আমরা জানি সকল বস্তুর গাঠনিক একক পরমাণু। আমাদের শরীর অসংখ্য কোষ নিয়ে গঠিত। সেই কোষগুলোও অসংখ্য পরমাণু নিয়ে গঠিত। এই পরমাণুর জগৎ নিয়ন্ত্রিত হয় কোয়ান্টাম মেকানিক্স দ্বারা। চিরায়ত পদার্থবিজ্ঞানের নিয়মগুলো এখানে কাজ করে না। সেজন্য চিরায়ত পদার্থিবিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠে কোয়ান্টাম মেকানিক্স প্রকৃতির বাস্তবতার ভিত্তি হয়ে উঠেছে। তাই প্রাণকে এবং জৈবিক শরীরের বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপ নিখুঁতভাবে ব্যাখ্যায় কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ব্যবহার অপরিহার্য।
বিজ্ঞান সম্পর্কে একটু খোঁজ-খবর রেখে থাকলে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের কথা অবশ্যই আপনি শুনে থাকবেন। কিন্তু কোয়ান্টাম বায়োলজি হয়তো আপনার কাছে একেবারেই নতুন। হয়তো অনেকে এই প্রথম নামটি শুনছেন। আরও অবাক হবেন হয়তো যখন শুনবেন ডিএনএ-তে কোয়ান্টাম টানেলিং-এর জন্য মিউটেশন ঘটতে পারে, আমাদের ঘ্রাণের অনুভূতি কোয়ান্টাম মেকানিক্স দ্বারা প্রভাবিত, পরিযায়ী পাখি (migratory bird) ইউরোপিয়ান রোবিন কিভাবে চৌম্বকক্ষেত্র বুঝে তার নিখুঁত ব্যাখ্যা দিতে পারে কোয়ান্টাম মেকানিক্স ইত্যাদি।
Life on The Edge বইটির লেখকদ্বয়, জিম আল-খালিলি একজন তাত্ত্বিক পদার্থবিদ এবং জনজো ম্যাকফ্যাডেন একজন মলিকিউলার জেনেটিকসের অধ্যাপক। তারা দুজনে মিলে তিন বছরের সাধনায় বইটি লিখেছেন। লেখকদ্বয় বইটিতে কোয়ান্টাম জীববিজ্ঞানের মৌলিক দিকগুলো নিয়ে খুব সহজভাবে আলোচনা করেছেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্লাসিকাল মেকানিক্সের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছেন। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের দৃষ্টিকোণ থেকে ‘প্রাণ কী?’ তার উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। প্রাণের উৎপত্তির রহস্যের সমাধানে ক্লাসিকাল ব্যাখ্যার সীমাবদ্ধতা আর কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানের কার্যকরিতা উপলব্ধি করার চেষ্টা করা হয়েছে।
কোয়ান্টাম বায়োলজি সম্পর্কে মৌলিক ধারণা পেতে বইটি পড়তে পারেন। এই ক্রম অগ্রসর হতে থাকা ক্ষেত্রটি সম্পর্কে বইটি হয়তো আপনাকে আরও কৌতুহলী করে তুলতে সক্ষম হবে। বিচ্ছিন্ন শক্তিস্তর, কণা-তরঙ্গ দ্বৈততা, coherence, entanglement, quantum tunneling – এগুলো শুধু পদার্থবিজ্ঞানেরই ইন্টারেস্টিং আইডিয়া না। এগুলো জৈবিক সিস্টেমেও সক্রিয় প্রভাব বিস্তার করে, জড়বস্তুর স্তুপকে প্রাণবন্ত করে তোলে।
এই বইটিতে মোটামুটি শুরুর দিকে একটা প্রশ্নের অবতারণা করা হয় – “যে বল(Force) একটি বাষ্পীয় ইঞ্জিনের ট্রেনকে নাড়াতে পারে তা কি কোনো জীবনকেও নাড়াতে পারে?” একটি জীবিত শরীরের কি এমন থাকে যা তাকে নিজে নিজে চলতে সক্ষম করে তোলে? সেই শক্তি কি কোনো অতিপ্রাকৃত কিছু নাকি একেবারেই প্রাকৃতিক? প্রশ্নটির উত্তর কিভাবে দেয়া হয়েছিল জানতে বইটি পড়ে দেখুন।