আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোতে অবস্থিত লেচুগিয়া গুহাকে আখ্যায়িত করা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর গুহা হিসেবে। এর ভেতরে বিভিন্ন খনিজ দ্বারা নির্মিত স্ফটিকের যে সমাহার আছে, তাতে বিশেষজ্ঞরা রীতিমত হতভম্ব হয়েছেন! এতো ধরণের স্ফটিক আর কোনো গুহায় এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয় নি।
এই গুহারই একটি কক্ষের জলাশয়ে মুক্তার মতো বস্তু পাওয়া যায়। এদেরকে বলে “cave pearls” বা গুহা মুক্তা। আর যে কক্ষটিতে কেইভ পার্ল আছে, সে কক্ষকে পার্লসিয়ান গালফ (Pearlsian Gulf) নাম দেওয়া হয়েছে। মুক্তার উপসাগর যা, তাই-ই পার্লসিয়ান গালফ!
কিন্তু কেন এই বস্তুগুলোকে মুক্তা বলা হচ্ছে?
তার কারণ হল, একে তো এরা দেখতে মুক্তার মতন, তার উপর এদের তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়াও মুক্তা তৈরি প্রক্রিয়ার সাথে মিলে যায়।
কীভাবে তৈরি হয় গুহা মুক্তা?
ঝিনুক তার খোলসের ভেতর ঢুকে যাওয়া বালুর দানার চারপাশে মিউকাস জাতীয় পদার্থ জমা করতে থাকে। একসময় স্তরে স্তরে মিউকাস জমা হয় এবং সময়ের পরিক্রমায় স্তরগুলো কঠিন হয়ে মুক্তায় রূপ নেয়।
আর কেইভ পার্লের বেলায় ছাদ থেকে চুইয়ে চুইয়ে যে পানি নীচের জলাশয়ে পড়ে, তাতে অন্যান্য খনিজ লবণের সাথে থাকে খুবই সামান্য পরিমাণের ক্যালসিয়াম। অনেক বছর ধরে এই ক্যালসিয়াম জমা হতে হতে তৈরি করে পাথরের ছোট টুকরো। সেই টুকরোর উপর আবারও ক্যালসিয়াম পড়ে, জমা হয় এবং কালের আবর্তে রূপ নেয় এই মসৃণ, গোলাকার মুক্তায়!
আর কোথায় পাওয়া যায় এই গুহা মুক্তা?
শুধু লেচুগিয়া গুহায়ই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন গুহায়ই পাওয়া যায় এই মুক্তা। তবে পাওয়া গেলেও এরা সংখ্যায় তেমন বেশী হয় না। নীচে দেখুন নিউ মেক্সিকোর কার্লসব্যাড গুহায় পাওয়া কেইভ পার্লের ছবি।
সবচেয়ে বেশী গুহা মুক্তা পাওয়া গেছে মেক্সিকোর “Gruta de las Canicas” বা Cave of the Marbles গুহায়। ফলে গুহার নামই হয়ে গেছে এমন। প্রায় ২০ কোটির মতো কেইভ পার্ল দেখা গেছে গুহাটির মেঝেতে, যা কিনা কোনো কোনো স্থানে এক মিটার বা তার চেয়েও বেশী গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত! এতো মুক্তা তৈরি হওয়ার কৌশল সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায় নি।
গুহা মুক্তার আকার আকৃতি
গুহা মুক্তা সাধারণত গোলাকার হয়। তবে এরা অনিয়মিত, সিলিন্ডার, কিউব, ষড়ভুজ কিংবা ডিমের মতো আকৃতিরও হয়। মাঝে মাঝে কয়েকটি মুক্তা একসাথে হয়ে আঙুরের গোছার আকৃতি ধারণ করে।
বেশীরভাগ মুক্তাই এক সেন্টিমিটারের চেয়ে কম প্রশস্ত হয়। তবে বড় গুহা মুক্তার ব্যাস বিশ সেন্টিমিটারও হতে পারে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গুহা, ভিয়েতনামের Son Doong-এ অবশ্য বেসবল আকারের গুহা মুক্তাও পাওয়া গেছে।
নীচে একটা ছবি দেওয়া হল যাতে আপনারা একটা চাবির তুলনায় মুক্তাগুলোর আকার বুঝতে পারেন।