“মন আমার দেহঘড়ি সন্ধান করি কোন্ মেস্তরি বানাইয়াছে
ও একটা চাবি মাইরা দিসে ছাইড়া জনম ভইরা চলতে আছে।”
দেহঘড়ি সন্ধান করে মেডিসিনে এবার নোবেল পেলেন তিনজন মার্কিন বিজ্ঞানী। সত্যিই আমাদের শরীরে ঘড়ির মত কাজ করে এমন মেকানিজম আছে। অর্থাৎ সকাল হলে নিয়ম মেনে ঘুম ভাঙবে আবার রাত হলে আপনার দুচোখ জুড়ে রাজ্যের ঘুম নামবে।
এই দেহঘড়ির কথা আমাদের বাউল সাধক আলাউদ্দনি বয়াতী সাহেব ঠিক কবে শুনিয়েছেন জানি না। তবে ১৯৮৪ সালে প্রথম বারের মত এই দেহঘড়ি নিয়ে কাজ শুরু করলেন তিন জন মার্কিন বিজ্ঞানী– ড.জেফরি হল, ড. মাইকেল রসব্যাস এবং ড. মাইকেল ইয়াং । তারা ফ্রুট ফ্লাই (ফল কাটলে যে ছোট মাছি ভন ভন করে চলে আসে) গবেষণা করে একটি জিনের সন্ধান পেলেন যার নাম দিয়েছেন “পিরিয়ড” অর্থাৎ “সময়কাল”, যেটা রাতের বেলায় একধরনের প্রোটিন তৈরি করে যার নাম দিয়েছেন উনারা “PER”। আবার দিনের বেলায় আলো কমে আসার সাথে সাথে এই প্রোটিন ধীরে ধীরে ডিগ্রেইড বা ধবংস হয়ে যায়। যার ফলেই আমরা দিনের বেলায় জেগে থাকি আর আলো কমে আঁধার এলে ঘুমিয়ে পড়ি। শুধু তাই নয়- এই “PER” প্রোটিন দিনের বেলায় আমাদের রক্তচাপ, স্পন্দন, আচরণ, শরীরের তাপমাত্রা, হরমোন নিঃসরণ, হজম প্রক্রিয়া ইত্যাদি অন্যান্য সংশ্লিষ্ট প্রোটিনকে সাথে নিয়ে নিয়ন্ত্রণ করে। আবার রাত নামলেই ভেঙ্গে গিয়ে সেই রেগুলেশন যার যার হাতে ছেড়ে দেয়। পুরো প্রক্রিয়াটা ঘটে পৃথিবীর আবর্তনের সাথে সাথে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় আলোর উপস্থিতি-অনুপস্থিতির সাথে তাল রেখে। তাই এর নাম — সার্কাডিয়ান রিদমিক ক্লক”। শুধু মানুষ নয়, এটা যে কোনো প্রাণী এবং গাছেদের বেলাতেও সত্যি। তাই চারপাশের পরিবেশের সাথে মিলিয়ে আমরা সতর্ক/সচেতন থাকি কিংবা ঘুমাই।
যাই-হোক, আপনার মনে হতে পারে এটা আবিষ্কারের তাৎপর্য কী? আপনার ঘড়ির সময় এলোমেলো হয়ে গেলে আপনি যেমন বিভ্রান্ত হন, ঠিক সেরকম দেহ-ঘড়ির পরিবর্তনেও শরীর বিভ্রান্তিতে পড়ে। এটা বিশেষ করে যারা টাইম জোন পাড়ি দেন বিদেশে যাওয়ার সময় তাদের ক্ষেত্রে হরহামেশা ঘটে। যেমন আপনি ১০- ১২ ঘণ্টা প্লেনে চড়ে যেই দেশেই যান না কেন, প্রথম ৩-৪ দিন আপনি আপনার ফেলে আসা দেশের সময় অনুযায়ী ঘুমাবেন কিংবা জেগে উঠবেন। কারণ এই সার্কাডিয়ান ক্লক। ১৯৮৪ সালের আগে কেউই এটা বিশ্বাস করতে চাইতেন না। আর এখন ধীরে ধীরে এটাও জানা যাচ্ছে যে এই ঘড়ি এলোমেলো হওয়ার কারণে আপনার শরীরে বাসা বাঁধতে পারে মারাত্মক সব অসুখ– বিষণ্নতা, স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, অনিদ্রা, এমনকি ক্যান্সার! আমাদের শরীরে এই সার্কাডিয়ান ক্লক বা দেহ ঘড়ির অবদান আরো বেড়িয়ে আসছে গবেষণায়।