ইউটিউবে ডিসকভারি চ্যানেলের তৈরি করা “Large asteroid impact simulation” দেখছিলাম। দেখতে দেখতে এক অবাক বিস্ময়ে ডুবে গেছিলাম।ওমনি ইচ্ছা জাগলো “গ্রহাণু” বা “asteriod” সম্পর্কে একটু বিস্তরিত জানার। পাঠ্যাবইয়ে বর্ণিত “গ্রহাণুর সংজ্ঞা” ছাড়া বিশেষ কিছু আমি জানতাম না। যাই হোক, গুগলে সার্চ-টু-খোঁজ করে গ্রহাণুর সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য পেলাম। সেগুলো নিয়েই আমার আজকের এই কাহিনী:-
♦ গ্রহাণু কী?
গ্রহাণু কথাটির সন্ধি বিচ্ছেদ করলে হয় গ্রহ+অণু=গ্রহাণু। অর্থাৎ, গ্রহের অণু যা তাই গ্রহাণু। কিন্তু এ থেকে গ্রহাণুর সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাওয়া যায় না। NASA-এর সংজ্ঞানুযায়ী, Asteriod বা গ্রহাণুরা হল পাথুরে, বায়ুমণ্ডলহীন, ধাতব এক বস্তু যেগুলি সূর্যের চারপাশে প্রদক্ষিণ করছে। এগুলির মাধ্যাকর্ষণ শক্তি খুব কম হয় এবং এরা আকৃতিতে গ্রহের থেকে অনেক অনেক ছোটো হয় যার জন্য অনেকসময় এদের “Minor Planet”বা “গৌণ গ্রহ”-ও বলা হয়।তারা এতোটাই ছোটো যে-এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত গ্রহাণুগুলির সমগ্র ভর যা হবে, তা আমাদের পৃথিবীর চাঁদের ভরের তুলনায়-ও কম হবে। এখনো পর্যন্ত পাঁচ হাজারের বেশি গ্রহাণু পাওয়া গেছে।
♦ গ্রহাণুর সৃষ্টি
গ্রহাণুর সৃষ্টি সম্পর্কে দুটি মতবাদ প্রচলিত।
১) বেশিরভাগ গ্রহাণুগুলি মঙ্গল ও বৃহস্পতির মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করে। প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে যখন আমাদের সৌরজগৎ সৃষ্টি হয়েছিল, তখন মঙ্গল ও বৃহস্পতির মধ্যবর্তী অংশে আরো একটি গ্রহ সৃষ্টি হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু দুটি কারণে নতুন কোনো বামন গ্রহ এখানে সৃষ্টি হতে পারেনি:-
এক, সম্মিলিত গ্রহাণুপুঞ্জের ভর(যা পৃথিবীর চাঁদের তুলনায়-ও কম)
দুই, বৃহস্পতির অত্যন্ত শক্তিশালী মাধ্যাকর্ষণ।যা গ্রহাণুগুলিকে পরস্পরের সাথে একত্রিত হতে বাধা দিচ্ছিলো।
২)মনে করা হয়, এটি কোনো এক গ্রহের অংশবিশেষ যা কোনো এক সংঘর্ষের ফলে সমগ্র সৌরজগতে ছড়িয়ে পড়ে।
ধূমকেতু, গ্রহাণু, উল্কা, উল্কাপাত, উল্কাপিণ্ড – এর মধ্যে পার্থক্য কী?
১) গ্রহাণু (Asteroid):-আগেই বলেছি, এটি একটি খুব ছোটো, ধাতব,পাথুরে, বায়ুমণ্ডলহীন এক বস্তু যা সূর্যের চারিদিকে আবর্তন করে।
২) ধূমকেতু (comet):- ধূমকেতু হলো সূর্যের চারপাশে ঘুরতে থাকা এক লেজবিশিষ্ট বস্তু। সৌরজগতের অন্যান্য বস্তুর মতো এরা পাথর দিয়ে তৈরি নয়, বরং এরা মহাকাশে মজুত ধূলিকণা, গ্যাস ও বরফ দিয়ে তৈরি। এরা যখন সূর্যের কাছাকাছি চলে আসে তখন এদের বাইরের স্তরের বরফ গলতে শুরু করে এবং এর চারপাশে ধূমায়িত আবহ তৈরি করে যেখানে ধূলিকণা ও গ্যাস থাকে, একে বলা হয় কোমা (coma)। সূর্যের শক্তিশালী বিকিরণের প্রভাবে এই ধূলিকণাগুলি সম্প্রসারিত হয়ে একটা লেজের আকৃতি ধারণ করে, যার দৈর্ঘ্য ১ কোটি কিলোমিটার-ও হতে পারে। সূর্যের খুব কাছে চলে এলে এদের লেজটি আলোকিত হয়। এমন অবস্থায় এদের খালি চোখেও দেখা যায়। তবে ধূমকেতুর লেজ যে সাধারণ সব লেজের মতোন-ই পিছন দিকে থাকবে তা কিন্তু নয়। ধূমকেতু যেদিকেই যাক না কেনো এর লেজটা কিন্তু সবসময় সূর্যের উল্টোদিকে থাকে। ওইজন্য অনেকসময় ধূমকেতু দেখে মনে হয় যে ধূমকেতুর সামনের দিকে লেজ যাচ্ছে।
৩) উল্কা (Meteoroid):- ধূমকেতু কিংবা গ্রহাণুর এক অংশ।
৪) উল্কাপাত (Meteor):- যখন কোনো উল্কা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে এসে পৌঁছায়,তখন পৃথিবীর অভিকর্ষ বলের প্রভাবে সে ভূপৃষ্ঠে পতিত হতে থাকে। এবং ক্রমশ বাষ্পীভূত হয়ে ধ্বংস হতে হতে এক বিশেষ আলোকিত ঘটনার সৃষ্টি করে যাকে আমরা “Shooting Star” বা “তারা খসা” নামে চিহ্নিত করি; যদিও এরা মোটেই কোনো তারা বা নক্ষত্র নয়। এই ঘটনাকেই Meteor বলা হয়।
৫) উল্কাপিণ্ড (Meteorite):- যখন কোনো উল্কা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয় না এবং ভূপৃষ্ঠে এসে পতিত হয় তাকে Meteorite বা উল্কাপিণ্ড বলা হয়।
♦আবিষ্কার ও নামকরণ
১৮০১ খ্রিস্টাব্দে ইতালীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী Giuseppe Piazzi আকাশের তারাদের মানচিত্র আঁকার দায়িত্ব পান। এই তারাদের মানচিত্র তৈরি করার সময়ে তিনি মঙ্গল ও বৃহস্পতির কক্ষপথের মাঝখানে গ্রহের থেকে ভিন্ন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এক বস্তুর আবিষ্কার করেন, যার নাম দেন Ceres। যাকে এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত গ্রহাণুগুলির মধ্যে সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহৎ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এরপর একের পর এক গ্রহাণু আবিষ্কৃত হয়। ১৮০২ খ্রীষ্টাব্দে William Herschel এই সদ্যআবিষ্কৃত বস্তুদের “Asteroid” নামে অভিহিত করেন,কিছু কিছু বিজ্ঞানী আবার এদের minor planet বা গৌণ গ্রহ নামেও চিহ্নিত করেছিলেন। ১৮৫১ সালে ১৫ টা গ্রহাণু আবিষ্কৃত হওয়ার পর নামকরণের পদ্ধতিতে পরিবর্তন করা হয়। Ceres কে চিহ্নিত করা হয় (1) Ceres নামে।এখোনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত গ্রহাণুগুলির মধ্যে একমাত্র Ceres কেই গ্রহাণু ও বামনগ্রহ দুই বিভাগের-ই সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
পরবর্তীকালে Star Trek সিনেমার Spock, রক মিউজিশিয়ান Frank Zappa-র নামেও গ্রহাণুর নামকরণ হয়েছে। ২০০৩ সালে কলম্বিয়া মহাকাশযানের দুর্ঘটনায় নিহতদের শ্রদ্ধা জানাতে তাদের নামেও ৭ টি গ্রহাণুর নামকরণ করা হয়।
♦গ্রহাণুর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কেমন?
এখোনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড়ো গ্রহাণু হলো Ceres যার পৃষ্ঠের দৈর্ঘ্য ৯৪০ কিমি(প্রায় ৫৮৩ মাইল)। অন্যদিকে, সবথেকে ছোটো গ্রহাণুর নাম হল ২০১৫ TC25, যার দৈর্ঘ্য মাত্র ২ মিটার। বেশিরভাগ গ্রহাণুর আকার-আকৃতির কোনো সীমাবদ্ধতা না থাকলেও, কিছু কিছু গ্রহাণু গোলাকার হয়-এর প্রকৃত উদাহরণ হলো Ceres। এই গ্রহাণুগুলি প্রায় সময়-ই গহ্বরযুক্ত হয়। বলাবাহুল্য, গ্রহাণু Vesta-এর মধ্যে একটি গহ্বর আবিষ্কৃত হয়েছে যার ব্যাস প্রায় ৪৬০ কি.মি.।
গ্রহাণুগুলির কক্ষপথ সাধারণত উপবৃত্তাকার হলেও তাদের মাঝেমাঝে সেই উপবৃত্তাকার পথ ধরেই এঁকেবেঁকে চলতে লক্ষ্য করা যায়। আরেকটি মজার ব্যাপার হলো, আবিষ্কৃত প্রায় ১৫০ টি গ্রহাণুর-ই নিজস্ব চাঁদ আছে। কারুর কারুর আবার দুটি চাঁদ-ও আছে। বাইনারি(Binary) এবং ডাবল(double) গ্রহাণুপুঞ্জের উপস্থিতিও টের পাওয়া গেছে। সাধারণত গ্রহাণুগুলির কক্ষপথ যখন প্রায় সমান হয় তখন তারা পাশাপাশি অবস্থান করে সূর্যকে আবর্তন করে। ঠিক এভাবেই Triplet গ্রহাণুপুঞ্জের অস্তিত্ব-ও বিদ্যমান।
কিছু গ্রহাণু আবার বেশ মজার। তারা অনেকসময় গ্রহের প্রবল আকর্ষণজনিত বলের প্রভাবে তাদের উপগ্রহে পরিণত হয়ে যায়। উদাহরণ হিসেবে মঙ্গলের দুই উপগ্রহ Phobos এবং Deimos এর কথা বলা যেতেই পারে। যারা একসময় গ্রহাণু ছিলো, পরবর্তীকালে মঙ্গলের আকর্ষণজনিত বলের প্রভাবে তার চারপাশে আবর্তন করতে থাকে।
গ্রহাণুর পৃষ্ঠের তাপমাত্রা সাধারণত -৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন গ্রহাণুরা বিলিয়নের পর বিলিয়ন বছর অবিকৃত অবস্থায় থাকে, যা সৌরজগতের এক অভূতপূর্ব ঘটনা।
আকার-আকৃতিতে গ্রহাণুর প্রকারভেদ আছে। কোনো গ্রহাণু নিরেট কঠিন, তো আবার কোনো গ্রহাণু অসংখ্য ছোটো ছোটো পাথরের টুকরোর সমন্বয়ে তৈরি।নেপচুন ও ইউরেনাস এর মাঝে অবস্থিত গ্রহাণুগুলির চারপাশে ধূলিকণা ও খুব সূক্ষ পাথরকুচি দ্বারা গঠিত রিং দেখা যায়। এরকম রিং আবৃত একটি গ্রহাণুর নাম Chariklo।
♦গ্রহাণুরা কতো ধরনের হয়?
Main Asteroid Belt বা, প্রধান গ্রহাণু বন্ধন:-আগেই বলেছি,বেশিরভাগ গ্রহাণু মঙ্গল ও বৃহস্পতির মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করে। এই অঞ্চলটিকে প্রধান গ্রহাণু বন্ধন(MAE) নামে অভিহিত করা হয়। এখানে প্রায় ১.৯ মিলিয়ন গ্রহাণুর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় যাদের ব্যাস ১ কিলোমিটারেরও বেশি। অনেক ছোটো গ্রহাণুর অস্তিত্বের অাভাসও পাওয়া গেছে।
ট্রোজানস(Trojans):- এই ধরণের গ্রহাণুগুলি কোনো বড়ো গ্রহের কক্ষপথ বরাবর আবর্তন করে। এগুলি গ্রহের সামনে কিংবা পিছনে কক্ষপথের বিশেষ একটি স্থানে(L4 কিংবা,L5 Lagrangian point) এমনভাবে অবস্থান করে যে সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ জনিত বল ও সেই গ্রহের মাধ্যাকর্ষণজনিত বলের পরস্পর প্রভাবের ফলে সে স্থির থাকে, কক্ষপথের বাইরে ছিটকে যায় না।
Near-Earth Asteroids(NEA)-এই ধরণের গ্রহাণুগুলি পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে চলে যায়। যে গ্রহাণুগলি পৃথিবীর কক্ষপথকে ছেদ করে তাদের সাধারণত Earth-Crossers নামে চিহ্নিত করা হয়। এই গ্রহাণুগুলির মধ্যে যেগুলি পৃথিবীপৃষ্ঠে আঘাত হানতে পারে বলে মনে করা হয় তাদের “potentially hazardous” কিংবা “সম্ভাব্য বিপজ্জনক” গ্রহাণু বলা হয়। ১৫ ই জুন,২০১৩ এর রিপোর্ট অনুযায়ী প্রায় ১ কিলোমিটার ব্যাস সম্পন্ন প্রায় ৮৬১ টি “NEA” এর খোঁজ পাওয়া গেছে, এবং ১৪০৯ টি “সম্ভাব্য বিপজ্জনক” হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
এটা গেলো কক্ষপথের উপর ভিত্তি করে গ্রহাণুর শ্রেণীবিভাগের কথা। এবার আসি রাসায়নিক গঠনের উপরে ভিত্তি করে গ্রহাণুর শ্রেণীবিভাগে।
প্রায় ৭৫% গ্রহাণু ধূসর রঙের হয় এবং এদের c-type বা chondrite বলা হয়। এরা সাধারণত চুনাপাথর ও সিলিকাপাথর দ্বারা গঠিত হয়।
S-type অথবা sillicaceous গ্রহাণুরা সিলিকা ও লৌহ-নিকেল দ্বারা গঠিত হয়। এই ধরণের গ্রহাণুর সংখ্যা সমগ্র গ্রহাণুর প্রায় ১৭%।
M-type অথবা Metallic বা ধাতব গ্রহাণুরা শুধুমাত্র লৌহ-নিকেল দ্বারা গঠিত হয়। এই গ্রহাণুগুলি “প্রধান গ্রহাণু বন্ধন”-এর মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করে।
Vesta হলো একমাত্র V-type গ্রহাণু যার পৃষ্ঠদেশ গলিত লাভা ও আগ্নেয় শিলা দ্বারা গঠিত।
♦পৃথিবীর উপর গ্রহাণুর প্রভাব কেমন?
প্রায় ৪.৬ বিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী সৃষ্টি হওয়ার মূহূর্ত থেকে এখনো পর্যন্ত প্রতিনিয়তই গ্রহাণুরা পৃথিবীতে আঘাত হানছে।
NASA-এর গবেষণা অনুযায়ী, প্রায় প্রতিবছর অন্তত একটি মোটরগাড়ির আকৃতির গ্রহাণু পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে এসে পড়ে, এবং ভূপৃষ্ঠে পতিত হওয়ার আগেই জ্বলে-পুড়ে ছাই হয়ে যায়। সাধারণত ২৫ মিটারের কম দৈর্ঘ্যের কোনো মহাজাগতিক প্রস্তরখন্ড পৃথিবীর বায়ুমণ্ডন্ডলে প্রবেশ করলে তা ভূপৃষ্ঠে পৌঁছানোর আগেই ধ্বংস হয়ে যায়। যদি কোনো কারণে ধ্বংস না হয় তাহলেও পৃথিবীপৃষ্ঠে আঘাতের পরিমাণ খুবই কম। ২৫ মিটারের বেশি কিন্তু ১ কিমির কম দৈর্ঘ্য সম্পন্ন কোনো উল্কাপিণ্ড যখন পৃথিবীতে আঘাত হানে, তখন সেই আঘাতপ্রাপ্ত স্থানের সংলগ্ন অঞ্চল দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আঘাতের তীব্রতায় ভূমিকম্প এমনকি সুনামির-ও সৃষ্টি হতে পারে।
কিন্তু, ২০১৩ সালের ১৫ ই ফেব্রুয়ারী রাশিয়ার Chelyabinsk শহরে গ্রহাণু আঘাত করে। ফলস্বরূপ এক তীব্র ভূ-কম্পনের সৃষ্টি হয় যা প্রায় ১২০০ মানুষকে আহত করে। পরে দেখা গেছে, এটি যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করেছিলো তখন এর দৈর্ঘ্য ছিলো মাত্র ২০ মিটার।
সমগ্র মানবপ্রজাতিকে ধ্বংস করার জন্য ১-২ কিমি দৈর্ঘ্যের গ্রহাণুই যথেষ্ট। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন এইরকম একটি গ্রহাণুর আঘাতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে একটি “নিউক্লিয়ার মেঘ” সৃষ্টি হয়ে এক প্রবল ধূলিকণার ঝড়ের জন্ম দেবে। সাথে সাথে সৃষ্টি করবে তীব্র ভূমিকম্প, যার প্রভাবে সমগ্র মানবসভ্যতার অবলুপ্তি ঘটবে। “সম্ভাব্য বিপজ্জনক” গ্রহাণুগুলির মধ্যে বেশ কিছু গ্রহাণু যে-কোনো সময় পৃথিবীকে ধ্বংস করতে পারে। তবে এখন প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতি ঘটেছে, চেষ্টা চলছে এমনকিছু পদ্ধতির আবিষ্কার করার যার ফলে গ্রহাণুগুলিকে পৃথিবীতে পৌঁছোনোর আগেই ধ্বংস করা যায়, কিংবা তাদের কক্ষপথ বিচ্যুত করে দেওয়া যায়।
পৃথিবী সৃষ্টির পিছনেও গ্রহাণুর এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে মনে করা হয়। পৃথিবী যখন সৃষ্টি হয়েছিলো তখন তা শুষ্ক ছিলো। মনে করা হয় হয়তো এই গ্রহাণুগুলিই অন্য কোনো গ্রহ থেকে প্রথম কার্বন-যৌগ ও বরফ পৃথিবীতে নিয়ে এসে প্রাণের সঞ্চার ঘটিয়েছিলো। অবশ্য এর পরে গ্রহাণুর আঘাতের ফলে প্রাণের বিনাশ-ও ঘটেছে। ডাইনোসরদের অস্তিত্বর অবলুপ্তির পিছনে গ্রহাণুর আঘাত এক বড়ো ভূমিকা পালন করে।
নামের মধ্যে ‘অণু’ থাকলেও “গ্রহাণু” সৌরজগতের এক বিস্ময়, যা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে উপলব্ধি করায়, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে কোনো জিনিসই আসলে ছোটো নয়; সবাই কোনো না কোনো দিক থেকে মহান।
তথ্যসূত্র:-
http://www.space.com/51-asteroids-formation-discovery-and…
https://www.nasa.gov/…/asteroids/overview/fastfacts.html
http://solarviews.com/eng/asteroid.htm
http://space-facts.com/asteroids/