বলুন তো ছবিতে যে বস্তুটি দেখতে পাচ্ছেন, সেটি কী দিয়ে তৈরি?
নিশ্চয় ভাবছেন, বরফ?
অন্তত প্রথম দেখায় সেটিই মনে হয়। কিন্তু ব্যাপারটা এতো সহজ নয় মোটেই!
এটি তৈরি হয়েছে জিপসামের ক্রিস্টাল দিয়ে। জিপসাম হল সালফেট দিয়ে গঠিত নরম খনিজ পদার্থ। জিপসামের ক্রিস্টালকে অ্যালাবাস্টার (alabaster) বলে, যার অর্থ হল সাদা রঙের চমৎকার একটি শেড! ছবি দেখেও অবশ্য নামকরণের সার্থকতা টের পাওয়া যায়।
অতিকায় এই বস্তুগুলো দেখা যায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর লেচুগিয়া (Lechuguilla) গুহায়। বিজ্ঞানীরা আশ্চর্য হয়ে ভেবেছেন, কীভাবে এরা গঠিত হল। একসময় উদ্ঘাটনও করেছেন রহস্য। লেচুগিয়ার চুনাপাথরগুলো (limestone) বছরের পর বছর ধরে সালফিউরিক এসিড দ্বারা ক্ষয় হয়েছে। মাইলের পর মাইল জুড়ে এই ঘটনা ঘটেছে। আর যখন সালফিউরিক এসিড চুনাপাথরকে দ্রবীভূত করে, তখন জিপসাম তৈরি হয়। এটিই গুহার অনন্য কীর্তিগুলোর জন্য দায়ী!
লেচুগিয়া গুহার যত ভেতরে ঢোকা যায়, ততই জিপসামের ক্রিস্টাল দিয়ে গঠিত বিভিন্ন আকারের বস্তু চোখে পড়ে। এরা ৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। গুহার আরও গভীরে গেলে খুঁজে পাওয়া যাবে আমাদের আলোচনার বিষয় “শ্যান্ডলিয়ার বলরুম”কে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন এর আলাদা নাম হল?
হল কারণ গুহার এই অংশের পুরোটা জুড়ে ঝাড়বাতির মতো অনেক জিপসাম ক্রিস্টাল ঝুলে আছে। অত্যন্ত ভঙ্গুর এই বস্তুগুলো তৈরি হতে সময় লেগেছে হাজার হাজার বছর। এদের গড় উচ্চতা ৩ মিটার হলেও কোনো কোনোটি ৬ মিটার পর্যন্ত লম্বা! ঝাড়বাতির মতো এই জিনিসগুলোর জন্য শ্যান্ডলিয়ার বলরুমকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে উদ্ভট আর বিচিত্র গুহাকক্ষ।
যেহেতু জিপসাম খুবই নাজুক খনিজ, তাই ক্রিস্টালের তৈরি ঝাড়বাতিগুলো খুব সহজেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এমনকি আঙ্গুলের একটু আলতো ছোঁয়ায়ও এগুলো ভেঙ্গে যেতে পারে। The National Park Service খুব ভালোমতোই জানে যে, সাধারণ জনগণ লেচুগিয়া গুহায় ঢুকলে ক্রিস্টালে হাত দিবেই। তাই তারা গুহাটিকে করে রেখেছে সর্ব সাধারণের জন্য নিষিদ্ধ! শুধু বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য গবেষকরা ঢুকতে পারেন, তাও মাঝে মধ্যে।
মজার ব্যাপার হল, বিবিসির ডকুমেন্টারি টীম (প্ল্যানেট আর্থ সিরিজ) টানা দুই বছর অনুরোধ করার পর মন গলাতে পেরেছিল কর্তৃপক্ষের। তারা ৫ দিন সময় দিয়েছিল বিবিসির ফিল্মিংয়ের জন্য। কিন্তু যে হারে কাঠখড় পুড়িয়ে অনুমতি পেতে হয়েছে, তাতে কি আর ৫ দিনে পোষায়? দলটি ১০ দিন কাটিয়ে এসেছিলো সেখানে!