কুরি পরিবারটা এত আজব আর এত অসাধারণ যে, প্রায় প্রত্যেক সদস্যই জয় করেছেন নোবেল পুরষ্কার! কি, চমকে গেলেন? হা হা! চমকানোর এখনও বাকি আছে পেয়ারা পাঠক। মেরি কুরি যে কত কিছুতে প্রথম নারী ছিলেন, সেটা জানলেও চমকে যেতে হয়ঃ
– প্রথম নোবেল জয়ী নারী,
– প্রথম দুটো নোবেল জয়ী নারী,
– দুটো ভিন্ন বিষয়ে প্রথম নোবেল জয়ী ব্যক্তি,
– বিজ্ঞানের দুটো আলাদা ক্ষেত্রে দু’বার নোবেল জয়ী একমাত্র ব্যক্তি,
– প্যারিসের École Normale Supérieure প্রতিষ্ঠানের প্রথম নারী ফ্যাকাল্টি,
– প্যারিসের সর্বন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী প্রফেসর।
যাক, ভূমিকা আর না বাড়িয়ে চলে যাই মূল প্রবন্ধে। বলছিলাম মেরি কুরি আর পিয়েরে কুরির সুখের সংসারের কথা। পরিবার হিসেবে উনাদের নোবেল পাওয়ার সূত্রপাত কোথা থেকে, সেটা জানতে হলে জানতে হবে মেরি-পিয়েরের অমর প্রেম কাহিনী!
মেরি আর পিয়েরেঃ দু’জন দুজনের
পোল্যান্ডে জন্ম নেওয়া মারিয়া স্কদোউস্কা ১৮৯১ সালের শেষ ভাগে ফ্রান্সে যান উচ্চতর পড়াশোনা করতে। সেখানে প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এবং গণিতে ভর্তি হন। খরচ চালাবার জন্য তিনি দিনের বেলা পড়াশোনা করতেন এবং বিকেলে করতেন গৃহশিক্ষকতা। কিন্তু তাঁর উপার্জন এতই সামান্য ছিল যে, শীতে পরার মতো গরম জামা পর্যন্ত কিনতে পারেননি। ফলে শীত এলে হয়ে পড়তেন অসুস্থ, এবং ক্ষুধার্ত অবস্থায় জ্ঞানও হারিয়েছেন অনেকবার।
১৮৯৩ সালে মেরি (তবে ফরাসী উচ্চারণে মারিয়াকে “মারি” বলা হয়) পদার্থবিজ্ঞানে ডিগ্রী লাভ করেন এবং প্রফেসর গ্যাব্রিয়েল লিপম্যানের বাণিজ্যিক গবেষণাগারে কাজ করতে শুরু করেন। সেই সাথে তিনি পড়াশোনাও চালিয়ে যেতে থাকেন। এসময় তিনি ভার্সিটি থেকে একটি ফেলোশিপ যোগাড় করতে সক্ষম হন, যেটার সহায়তায় ১৮৯৪ সালে তাঁর দ্বিতীয় ডিগ্রীটি লাভ করেন।
বিভিন্ন ইস্পাতের চৌম্বকীয় ধর্মের উপর অনুসন্ধান করা নিয়ে প্যারিসে শুরু হয় মেরির বৈজ্ঞানিক জীবন। পোলিশ পদার্থবিদ জোসেফ কোয়ালস্কি জানতে পারেন যে, মেরি বড় একটি গবেষণাগার খুঁজছেন। তিনি মেরিকে সাহায্য করতে চাইলেন। চিন্তা করলেন, “পিয়েরে কুরি” নামক একজনের অধীনে এ ধরণের বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার থাকতে পারে। কারণ পিয়েরে ছিলেন “স্কুল অফ ফিজিক্স এন্ড কেমিস্ট্রি”র ইন্সট্রাক্টর।
জোসেফের সূত্রে মেরির সাথে পিয়েরের পরিচয় হল। যদিও পিয়েরে বড় কোনো ল্যাবের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন না, তবুও তিনি মেরিকে কিছু জায়গা খুঁজে দিয়েছিলেন। সেখানেই মেরি তাঁর গবেষণা আরম্ভ করেন।
বিজ্ঞানের প্রতি মেরি এবং পিয়েরের পারস্পারিক আবেগ তাঁদেরকে কাছে টেনে আনে। পিয়েরে মেরিকে তার “উৎসাহদাতা” হিসেবে সম্মান করতে শুরু করেন। একসময় তাঁদের মধ্যে ভালো লাগা জন্ম নেয়। অবশেষে পিয়েরে মেরিকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু পিয়েরেকে ভালবাসলেও মেরি প্রথমে সেটা গ্রহণ করেননি। কারণ তিনি নিজ দেশে ফিরে আসার পরিকল্পনা করছিলেন। আর বিয়ে করলে যদি জামাইয়ের সাথে ফ্রান্সেই থেকে যেতে হয়? পিয়েরে মেরির দুঃশ্চিন্তা সম্পর্কে জানতে পেরে বলেছিলেন, কোনো অসুবিধা নেই। মেরি ফ্রান্সে থাকতে না চাইলে নাই। মেরিকে বিয়ে করে মেরির সাথে তিনি পোল্যান্ডেও যেতে প্রস্তুত। যদি সেখানে গিয়ে তাঁকে বিজ্ঞানচর্চা ছেড়ে ফরাসী ভাষার শিক্ষক হতে হয়, তবুও। ভালোবাসা হো তো অ্যায়সা!
১৮৯৪ সালের গ্রীষ্মের ছুটিতে অবশ্য মেরি একাই ওয়ারসোতে ফিরে আসেন এবং পরিবারের সাথে একত্র হন। তিনি তখনও স্বপ্ন দেখছিলেন যে, পোল্যান্ডে তাঁর পছন্দের বিষয়ের উপর কাজ করতে পারবেন। কিন্তু ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! তিনি মহিলা বলে ক্র্যাকো বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁকে কোনো পদ দেওয়া হলো না। এ খবর শুনে পিয়েরে তাঁকে চিঠি লিখেন। সেখানে তিনি মেরিকে রাজী করান ফ্রান্সে ফিরে গিয়ে তাঁর পিএইচডি শুরু করার ব্যাপারে। এদিকে মেরিও পীড়াপীড়ি শুরু করেন পিয়েরের সাথে। তিনি পিয়েরেকে চুম্বকবিদ্যার উপর তাঁর গবেষণাকাজ লিখে শেষ করতে বলেন। মেরির তাগাদার চোটে পিয়েরে তাঁর পিএইচডি থিসিস লেখা সম্পূর্ণ করেন এবং ১৮৯৫ সালের মার্চে লাভ করেন পিএইচডি ডিগ্রী। সেসময় একটা উক্তি বেশ জনপ্রিয় হয়ঃ “পিয়েরের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার – মেরি”!
একই বছরের ২৬ জুলাই প্যারিসে দুজনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই বিয়েও ছিলো তাঁদের দুজনের মতোই তারছেঁড়া এক অনুষ্ঠান। এখানে ছিলো না কোনো ধর্মীয় আচার ব্যবহার। সাধারণত পাশ্চাত্যের মেয়েরা সাদা গাউন পরে বিয়ে করে। কিন্তু মেরি তার বদলে পরেছিলেন গাঢ় নীল রঙের পোশাক। মজার ব্যাপার হলো, এই পোশাকটি অনেক বছর মেরির ল্যাব কোট হিসেবে সেবা দিয়েছিলো। তারছেঁড়া আর কাকে বলে?
বিয়ের পর মেরি “কুরি” পদবীতেই পরিচিতি লাভ করেন।
অবসর সময়ে তাঁদের মাত্র দুটো বিনোদন ছিলো। এক, বাইসাইকেলে করে দীর্ঘ ভ্রমণ; দুই, বিদেশ ভ্রমণ। দুটো ব্যাপারই তাঁদেরকে আরো ঘনিষ্ঠ করেছিলো। পিয়েরের মধ্যে মেরি খুঁজে পেয়েছিলেন এমন একজনকে, যিনি ছিলেন একাধারে মেরির ভালোবাসার মানুষ, সবসময়ের সঙ্গী এবং বৈজ্ঞানিক কাজের সহযোগী; যার উপর মেরি করতে পারতেন ভরসা।
মেরি আর পিয়েরেঃ তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণা
এখন চলুন, মেরি আর পিয়েরে কোন কাজের জন্য নোবেল পেয়েছিলেন, সেটা দেখি।
১৮৯৫ সালে উইলিয়াম রন্টজেন এক্স-রে আবিষ্কার করেন, কিন্তু তিনি এই রশ্মি নির্গত হওয়ার পেছনের কারণটা জানতেন না। ১৮৯৬ সালে হেনরি বেকুয়েরেল আবিষ্কার করেন, ইউরেনিয়াম মৌলটিও এক্স-রে’র মতো কোনো একটা রশ্মি নির্গত করে। তিনি দেখান যে, এই রশ্মি নির্গত হওয়ার জন্য বাইরের থেকে শক্তি প্রয়োগের দরকার পড়ে না। এটা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইউরেনিয়ামের ভেতর থেকেই বের হয়। এই প্রক্রিয়াটিকেই আমরা এখন রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয়তা হিসেবে চিনি। এই দুই গবেষণা মেরিকে দারুণ প্রভাবিত করে। তিনি থিসিসের জন্য টপিক হিসেবে ইউরেনিয়ামের রশ্মিকে বেছে নেন। আর ইউরেনিয়ামের দুটো খনিজ পদার্থ, যথা “পিচব্লেন্ড” আর “টর্বেনাইট”-এর উপর কাজ শুরু করেন।
তখন থেকে পনেরো বছর আগে পিয়েরে কুরি আর তার বড় ভাই জ্যাক কুরি “পিয়েযোইলেকট্রিক কোয়ার্টজ ইলেক্ট্রোমিটার” নামক একটি যন্ত্র আবিষ্কার করেছিলেন যেটা দিয়ে ইলেকট্রিক চার্জ মাপা যায়। মেরি সেই যন্ত্র ব্যবহার করে আবিষ্কার করেন, ইউরেনিয়ামের রশ্মিটি স্যাম্পল বা নমুনার আশেপাশের বায়ুকে বিদ্যুৎ পরিবাহী করে দিয়েছে, এবং ইউরেনিয়ামের কার্যকলাপ নির্ভর করে ইউরেনিয়ামের মোট পরিমাণের উপর। তিনি অনুমান করেন, এই তেজস্ক্রিয়তা মৌলের ভেতরের অণুসমূহের বিক্রিয়ার ফল নয়। এটি আসছে পরমাণু থেকে। এই অনুমানটি “পরমাণু অবিভাজ্য” ধারণাকে ভুল প্রমাণ করার ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ ধাপ ছিল।
মেরি আর পিয়েরে যেখানে গবেষণা করতেন, সেটি ছিল না কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার। সেখানে না ছিল ভালো ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা, না ছিল পানি আটকানোর ব্যবস্থা। তার উপর কুরি দম্পতি জানতেন না যে, তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শে থাকলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি হতে পারে। তাই তারা বছরের পর বছর অরক্ষিত অবস্থায় তেজস্ক্রিয় মৌল নিয়ে কাজ করে গেছেন।
১৮৯৮ সালে মেরি আবিষ্কার করেন “থোরিয়াম” মৌলটিও তেজস্ক্রিয়। কিন্তু মেরির পেপার পাবলিশ হওয়ার মাত্র দুই মাস আগেই যে এই ব্যাপারটা আবিষ্কার করে পেপারও পাব্লিকেশন করে ফেলেছিলেন জেরার্ড কার্ল শ্মিট, সেটা মেরি জানতেন না।
যা হোক, মেরির গবেষণায় মুগ্ধ হয়ে পিয়েরে স্ফটিকের উপর তার নিজস্ব গবেষণা বাদ দিয়ে মেরির গবেষণায় যোগ দেন। ১৮৯৮ সালের জুলাই মাসে কুরি দম্পতি একটা পেপার পাবলিশ করে জানান যে, তারা “পিচব্লেন্ড” থেকে নতুন একটা তেজস্ক্রিয় মৌলের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। এর নাম তারা দিলেন পোলোনিয়াম। নামটা এসেছে মেরির জন্মস্থান পোল্যান্ড থেকে। দুর্ভাগ্য যে, পোল্যান্ড তার কৃতী সন্তানকে যথাযথ সম্মান দিতে পারেনি। একই সালের ডিসেম্বর মাসে তারা ঘোষণা দেন দ্বিতীয় তেজস্ক্রিয় মৌল আবিষ্কারের কথা! এইবার মৌলটির নাম দেওয়া হয় রেডিয়াম। এটি এসেছে Ray বা রশ্মি থেকে। মজার ব্যাপার হল, কুরি দম্পতিই কিন্তু “রেডিওএকটিভিটি” নামটা উদ্ভাবন করেছিলেন!
নিজেদের আবিষ্কারকে যাতে প্রশ্নবিদ্ধ হতে না হয়, সেজন্য মেরি আর পিয়েরে চিন্তা করলেন পোলোনিয়াম আর রেডিয়ামকে বিশুদ্ধ মৌল হিসেবে পৃথক করবেন। দুটো মৌলই পিচব্লেন্ড থেকে আলাদা করতে হবে। কিন্তু ১৯১০ সালে বিশুদ্ধ রেডিয়ামকে আলাদা করতে পারলেও মেরি পোলোনিয়ামকে কিছুতেই আলাদা করতে পারেননি। কারণ এর অর্ধায়ু মাত্র ১৩৮ দিন।
১৮৯৮ থেকে ১৯০২ পর্যন্ত মেরি আর পিয়েয়ে তেজস্ক্রিয়তার উপর মোট ৩২ টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত করেন। ১৯০৩ সালে মেরি তার পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করেন এবং তাদের দুজনকে লন্ডনের “রয়াল ইন্সটিটিউশন”-এ আমন্ত্রণ জানানো হয় তেজস্ক্রিয়তার উপর বক্তৃতা দেওয়ার জন্য। কিন্তু কী ধরণের অসভ্যতা দেখুন! নারী বলে মেরিকে বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হল না। পিয়েরে একাই কথা বললেন।
ইতোমধ্যে রেডিয়ামের বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য কলকারখানা গড়ে উঠতে লাগলো। কিন্তু মেরি রেডিয়ামের পৃথকীকরণ প্রক্রিয়াকে প্যাটেন্ট করেননি। তিনি চিন্তা করছিলেন, অন্য গবেষকেরাও যেন এই প্রক্রিয়াকে বাধাহীনভাবে ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য কুরি দম্পতি ইন্ডাস্ট্রি থেকে তেমন কোনো লাভ পাননি। দেখুন, কী নিঃস্বার্থ চিন্তাধারা মেরির! আলবার্ট আইনস্টাইন নাকি বলেছিলেন, মেরি কুরিই সম্ভবত একমাত্র ব্যক্তি যাকে জনপ্রিয়তা কখনও বিপথগামী করতে পারবে না।
কুরি দম্পতির নোবেল জয়
১৯০৩ সালে রয়াল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্স ঘোষণা দেয় যে, তেজস্ক্রিয়তার উপর অসাধারণ গবেষণার জন্য ঐ বছরের পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল যাচ্ছে হেনরি বেকুয়েরেল, পিয়েরে কুরি আর মেরি কুরির কাছে।
মেরি ছিলেন নোবেল পুরষ্কারের ইতিহাসে প্রথম নোবেল জয়ী নারী। কিন্তু আপনি কি জানেন, নোবেল কমিটি প্রথমে শুধু পিয়েরে কুরি আর হেনরি বেকুয়েরেলকে নির্বাচিত করেছিলো নোবেল জয়ী হিসেবে? একই গবেষণায় মেরি অংশ নিলেও তাকে মনোনীত করা হয়নি। অথচ পিয়েরের আগে আগে মেরিই শুরু করেছিলেন তেজস্ক্রিয়তার উপর গবেষণা! এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সুইডিশ গণিতবিদ এবং নারী বিজ্ঞানীদের পরামর্শদাতা হিসেবে পরিচিত “ম্যাগনাস গোয়েস্তা” পিয়েরেকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করেন। পরে পিয়েরের করা অভিযোগের ভিত্তিতে মেরির নামও তালিকায় ঢুকানো হয়। নো ওয়ান্ডার, মেয়েদের অবদান স্বীকার করতে সবসময়ই সমাজ অনিচ্ছুক থাকে।

১৯১১ সালে সংঘটিত প্রথম সল্ভে কনফারেন্সের একটি বিখ্যাত ছবি।
যারা বসে আছেন, তাদের মধ্যে ডান দিক থেকে দ্বিতীয়জন হলেন মেরি কুরি (মাথায় হাত), পেছনে ডান দিকে যারা দাঁড়িয়ে আছেন, তাদের মধ্য থেকে দ্বিতীয়জন হলেন আলবার্ট আইনস্টাইন, চতুর্থজন হলেন আরনেস্ট রাদারফোর্ড।
মেরি কুরির দ্বিতীয় নোবেল জয়
১৯১০ সালে বিশুদ্ধ রেডিয়াম পৃথক করার পর মেরি তেজস্ক্রিয়তার নির্গমন পরিমাপ করার জন্য একটি আন্তর্জাতিক মান বা স্ট্যান্ডার্ডের ধারণা দেন। এই মানকে পরবর্তীতে “কুরি (curie)” নাম দেওয়া হয়। এটি তেজস্ক্রিয়তার Non SI একক।
১৯১১ সালে রয়াল সুইডিশ একাডেমি দ্বিতীয়বারের মতো মেরি কুরির নাম উচ্চারণ করে নোবেল বিজয়ী হিসেবে। তবে এবার আর পদার্থবিদ্যায় নয়, বরং রেডিয়াম আর পোলোনিয়াম আবিষ্কারের জন্য এবং বিশুদ্ধ রেডিয়াম পৃথক করার জন্য মেরিকে রসায়নে নোবেল দেওয়া হয়।
কিছু কথা
পিয়েরে কুরি মারা যান সড়ক দুর্ঘটনায়, আর মেরি কুরি মারা যান অ্যাপ্লাস্টিক এনেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে। ধারণা করা হয়, এই রোগটি মেরির শরীরে দানা বেঁধেছিল বছরের পর বছর ধরে তেজস্ক্রিয় পদার্থের সংস্পর্শে থাকার জন্য। শুধু ল্যাবে পরীক্ষা করলেও একটা কথা ছিল। কিন্তু মেরি টেস্টটিউবের ভেতরে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ভরে পকেটে নিয়ে ঘুরতেন। তার ডেস্কের ড্রয়ারে রেখে দিতেন এগুলো, কারণ এরা অন্ধকারে আলো দেয়!
যদিও দীর্ঘদিন যাবত তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে কাজ করার ফলে মেরির চোখে ছানি পড়ে প্রায় অন্ধ হওয়ার দশা হয়েছিলো। তবুও তিনি কখনও মানতে চাননি যে, তার কাজই তাকে অসুস্থতার পথে ঠেলে দিয়েছে। কারণ এই সম্পর্কে তখন কোনো সলিড তথ্য ছিল না।
পরবর্তী পর্বে আসবে মেরি আর পিয়েরে কুরির কন্যা ইরিন জোলিওট কুরি এবং তার সহধর্মী ফ্রেদেরিক কুরির অমর প্রেম এবং নোবেল জয়ের কাহিনি!
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া
আরও একটু তথ্য, মেরি কুরি’র সময়ে পোলিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মেয়েদের ভর্তি করত না, শুধু ছেলেরাই উচ্চ শিক্ষা নিতে পারত। এই কারনে, উচ্চ শিক্ষা’র জন্য মেরি কুরি ফ্রান্সে যেতে বাধ্য হয়েছিল, ফ্রান্সে’ই মেয়েরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পড়ত সেই সময় ।
[…] মূল লেখার লিংক কুরি পরিবারটা এত আজব আর এত অসাধারণ যে, প্রায় প্রত্যেক সদস্যই জয় করেছেন নোবেল পুরষ্কার! কি, চমকে গেলেন? হা হা! চমকানোর এখনও বাকি আছে পেয়ারা পাঠক। মেরি কুরি যে কত কিছুতে প্রথম নারী ছিলেন, সেটা জানলেও চমকে যেতে হয়ঃ – প্রথম নোবেল জয়ী নারী, […]
পরবর্তি পোস্টটির লিংক এখানে সংযুক্ত করে দিলে ভাল হত।
ধন্যবাদ।
অনেক সুন্দর আর্টিকেল। মেরি কুরি আমার প্রিয় বিজ্ঞানী এবং অনুপ্রেরণা দানকারীদের মাঝে একজন। শত প্রতিকুলতার মাঝেও তিনি হার মানেন নি। মেরি কুরিকে নিয়ে আমার ব্লগে একটি আর্টিকেল রয়েছে। পড়ে আসার অনুরোধ রইলোঃ
মাদাম কুরি – জীবন সংগ্রামের অন্য নাম
ধন্যবাদ 🙂