অনেকেই লন্ডন আর মেলবোর্নের আবহাওয়াকে আজগুবী বলে জানেন। এসব অঞ্চলের আবহাওয়ার পূর্বাভাসকে বিশ্বাস করলেই নাকি ধরা খেতে হবে! কিন্তু রোসো বাপু, আসছে আন্দেস পর্বতমালা। এটি হল দুনিয়ার সবচেয়ে বেশী বৈচিত্র্যময় আবহাওয়ার অধিকারী। আবহাওয়ার রঙঢঙ অনুযায়ী একে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয় – গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আন্দেস, শুষ্ক আন্দেস এবং আর্দ্র আন্দেস। ভাগগুলো দেখেই বুঝা যায়, এক অঙ্গে কতো রূপ!
আন্দেস পৃথিবীর দীর্ঘতম পর্বতমালা। দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত এই পর্বতমালার দৈর্ঘ্য কমপক্ষে ৭,০০০ কি.মি.। উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে প্রসারিত হওয়া এই পর্বতমালা মোট সাতটি দেশ জুড়ে অবস্থিত, যথা – ভেনেজুয়েলা, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, পেরু, বলিভিয়া, চিলি এবং আর্জেন্টিনা। দুনিয়ার সবচেয়ে উঁচু আগ্নেয়গিরিগুলোও আন্দেসে অবস্থিত। এটি এশিয়ার বাইরে অবস্থিত সর্বোচ্চ পর্বতমালাও বটে, যার সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম আকোঙ্কাগুয়া।
মাহাত্ম্য বন্দনা শেষে আসি আবহাওয়ার ঘন ঘন আচরণ পাল্টানোর ব্যাপারে।
অক্ষাংশ, উচ্চতা এবং সাগরের নিকটে নাকি দূরে – এই তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করেই মূলত আন্দেসের আবহাওয়া পাল্টায়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যত উঁচুতে ওঠা হবে, ততই তাপমাত্রা, বায়ুচাপ এবং আর্দ্রতা কমতে থাকবে। আন্দেসের দক্ষিণাঞ্চল বৃষ্টিপ্রবণ এবং ঠাণ্ডা, মধ্যাঞ্চল শুষ্ক এবং উত্তরাঞ্চলে বৃষ্টি এবং গরম, দুটোই দেখা যায়।
মজার ব্যাপার হল, আন্দেসে কিছু দূরত্ব পরপরই আবহাওয়ার তারতম্য চোখে পড়ে। যেমন – কয়েক কিলোমিটার পরপর বা কয়েকশো কিলোমিটার বা হাজার কিলোমিটার পরপর ভিন্ন আবহাওয়া!
পূর্ব ও পশ্চিম ঢাল এবং তদসংলগ্ন নিম্নভূমিতে সম্পূর্ণ বিপরীত আবহাওয়া দেখা যায়। যেমন – প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূল সংলগ্ন পশ্চিম ঢালে ঠাণ্ডা এবং বৃষ্টিপাতহীন আবহাওয়া আর পূর্ব ঢালে দেখা যায় উষ্ণ, আর্দ্র, বৃষ্টিপাতপ্রবণ আবহাওয়া। আবার চিলির দক্ষিণাংশে অবস্থিত রেইন ফরেস্টের কারণে আন্দেসের পশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টি পড়ে, বরফও পড়ে; কিন্তু আর্জেন্টিনার শুষ্ক তৃণভূমির কারণে পাশের পূর্বাঞ্চলেই দেখা যায় “সামান্য” বৃষ্টি। আতাকামা মরুভূমিও চিলি এবং আর্জেন্টিনার আন্দেসে শুষ্ক আর আর্দ্র, উভয় ধরণের আবহাওয়া সৃষ্টি করে।