ভূমিকা
গত কয়েকমাস যাবৎ ফুসফুসের সমস্যাসহ হাবিজাবি অনেক সমস্যায় ভুগছি। কয়েকদিন আগে আবার যন্ত্রণার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে সঙ্গী হলো জ্বর ,হাঁচি, ও সর্দি! তবে, সবকিছু বাদ রেখে আজ বলবো হাঁচি নিয়ে। জ্বর ও সর্দি নিয়ে না হয় বকবক করা যাবে আরেকদিন। কিন্তু, মজার এই হাঁচি নিয়ে কিছু বলার লোভ সামলাতে পারলাম না! তাহলে চলুন একটু সময় নিয়ে পড়া শুরু করি!
হাঁচি কাকে বলে?
Achoo অথবা Sternutation নামক অদ্ভুত দুটি শব্দ চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যবহৃত হয় হাঁচিকে ডাকার জন্য! ল্যাটিন শব্দ Sterno থেকে sternutation শব্দটা এসেছে। যার ভালো অর্থ “প্রসারিত করা”। হাঁচি একটি শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে সম্পর্কিত ইচ্ছানিরপেক্ষ নিরাপত্তামূলক একটি বিশেষ শারীরিক ক্রিয়া যা কিনা দেহের অনেকগুলো অঙ্গের একটির পর একটি সাধারণ নড়াচড়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। একবার আপনি হাঁচির জন্যে টেনে দম নিলেন তো বাকী কাজটুকু আপনি আপনা-আপনিই করবেনই।
বিজ্ঞানীরা আমাদের ব্রেনের একটি নির্দিষ্ট অংশকে ‘হাঁচি কেন্দ্র’ বলে নামকরণ করেছেন। যখন আপনার নাকের ভেতরে সুড়সুড়ি লাগে, তখন একটি বার্তা আপনার ব্রেনের এই হাঁচি কেন্দ্রে পৌঁছে। এই হাঁচি কেন্দ্র তখন সাথে সাথে আরেকটি বার্তা সেই সকল দেহ পেশীকে প্রেরণ করে, যারা কিনা একত্রে মিলিত হয়ে একটি অসাধারণ জটিল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে, যাকে আমরা হাঁচি বলে থাকি।
আরে মিয়া, সারাজীবন হাঁচি দিলাম এত জটিল কিছু তো মনে হলো না! তাহলে আপনার জন্য সহজ কিছুও আছে। জটিলভাবে হাঁচি না বুঝলে সহজভাবে বুঝা যাক! হঠাৎ করে প্রবল বেগে নাক এবং মুখ থেকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাতাসের নির্গমনই হলো হাঁচি। হে হে হে! সহজ-ই তো! হাঁচি কিন্তু মোটেও কোন সহজ বিষয় না। একটি হাঁচির সময় ঘন্টায় প্রায় ১০০ মাইল বেগে (! ঠিকই পড়েছেন) নাক দিয়ে বাতাস বেরিয়ে আসে। আর এর সাথে বেরিয়ে আসা জলীয়পদার্থ প্রায় পাঁচ ফুট দূরত্ব পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। হাঁচির স্প্রের কথা ভুলে গেলে চলবে না – প্রায় ২০০০ থেকে ৫০০০ জীবাণুযুক্ত তরলপদার্থ নাক-মুখ দিয়ে হাঁচির মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। হাঁচি সম্পন্ন হওয়ার জন্যে এক সেকেন্ডেরও কম সময় লাগে। যদি নাক বন্ধ করে হাঁচি দেয়া হয়, তবে তা 176mmHg বায়ু চাপের সমান চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এটা আপনার শ্রবণ শক্তিকে এবং চোখকে নষ্ট করে দিতে পারে। তাই আপনার হাঁচি আপনি সহজে উড়িয়ে দিন ।
হাঁচিকে সাধারণত দু’টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথাঃ
১) সংবেদনশীল পর্ব
২) বহির্মুখী বা শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত পর্ব।
সংবেদনশীল পর্বে আপনার নাকে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, সুড়সুড়ি অনুভূত হয়। আর তা সংকেত দেয় যে কিছু একটা আসছে। আসলে হাঁচির জন্য দায়ী কোনো উপাদান বা গন্ধ নাকের ভেতরে মিউকোসা অংশে পৌঁছালে সেখানে উত্তেজনা বা সুড়সুড়ি জাতীয় অনুভূতি সৃষ্টির কারণে হিস্টামিন নামক একধরনের পদার্থ নিঃসৃত হয়। হিস্টামিন হলো এক ধরনের প্রাণীজ অ্যামিন। মূলত, হিস্টামিন সকল স্তন্যপায়ী কলায় উপস্থিত থাকে এবং শরীরের রোগ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায়, শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে এবং নিউরোট্রান্সমিটার হিসেবে কাজ করে থাকে। এটি মিউকোসা স্তরের নিচে ছড়িয়ে থাকা ট্রাইজেমিনাল স্নায়ু কোষকে উত্তেজিত করে। আর এর ফলাফল স্বরূপ একটি সংকেত আমাদের ব্রেনের হাঁচি কেন্দ্রে চলে যায়। ট্রাইজেমিনাল স্নায়ুটি আমাদের করোটির ১২টি স্নায়ুর মধ্যে ৫ম স্নায়ু যা কিনা আমাদের মুখের চামড়ার নিচে, পাশাপাশি নাকের কোমল মিউকোসা স্তরের নিচে ছড়িয়ে থাকে। আপনার নাকের চমড়ার নিচে থাকা ট্রাইজেমিনাল স্নায়ুর অংশগুলো খুবই সংবেদনশীল বা স্পর্শকাতর হয়ে থাকে। যখন ট্রাইজেমিনাল স্নায়ু উত্তেজিত হয় তখন একটি সংকেত সাথে সাথে মেডুলাতে পৌঁছে যায় এবং মেডুলার পাশে আঘাত করে। এই মেডুলা নামক অংশটিকেই হাঁচি কেন্দ্র বলা হচ্ছে।
হাঁচি দিলে যা ঘটে
যদি আমরা নাকে খুব বেশি সুড়সুড়ি দিই তবে সাথে সাথে এটি মেডুলার পার্শ্বীয় অংশে বা হাঁচি কেন্দ্রে চলে যায় এবং হাঁচি দেবার জন্যে আমাদের ফুসফুসে, চোখে আর গলায় একটি সংকেত প্রেরণ করে। তখন কিছু মজার ব্যাপার ঘটে! আসুন, জেনে নেওয়া যাক।
প্রথমতঃ চোখ বন্ধ হয়ে যায়। (যদি হাঁচি দেবার সময় আমাদের চোখ বন্ধ না হয়, তবে সম্ভবতঃ যে ক্রিয়া স্বাভাবিকভাবে হবার কথা তা ঘটেনি এবং এটা নির্দেশ করে যে, এই ধরণের হাঁচি স্বাভাবিক না বরং অস্বাভাবিক হাঁচি, যা রোগীর মানসিক সমস্যা আছে বলে নির্দেশ করে!)। তারপর আমরা গভীর নিঃশ্বাস বা বড় দম নিই। ফলে শ্বাসরন্ধ্র বন্ধ হয়ে যায়। তখন জিহ্বা মুখের ওপরের বিপরীতে চাপ দেয়।
তাই ফুসফুসে বাতাসের চাপ বৃদ্ধি পায় এবং বুকের পেশীগুলো আমাদের ফুসফুসকে দ্রুত সংকুচিত করে, ফলে একটি বাতাসের বিস্ফোরণ উপরের দিকে চলে আসে। গলার পেশী শক্ত হয়ে যায়। তখন বিস্ফোরণ আকারে মুখ এবং নাক দিয়ে খুব দ্রুত নিঃশ্বাস বের হয় এবং সাথে সাথে শ্বাসরন্ধ্রের পথ খুলে যায়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার ঘটে এই পর্যায়ে! কারণ, হাঁচি সম্পন্ন হলে এদিক ওদিক কয়েকবার তাকিয়ে নিই!
হাঁচির কারণ
হাঁচির অনেক অনেক কারণ আছে। তার মধ্যে কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো।
১। যখন কিছু মানুষ উজ্জ্বল আলোতে যায় তখন তাদের হাঁচি হয়। সেজন্য সূর্যালোক হাঁচির কারণ হতে পারে। আলোর জন্যে হাঁচি দেয়াকে গ্রীক ভাষায় বলে “ফোটিক্স স্নীজইং”। এর অর্থ “আলোর জন্যে হাঁচি”। অবশ্য আলোর সংবেদনশীলতা একটি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য!
২। ভ্রু তোলার সময় অনেক মানুষের হাঁচি হয়!
৩। ব্যয়াম করলে হাঁচি হয়। ব্যয়াম শেষে আমরা হাঁপিয়ে গিয়ে দ্রুত শ্বাস নিই। ফলে আমাদের নাক-মুখ দ্রুত শুকিয়ে যায়। আর এ অবস্থায় সুড়সুড়ি অনুভূত হয়ে হাঁচি হতে পারে।
৪। যৌনক্রিয়ার পরে হাঁচি হয়। গবেষকেরা মনে করেন যে, আমাদের দেহে উত্তেজনা সৃষ্টিকারী প্যারাসিম্প্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্র এর জন্য দায়ী।
৫। সবচেয়ে সাধারণ কারণ হচ্ছে ঠাণ্ডা লাগা বা ফ্লু এবং অ্যালার্জি। বাতাসে ভাসমান ফুলের পরাগরেণু,লোম, ধূলা-তে অ্যালার্জি হতে পারে। একে “ডাস্ট অ্যালার্জি ” বলা হয়।
৬। আমাদের ব্রেনের কোন রোগের জন্যেও হাঁচি হতে পারে। সাধারণত ব্রেনের মেডুলা অংশের কোন অস্বাভাবিকতা জন্যে হাঁচি হয়। একধরণের মৃগীরোগের ক্ষেত্রে হাঁচিটা দেখা যায়। চোখ প্রায় খোলা রেখে ছোট-ছোট করে হাঁচি দেয়াটাকে বিজ্ঞানীরা মানসিক রোগের লক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
৭। পেট ভরা থাকলে হাঁচি হয়! এটা অবশ্য তেমন একটা চোখে পড়ে না, তবে সত্যিই এমন কিছু ঘটে!
৮। ঘুমের মধ্যে অনেকের হাঁচি আসে। তবে, মানুষ ঘুমন্ত অবস্থায় হাঁচি দিতে পারে না। কারণ, আপনি যখন ঘুমান বা ঝিমান তখন আপনার হাঁচি হবার জন্য সাহায্যকারী পেশীগুলি বিশ্রামে থাকে। ফলে হাঁচি হয় না। তাই ঘুমন্ত মানুষ হাঁচি দেবার আগে জেগে ওঠে এবং তারপর হাঁচি দেয়।
৯। যে কোনো প্রকার গন্ধ নিঃশ্বাসে নেবার জন্যে হাঁচি হতে পারে।
১০। যে কোনো ধরণের নেশা ছেড়ে দেবার প্রাথমিক ফলাফল হিসেবে হাঁচি হতে পারে।
১১। কিছু জিনিসের সূত্রপাত যেমন ধূলা, দূষিত বাতাস, মসলাযুক্ত খাবার, ঝাঁঝালো অনুভূতির জন্য হাঁচি হতে পারে।
১২। কিছু মানুষের খাবারের অ্যালার্জির জন্যে হাঁচি হতে পারে।
১৩। গর্ভাবস্থায় থাকাকালে প্রকাশিত অনেকগুলি বিব্রতকর লক্ষণের মধ্যে একটি লক্ষণ হলো এই অতিরিক্ত মাত্রায় হাঁচি হওয়া। কিছু মহিলা এটা লক্ষ্য করেছেন যে, স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে গর্ভাবস্থায় তাদের হাঁচি দেবার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।
হাঁচি হবে, কিন্তু বের হতে দিবো না!
এমন মানসিকতার হলে নিচের গুলো পড়ে দেখুন। কাজে দিতে পারে-
১। যদি আপনি কাউকে দেখেন যে সে হাঁচি দিতে উদ্যত হচ্ছে, তবে তক্ষুণি উদ্ভট কিছু একটা কথা মুখ দিয়ে বলে ফেলুন। দেখবেন যে সে ব্যক্তির ব্রেন কিছু সময়ের জন্যে হাঁচি দেবার কথা ভুলে গেছে।
২। আপনার দাঁত দৃঢ়ভাবে কামড়ে ধরুন এবং দাঁতের পেছনে জ্বিহবা দিয়ে জোরে ধাক্কা দিন। এতে করে হাঁচি দেবার উত্তেজনা কমে যাবে।
৩। কালো জিরা নিয়ে গুড়ো করুন। এর পর এই গুড়ো হাতের তালুতে করে নাকের সামনে নিয়ে তা নিঃশ্বাসের সাথে ভেতরে টেনে নিন। এতে করে হাঁচি আর হবে না।
৪। যখন আপনার হাঁচি আসছে তখন জিহ্বার অগ্রভাগ দিয়ে মুখের ভেতরে উপরের দিকে তালুতে কাতুকুতু দিন। যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনার হাঁচি দেবার সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে, এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে থাকুন। এটা ৫-১০ সেকেন্ড সময় দেবে।
৫। একহাতের বৃদ্ধ আঙুল প্রসারিত করে হাতের অন্যান্য আঙুল থেকে টান-টান করে দূরে নিয়ে যান। এরপর বৃদ্ধ আঙুল এবং অন্যান্য আঙুলের মধ্যে অন্য হাতের বৃদ্ধ আঙুল দিয়ে খোঁচা দিন। এটা এমন একটা স্থান যেখানে চাপ সৃষ্টি করলে যেমন মাথাব্যথা কমে তার সাথে আবার হাঁচি হবার সম্ভাবনাও কমে যায়।
৬। মাথা সোজা রেখে আঙুল দিয়ে নাকের নিচে মাঝ ববাবর চুলকান। এতে করে হাঁচির সাথে যে সকল পেশি যুক্ত থাকে তাদের কিছু সংখ্যক পেশি শান্ত হয়ে যাবে।
৭। আপনার যদি মনে হয় যে হাঁচি আসছে তবে কানে লতি হাত দিয়ে ধীরে ধীরে নাড়ান। অনেক মানুষের সামনে হাঁচি থামাতে বা আড়াল করতে, এটা মনে হতে পারে যে আপনি আপনার কান নিয়ে খেলছেন।
৮। নাকের ডগা চেপে ধরুন এবং টেনে প্রসারিত করুন। তবে যেন সেটা ব্যথাদায়ক না হয়। এভাবে নাকের তরুণাস্থি প্রসারিত করলে হাঁচি থামবে।
৯। যখন আপনার মনে হবে যে হাঁচি আসছে তখন রুমাল বা টিস্যু নিয়ে নাক ঝাড়ুন। এটা প্রথমেই আপনার সাইনাস্কে পরিষ্কার করে দিবে যা কিনা হাঁচির কারণ হতে পারে।
১০। বৃদ্ধা এবং তর্জনী আঙুল দিয়ে উপরের ঠোঁটে চিমটি দিয়ে উপরে নাকের দিকে টানুন।
১১। জিহ্বা দিয়ে উপরের পাটির মাঝ বরাবর দুটি দাঁতের পেছনের দিকে চাপ দিন। জোরে চাপ দিন যাতে করে মুখের ভেতরে চোয়ালের উপরেও চাপ পড়ে এবং এতে করে আপনার নাকের ভেতরে চুলকানো বন্ধ হয়ে যাবে।
১২। ঘরে টেবিলের কাছে যেয়ে ঝুঁকে যান এবং টেবিলের ১ ইঞ্চি বা ২.৫ সেন্টিমিটার উপরে মাথা এনে জিহ্বা বের করুন। হাঁচি আসা স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে। এটা ৫-৭ সেকেন্ড সময় নেবে।
হাঁচি কমাতে সহায়তা করবে এমন কিছু টিপস –
১। অনেক খেলে বা পেট ভরে খেলে হাঁচি হয়। তখন আমাদের পাকস্থলি সম্পূর্ণ ভর্তি থাকে আর তার জন্যে অস্বস্তি বোধ হয়। ফলে হাঁচি ঠেকানো সম্ভব হয় না। তাই কম খাওয়া উচিত।
২। প্রস্তুত থাকুন যখন কিনা আপনি এমন একটি এলাকাতে প্রবেশ করছেন যেখানে আবহাওয়া হাঁচির জন্যে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। যেমন ফুলের পরাগরেণু আছে যেখানে, সেখানে প্রবেশের আগে সাবধাণতা অবলম্বন করা উচিত। হাতে টিস্যু রাখুন। টিস্যু ভিজিয়ে নাকের ছিদ্রের ভেতরে দিতে পারেন। গরম চা বা কফির বাষ্প নিঃশ্বাসের সাথে নিতে পারেন।
৩। যাদের অ্যালার্জির সমস্যাজনিত কারণে হাঁচি হয়, তাদের অ্যালার্জি জনিত উপাদানগুলো থেকে সবধানে থাকা উচিত। আমাদের চারপাশের আবহাওয়াতে উপস্থিত ধূলা-বালি, পরাগরেণু, মাইট অ্যালার্জি জনিত হাঁচির জন্যে দায়ী। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এ ক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজন।
৪। প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন।গরম পানির ভাব নিন। যতটুকু সম্ভব ঠান্ডা খাবার পরিহার করুন।
৫। ঘুমানোর সময় মাথা কিছুটা উঁচুতে রাখুন।
৬। দুই নাসারন্ধ্রের নিচে বাইরের ধারে দিনে ৩০-৪০ বার হালকা চাপ দিন। এটি কিছুক্ষণের জন্য আপনার হাঁচি কমাতে পারে।
৭। টক জাতীয় ফল এবং শাক-সবজি যেগুলো কিনা ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার সেগুলি আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় প্রচুর পরিমাণে রাখুন।
হাঁচির মন্দ দিক
রোগ জীবাণু ছড়ানোই হচ্ছে হাঁচির মন্দ দিক। তাছাড়া নাক-মুখ ধরে হাঁচি জোর করে ঠেকাতে গেলে মন্দ দিকটা ভাল মতো টের পাওয়া যায়। তাই হাঁচি একটা হোক কিংবা দশটা হোক ঠেকিয়ে রাখার চেয়ে বের হতে দেয়া ভাল। মোটকথা হাঁচি আসার আগে নাক সুড়সুড় করলে আঙুল বা রুমাল দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করুন। কিন্তু হাঁচির জন্যে বুক ভরে বাতাস নেবার পর তা আর ঠেকাবার চেষ্টা করবেন না। আর যদি চেষ্টা করেন তবে নিচের সমস্যাগুলির কোনো একটা হতে পারে। হাঁচির সব মন্দ দিকগুলি একনজরে দেখা যাক…
১। ঘাড়ের বা কোমরের জয়েন্টে ব্যথা থাকলে হাঁচির কারণে টান লেগে তা বাড়তে পারে। অবশ্য দাঁড়িয়ে হাঁচি দিলে এই টানটা বেশি লাগে। তাই বসে হাঁচি দিন।
২। নাক দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। এমনকি নাক ভেঙ্গেও যেতে পারে।
৩। শ্বাসকষ্ট-সহ বুকে ব্যথা হতে পারে।
৪। মাথাব্যথা হতে পারে।
৫। শরীর তুলনামূলক দুর্বল লাগতে পারে।
৬। চোখের সাদা অংশের রক্তনালী ছিঁড়ে যেতে পারে। ফলে চোখের সাদা অংশে দাগ হতে পারে।
৭। কানের পর্দা ফেটে যেতে পারে। অনেক সময় শ্রবণশক্তি কমে যায়। কান দিয়ে গরম বাতাস বের হতে পারে, কান গরম হয়ে যায়।
৮। দেহের ভারসাম্য নষ্ট হয়।
৯। গলার ভেতরের ত্বক ফেটে গিয়ে কফের সাথে রক্ত আসতে পারে।
তবে, “হাঁচি দিলে ব্রেনের কোষ ধ্বংস হয়” এমন ধারণা যারা রাখেন, তাদের উদ্দেশ্যে স্নায়ু বিজ্ঞানী ডাক্তার রিচার্ড বলেন যে, “হাঁচি দিলে আমাদের ব্রেনে কিছুটা চাপের সৃষ্টি হয়। কিন্তু এই চাপের পরিমাণ খুবই সামান্য এবং চাপটা এতোটাই হাল্কা যে এটি আমাদের ব্রেনের কোষকে ধংস করার মতো যথেষ্ট নয়। যারা কয়েকটি হাঁচি দিয়ে সহজেই কাবু হয়ে যায় তাদের ব্রেনে হাঁচির চাপ পড়ার জন্যে মাথাব্যথা হবার সম্ভাবনা থাকে”।
হাঁচি আমাদের গলার পেছন থেকে বেরিয়ে আসে এবং প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি তরল কণা এটি সৃষ্টি করে। কিছু কিছু তরল কণা ঘণ্টায় প্রায় ১০০ মাইল বেগেও বেরিয়ে আসতে পারে। এই তরল কণার মধ্যে বেশির ভাগের আকার ১০০ মাইক্রোনেরও কম হয়, অনেকটা আমাদের চুলের প্রস্থের সমান। তাদের অধিকাংশ এতোই ছোট যে আমরা তাদের খালি চোখে দেখতে পারি না। আকারে তুলনামূলক বড় তরল কণাগুলি দ্রুত মাটিতে পড়ে যায়। আর ৫ মাইক্রোন বা তার থেকেও ছোট হাল্কা কণাগুলো মাটিতে না পড়ে বাতাসে ভেসে চারিদিকে ছড়িয়ে যায়।
ঘরের মধ্যে হাঁচি দিলে মেঝেতে পড়ে থাকা তরল কণাগুলি কিছুক্ষণ পর বায়ুবাহিত হয়ে যায়। ঘরে প্রবাহিত বাতাসের মাধ্যমে মেঝে থেকে হাঁচির সাথে বেরিয়ে পড়া জীবাণুগুলি বাতাসে ভাসা আরম্ভ করে। ঘরে মানুষের হাটা-হাটির জন্যও জীবাণুগুলি বাতাসে উড়ে বেড়ায়। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যদি একজন অসুস্থ মানুষ হাঁচি দেয় তবে তার হাঁচির মাধ্যমে নিসৃত তরল কণাগুলি প্রায় ২০ লক্ষ বিভিন্ন প্রকারের ভাইরাস ছড়াতে সক্ষম! মানুষের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতার উপর এই ভাইরাস গুলোর আক্রমণের হার নির্ভর করে।
হাঁচির ভালো দিকসমূহ –
হাঁচি আপনার দেহকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি ভূমিকা পালন করে। কারণ, এর মাধ্যমে আমাদের দেহ থেকে বিভিন্ন জীবাণু বের হয়ে যায়। সব ধরণের একটা বা দুইটা হাঁচিই আমাদের দেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার একটি ক্রিয়া মাত্র।বাতাসে উপস্থিত জীবাণু, ধূলা, পরাগরেণুর ইত্যাদি আমাদের দেহে ফুসফুসের ভেতরে যাতে প্রবেশ করতে না পারে তার জন্যে আমাদের নাক প্রাকৃতিক ছাঁকনি হিসেবে কাজ করে। হাঁচি দিলে নাকে জমে থাকা এই ময়লা উপাদানগুলি সাফ হয়ে যায়। যা কিনা আমাদেরকে সুস্থ থাকতে এবং ভালভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সাহায্য করে।
কাঁপুনি, কাশি, হেঁচকি ওঠা আর হাই তোলার মতো হাঁচি-ও ইছানিরপেক্ষ ক্রিয়া। কিন্তু এদের মধ্যে হাঁচি-ই আমাদের দেহের জন্য উত্তম। নাকে উপস্থিত ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস হাঁচির মাধ্যমে পরিষ্কার হয়ে যায়। হাঁচির ফলে আমাদের নাকের ভেতরের ময়লা এবং জীবাণু বের হয়ে নাক পরিষ্কার হয়ে যায় এবং আমরা নিঃশ্বাস নিতে আরাম বোধ করি। আমাদের দেহের ভেতরে বিভিন্ন জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য উপাদান যেমন মশা, মাছি বা অন্যান্য পোকা-মাকড়ের প্রবেশকে প্রতিরোধ করে হাঁচি। আবার হাঁচির ফলে আমাদের ব্রেন বেশ সক্রিয় হয় এবং আলস্য দূর হয়ে দেহ বেশ ঝরঝরে হয়ে যায়।
সূত্রঃ
১) www.healthprior21.com/health-tips/52513e296a16a-কথায়-কথায়-হাঁচি
২) kidshealth.org/kid/talk/qa/sneeze.html
৩) wikihow.com/Stop-a-Sneeze
৪) www.foodpyramid.com/parenting-pregnancy/how-does-sneezing-during-pregnancy-affect-you-and-your-baby-9818/
৫) helpfulhub.com/wiki/হঠাৎ-আলো-দেখলে-হাঁচি-হয়-কে/
৬) https://en.wikipedia.org/wiki/Sneeze
৭) https://bn.wikipedia.org/wiki/হিস্টামিন