দেখলাম কার্ল সেগান এবং অ্যান ড্রুইয়ানের চিত্রনাট্য অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্র “কন্টাক্ট”। ১৯৮০ সালে এই চিত্রনাট্য লেখা শেষ করার পর মুভি নির্মাণে হাত দেওয়ার ব্যাপারে এতো বেশি সময় ক্ষেপণ হচ্ছিলো যে, কার্ল সেগান চিন্তা করলেন, মুভির আগে কাহিনিটা দিয়ে বরং একটা বই বের করে ফেলবেন। বইয়ের নামও দিলেন “কন্টাক্ট”। ফলে আজ আপনারা কন্টাক্ট উপন্যাসের পাতা উল্টাতে পারছেন।
বহু হাত ঘোরার পর, বহু বছর কাটার পর (এগুলো আরেক কাহিনি) অবশেষে যারা এই চলচ্চিত্র তৈরিতে শামিল হতে পেরেছিলেন, তারা হলেনঃ
পরিচালকঃ রবার্ট জেমেকিস
অভিনয়ঃ জোডি ফসটার, ম্যাথিও ম্যাককোনাহে-সহ আরও অনেকে।
মুক্তিকালঃ ১১ জুলাই, ১৯৯৭।
আইএমডিবি রেটিংঃ ৭.৪
মেটাক্রিটিকঃ ৬২%
রটেন টমেটোঃ ৬২%
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, যে মুভি নির্মাণের জন্য সেগানের এতো আগ্রহ ছিলো, সেই মুভির মুক্তি তিনি দেখে যেতে পারেননি। কারণ মুভি রিলিজের মাত্র ছয় মাস আগে ১৯৯৬ সালের ২০ ডিসেম্বর সেগান মৃত্যুবরণ করেন।
আমার অনুভূতি
সত্যি বলতে কী, এই প্রথম কোনো সায়েন্স ফিকশন মুভি দেখে আমি মুভির মধ্যভাগ পর্যন্ত চেয়ারে হেলান দিয়ে বসতে পারিনি। খাড়া হয়ে বসে ছিলাম উত্তেজনায়। আদ্যিকালের দা থিং, ইটি দা এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল, ২০০১: এ স্পেস অডিসি থেকে শুরু করে হালের ইন্টারস্টেলার, দা মারশান, টার্মিনেটর সিরিজ, দা ম্যাট্রিক্স (এটার আমি অনেক কিছুই বুঝিনি। উত্তেজনা অনুভব না করার এটা একটা কারণ), ইন্সেপশন – কিছু দেখেই আমি এতোটা উত্তেজনা অনুভব করিনি।
জানি মুভি বোদ্ধারা তেড়ে এসে বলবেন, “আদ্যিকালের মুভিগুলোর নির্মাণের সময় আপনার বিবেচনা করা উচিৎ। তাহলে আর এই কথা বলতেন না” বা “আপনি কিছুই বুঝেন নাই। তাই উত্তেজনা পান নাই”। কিন্তু কথা হলো, আমি একবারও বলছি না, এইসব মুভি দেখে আমার ভালো লাগেনি বা আমি দম বন্ধ করা শিহরণ অনুভব করিনি। আমি যা বলতে চেয়েছি তা হলো, কন্টাক্ট মুভির ক্ষেত্রে আমি যে ধরনের অতিরিক্ত উত্তেজনা বোধ করেছি, সেরকম মাত্রার উত্তেজনা অন্য সায়েন্স ফিকশনগুলোর বেলায় করিনি। এর কারণ কী, সেটাও আমি খুঁজে বের করেছি।
ছোটবেলা থেকে সায়েন্স ফিকশন গল্প পড়ে পড়ে বা “দি এক্স ফাইলস”-এর মত টিভি সিরিজ দেখে দেখে এলিয়েন সম্পর্কে আমার মধ্যে প্রচণ্ড আগ্রহ তৈরি হয়েছিলো। ধীরে ধীরে সেই আগ্রহ বিভিন্ন ধরনের মহাকাশ সম্পর্কিত বই পড়ে “এলিয়েনদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন” বা “অন্য গ্রহের প্রাণিদের সন্ধান”-এ এসে দাঁড়িয়েছে। ফলে আমার মস্তিষ্কে গ্রোথিত এই চরম আকাঙ্ক্ষার সাথে কন্টাক্ট মুভির কাহিনি মিলে যাওয়ায় আমি সেই পরিমাণ মজা পেয়েছি। শুধু মজা বললে ভুল হবে, সেই পরিমাণ অনুভব করতে পেরেছি।
মুভির এন্টাগোনিস্ট “এলেনোর এলি অ্যারোওয়ে”-র চরিত্রে অভিনয় করেছেন জোডি ফসটার। হ্যাঁ, সাইলেন্স অফ দা ল্যাম্বস-এর সেই স্মার্ট গোয়েন্দা বা দা ট্যাক্সি ড্রাইভার মুভির সেই কিশোরী প্রস্টিটিউট। সাথে “পালমার জশ” চরিত্রে আছেন সবার প্রিয় ম্যাথিও ম্যাককোনাহে। এই চরিত্র নিয়ে আর একটা বাক্যও আমি ব্যয় করতে রাজি নই। আমার ধারণা, আপনারাও (যারা উপন্যাসটা পড়েননি) আমার মতোই ধাক্কা খাবেন দেখলে।
যথেষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে দিয়েছি মুভির কাহিনি নিয়ে, আর নয়। পুরো মুভিতেই আছে টান টান উত্তেজনা, যেটা আপনারা আগেই শুনেছেন। মুভির বড় অংশ জুড়ে ছিলো বিজ্ঞানের সাথে ধর্মীয় গোঁড়ামির সংঘর্ষ, যেটা আসলে নির্মম বাস্তবতার রূপালি পর্দা ভার্সন। আর ১৯৯৭ সালের প্রেক্ষাপটে ভিজুয়াল ইফেক্টের দুর্বলতা মেনে নিয়েই মুভিটা দেখতে হবে।
এখন শুধু এটুকু বলতে পারি, আমার কাছে চরম লেগেছে বলে যে আপনার কাছেও তাই লাগবে, তা নয়। তাই দেখে এসে আমাকে ঝাড়বেন না যেন! আর ভালো লাগলে সাজেস্ট করে করে ছড়িয়ে দিয়েন মুভিটার কথা। শত হলেও কার্ল সেগানের লেগ্যাসি!
বিশেষ প্রশংসা বাক্য
১) মুভির ডায়ালগ।
অনেক ডায়ালগ আছে, টেনে টেনে একাধিকবার শোনার মত। গভীর ভাবসম্পন্ন কথা, যা আপনাকে ভাবিয়ে তুলবে। আপনার কানের জন্য শুধু নয়, মনের জন্যেও প্রচুর খাদ্য পাবেন ডায়ালগগুলোতে।
২) জোডি ফসটারের চোখ মুখের অভিব্যক্তি।
সত্যি টাশকি খেয়েছি দেখে। “চোখ যে মনের কথা বলে” – এই সত্যটা যে অভিনেতা যত সুন্দর করে আয়ত্ব করতে পারেন, তাকে আমার তত দক্ষ অভিনেতা মনে হয়।
৩) ম্যাথিও ম্যাককোনাহের ঠাণ্ডা মাথার অভিনয়।
ফসটারের মত একই প্রশংসা যায় এই লোকের ক্ষেত্রেও। সাথে একদম অন্যরকমের গেটআপে ম্যাথিওকে দেখে আপ্পিসমাজের ঘুম হারাম হওয়ার আশংকা করছি। মা রে মা! এমন সেক্সি লুক দেয় যে, পায়ের তলার মাটি সরে যায়।
ডাউনলোড লিঙ্ক
https://kat.cr/contact-1997-1080p-brrip-x264-yify-t9735675.html
…
…
…
স্পয়লার এলার্ট
ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে মুভির শেষাংশ ভালো লাগেনি। পুরো মুভি উসাইন বোল্টের গতিতে দৌড়ালেও শেষে এসে কচ্ছপের গতিপ্রাপ্ত হয়েছে। চিত্রায়ন ভালো হয়নি, নাকি শেষের কাহিনিটাই জোরালো ছিলো না, বুঝতে পারছি না। উপন্যাসটা পড়তে হবে।