কাউকে ডায়নোসরের নাম বললেই টি-রেক্সের সাথে চট করেই মুখে চলে আসে ব্রন্টোসরের নাম। পপ কালচারের অংশ হয়ে যাওয়া লম্বা গলার এই ডায়নোসর সম্পর্কে অনেকেই জানেন যে, এই ডায়নোসর শ্রেণিবিন্যাসবিদদের ভুলের জন্য সৃষ্ট হয়েছিলো। কিন্তু ২০১৫ সালে একদল গবেষক প্রমাণ করেছেন ব্রন্টোসরের অস্তিত্ব আসলেই ছিলো।
১৮৭৯ সালে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মার্শ একটি সম্পূর্ণ সরোপড ডায়নোসর আবিষ্কারের ঘোষণা দেন, নাম দেন Brontosaurus excelsus. এটি ইয়েল পিবাডি মিউজিয়ামে স্থাপন করা হয়। এর আগে তিনি প্রায় একই রকম দেখতে ও প্রায় একই সময়ে বাসকারী সরোপড এপাটোসরাসের (apatosaurus) বর্ণনা করেন ১৮৭৭ সালে। ১৯০৫ সালে ইয়েল মিউজিয়ামে রাখা ফসিলের নাম এপাটোসরাস করা হয়। এরপরে গত এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এমন প্রায় সব লম্বা গলার ডায়নোসরদেরকে এপাটোসরাস ধরা হত। তবে বিভিন্ন জনপ্রিয় বইতে ব্রন্টোসরাস নামটি ব্যবহৃত হতে থাকে যাতে ডায়নোসরটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। এর মধ্যে আছে প্রথম দিককার একটি এনিমেশন মুভি Gertie the Dinosaur (1914) , ১৯২৫ সালের নির্বাক চলচ্চিত্র The Lost World, ১৯৮৫ সালের ছবি Baby: Secret of the Lost Legend
১৯৮৯ সালে আমেরিকার ডাক বিভাগ ৪ টি ডায়নোসরের টিকেট ছাপায় যার একটি ছিল ব্রন্টোসরাস। বিতর্কের সৃষ্টি হলে ডাক বিভাগ ব্যাখ্যা দেয় , সাধারণ জনগণের পরিচিত নাম বলে ব্রন্টোসরাস ব্যবহার করা হয়েছে।
২০১৫ সালে পর্তুগালভিত্তিক একদল গবেষক প্রমাণ করেন ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই স্যাম্পল ফসিল ব্রন্টোসরটি সমসাময়িক এপাটোসরাসের থেকে আলাদা ছিল । তারা ৪৭৭ টি আলাদা পার্থক্য দেখিয়েছেন। গবেষণাপত্রটি উন্মুক্ত করা আছে অনলাইনে।
এই গবেষণায় নেতৃত্বদানকারী বিজ্ঞানী ড শপ বলেছেন, অধিকাংশ পার্থক্যই অত্যন্ত উচ্চমানের শ্রেণিবিন্যাস মাপকাঠির সাথে সম্পর্কযুক্ত, যেমন এপাটোসরাসের ঘাড় চওড়া ছিল ব্রন্টোসরাসের সাথে, তবে পার্থক্যের সংখ্যা এত বেশী – সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
তার সহকর্মী অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ড বেনসন বলেন, ডিপ্লোডকাস ও বারোসরাস নামের দুটি পরিচিত লম্বা গলার ডায়নোসরকে যেভাবে দশকব্যাপী গবেষণায় আলাদা মাপকাঠিতে ধরা হয়েছে, তেমনি কিছু মাপকাঠি ধরা হয়েছে এই দুই ডায়নোসরের জন্য। নাম আলাদা করা হয়েছে কেবল বিবর্তনে পার্থক্য বুঝতে যেন বিজ্ঞানীদের সুবিধা হয়।
এখনও নাকি ইয়েল মিউজিয়ামের সেই এপাটোসরাসের নাম চেঞ্জ করা হয়নি, কারণ বিজ্ঞানীমহলে সবার স্বীকৃতি পায়নি। কাজেই বিতর্ক কেবল শুরু হল আর কী!
সূত্রঃ নিউ ইয়র্ক টাইমস ৮ এপ্রিল , ব্রন্টোসরাস ও এপাটোসরাসের উইকিপিডিয়া পেজ, সকল ছবি CC BY-SA 3.0 লাইসেন্সে ব্যবহৃত, ইয়েল মিউজিয়ামের ছবি © Ad Meskens / Wikimedia Commons।