CREATION (2009): স্ত্রী এবং কন্যার সাথে চার্লস ডারউইনের সম্পর্ক নিয়ে রচিত আখ্যান

মুক্তিকালঃ জানুয়ারি ২২, ২০১০
পরিচালকঃ জন এমিয়েল
অভিনয়েঃ পল বেট্যানি, জেনিফার কনেলি, টবি জোন্স, বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ, মার্থা ওয়েস্ট-সহ আরও অনেকে।
আইএমডিবি রেটিং: 6.7
রটেন টোম্যাটোঃ ৪৬%

ডারউইন প্রদত্ত “প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব”-এর সাথে সবার পরিচয় না থাকলেও কম বেশি সবাই-ই আমরা বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইনের নাম শুনেছি। “ক্রিয়েশন” মুভিটা এই মহান বিজ্ঞানীকে নিয়েই নির্মিত। কিন্তু কেউ যদি মুভিটিকে বিবর্তন তত্ত্ব আবিষ্কারের কাহিনি, বা ‘বিগল’ জাহাজে করে চার্লস ডারউইনের ভ্রমণ, বা গ্যালাপাগোস দ্বীপে ডারউইনের অভিজ্ঞতার উপস্থাপন বলে মনে করেন, তাহলে ভুলটা ভেঙে দিচ্ছি। এই মুভি ডারউইনের ৭৬ বছরের জীবনের অত্যন্ত স্পর্শকাতর কিছু অংশ নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এই অংশে অবশ্যই আছে বিবর্তন তত্ত্বের উপর ডারউইনের কাজ, একে প্রমাণের জন্য ডারউইনের বিভিন্ন পরীক্ষণ, তত্ত্বটির দলিল হিসেবে খ্যাত “অন দা অরিজিন অফ স্পিশিজ”-এর রচনা, বইটির প্রকাশনা। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে যে বিষয়টি মুভিতে প্রাধান্য পেয়েছে, সেটা হল জ্যেষ্ঠ কন্যা অ্যানির সাথে ডারউইনের সম্পর্ক।

অ্যানির সাথে গল্পে মত্ত ডারউইন

অ্যানির সাথে গল্পে মত্ত ডারউইন

অ্যানি ছিলো ডারউইনের দ্বিতীয় সন্তান, এবং প্রথম কন্যা। মেয়েটি অত্যন্ত বুদ্ধিমান ছিলো। বাবার প্রতি তার ভালোবাসা কিংবা যত্নেরও সীমা ছিলো না। অ্যানি পছন্দ করতো বাবার চুল আঁচড়ে দিতে, বাবার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গল্প করতে, বাবার দেওয়া “সত্য শিক্ষা” গ্রহণ করতে।

যে সময় ডারউইন বেঁচে ছিলেন, সে সময় ধর্মের এতো দৌর্দণ্ড প্রতাপ ছিলো যে, ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক কোনো মতবাদ মুখ ফুটে বলে ফেলা যেতো না। সেই মতবাদ যত পরীক্ষালব্ধ কিংবা খাঁটি বৈজ্ঞানিক সত্যই হোক না কেন। তাই নিজের “The Origin of Species by means of Natural Selection” তত্ত্বটি আবিষ্কারের পর ডারউইন প্রচণ্ড মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছিলেন। একদিকে তার বিশ বছরের গবেষণার ফল, অপরদিকে সমাজের মানুষের হাজার বছরের বিশ্বাস! তিনি কীভাবে এই বিশ্বাসকে ঠুনকো বলে রায় দেবেন? তার তত্ত্ব প্রকাশিত হলে যে এমনটাই ঘটবে!

এমনকি এই গবেষণার জের ধরে ধর্মপ্রাণ স্ত্রী এমা ডারউইনের সাথেও চার্লস ডারউইনের মনোমালিন্য, অভিমান, রাগারাগি কিছু বাদ থাকেনি। নিজের ধর্ম বিশ্বাস ভেঙে পড়তে দেখে ডারউইন নিজে যেমন হতভম্ব হয়েছিলেন, তিনি বুঝতে পারছিলেন, মানুষেরও ঠিক এমনই অবস্থা হবে। তাই এই তত্ত্ব প্রকাশ করা উচিৎ কিনা, সেই দ্বিধায় ভুগতে ভুগতে ডারউইন যে মানসিক কষ্টটা পেয়েছিলেন, সেটাও মুভিতে যথেষ্ট বিস্তারিতভাবে দেখানো হয়েছে।

প্রার্থনারত স্ত্রীর পাশে প্রচলিত ধর্মমতে অবিশ্বাসী ডারউইন।

প্রার্থনারত স্ত্রীর পাশে প্রচলিত ধর্মমতে অবিশ্বাসী ডারউইন।

অভিনয়ে সবাইকেই ছক্কা দেওয়া যায়। ডারউইনের চরিত্রে পল বেট্যানির মেকআপ দেখে চমকে গিয়েছিলাম! এমন মিল ক্যামনে সম্ভব? পরিচালককেও ছক্কাযুক্ত ধন্যবাদ এমন একটা মুভি তৈরির জন্য। অন্তত ডারউইনের ব্যক্তিগত জীবনের কিছুটা অংশ (যেটা তার “অরিজিন অফ স্পিশিজ” বই পড়ে জানা যায় না) আমাদের দৃষ্টিগোচর হলো।

বিঃ দ্রঃ আমার সবচেয়ে প্রিয় দৃশ্য ছিলো, ‘জেনি’ নামক শিম্পাঞ্জির সাথে ডারউইনের কাজ কারবার। চোখের পানি ধরে রাখা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। শেষে জেনির পরিণাম দেখে ফ্যাচ ফ্যাচ করে কেঁদেছিও। শুধু জেনির গল্প দেখার জন্য এই লিংকে যেতে পারেন

জেনির সাথে ডারউইনের বন্ধুত্ব

জেনির সাথে ডারউইনের বন্ধুত্ব

Comments

আপনার আরো পছন্দ হতে পারে...

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
জানান আমাকে যখন আসবে -
guest
0 Comments
Inline Feedbacks
View all comments
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x