এই যে আমাদের চির চেনা প্রকৃতি, এর কতটুকুই বা আমরা বুঝতে পেরেছি বা চিনেছি? এখানে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে নানা রকম ঘটনা। এসব ঘটনা ঘটার ক্ষেত্রে প্রকৃতি কখনোই কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করে না। বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেগুলোকে আমরা বিধাতার অভিশাপ বলে আখ্যায়িত করি, যেমন বন্যা, সাইক্লোন, ভূমিকম্প, খরা ইত্যাদি পৃথিবীর কোন না কোন প্রান্তে প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। এগুলোকে বলা হয় প্রকৃতির বিশৃঙ্খল অবস্থা। আমরা ধরে নিই এগুলোর উপর মানুষের কোন হাত নেই। কিন্তু মার্কিন গণিতবিদ এডওয়ার্ড লরেঞ্জ বলছেন অন্য কথা। তিনি বিশ্বাস করেন পৃথিবীতে বা প্রকৃতিতে যেসব ঘটনা ঘটে, সেগুলো এমনি এমনি ঘটে না। এর পিছনে থাকে পূর্বে ঘটে যাওয়া এক বা একাধিক ঘটনার সমষ্টি। লরেঞ্জ শুধু এটা বলেই ক্ষান্ত হলেন না, সাথে দিলেন গাণিতিক যুক্তি, প্রতিষ্ঠা করলেন একটি তত্ত্ব, যার নাম দিলেন “Chaos Theory” বা “বিশৃঙ্খলা তত্ত্ব”।
বিশৃঙ্খলা তত্ত্ব ও গণিতবিদ লরেঞ্জ
আমরা হরহামেশা দেখি কিছু তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক বড় কিছু ঘটে যাচ্ছে। একবার সংবাদপত্রের একটা সংবাদ পড়ে আমি বেশ বিস্মিত হয়েছিলাম। সংবাদটা ছিল এরকম, এক ব্যক্তি ফ্লেক্সিলোড দোকানিকে বিশ টাকা ফ্লেক্সি করে দেয়ার জন্য বিশ টাকা দিয়েছিল। কিন্তু দোকানি বিশ টাকার বদলে সেই ব্যক্তিকে উনিশ টাকা ফ্লেক্সিলোড করে দিয়েছিল। এতেই ঘটলো বিপত্তি। এক টাকা কম দেয়ায় ওই ব্যক্তি দোকানির কাছে জবাব চাইতে গেলে লেগে গেলো ঝগড়া। এক পর্যায়ে দোকানির মাথায় ব্যক্তিটি লাঠি দিয়ে আঘাত করলে দোকানি ঘটনাস্থলেই মারা যায়। ভাবা যায়, এক টাকার মত একটা সামান্য জিনিসের জন্য একটা মানুষকে প্রাণ দিতে হয়েছিল? সুতরাং আমরা দৈনন্দিন জীবন যে ছোট ছোট ঘটনার সম্মুখীন হই সেগুলো কি আসলেই ছোট? ভেবে দেখবার বিষয়।
“Chaos Theory” বা বিশৃঙ্খলা তত্ত্ব আবিষ্কারের পিছনে কিছু গল্প আছে। গণিতবিদ লরেঞ্জ MIT (ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলোজি)-তে কাজ করার সময় সেখানে একজন আবহাওয়াবিদও ছিলেন। ১৯৬১ সালে সদ্য আবিষ্কৃত কম্পিউটার দিয়ে তিনি স্থানীয় আবহওয়ার নানা দিক বিশ্লেষণ করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতেন। আবহাওয়া বিশ্লেষণের জন্য তিনি নানা বস্তু বা ফ্যাক্টর, যেমন তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুচাপ, আর্দ্রতা ইত্যাদির মধ্যকার সম্পর্ককে প্রায় বারোটি অন্তরজ সমীকরণ আকারে প্রকাশ করেছিলেন এবং সমীকরণগুলোকে যদি সমাধানের জন্য ওই নিউম্যরিক্যাল কম্পিউটারে দেয়া হতো, তাহলে সেটি কিছুদিন আগের আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়ে দিতো।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে আবহাওয়াবিদ যে সকল সংখ্যা ব্যবহার করতেন, সেগুলো সাধারণত দশমিকের পর ছয় ঘর অবধি নিতেন। কিন্তু একদিন সময় বাঁচানোর জন্য তিনি দশমিকের পর তিন ঘর নিলেন। ব্যাপারটা এমন যে, আগে নিতেন ০.৫০৬১২৭ কিন্তু পরবর্তীতে নিয়েছিলেন ০.৫০৬। এদের মধ্যে যে সাংখ্যিক পার্থক্য ছিল (০.০০০১২৭), তা পরিমাণে খুবই সামান্য। যারা উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়েছেন তারা জানেন, গণিতে বা পদার্থবিদ্যায় ০.০০০১২৭ সংখ্যাকে শূন্যের সমতুল্য ধরা হয়।
কিন্তু এই সামান্য পার্থক্যেই ঘটল বিপত্তি। এই দুই ক্ষেত্রে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ছিল অনেক বড় রকমের ফারাক। এমনকি আবহাওয়ার পূর্বাভাসের গ্রাফ দুটিতেও ছিল বড় ধরনের পার্থক্য! ব্যাপারটা অনেকের কাছেই সাধারণ বলে ঠেকতে পারত, কিন্তু লরেঞ্জ এটিকে সাধারণভাবে নেননি। তিনি লেগে ছিলেন এর আসল কারণ জানা পর্যন্ত। বারবার বিভিন্ন দশমিক সংখ্যা দিয়ে লরেঞ্জ গ্রাফগুলোর হেরফের লক্ষ্য করছিলেন। প্রতিবারের সামান্য পরিবর্তন গ্রাফে আনছিল বড় ধরনের হেরফের। এতকিছুর পর লরেঞ্জের উপলব্ধি হল, আমরা প্রতিনিয়ত যেসব ছোটখাট ভুলগুলো করি, হয়তো বা এগুলোর প্রভাবে অন্য প্রান্তে ঘটে যায় বৃহৎ কোনো পরিবর্তন বা বিশৃঙ্খলা। এটাকেই লরেঞ্জ “Butterfly Effect” বা “প্রজাপতি প্রভাব” বলে আখ্যায়িত করেছিলেন।
পরবর্তীতে, ১৯৭২ সালের এক আলোচনা সভায় লরেঞ্জ মজা করে বলেছিলেন, “কিছু কিছু ঘটনা বড়ই স্পর্শকাতর, যেগুলোর সামান্য পরিবর্তনে প্রকৃতিতে ঘটে যেতে পারে বিশাল পরিবর্তন। হয়তো ব্রাজিলের একটি প্রজাপতির পাখা ঝাপটানোর প্রভাবে কয়েক সপ্তাহ পর টেক্সাসে টর্নেডো তৈরি হতে পারে!”
ব্যাপারটা তখন মজার শোনালেও পরবর্তীতে এটা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়। ১৯৭৩ সালে লরেঞ্জ তার গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন, যার শিরোনাম ছিল “Does the Flap of a Butterfly’s wing in Brazil Set Off a Tornado in Texas?”
আসলে লরেঞ্জ এই উক্তিটি করেছিলেন স্রেফ এটা বুঝানোর জন্য যে, আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে যেসব ঘটনা ঘটে, এর পিছনে পূর্বে ঘটিত কোনো কারণ বা ঘটনা থাকে, কোনো দৈবশক্তি এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে না। Chaos Theory এটা নিয়েও আলোচনা করে, আমরা যদি কোনো বিশৃঙ্খল ঘটনাকে সুশৃঙ্খল করতে চাই, তাহলে প্রথমেই শৃঙ্খল করতে হবে ঐ বিশৃঙ্খল ঘটনা ঘটার পিছনের ছোট ছোট বিশৃঙ্খল ঘটনাগুলোকে।
কেন এটাকে “Butterfly Effect” বা ” প্রজাপতি প্রভাব” বলা হয়?
ব্যাপারটাকে গাণিতিক দিক থেকে ব্যাখ্যা করছি। ধরুন, আপনি একটা পিংপং বল উপর হতে মাটিতে ফেলে দিলেন। এতে বলটি উপরে নিচে লাফাবে। এবার যদি আগের থেকে সামান্য জোরে বলটিকে মাটিতে ফেলে দেন তাহলে সেটি আগের চেয়ে বেশি উচ্চতা নিয়ে লাফাবে। লক্ষ্য করলে দেখবেন, এ দুই ক্ষেত্রে লাফানোর পথ এবং গ্রাফ – দুটোই হবে ভিন্ন কারণ সামান্য পরিবর্তনে বলের গতিতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন অর্থাৎ বিশৃঙ্খলা বেড়েছে বহুগুণ। এটি ছিল একটি গতীয় ব্যবস্থা। যেকোনো ব্যবস্থাতে (System) অনেকগুলো বিন্দুর উপস্থিতি থাকে। কিন্তু যে ব্যবস্থাতে বিন্দুগুলি চলমান থাকে তাকে গতীয় ব্যবস্থা বা Dynamic System বলে। সুতারাং বলা যায় গতীয় ব্যবস্থা এক প্রকার বিশৃঙ্খল ব্যবস্থা (Chaotic system)! কারণ এতে বিভিন্ন বিন্দুর অবস্থান পরিবেশের সাপেক্ষে পরিবর্তনের সু্যোগ থাকে। তাই বলে একটি বিশৃঙ্খল ব্যবস্থার সব কিছু বিশৃঙ্খল নয়। অনেক বিশৃঙ্খল ব্যবস্থা আছে যেখানে গতীয় বিন্দুটি সময়ের সাথে কিছু পূর্ব নির্ধারিত বিন্দুর কাছাকাছি অবস্থানের প্রবণতা দেখায়। এই পূর্ব নির্ধারিত বিন্দুগুলিকে গণিতের ভাষায় বলা হয় “আকর্ষক” বা “Attractor”.
আকর্ষক বিন্দু কী এবং Butterfly Effect-এ এর ভূমিকা কী?
ধরুন কেউ আপনাকে বললো এবার এপ্রিল মাসের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে -১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মাঝে থাকবে। কিন্তু তার এই ধারণা নেহাতই খামখেয়ালিবশত, যেটা সম্পূর্ণ অবাস্তব। তাপমাত্রা এপ্রিল মাসে কখনো ১০০ কিংবা -১০০ ডিগ্রী সেলসিয়াস সম্ভব নয়। কিন্তু আমরা পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণে বলতে পারব যে, এপ্রিল মাসে তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মঝে থাকবে। যদিও তাপমাত্রা একটি বিশৃঙ্খল গতীয় ব্যবস্থা তবুও এর মান এই সীমার কাছাকাছিই থাকবে। তাই এখানে এই দুই বিন্দু ২৫ ও ৫০ হল “Attractor” বা “আকর্ষক”। গণিতবিদ লরেঞ্জ তার কাজে যে আকর্ষক পেয়েছিলেন তা একটু ভিন্ন ধরনের। তিনি আবহাওয়া বিশ্লেষণে যে সমীকরণগুলো ব্যবহার করেছিলেন, সেগুলোতে চলক বা variables হিসেবে ছিল আর্দ্রতা, বায়ুচাপ আর তাপমাত্রা। এই তিনটি প্যারামিটার যাদেরকে আমরা ত্রিমাত্রিক স্থানাঙ্ক ব্যবস্থার X, Y, Z অক্ষ বরাবর কল্পনা করতে পারি, যারা সময় (t) এর সাপেক্ষে পরিবর্তনশীল। এখন যদি আমরা দুইটি ঘটনা কল্পনা করি যাদের সময় পার্থক্য শুধু ১/১০০০০০ সেকেন্ড অর্থাৎ এক সেকেন্ডের এক লক্ষ ভাগের এক ভাগ, তাহলে দেখা যাবে তারা প্রথমদিকে একইভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে ।
অর্থাৎ প্রথমদিকে তাদের অবস্থা ছিল শৃঙ্খল এবং এর ফলে যে গ্রাফ দুটি পাওয়া গেলো তাদের সঞ্চারপথ ছিল প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মত। যা দেখেই লরেঞ্জ এর নাম দিয়েছিলেন “Butterfly Effect” বা “প্রজাপতি প্রভাব”। কিন্তু শুরুতে সময়ের যে সামান্য পার্থক্য দেয়া হয়েছিল, পরবর্তীতে সেই সামান্য পরিবর্তনই এই সুশৃঙ্খল গতীয় ব্যবস্থাকে ব্যাপকভাবে বিশৃঙ্খল করে দেয়। অর্থাৎ তাদের সঞ্চারপথ আর একরকম না থেকে Z অক্ষ বরাবর ব্যাপক পরিবর্তিত হয়। এটা থেকে এও বুঝা যায় যে, বিশৃঙ্খল ব্যবস্থা বা Chaotic System-এ আকর্ষক বিন্দু (Atrractor) কাজ করে ফ্র্যাকটাল আকারে। ফ্র্যাকটাল হল অনিয়মিত জ্যামিতিক সঞ্চারপথ। সুতারং এ থেকে এটাও বুঝা যাচ্ছে, আকর্ষকের সাথে শৃঙ্খল ব্যবস্থা ও বিশৃঙ্খল ব্যবস্থার সম্পর্ক সম্পূর্ণ আলাদা।
শৃঙ্খল ব্যবস্থার সাথে আকর্ষকের সম্পর্ক যে সঞ্চারপথ গঠন করে, সেটার গঠন প্রজাপতির ডানা ঝাপটানোর মতন। আর বিশৃঙ্খল ব্যবস্থার সাথে আকর্ষকের সম্পর্ক ফ্র্যাকটাল আকৃতির সঞ্চারপথ গঠন করে।
এরকম ফ্র্যাকটাল বিশৃঙ্খলার অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে পদার্থের মধ্যে থাকা পরমাণুগুলোর নিজস্ব অবস্থানের স্পন্দন গতি, যেখানে প্রতিটি পরমাণু বিভিন্ন দিকে স্পন্দিত হলেও সার্বিকভাবে পদার্থের স্থায়িত্বে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে।
“ButterFly Effect” বা প্রজাপতি প্রভাব নিয়ে আছে প্রচলিত কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘটনা নিয়ে আলোচনা করলে বাস্তব জীবনে এর উপস্থিতি বুঝা যাবে।
১৯১৮ সাল। ফ্রান্সের এক গ্রামে একজন ব্রিটিশ সেনা একজন জার্মান সেনাকে পিটিয়ে জখম করে। শুধু তাই নয়, জার্মান সেনাকে হত্যার আদেশও ছিল। কিন্তু ব্রিটিশ সেনা দয়া করে জার্মান সেনাটিকে ছেড়ে দিল। আর মজার ব্যাপার হল, ছেড়ে দেওয়া সেই জার্মান সেনাটি ছিল পরবর্তীকালের ভয়ংকর শাসক এডলফ হিটলার!
কেমন হতো যদি শুধু একটা বুলেটের খরচ করত ব্রিটিশ সেনাটি? তাহলে হয়তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এত ইহুদী মারা যেত না, এতো সম্পদের ক্ষতি কিংবা পারমানবিক অস্ত্রের এতো ধ্বংসযজ্ঞ পৃথিবীকে দেখতে হত না।
এবার এক ঐতিহাসিক বিশ্বাসঘতকতার ঘটনা উল্লেখ করা যাক, যার জন্য বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়ে রয়েছিল বহুদিন। আমরা সবাই জানি মীরজাফরের সেই পলাশীর প্রান্তরে করা বিশ্বাসঘাতকতার কথা। পলাশীর যুদ্ধে যদি সেদিন নবাব সিরাজউদ্দৌলা মীরজাফরের কথাতে কর্ণপাত না করে যুদ্ধ চালিয়ে যেতেন, হয়ত আমরা ইংরেজদের কাছে এত বছর দাস হয়ে থাকতাম না।
এবার আসি এক গরু চুরির গল্পে যার পরিণতি ছিল ভয়াবহ। ঘটনাটা এমন, বেলজিয়ামের জ্যালেট রাজ্যের এক কৃষক পাশের রাজ্য কনড্রজ থেকে একটা গরু চুরি করে। কিন্তু বাজারে বিক্রি করতে যেয়ে ধরা পড়ে যায়। তখন কনড্রজ রাজ্যের হর্তাকর্তারা তাকে প্রস্তাব দেয়, যদি সে গরুটি তার মালিকের কাছে ফেরত দেয়, তবে তারা তাকে ক্ষমা করে দেবে। কথামত কৃষকটি গরু ফেরত দিল কিন্তু গরুটি ফেরত দেয়ামাত্রই তাকে ফাঁসিতে ঝুলায় কনড্রজ রাজা। ব্যাপারটাকে সহজভাবে নেননি জ্যালেট রাজ্যের রাজা। তিনি মারাত্মক চটে যান যার ফলাফল হয় ভয়ানক। যে অপরাধের সাজা কয়েক মাসের জেল হতে পারতো, সে অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড! এই ঘটনাকে জ্যালেটের রাজা তার আত্মসম্মানের উপর চরম আঘাত বলে মনে করলেন এবং সাথে সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন। কনড্রজের রাজাকে এই অপমানের উপযুক্ত শাস্তি দেবার জন্য শুরু হওয়া এই যুদ্ধের ফল হয় সুদূরপ্রসারী। সামান্য গরু চুরি নিয়ে শুরু হওয়া এই যুদ্ধ চলে প্রায় তিন বছর! তাদের এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের রাজ্যগুলোর মধ্যেও। দীর্ঘমেয়াদি এই যুদ্ধে চারটি রাজ্যসহ শুধুমাত্র কনড্রজ রাজ্যেরই ১৫,০০০ মানুষ ও ৬০ টি গ্রাম ধংস হয়ে যায়। যুদ্ধে প্রায় দেড় লাখ সৈন্য নিহত হয়। বেলজিয়ামের ইতিহাসে এই যুদ্ধ “The Guerre de la Vache” বা “War of the cow” নামে পরিচিত।
সবশেষে বলতে হয়, আসলে Chaos Theory আমাদের এই চিরচেনা পৃথিবী আর প্রকৃতিতে ঘটে যাওয়া দৈনন্দিন নানা ঘটনাকে নিয়ে নতুন করে ভাবাচ্ছে। প্রকৃতিতে, এমনকি মানুষের জীবনেও যে সমস্ত ঘটনা ঘটে, তা আসলে পূর্বে ঘটে যাওয়া কতগুলো ছোট ছোট কাজের ফল, যার গাণিতিক সত্যতা নিশ্চিত করেছেন গণিতবিদ লরেঞ্জ তার Chaos Theory তে। আশার কথা এই, হয়তা এমন এক সময় আসবে যখন মানুষ Chaos Theory-এর সাহায্যে তার ভবিষ্যৎ জানতে পারবে!
তথ্যসূত্র:
https://en.wikipedia.org/wiki/Chaos_theory
https://theconversation.com/explainer-what-is-chaos-theory-10620
https://en.wikipedia.org/wiki/Butterfly_effect
https://www.learning-mind.com/butterfly-effect-history/
দিনদিন ভক্ত হয়ে যাচ্ছি লেখকের। জাস্ট অসাধারণ, কোনো কথা হবে না।