২০১৯ সালের এপ্রিলের ১০ তারিখে ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের প্রেস কনফারেন্সে একটা অস্পষ্ট ছবি প্রকাশ করা হলো। সেই ছবিতে কোনো সুপারমডেল নেই; নীল সমুদ্র, সোনালি সূর্য, রুপালি চাঁদ, অথবা সবুজ গাছপালা কিছুই নেই। তবু গোটা দুনিয়া জুড়ে সেদিন সবাই এটা নিয়েই কথা বললো। অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটারস নামক বিজ্ঞান পত্রিকায় ছাপা হওয়া এই ছবিটা রাতারাতি সুপারস্টার হয়ে গেলো। আর হবারই কথা। গত কয়েক দশক ধরে আমরা যে জিনিসটাকে শুধু শিল্পীর কল্পনায় আঁকা ছবিতে দেখেছি, সেই জিনিসটার সত্যিকারের ছবি দেখতে পাওয়া কি চাট্টিখানি কথা? যে জিনিসের গায়ে আলো পড়লে প্রতিফলিত হয় না, সোজা কথায় যাকে দেখা যায় না, সেই জিনিসের ছবি তো ডুমুরের ফুলই! তাই, প্রথমবারের মত ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহবরের ছবি প্রকাশিত হলো, তখন একটু হৈ হল্লা তো হবেই! এই সেই ছবি…
মজার কথা হচ্ছে, এখনো কিন্তু আসলে আমরা কৃষ্ণগহবরকে দেখতে পাচ্ছি না। কারণ, সেটা তো অসম্ভব! পদার্থবিদ্যার সূত্রকে ভেঙে কিছুই করা যায় না, আলো প্রতিফলিত না করলে কিছুই দেখা যাবে না। মাঝখানে কালো অংশের মধ্যে যেটাকে দেখা যাচ্ছে না, সেখানেই আছে কৃষ্ণগহবরটা। আর তার চারপাশে তাহলে কী দেখা যাচ্ছে? একদিকে মোটা, আরেকদিকে চিকন কেন? এই ছবি নিয়ে এত মাতামাতি করার কী আছে? আজকে আমরা সেই জিনিসগুলোই একটু সহজে আলোচনা করার চেষ্টা করবো। তবে তার আগে কৃষ্ণগহবর কী, এটা কীভাবে তৈরি হয়, এটার বৈশিষ্ট্যগুলো কী কী, সেটা নিয়ে অত্যন্ত সংক্ষেপে একটু আলাপ করার প্রয়োজন আছে। এর পরেই আবার ওপরের ছবিটার আলোচনায় ফেরত আসবো।
কৃষ্ণগহবর কী?
সহজ ভাষায় বলতে গেলে, কৃষ্ণগহবর হচ্ছে একটি মৃত নক্ষত্র, যার ভর আর ঘনত্ব এত বেশি যে জিনিসটার একটা নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে চলে আসলে এর মহাকর্ষের বন্ধন ছিন্ন করে কিছুই বেরিয়ে যেতে পারে না, এমনকি সবচেয়ে দ্রুতগামী এবং ভরহীন আলোও না। [নোট – যে জিনিসের ভর যত বেশি, সে জিনিসের মহাকর্ষ বল তত বেশি শক্তিশালী। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, মহাকর্ষ কোনো আকর্ষণ বল নয়। মহাকর্ষীয় তরঙ্গঃ সহজ ভাষায় প্রাথমিক জ্ঞান লেখাটায় আমি মহাকর্ষ নিয়ে মোটামুটি ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছি। প্রয়াস জামানের লেখা মহাকর্ষ : নিউটন থেকে আইনস্টাইন লেখাটাও পড়ে নিতে পারেন]। প্রায় সকল ছায়াপথের কেন্দ্রেই বিশাল আকৃতির কৃষ্ণগহবর থাকে, যেগুলোকে সুপার ম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল বলে। অন্যান্য টাইপগুলো জানার জন্য প্রয়াস জামানের লেখাটা পড়তে পারেন।
আসুন, আরেকটু ভেতরে যাই…
প্রত্যেকটা জিনিসই স্থান-কালের চাদরে একটা বক্রতা তৈরি করে; আর এই বক্রতাকেই আমরা মহাকর্ষ বলি। যে জিনিসের ভর যত বেশি, সেটা তত বেশি বক্রতা তৈরি করে (নিচের চিত্র দ্রষ্টব্য)। আর এই বক্রতার জন্যেই আশেপাশের অপেক্ষাকৃত কম ভরের বস্তুগুলো মূল বস্তুটাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে বলে মনে হয়। যেমন, সূর্যের চারপাশে আমাদের পৃথিবী। আর কৃষ্ণগহবরের বক্রতা এত বেশি যে এটার কেন্দ্রে একটা অনন্য অবস্থা তৈরি হয়, অদ্ভুত সব খেল চলতে থাকে এখানে। এটাকে আমরা বাংলায় বলি অনন্যতা, ইংরেজিতে বলি সিঙ্গুলারিটি। আপেক্ষিক তত্ত্ব অনুসারে, এই সিঙ্গুলারিটিতে বস্তুর ঘনত্ব অসীম, কারণ অতি ক্ষুদ্র জায়গায়, একটি বিন্দুর মধ্যে, অতি বিশাল পরিমাণের বস্তু জায়গা করে নেয়। আর এর মহাকর্ষ এত বেশি হয় যে সময়কেও থমকে দাঁড়াতে হয়। স্থান যেমন বেঁকে যায়, কালও বেঁকে যায় এবং ধীরে চলে।
কৃষ্ণগহবরের অনন্যতাকে কেন্দ্র করে যে এলাকার মধ্যে ঢুকলে আর কিছুই বেরিয়ে আসতে পারে না, সেই এলাকাকে বলে ঘটনা দিগন্ত বা ইভেন্ট হরাইজন। এটার সামান্য একাডেমিক টাইপ সংজ্ঞা হচ্ছে, যে এলাকার বাইরে থাকলে ভেতরের ঘটনাবলী আপনার কাছে আসতে পারবে না। যেমন, ঘটনা দিগন্তের ভেতর থেকে কোনো আলো রওনা দিলে সেই জিনিস আপনার চোখ পর্যন্ত পৌঁছাবে না। এই জিনিসের নামেই টেলিস্কোপটার নাম রাখা হয়েছে। এবং টেলিস্কোপের উদ্দেশ্য নাম থেকেই পরিষ্কার!
কৃষ্ণগহবরের বৈশিষ্ট্য বুঝতে হলে একটা জিনিস সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা খুব জরুরি, Schwarzschild radius. শোয়ার্জশিল্ড ব্যাসার্ধ বের করার সমীকরণটা আগে দেখি, তারপর ব্যাখ্যা করছি কীভাবে এটা কৃষ্ণগহবরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সমীকরণটা হচ্ছে…
Schwarzschild Radius, SR = 2GM/C², এখানে G হচ্ছে মহাকর্ষীয় ধ্রুবক, M হচ্ছে বস্তুর ভর, আর C হচ্ছে আলোর গতি।
যে বস্তুর ব্যাসার্ধ শোয়ার্জশিল্ড ব্যাসার্ধের চেয়ে কম, সেটাই কৃষ্ণগহবর।
সিঙ্গুলারিটির বা কেন্দ্র থেকে এক শোয়ার্জশিল্ড ব্যাসার্ধ ধরে যে গোলক হয়, সেটাই ঘটনা দিগন্ত।
কৃষ্ণগহবর যদি স্থির থাকে, তাহলে তিন শোয়ার্জশিল্ড ব্যাসার্ধের কাছাকাছি এলাকাতে একটা কক্ষপথ তৈরি হয়। সেখান থেকে শুরু করে আরো কিছু দূর পর্যন্ত এলাকা জুড়ে গ্যাস, ধূলা, আর আলোর কণার একটা চাকতির মত তৈরি হয়। সেটাকে বলে অ্যাক্রিশন ডিস্ক (Accretion Disk); আমি এটার নাম দিলাম পরিবর্ধিত চাকতি। এই চাকতি থেকে আরো ভেতরে গেলেই কৃষ্ণগহবরের ভয়ানক মহাকর্ষ তাকে অত্যন্ত দ্রুত ঘটনা দিগন্তের ভেতরে টেনে নেয়। ঘূর্ণনরত কৃষ্ণগহবরের ক্ষেত্রে হিসাবগুলো একটু ভিন্ন, তবে আইডিয়াটা একই। এই জায়গাটা প্রচণ্ড গতিতে কৃষ্ণগহবরকে কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে। এবং এটা খুবই উত্তপ্ত অবস্থায় থাকে।
কৃষ্ণগহবর কীভাবে তৈরি হয়?
মানুষের যেমন জন্ম-মৃত্যু আছে, নক্ষত্রেরও আছে। নক্ষত্র তৈরি হয় নীহারিকা বা নেবুলাতে অবস্থিত গ্যাস থেকে। গ্যাস বলতে মূলত হাইড্রোজেন বোঝাচ্ছি, এটাই ব্রহ্মাণ্ডের সবচেয়ে সরল এবং সবচেয়ে সহজলভ্য গ্যাস। হাইড্রোজেন পরমাণুগুলোর সংখ্যা এত বেশি হয়ে যায় যে তাদের মধ্যেকার মহাকর্ষ বাড়তে বাড়তে প্রচণ্ড শক্তিশালী হয়ে যায়। একসময় চারটি হাইড্রোজেন পরমাণু নিউক্লীয়ভাবে আবদ্ধ হয়ে দুটি হিলিয়াম অণুতে পরিণত হয়, এই পদ্ধতিকে ফিউশন বলে। তখন ঘটে বিস্ফোরণ, ছড়িয়ে পড়ে তাপ আর আলো। প্রতি সেকেন্ডে অসংখ্য বিস্ফোরণ হতে থাকা এই আলো আর তাপের গোলককে আমরা নক্ষত্র বলি। ধান ভানতে শিবের গীত গাইছি বলে মনে হচ্ছে? একটু পরেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।
মহাকর্ষ কিন্তু নক্ষত্রের অণু-পরমাণুগুলোর মধ্যে এখনো কাজ করছে। কিন্তু ক্রমাগত এই বিস্ফোরণ চলছে বলেই নক্ষত্রগুলো আরো সংকুচিত হতে পারছে না। কিন্তু একসময় প্রত্যেকটা নক্ষত্রের জ্বালানি ফুরিয়ে যায়। অন্তত এতটা কমে যায় যে, আগের মত বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে না। তখন মহাকর্ষের শক্তিটা আবার প্রকাশিত হয়, নক্ষত্র সংকুচিত হতে থাকে, নক্ষত্রের মৃত্যু ঘটতে থাকে। এই মৃত্যু তিনভাবে ঘটতে পারে। এটা নিয়ে কসমস সিরিজে কার্ল সেগান এত সুন্দর করে বলেছেন যে আমাকে কষ্ট করে ভেবে ভেবে কিছু লিখতে হবে না। আমার অনুবাদটাই কপি করে দিচ্ছি।
“ তিনভাবে নক্ষত্রের মৃত্যু হতে পারে। তাদের নিয়তি আগেই লেখা হয়ে যায়। পুরোটাই নির্ভর করে এর প্রাথমিক ভরের ওপর। সাধারণ নক্ষত্র, যাদের ভর (আমাদের চির পরিচিত)সূর্যের মত, ওদের ধসে পড়া চলতে থাকবে, যতক্ষণ না উচ্চ ঘনত্ব অর্জন করছে। এরপর সংকোচন থেমে যাবে, কারণ কেন্দ্রে ভিড় করা ইলেকট্রনগুলো পরস্পরকে বিকর্ষণ করতে থাকবে। ধসে পড়তে থাকা নক্ষত্র যদি সূর্যের দ্বিগুণ হয়, সেটা ইলেকট্রনের বিকর্ষণে থামে না। এটা সংকুচিত হতেই থাকে, যতক্ষণ না নিউক্লীয় শক্তি মাঠে নামে এবং সেটাই নক্ষত্রকে টিকিয়ে রাখে। কিন্তু ধসে পড়তে থাকা নক্ষত্রটা সূর্যের ৩ গুণ হলে, নিউক্লীয় বলেও থামে না। এমন কোনো শক্তিই নেই যা দিয়ে এই ভয়াবহ চাপকে বাধা দিতে পারবে। আর এধরনের নক্ষত্রের রয়েছে এক অভাবনীয় নিয়তি। এর সংকোচন চলতে থাকে, আর একসময় পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে যায়।
নক্ষত্রের শ্রেণীবিভাগ করা যায় মহাকর্ষের বিরুদ্ধে কার্যরত বল দিয়ে। যে নক্ষত্র গ্যাসের চাপে টিকে আছে, সেটা স্বাভাবিক, গড়পড়তা নক্ষত্র, যেমন আমাদের সূর্য। ইলেকট্রনের বিকর্ষণে টিকে থাকা নক্ষত্রকে বলে – সাদা বামন (White Dwarf). এমন হলে সূর্যের আকার হয়ে যায় পৃথিবীর মত। নিউক্লীয় বল দ্বারা টিকে থাকা নক্ষত্রকে বলে – নিউট্রন তারকা (Neutron Star). এমন হলে সূর্যের আকার হবে একটা শহরের মত। আর নক্ষত্র যদি এতো বড় হয় যে ধসের পর নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়, সেটাকে বলে কৃষ্ণগহবর (Black Hole).”
যথেষ্ট!
কী দেখলাম আমরা প্রথম ছবিতে?
আসুন, ছবিটা আরেকবার দেখি…
এই ছবিতে দেখা যাচ্ছে মেসিয়ার ৮৭ বা M87 নামক ছায়াপথের কেন্দ্রে থাকা কৃষ্ণগহবরটিকে। এটার ভর সাড়ে তিন থেকে সাড়ে ছয় বিলিয়ন সূর্যের সমান। ছবিতে আরো দেখা যাচ্ছে মাঝের ঘটনা দিগন্ত এবং আয়নিত গ্যাসের পরিবর্ধিত চাকতি। চাকতিটির গতি সেকেন্ডে প্রায় ১০০০ কিলোমিটার, আর ব্যাস প্রায় ০.৩৯ আলোকবর্ষ! এক আলোকবর্ষ মানে হচ্ছে আলো এক বছরে যতদূর যায়। আর এই ছায়াপথটি আমাদের কাছ থেকে প্রায় ৫৩ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরে। ঠিক এখন যে ছবিটা আমরা দেখছি, এটা ঐ কৃষ্ণগহবরের ৫৩ মিলিয়ন বছর আগের ঘটনা। তখন পৃথিবীর অবস্থা কী ছিলো?
এখন আপনি জিজ্ঞেস করতেই পারেন যে, “আরে, আমাদের ছায়াপথেও না একটা কৃষ্ণগহবর আছে? ওটার ছবি না তুললে ৫৩ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের ছবি তুললো কেন?” জ্বি হ্যাঁ, আমাদের ছায়াপথের মাঝেও একটা বড়সড় কৃষ্ণগহবর আছে, ওটার নাম স্যাজিটারিয়াস A. ওটা M87 এর চেয়ে অনেক কাছে, কথা সত্য। কিন্তু ওটা আর আমাদের মাঝখানে আরো অনেক বাধা-বিপত্তি (পড়ুন গ্রহ-নক্ষত্র এবং আরো অন্যান্য যা যা ছায়াপথে থাকে আর কি, সবই) আছে।
ছবিতে নিচের দিকে আলোটাকে বেশি উজ্জ্বল মনে হচ্ছে কারণ ওটা আমাদের (মানে, পৃথিবীর) দিকে আসছে। আর ওপরদিকের আলোর ঔজ্জ্বল্য একটু কম, কারণ ওটা আমাদের দিক থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এই ঘটনাটার নাম ডপলার কিরণ বা আপেক্ষিক কিরণ [এখানে beaming এর বাংলা বোঝাতে কিরণ ব্যবহার করেছি]। এখান থেকে বোঝা যাচ্ছে, এই ছায়াপথ এবং এই কৃষ্ণগহবর আমাদের মাথার প্রায় বরাবর ওপরের দিকে। এবং সত্যিই তাই! উত্তর আকাশের Virgo ছায়াপথগুচ্ছের একটি এই M87.
কীভাবে তোলা হয়েছে এই ছবি?
পৃথিবীর আটটা জায়গাতে বিশেষ ধরনের টেলিস্কোপ (ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ) বসিয়ে এই যজ্ঞ সাধন করা হয়েছে। এই টেলিস্কোপগুলো বেতার ঔজ্জ্বল্য (Radio brightness) এর fourier components (সহজ ইংরেজিতে visibility) পরিমাপ করে। গবেষকরা যে প্রবন্ধটি প্রকাশ করেছেন, সেটাতে তারা লিখেছেন “VLBI (মানে, very long baseline interferometery) creates a virtual telescope that spans nearly the full diameter of the Earth”. অর্থাৎ, এই টেলিস্কোপগুলো দিয়ে মূলত একটা বিশাল টেলিস্কোপ বানানো হয়েছে। আহরিত উপাত্তগুলো প্রত্যেকটা সেন্টারে আলাদা আলাদা করে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যাতে এটা নিশ্চিত করা যায় যে সবাই শেষ পর্যন্ত একই ছবি পায়। একজন একরকম পেলো, আরেকজন অন্যরকম পেলো – এরকম হলে ধরে নেয়া হতো যে গবেষণায় কোনো না কোনো ভুল হয়েছে। কিন্তু সবাই একই চিত্র পাওয়ায় সন্দেহের অবকাশ রইলো না।
প্রশ্ন করতে পারেন, “এত বড় আর এতগুলো টেলিস্কোপ দিয়ে কী লাভ হলো? ছবিটা এত ঘোলা কেন? ইন্টারস্টেলারে তো কী সুন্দর ব্ল্যাক হোল দেখলাম!” তাহলে আবার পড়ুন, ৫৩ মিলিয়ন আলোকবর্ষ! এটা এত দূরে যে………… থাক, আর ব্যাখ্যা না করি। ও হ্যাঁ, সুন্দর একটা ব্যাখ্যা দিয়েছে ভেরিটাসিয়াম ইউটিউব চ্যানেলের ডেরেক।
তবে হ্যাঁ, আস্তে আস্তে আমাদের দূরবীক্ষণ যন্ত্র আরো শক্তিশালী হবে। তখন আমরা কৃষ্ণগহবরের আরো ভালো ছবি পাবো। বিজ্ঞান এগিয়ে চলবেই।
পরিশেষে
কেন এই ছবিটা অত্যন্ত জরুরি বা কেন এটা নিয়ে মাতামাতি হচ্ছে, সেটার প্রধান কারণ হচ্ছে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের অন্যতম একটা ভবিষ্যদ্বাণী ছিলো কৃষ্ণগহবরের অস্তিত্ব। আইনস্টাইনের ১৯১৫ সালের প্রবন্ধেই এমন কিছুর অস্তিত্বের সম্ভাবনা উঁকি দিয়েছিলো।সাধারণ আপেক্ষিকতা থেকে ব্ল্যাক হোলের তাত্ত্বিক সম্ভাবনা প্রথম দেখেন শোয়ার্জশিল্ড। উনিই প্রথম এই ব্যাপারে পেপার লেখেন। আইনস্টাইন সেই পেপারের হিসেব ঠিক আছে বলে স্বীকার করলেও কৃষ্ণগহবরের অস্তিত্ব স্বীকার করতে উনি অস্বস্তি বোধ করতেন। ওনার মৃত্যুর পর হকিং এর মত বিজ্ঞানীদের হাত ধরে আমরা এ ব্যাপারে অনেক কিছু জানতে পেরেছি।
এরপর থেকে আমরা অন্যান্য নক্ষত্রের গতিবিধি (তারা অদৃশ্য কিছু একটাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে, সেটা) থেকে কৃষ্ণগহবরের প্রভাব দেখতে পেয়েছিলাম। কিন্তু এরকম পরিবর্ধিত চাকতি সহ ঘটনা দিগন্তের কোনো ছবি আমরা তুলতে পারিনি এতদিন। সাধারণ আপেক্ষিকতার পক্ষে এটা একটা বিশাল প্রমাণ। এটার সবচেয়ে বেশি গুরুত্বের জায়গাটা হচ্ছে – কৃষ্ণগহবরের বিস্তারিত গবেষণা আমাদেরকে এই মহাবিশ্বের উৎপত্তির ব্যাপারে অনেক নতুন তথ্য দিতে পারে। তাই, কৃষ্ণগহবর নিয়ে যে কোনো ধরনের নতুন আবিষ্কার বিজ্ঞানীদেরকে আনন্দে উদ্বেলিত করে। কেন এটা জরুরি, এটা নিয়ে ইউটিউব চ্যানেল ভক্স একটা ভিডিও প্রকাশ করেছে, সেটা দেখে নিতে পারেন।
একদিকে আমি যেমন অত্যন্ত আনন্দিত, অন্যদিকে এটা ভেবে কষ্টও লাগছে যে এই ছবিটা দেখার জন্য আইনস্টাইন বা স্টিফেন হকিং বেঁচে নেই। তারা যে কী খুশি হতো মানবজাতির এই সাফল্য দেখে! আইনস্টাইন সেই কবে বলে গিয়েছিলেন এমন কিছু আছে! হকিং এর তো সারা জীবনই কেটেছে এই জিনিস নিয়ে গবেষণা করে। কৃষ্ণগহবরের যে এনট্রপি আছে, এখান থেকে যে তথ্য বিকিরিত হয় (হকিং রেডিয়েশন), সেই প্যারাডক্স (ব্ল্যাক হোল ইনফরমেশন প্যারাডক্স) – সবই তার গবেষণার ফসল। খুব আনন্দ হচ্ছে পদার্থবিদ কিপ থর্নের জন্য। যে তিনজন মিলে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সনাক্ত করার জন্য LIGO প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাদের মধ্যে একজন ছিলেন কিপ থর্ন।