‘Beetles’ – বাংলায় গুবরে পোকা।
ছোটবেলায় ভাবতাম গুবরে পোকা মানে গোবরে জন্ম নেওয়া পোকা। কিন্তু এরা আসলে Coleoptera বর্গের একদল পোকা। Coleoptera শব্দটি এসেছে গ্রীক হতে যার অর্থ “sheathed wing” অর্থাৎ খাপবিশিষ্ট ডানা কারণ প্রায় সকল গুবরে পোকার দুই জোড়া ডানা আছে । সামনের জোড়া মূলত শক্ত হয়ে থাকে, এরা পুরু হয়ে পিছনের জোড়াকে এবং এদের উদরকে নিরাপত্তা দেয়।
Coleopteran বর্গে অন্য যে কোনো বর্গ থেকে অনেক বেশী প্রজাতি আছে। আমাদের জ্ঞাত জীবসত্তার মধ্যে শতকরা পঁচিশ এই বর্গের অন্তর্গত যার আবার শতকরা ৪০ ভাগই (প্রায় ৪০০,০০০ প্রজাতি) বিভিন্ন ধরনের গুবরে পোকা।
এদেরকে পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই দেখা যায়; জলে, স্থলে অবশ্য মেরু অঞ্চল বাদে। এদের বিভিন্ন গঠন ও খাদ্যাভাস এদেরকে পরিবেশের সাথে অভিযোজিত হতে সাহায্য করেছে। এরা সব ধরনের খাবারই খায়। উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশ যেমন পাতা, ফল, বীজ অথবা গুঁড়ি। অনেকে আবার এদের থেকে ছোট পোকামাকড় শিকার করে খায়। কেউ ছত্রাক খায়, কেউ আবার মল খায় (পাইলাম, অবশেষে নামকরণের কিছুটা হইলেও সার্থকতা পাইলাম!)। এদের লার্ভা আবার পূর্ণবয়স্কদের থেকে ভিন্ন খাবার গ্রহণ করে।
গুবরেপোকার জীবনচক্রে ৪টি ভিন্ন ধাপ আছে। পূর্ণবয়স্ক গুবরে পোকা মিলিত হয় এবং স্ত্রী গুবরেপোকা ডিম পাড়ে। ডিম থেকে লার্ভা বের হয় যাদের কোনো ডানা থাকে না। লার্ভা থেকে পিউপা পর্যায়ে এরা কোনো খাদ্য গ্রহণ করে না। পিউপা থেকে এরা পোকায় রূপান্তরিত হয়।
গুবরেপোকা দেহের কেমিক্যাল নিঃসরণের মাধ্যমে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে। পুরুষেরা স্ত্রীদেরকে দৈহিক গন্ধের মাধ্যমে শনাক্ত করে। এরা চোখে খুব ভাল দেখতে পায় না। কিছু কিছু পোকা শব্দ উৎপন্ন করে যোগাযোগের জন্য। এই শব্দ এরা মূলত তৈরি করে এদের মুখের সামনের বড় দাঁত দুইটি একে অপরের সাথে ঘষে অথবা ডানা বা পায়ের ঘর্ষণে। কেউ কেউ মৃত গাছের গুঁড়িতে থেকে সেখানে কম্পনের মাধ্যমে শব্দ সৃষ্টি করে। জোনাকিও একধরণের গুবরে পোকা। এরা অন্ধকারে জ্বলে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে।
ছবিতে দেখানো গুবরেপোকাদের Dung Beetle বলে। এরা নিজেদের ওজনের থেকে প্রায় ১১০০ গুণ বেশী ভার বহন করতে পারে। এই ক্ষমতাটাকে তুলনা করা একজন মানুষের ৬টি ডবল ডেকার বাস উঠিয়ে ফেলার সাথে। তো এই Dung Beetle এদের এত শক্তি দিয়ে কী করে? অনেক জরুরি কাজ করে- বিষ্ঠার বল তৈরি করে, আর তা দিয়ে স্ত্রীদের মন জয় করে।
পোকাদের মধ্যে সাধারণত অন্য জীবের সাথে পারস্পরিক সহযোগিতা দেখা যায় না। কিন্তু ambrosia beetle এর ক্ষেত্রে এটি লক্ষ্য করা যায়। এই গুবরে পোকাগুলো মৃত গাছের গুঁড়িতে গর্ত সৃষ্টি করে যেখানে পরবর্তীতে ছত্রাকের বংশবিস্তার হয়। এরপর এই পোকাগুলো উপযুক্ত কোনো গাছে গর্ত সৃষ্টি করে ছত্রাকের বীজগুলো ছড়িয়ে দেয়। ছত্রাকগুলো গাছের জাইলেম টিস্যু ভেদ করে এবং হজম করে, এতে করে ছত্রাক গাছের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে ফেলে। পুষ্টি উপাদানগুলো উপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। গুবরেপোকা ও এদের লার্ভা গাছের বিষাক্ত উপাদানের কারণে সরাসরি এগুলো খেতে পারে না, কিন্তু এখন এটা তাদের খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে ওঠে। ফলে, এরা দুইজনেই উপকৃত হয়।
গুবরেপোকা আমাদের বাস্তুসংস্থানে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নোংরা বর্জ্য, গাছের গুঁড়ি খেয়ে এগুলো পচাতে সাহায্য করে। কিছু প্রজাতি ফুল থেকে ফুলে মধু খেয়ে পরাগায়নে সাহায্য করে। আবার, এরা সমস্যাও কম সৃষ্টি করে না। ফসল ভক্ষণকারী গুবরেপোকা আমাদের শস্য খেয়ে ফেলে। কাঠের পোকাগুলো কাঠ কেটে নষ্ট করে।
এই গুবরেপোকাগুলোও আজ অস্তিত্বের হুমকির মুখে। পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে এদের বাসস্থানগত পরিবর্তন ঘটছে। কিছু কিছু পোকা নির্দিষ্ট উদ্ভিদের উপর নির্ভর করে। এই উদ্ভিদগুলো হারিয়ে গেলে এরাও হারিয়ে যাবে। উত্তর মিশিগানের নদীতে কিছু পোকা পাওয়া যায়, যাদেরকে বিলুপ্ত প্রায় হিসেবে গণ্য করা হয়।