নামটি খুবই রগরগে। মাতৃভাষায় এ বিষয় নিয়ে লেখায় শব্দচয়নটা বেশ বেসামাল হবে, টের পাচ্ছি। বইটির নাম Why is Sex Fun?: the evolution of human sexuality; Jared Mason Diamond এর বই, মানুষের যৌনতার বিবর্তন নিয়ে, ১২৮ পৃষ্ঠার।
আড্ডার ছলে বইটির শুরু, সেভাবেই বলে যাই। ধরুন আপনার পোষা কুকুরকে বাকশক্তি আর আপনার মত একটা উন্নত মস্তিষ্ক দেয়া হলো। এখন তাকে যদি মানুষের যৌনপ্রবৃত্তি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়, তো অপার বিস্ময়ের সাথে তার মন্তব্য যা যা থাকবে :
১) মানুষের যৌনতার কোন নির্দিষ্ট ঋতু বা সময়গময় নেই,
২) সন্তান না হবার সম্ভাবনা থাকলেও তোমাদের যৌনতা থামে না,
৩) স্বাভাবিক উর্বরতা বয়সের সাথে কমে গেলেও যৌনতা চলতেই থাকে!
এই বৈশিষ্ট্যগুলো শুধু মানুষের জন্যেই স্পেশাল, প্রাণীজগতের অন্যান্য প্রায় সকল প্রাণির যৌনতার মূল কারণ সন্তান জন্মদান, তাও নির্দিষ্ট ঋতুতে! কেন মানুষের Sexual behavior এতোটা উদ্ভট?
বই পড়ার ইচ্ছে থাকলে আগেই বলে নিচ্ছি, স্পয়লার নিজ নিজ দায়িত্বে। এই প্রশ্নগুলোরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে বইটিতে। কিছু মজার ফ্যাক্ট নিয়ে আলোচনা করছি, সংক্ষেপিত করে করতে হচ্ছে বলে অস্পষ্ট থেকে যাবার সুযোগ আছে, মনমতো পুরো ব্যাখ্যা পাবার জন্য বই পড়ার বিকল্প নেই!
*** খুব সাধারণভাবে আমরা বলি, সকল প্রাণীর কাজের মূল প্রেরণা বেঁচে থাকা অর্থাৎ Survival. প্রাণীজগতে কিছু প্রাণির মধ্যে Sexual Cannibalism দেখা যায়। এর মানে হচ্ছে যৌনমিলনের সময় স্ত্রী প্রাণী পুরুষটিকে খেয়ে ফেলে! যেমন কিছু প্রজাতির মাকড়শায় এ্মন দেখা যায়। এমন না যে পুরুষটি স্ত্রী-প্রাণীর কাছ থেকে পালানোর চেষ্টা করে। বরং দেখা গেছে, মাথা ঘাড় মুখের সামনে ঠেলে খেতে সুবিধা করে দেয়! তো এসব ক্ষেত্রে Survival এর ব্যাখ্যা কতটুকু গ্রহণযোগ্য?
এর গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যাটি হলো–পুরুষ মাকড়শার প্রবণতা থাকে সর্বোচ্চ সংখ্যক Sperm এর নিষেক ঘটানো। তো এর জন্যে স্ত্রী মাকড়শার দরকার অতিরিক্ত পুষ্টি, যা ঐ পুরুষ মাকড়শা নিজ শরীর থেকে সরবরাহ করে। হয়তো পুরুষটি স্বজাতির স্ত্রী আবার না-ও পেতে পারে, মারাও পড়তে পারে। তো ঐ একবার সঙ্গমের সময়েই উদ্দেশ্য থাকে তার সর্বোচ্চ সংখ্যক ডিম্বাণু নিষেকের! গুছিয়ে বললে, সকল কর্মের মূল প্রেরণা হচ্ছে, সফলতার সাথে পরবতী প্রজন্মে Gene Transfer করা!
*** সন্তান জন্মের পর Parental care কে নেবে? পিতা? মাতা? নাকি উভয়েই? এটা প্রাণিজগতে Natural selection এর অন্যতম জটিল বিষয়। প্রাণিভেদে শুধু পিতা, শুধু মাতা, মাতা-পিতা কেউই না, এবং উভয়ের পরিচর্যা; সবরকমের নিদর্শনই পাওয়া যায়। এটা মোটামুটি তিনটা ফ্যাক্টরের ওপর নির্ভর করে। এক, কে কতোটুকু বিনিয়োগ করলো। দুই, সন্তান পরিচর্যার ফলে অন্য কোথাও সঙ্গমের সুযোগ থাকছে কিনা। তিন, নিজের পিতৃ-মাতৃত্বের নিশ্চয়তা।
উভচর ও জলজ অনেক প্রজাতির ক্ষেত্রে নিষেক ঘটে মাতৃদেহের বাইরে। সেজন্য, Parental care মাতা ও পিতার যে কেউ হতে পারে, ক্ষেত্রবিশেষে ক্ষেত্রে কেউই না। তুলনামূলক জটিল জনন প্রক্রিয়ার প্রাণী Placenta-যুক্ত Mammal, এদের ক্ষেত্রে যেহেতু মাতৃ-দেহাভ্যন্তরে নিষেক ও বৃদ্ধি ঘটে, তাই প্রাণির যত্ন, স্তন্যদানের বিষয়টা মায়ের ওপরই বর্তায়, Natural selection অনুযায়ী। মানুষের ক্ষেত্রে কেন পিতার চেয়ে দৃশ্যত মায়ের care বেশি এবং জন্মের পর পিতার তুলনামলক বেশি সরে যাবার ঘটনা দেখা যায় তা জন্মকালীন বিনিয়োগ থেকে আঁচ করা যায়।
সুবৃহৎ ডিম্বাণু দানকারী মা, নয়মাস দেহের ভেতর নিজের পুষ্টিতে লালন করে সন্তানকে। অপরদিকে পিতা একবার সঙ্গমে ক্ষুদ্রতম একটি Sperm দিয়েই শেষ (কোটি কোটি বেহুদা নষ্ট হয় অবশ্য)! সেজন্য জন্মের পর অনেক সময় পিতার ছেড়ে যাওয়াটা সমাজে বেশি দৃশ্যমান হলেও মায়ের ক্ষেত্রে একান্তই দেখা যায় না! দ্বিতীয় কারণটিও মা-এর বিপরীত। স্তন্যদানকালীন সময়ে আবার সঙ্গমে সন্তান জন্মদান সম্ভাব্যতা মায়েদের নেই, Natural selection-এ আবারো মা’র ছেড়ে যাবার সুযোগ কমে যায়। তৃতীয় কারণটি, পুরুষ-প্রাণী সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে তার নিজের সন্তান কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে না,তার সঙ্গিনীর গর্ভে কি তারই সন্তান? গুহামানবের সময়কাল চলে আসা এই সন্দেহ পুরুষ-মানসে Genetically programmed. অন্যের Gene লালনের কোন সদিচ্ছা তার নেই।
*** মানুষের যৌনতার আরেকটি অনন্য বিষয় Concealed ovulation, নারীদেহে এমন কোন বাহ্যিক পরিবর্তন খেয়াল করে বোঝার উপায় নেই যে ঠিক এই সময়ে Intercourse-এ সন্তান জন্ম দেবে। অন্যান্য প্রাণির স্ত্রী-প্রজাতির ক্ষেত্রে তখন দৈহিক পরিবর্তন লক্ষণীয়।শিম্পাঞ্জীসহ অন্যান্য প্রাণিদের দেহে এর আভাস দেখা গেলেও মানুষের দেহে বিবর্তনের ফলে এটি এখন উহ্য। এর কারণ পূর্বোক্ত দুই ও তিন নম্বর ফ্যাক্টর।
এর একটা তত্ত্বের কথা বলছি। মানব-সন্তান immature হয়ে জন্মায়, ফলে এক্ষেত্রে পিতা-মাতা উভয়ের care দরকার সন্তানের Survival এর জন্যে। ভেবে দেখুন, গুহামানব যদি জানতে পারতো যে ঠিক এই সময়ে Intercourse করলে সন্তান জন্ম নেবে, তবে বাকি সময় সে ঐ সঙ্গিনীর পেছনে নষ্ট না করে অন্য কারো পেছনে বিনিয়োগ করতো। ফলে গুহামানবীকে তার সন্তান টিকিয়ে রাখার জন্য যে খাদ্য ও নিরাপত্তার দরকার হতো, তা পেতো না। অপরদিকে গুহামানবও নিশ্চিন্ত যে তার অনুপস্থিতিতে অন্য কারোর Intercourse-এ সন্তান জন্মের সম্ভাবনা নেই। পুরুষের এই polygamous প্রবৃত্তি রোধ করতে Natural Selection আশ্রয় নিল Concealed Ovulation এর। ফলে পুরুষের নিশ্চিত হওয়ার সুযোগও কমে গেল, সেইসাথে নিশ্চিন্তে থাকারও! Period এর পর ছাড়া বাকি সময়টুকু কম-বেশি যা-ই হোক, নিষেকের সুযোগ তাই থেকে যায়। মোটাদাগে এটাও, Recreational Sex এর অন্যতম কারণ।