পৃথিবীর সবচেয়ে স্মার্ট ব্যক্তিটির ইন্টার্ভিউ দেখতে বসেছিলাম। ব্যক্তিটি হলেন ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, লস এঞ্জেলেসের গণিতের প্রফেসর টেরেন্স টাও। মাত্র ২৪ বছর বয়সে ভার্সিটির ফুল প্রফেসরের পদে আসীন হয়ে তিনি ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। তাঁকে বলা হয়, “দা গ্রেটেস্ট লাইভ ম্যাথমেটিশিয়ান”। গণিতের নোবেল খ্যাত “ফিল্ড মেডেল”ও জয় করা হয়ে গেছে তাঁর।
টাওয়ের অন্যতম স্পেশালটি হল প্রাইম সংখ্যা। তাই ইন্টার্ভিউটা ঘুরপাক খেয়েছে মূলত প্রাইম নাম্বারকে ঘিরেই। আর এই ফাঁকে আমিও জেনে ফেললাম প্রাইম নাম্বারের কিছু মজার প্রকারভেদ।
টুইন প্রাইম হল এমন একটি প্রাইম নাম্বার, যার আগের অথবা পরের প্রাইম নাম্বারের সাথে মধ্যবর্তী দূরত্ব দুই। যেমন – ৫ এবং ৭, ৩ এবং ৫, ৪১ এবং ৪৩ হল তিনটি টুইন প্রাইম জোড়।
কেন এই প্রাইমের নাম “সিবলিং” না হয়ে “টুইন” হল, এটা জিজ্ঞেস করে আমায় লজ্জা দিবেন না। টেরেন্স টাও পর্যন্ত থতমত খেয়ে হার স্বীকার করেছিলেন উপস্থাপকের এই প্রশ্নের কাছে।
গণিতশাস্ত্রে কাজিন প্রাইম হল সেইসব প্রাইম, যাদের মধ্যবর্তী দূরত্ব চার। যেমন, (৩, ৭), (৭, ১১), (১৩, ১৭) ইত্যাদি।
খিক! প্রাইম ইজ দা নিউ সেক্সি।
তবে অশ্লীল চিন্তা মাথায় আসার আগেই শুনে নিন, দুটো প্রাইম নাম্বারের মধ্যবর্তী দূরত্ব সিক্স (ছয়) হলে তাদের জোড়কে সেক্সি প্রাইম নাম্বার বলে। কে যে দুষ্টামি করে এই জোড়ের নাম এমন খাসলতের রেখেছিলো! যেমনঃ ৫ এবং ১১ কিংবা ১১ এবং ১৭।
যে প্রাইম নাম্বারটির পূর্বের আর পরের প্রাইম নাম্বারের মাঝে সমান সংখ্যক বিরতি থাকে, তাকে ব্যালেন্সড প্রাইম বলে।
যেমন, ৫ একটি ব্যালেন্সড প্রাইম। কারণ এর পূর্বের প্রাইম নাম্বার হল ৩ আর পরের প্রাইম নাম্বার হল ৭। ৩ থেকে ৫ যতদূর (মাঝে শুধু একটা অংক – ৪), ৫ থেকে ৭ ঠিক ততদূরই (মাঝে শুধু একটাই অংক – ৬)। অর্থাৎ আপনি যদি ব্যালেন্সড প্রাইমের আগে-পিছের প্রাইম নাম্বার দুটির গড় করেন, তবে ব্যালেন্সড প্রাইমকে পাবেন।
কয়েকটি ব্যালেন্সড প্রাইম হল – ৫, ৫৩, ১৫৭, ১৭৩, ২১১ ইত্যাদি।
আগে জানা দরকার “প্যালিন্ড্রম নাম্বার” কী জিনিস।
যেসব সংখ্যাকে উল্টো করে লিখলে আবার ওই সংখ্যাটিই হয়, তাদেরকে প্যালিন্ড্রম নাম্বার বলে। যেমন – ১২১, ১৭১ ইত্যাদি। এ থেকেই হয়ত বুঝে ফেলেছেন প্যালিন্ড্রমিক প্রাইম নাম্বার কী!
হ্যাঁ পাঠক, যেসব প্রাইম নাম্বারকে উল্টিয়ে লিখলে আবার সেই সংখ্যাই হবে, সেগুলোই প্যালিন্ড্রমিক প্রাইম নামে পরিচিত। যেমনঃ ১১, ১০১, ১৩১, ১৫১, ১৮১, ৩১৩, ৭২৭, ৯১৯ ইত্যাদি। এক্ষেত্রে মনে রাখা ভালো, ২, ৩, ৫, এবং ৭ সংখ্যা চারটিও কিন্তু প্যালিন্ড্রমিক প্রাইম নাম্বারের আওতাভুক্ত! আরেকটা মজার বিষয় হল, ১১ হল একমাত্র প্যালিন্ড্রমিক প্রাইম নাম্বার যার আছে জোড় সংখ্যক ডিজিট। অর্থাৎ দুটো। বাকী সব প্যালিন্ড্রমিক প্রাইম নাম্বারের ডিজিট কিন্তু বিজোড় সংখ্যক।
ফিবনাচ্চি নাম্বার আপামর জনসাধারণের কাছে খুবই জনপ্রিয় একটি টার্ম। একটি সংখ্যাকে তার পূর্ববর্তী সংখ্যার সাথে যোগ দিয়ে দিয়ে এই ফিবনাচ্চি নাম্বার তৈরি করা হয়। অনেকগুলো ফিবনাচ্চি নাম্বার মিলে তৈরি করে ফিবনাচ্চি সিরিজ। যেমনঃ সিরিজের প্রথম দুটো সংখ্যা হিসেবে যদি ০ এবং ১-কে ধরা হয়, তাহলে ১+০=১ হবে ফিবনাচ্চি সিরিজের তৃতীয় সংখ্যা, ১+১=২ হবে চতুর্থ সংখ্যা। এভাবে সিরিজটি দাঁড়াবেঃ ০, ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১…।
তাহলে ফিবনাচ্চি প্রাইম কী, সেটা নিশ্চয় বুঝে ফেলেছেন?
হ্যাঁ, ফিবনাচ্চি প্রাইম নাম্বার হল সেসব প্রাইম নাম্বার, যারা একেকটি ফিবনাচ্চি নাম্বার! যেমনঃ ২, ৩, ৫, ১৩, ৮৯ ইত্যাদি।
সোফি জার্মেইন প্রাইম নাম্বারের নামকরণ করা হয়েছে ফরাসী গণিতবিদ সোফি জার্মেইনের নামানুসারে।
কোন প্রাইম নাম্বার (p) একটি সোফি জার্মেইন প্রাইম নাম্বার হবে যদি 2p + 1 সংখ্যাটিও একটি প্রাইম নাম্বার হয়ে থাকে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২ সংখ্যাটিকে আমরা সোফি জার্মেইন প্রাইম নাম্বার বলতে পারব, যদি (২*২+১)-ও একটি প্রাইম নাম্বার হয়। এখন হিসেব কষে দেখুন, ২*২+১ = ৫। অর্থাৎ এটিও একটি প্রাইম নাম্বার। তাহলে আমরা ২ কে সোফি জার্মেইন প্রাইম নাম্বার বলতে পারি।
প্রথম কয়েকটা সোফি জার্মেইন প্রাইম নাম্বার হল – ২, ৩, ৫, ১১, ২৩, ২৯, ৪১, ৫৩ ইত্যাদি।
সেইফ প্রাইম নাম্বারগুলো সোফি জার্মেইন প্রাইম নাম্বারের সাথে জড়িত। কারণ সেইফ প্রাইম নাম্বার হওয়ার সমীকরণ হল 2p + 1, যেখানে p একটি প্রাইম নাম্বার। অর্থাৎ সোফি জার্মেইন প্রাইম নাম্বারের শর্ত পূরণ করে উৎপন্ন হওয়া প্রাইম নাম্বারগুলোকেই সেইফ প্রাইম নাম্বার বলে।
যেমনঃ উপরের উদাহরণে আমরা দেখেছি, ২ কে সোফি জার্মেইন প্রাইম নাম্বার বলা যাবে যদি (২*২+১)-এর ফলাফল একটি প্রাইম নাম্বার হয়। আর হয়েছেও তাই। কারণ ২*২+১=৫।
তো, এখানকার ৫-ই আমাদের সেইফ প্রাইম নাম্বার।
প্রথম কয়েকটা সেইফ প্রাইম নাম্বার হল ৫, ৭, ১১, ২৩, ৪৭, ৫৯ ইত্যাদি।
কোন প্রাইমকে স্ট্রং প্রাইম বলা যাবে যদি তার সবচেয়ে নিকটবর্তী আগে এবং পিছের প্রাইম নাম্বারের গড়মানের চেয়ে সংখ্যাটির মান বেশী হয়।
উদাহরণঃ ১৭ হল প্রাইম সিরিজের সপ্তম প্রাইম নাম্বার। এখন এর ঠিক পূর্ববর্তী প্রাইম নাম্বার বা সিরিজের ষষ্ঠ প্রাইম নাম্বার হল ১৩ এবং ঠিক পরবর্তী প্রাইম নাম্বার বা সিরিজের অষ্টম প্রাইম নাম্বার হল ১৯। এই দুই সংখ্যার যোগফল হল ৩২, এবং গড় হল ১৬। আবার ১৬ হল ১৭-এর চেয়ে ছোট সংখ্যা। তাই ১৭-কে স্ট্রং প্রাইম বলা যায়।
কয়েকটি স্ট্রং প্রাইম নাম্বার হল ১১, ১৭, ২৯, ৩৭, ৬৭, ৭১, ৯৭, ১০১, ১০৭ ইত্যাদি।
গুড প্রাইম নামটা শুনতে ভালো লাগলেও কাজ কারবার কিছুটা জটিল। যেমনঃ কোন প্রাইম নাম্বারকে গুড প্রাইম বলা যাবে তখনই, যখন এর বর্গফল হবে প্রাইম নাম্বারের সিকোয়েন্সে অবস্থিত উক্ত নাম্বারের আগের এবং পিছের সমান দূরবর্তী দুটো নাম্বারের গুণফলের চেয়ে বেশী।
ওরে, কী বললাম!
দাঁড়ান একটা উদাহরণ দিই।
সংখ্যারেখার প্রাইম সিকোয়েন্স শুরু হয় ২, ৩, ৫, ৭, ১১, ১৩, ১৭… এভাবে। এখন, ৫ সংখ্যাটি গুড প্রাইম হবে কিনা তা জানার জন্য আমাদের দেখতে হবে এর আগে এবং পিছে সমান দূরত্বের প্রাইম নাম্বার দুটোর গুণফল ৫-এর বর্গফলের চেয়ে ছোট কিনা। যেমনঃ ৫-এর এক ঘর আগের প্রাইম হল ৩ এবং এক ঘর পরের প্রাইম হল ৭। ৩*৭=২১, যা ৫*৫=২৫ এর চেয়ে কম। আবার ৫-এর দুই ঘর আগের প্রাইম হল ২ এবং দুই ঘর পরের প্রাইম হল ১১। ২*১১=২২, যা ৫*৫=২৫ এর চেয়ে কম।
তাই আমরা বলতে পারি, ৫ হল গুড প্রাইম!
প্রথম কয়েকটি গুড প্রাইমের উদাহরণ হলঃ ৫, ১১, ১৭, ২৯, ৩৭, ৪১, ৬৭, ৭১, ৯৭, ১০১ ইত্যাদি।
…
টেরেন্স টাওয়ের সাক্ষাৎকারটা দেখতে পারেন নীচের লিঙ্কে গিয়ে। মাত্র ছয় মিনিটের এই সাক্ষাৎকারটা দেখে পস্তাবেন না, গ্যারান্টিড!