গত বছর আমি এক বাচ্চা মেয়েকে পড়িয়েছি, ২ মাসের জন্য। চ্যালেঞ্জটা ছিল মেয়েটাকে যেভাবে হোক পাস করাতে হবে। প্রশ্ন করতে পারেন, মেয়েটা কি খুবই খারাপ ছাত্রী? হ্যাঁ, কারণ পাস করাটা খুব সহজ কিন্তু তার জন্য কঠিন। কিন্ত আমার দৃষ্টিতে আসলে সে খারাপ ছাত্রী না, সে আসলে ADHD এর রোগী। ADHD = Attention Deficit Hyperactivity Disorder.
আমি তাকে পাস করাতে সক্ষম হয়েছিলাম। আমি যেটা করেছিলাম, দরজা বন্ধ করে সম্পূর্ণ রুমটা গণিত বানিয়ে ফেলতাম। আসলে এই রোগীরা সব সময় কল্পনার জগতে থাকে, তাই আমি তার কল্পনায় রুমটাকে গণিত করে দিয়েছিলাম। একটু পর পর তাকে রুম থেকে বের করে দিয়ে বলতাম, “যাও, একটু ঘুরে এসো”। কারণ, এই রোগীরা বেশিক্ষণ একটা জিনিসে মনযোগ ধরে রাখতে পারে না। পাস করার পর, আবার তাকে আমার পড়ানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। আমি বললাম, “আমার পক্ষে এই মেয়েকে পড়ানো সম্ভব না আর, কারণ আমি নিজেই একজন ADHD এর রোগী”।
স্কুল জীবনে সব সময় আমার নামে অভিযোগ আসতো , “ছেলেটা খুবই অমনোযোগী।”
কেন আমার লেখা পোস্টে এত বানান ভুল হয়? (প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, বিজ্ঞানযাত্রায় জমাকৃত লেখাগুলো প্রকাশের আগে সম্পাদনা করা হয়।) কেন আমি বেশিক্ষণ কাউকে সময় দিতে পারি না? কেন আমার পাবলিক প্লেসে কর্মকাণ্ড মাঝে মাঝে এত অসামাজিক হয়? কেন আমার চারপাশের ছোট ছোট জিনিস চোখে পড়ে না? কারণ আমি ADHD নিয়ে জন্মেছি।
ADHD একটি জন্মগত মানসিক রোগ। অনেকেই মনে করেন এটি কোনো মানসিক রোগ না, কারণ এটি একধনের মানুষের জন্মগত বৈশিষ্ট্য। সাধারণত ADHD রোগীদের মস্তিষ্কের নিউরো ট্রান্সমিটারে সমস্যা থাকে। এরা চাইলেও কোনো বিষয়ে বেশিক্ষণ মনযোগ দিতে পারে না, আবার এরা যা পছন্দ করে তাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে মনযোগ দিতে পারে, যা সাধারণ মানুষ পারবে না। তাই একে অনেক মনোবিজ্ঞানী ঈশ্বরপ্রদত্ত (!) রোগ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
কেন এই রোগ হয়? বিজ্ঞানীরা এখনো জানে না। তবে অনেকে মনে করে বাবা-মা এর কোনো মানসিক আসক্তি জাতীয় রোগ থাকলে সন্তান ADHD সহ জন্মাতে পারে। কিন্ত আমার সমর্থন এই অনুমানটিতে -“সন্তান পেটে থাকতে মা যদি বিষণ্ণতা বা দুশ্চিন্তায় ভোগে, তাহলে সন্তানের ADHD হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।”
যে সব বাচ্চারা পড়াশোনায় অমনযোগী, তাদের বকা না দিয়ে অথবা চাপ প্রয়োগ না করে, আমাদের উচিৎ বরং মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া এবং তার প্রতি আলাদা করে যত্ন নেওয়া।