিশ সরকার সমকামীদের যৌনকর্মের জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়া হাজার হাজার সমকামী ও উভকামী পুরুষকে মরণোত্তর ক্ষমা করার জন্য নতুন “টুরিং আইন” ঘোষণা করে এবং এর সাথে তাদের উপর হওয়া এমন অবিচারের জন্য ব্রিটিশ সরকার ক্ষমা চায়।
তাছাড়া কম্পিউটার বিজ্ঞানের সবচেয়ে সম্মান জনক পুরস্কারটিও তার সম্মানার্থে “Turing Award” নামে নামকরণ করা হয়েছে।

Turing Award
এই কিংবদন্তী গণিতবিদ, বিজ্ঞানীর জীবনী নিয়ে একটা ছবিও বানানো হয়েছে, যার নাম “The Imitation Game”.
ছবিটা দেখেও অনেকটা উপলব্ধি করা যায় তার জীবনের শৈশবের একাকীত্ব, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তার অবদান, সমকামিতা আর সমকামিতার দরুণ তার ওপর নেমে আসা নানা অপমান, অবিচার।
সবশেষে এটাই বলতে হয়, অ্যালান টুরিং তার সময়ের চেয়ে অনেক অগ্রবর্তী একজন মানুষ ছিলেন। তার অকাল মৃত্যু আমাদের ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের পথকে করেছে আরো দীর্ঘ, আরো বন্ধুর। কে জানে, উনি আরো কাজ করতে পারলে হয়তো আমরা আজকের আবিষ্কারগুলো আরো দশ-বিশ বছর আগেই পেয়ে যেতাম!
তথ্যসূত্র –
https://en.wikipedia.org/wiki/Alan_Turing
https://www.biography.com/people/alan-turing-9512017