গত বছর জুলাইয়ের দিকে জিরো টু ইনফিনিটি তাদের প্রশ্নোত্তরের সাইটটা খুলেছিলো। আমিও সেই সময় একেবারে শুরুর দিকেই একাউন্ট খুলি। কয়েকদিন ভালই মজা নেই। পরে আর আসলে সময় হয়ে ওঠেনি। আজ অনেকদিন পর আবার সেই সাইটের একটা প্রশ্নের উত্তরে কমেন্টের মেইল আসায় এতদিন পর আবার ঢুকলাম।
সেইসব প্রশ্ন আর তার উত্তরগুলো দেখে এখনো বেশ মজাই পাচ্ছি। একটা তুলে দিচ্ছি বন্ধুদের জন্য। একজন প্রশ্ন করেছে,”এলিয়েনের অস্তিত্ব কি বাস্তবে সম্ভব?”
এর উত্তর দিয়েছে আরেকজন- “এলিয়েনের অস্তিত্ব আছে কিনা এই প্রশ্নের সরাসরি উত্তর দেয়া মুশকিল। যদি ধর্মতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলি, তাহলে বলতে হবে, না এলিয়েন বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব থাকা সম্ভব নয়। কারণ, সৃষ্টিকর্তা মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। এলিয়েনের অস্তিত্ব থাকলে তা সৃষ্টিকর্তার বাণীর সাথে সাংঘর্ষিক হবে। এছাড়া সারা পৃথিবী জুড়ে এলিয়েন আগমনের অসংখ্য প্রমাণ আছে বলে কিছু মানুষ এবং সংগঠন দাবি করে। এলিয়েনের আগমন, তাদের বুদ্ধিমত্তা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও প্রকৌশল জ্ঞানের (!) উপর অসংখ্য বই লিখা হয়েছে। কয়েকটার নাম দিলাম। বিস্তারিত জানার জন্য এই বইগুলো পড়তে পারেন।
1. ‘The great idol of tiahuanko ‘ by P.ALLAN and H.S.BELAMI
2. ‘Companion along the way’ by Mrs RUTH
3. ‘ The secret doctrin ‘ by MOTHER BLATATOSKI
এলিয়েন নিয়ে এতো মাতামাতির কারণ কী হতে পারে? এলিয়েন এর অস্তিত্ব কে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে মূলত নব্য পুঁজিবাদকে মাথায় রেখে। হলিউডের ফিল্ম, সংবাদপত্রের গরম খবর, বড় বড় প্রকাশনীর রগরগে প্রচ্ছদময় এলিয়েনীয় বই, পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীর মারণাস্ত্র উৎপাদন, পুঁজিবাদ সম্প্রসারণ এবং সর্বোপরি বিশ্বজনগণের দৃষ্টি অন্য দিকে সরিয়ে রাখতে এলিয়েন বিষয়ক এই ইস্যুটা কতোই না চমৎকার! কিছু রাষ্ট্র ও পুঁজিপতি পোষিত বিজ্ঞানীদের কল্যাণে এলিয়েন ইস্যুটা এখনও টিকে আছে। তাছাড়া, এলিয়েন এর উপস্থিতি নিয়ে যেসব বই লেখা হয়েছে, সেগুলোতে রেফারেন্স হিসাবে প্রাচীন পুরাণ, স্থাপনা, ধর্মগ্রন্থের বিকৃত ব্যাখ্যা, পুঁথি, প্রভৃতির কথা বলা হয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে বাস করে, এলিয়েনে বিশ্বাস করার কোন যৌক্তিক কারণ আমি খুজে পাইনা।“
এই পাবলিকের উত্তরে আবার আরেকজনের কমেন্ট- “ধর্মতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে এলিয়েন থাকা সম্ভব নয়” – আপনার এই বক্তব্য সম্ভবত ঠিক না। কারণ, কোরআনে মানুষ ছাড়াও আরো অনেক কিছু সৃষ্টির কথা বলা হয়েছে, এর ভেতরে জ্বীনের কথা সরাসরিই বলা হয়েছে। জ্বীন সম্ভবত ভিন্ন ডাইমেনশনের জিনিস, তথাপি আমরা জ্বীনকেই এলিয়েন ভাবতে সমস্যা কোথায়? এছাড়াও আরো অনেক কিছু থাকতে পারে, ইসলাম অন্তত সেটা নাকচ করে দেয় না।”
এইবার ভদ্রলোকের বোধোদয়, “হ্যাঁ। আমি আপনার সাথে একমত। জিন কে এলিয়েন বিবেচনা করা অযৌক্তিক বলে মনে হচ্ছেনা।”
‘সৃষ্টিকর্তার বাণীর সাথে সাংঘর্ষিক’, ‘নব্য পুঁজিবাদ’, ‘জিন কে এলিয়েন বিবেচনা’ এইসব পড়ে আমার হাসতে হাসতে পেট ফেটে মরার অবস্থা। না মরে একটা উত্তর দিয়ে যাই।
“এলিয়েন এর অস্তিত্ব থাকা অবশ্যই সম্ভব। বুঝতে হবে, এলিয়েন বলতে আমরা কাদের বোঝাচ্ছি? গল্প বা সিনেমার এলিয়েন এর কথা আমি বলবো না। যদি এলিয়েন বলতে ভিন গ্রহের প্রাণ কে বোঝায়, তাহলে তার অস্তিত্ব না থাকার কথা না। তবে তারা যে দেখতে একেবারে আমাদের মত হবে সেটা ভাবা বাড়াবাড়ি। তারা আমাদের চারপাশের চেনাজানা কোন প্রাণীর মতও না হতে পারে। হতে পারে একেবারে ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার আকৃতির। হতে পারে অক্সিজেন নয়, তারা অন্য কোন মৌলের ওপর নির্ভরশীল শক্তি উৎপাদনে। হতে পারে তাদের দেহ কার্বন ভিত্তিক নয়। এমনকি এটাও হতে পারে যে তারা চতুর্মাত্রিক প্রাণী বা আরো ভিন্ন কোনো মাত্রার। তাদের আমরা আমাদের খালি চোখে নাও দেখতে পারি। তাই সরাসরি বলে দেয়া যায় না, ভিনগ্রহের প্রাণী নেই। একটা জিনিস ভুলে গেলে চলবে না যে, আমাদের আশেপাশের কয়েকটা গ্রহ নিয়েই মহাবিশ্ব নয়। এইরকম হাজারো কোটি সৌরজগৎ নিয়ে আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথ (Milkyway Galaxy). আর এইরকম হাজারো কোটি গ্যালাক্সি নিয়ে মহাবিশ্ব! এর আয়তন আমাদের চিন্তারও বাইরে। এত অবিশ্বাস্য বিশাল পরিবার নিয়ে কোনো ধারণা করা এত সহজ নয়। যদি পুরো পরিবারটার আয়তন বুঝতে পারেন, তাহলে ড্রেক এর সূত্র ঘেঁটে দেখতে পারেন, খুব সহজ ভাবেই গণিত দিয়ে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে যে, এই মহাবিশ্বে কত বুদ্ধিমান প্রাণ থাকা সম্ভব। দেখুন বাংলা উইকিপিডিয়ার আর্টিক্যাল- http://goo.gl/Dmv9KO
আর এটা নিয়ে কার্ল সেগানের একটি অসাধারণ ভিডিও আছে। চাইলে এটাও দেখে নিতে পারেন,
খান একাডেমীও বেশ দারুণ –
যদি আমার ব্যক্তিগত মত জানতে চান তাহলে বলবো, অবশ্যই এলিয়েন আছে। আমাদের অবস্থা এখনো সেই আদিযুগের মত যখন মানুষ ভাবতো ঐ অলিম্পাস পাহাড়ের ওপাশে কি প্রাণ আছে? আর আমরা ভাবছি, ঐ অসংখ্য গ্রহে কি প্রাণ আছে? ব্যাপারটা হলো, যখন আমরা পাহাড় ডিঙাতে পেরেছি, তখন দেখেছি, আসলেই মানুষ আছে কিনা। তেমনি আমরা যখন উচ্চগতি সম্পন্ন বা হাইপার ডাইভ ক্ষমতা সম্পন্ন মহাকাশ যান বানিয়ে গ্রহান্তরে বা ছায়াপথ থেকে ছায়াপথ ঘুরে বেড়াতে পারবো তখনই বলতে পারবো যে, “হ্যাঁ, আছে” বা “না, নেই”। দেখাটা যে কোনো সময় হয়ে যেতে পারে। ২০৫০ বা ২১০০ বা ২২০০ সাল। যদি মানব জাতি নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারে তাহলে দেখা একদিন হবেই। কিন্তু কথা হচ্ছে, এলিয়েনের সাথে সাক্ষাত টা কি মঙ্গলময় হবে? আমরা কি প্রযুক্তির আদান-প্রদান করতে পারবো? নাকি কলম্বাস উত্তর আমেরিকার আদিবাসীদের সাথে যা করেছিল আমাদের ক্ষেত্রেও তাই হবে? অথবা মানুষের লোভ জন্ম দিবে নতুন কোন “অ্যাভাটার” এর কাহিনীর? উত্তরটা না হয় ভবিষ্যতের হাতেই তোলা থাক।”
এইবার সেই প্রথম উত্তরদাতা আবার এসে হাজির। জিগায়- “লিংকগুলোর জন্য ধন্যবাদ। হ্যাঁ, পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে। হয় সেটা মানুষের চাইতে উচ্চ শ্রেণীর নতুবা নিম্ন শ্রেণীর। নিম্ন শ্রেণীর অস্তিত্ব নিয়ে আমার চিন্তা নেই। তবে উচ্চ শ্রেণীর প্রাণ যদি থেকে থাকে, তবে তারা কেন আমাদের দেখা দিচ্ছেনা?“
উত্তরে আমি লিখলাম – “উচ্চ শ্রেণীর প্রাণ থাকলেই যে দেখা দিবে এমন কোনো কথা নেই। যদি তর্কের খাতিরে ধরেই নেই, আমরা পিঁপড়ার চেয়ে উচ্চ শ্রেণীর। কিন্তু তারপরেও তো এতশত বছরেও তাদের সাথে আমরা কোন যোগাযোগ করতে পারিনি। এখানে কয়েকটা বিষয় দেখা দরকার–
১) প্রয়োজনীয়তা = উচ্চ শ্রেণীর এলিয়েনরা যদি আমাদের সাথে যোগাযোগের কোন প্রয়োজন না দেখে তাহলে তা করবে না। ঠিক যেমনটা আমরা এখন পিঁপড়ার সাথে করছিনা, কিন্তু ঠিকই আমাদের পোষা কুকুর, মুরগী বা সার্কাসের হাতি, বাঘের সাথে করছি। আবার পৃথিবীও তাদের কাছে প্রয়োজন না মনে হলে তারা আসবে না।
২) সময় আর দূরত্ব = এক একটি সৌরজগৎ এর মাঝে দূরত্ব কিন্তু বিশাল। এই বিশাল দূরত্ব পাড়ি দিয়ে আসতে আসতে অনেক সময় চলে যেতে পারে। হয়তো আমাদেরও সামনে কখনো বহু আলোকবর্ষ দূরে গিয়ে পাওয়া মৃত কোন পৃথিবী চোখে পড়তে পারে। ১০০০ আলোকবর্ষ দূরে থাকা যে গ্রহের যে ছবি আজ আমি টেলিস্কোপে দেখছি, সেটা কিন্তু আজকের ছবি নয়। ১০০০ বছর আগের গ্রহটার অবস্থার ছবি, এত পথ পাড়ি দিয়ে আমার চোখে এসে পড়েছে। ঠিক এই মুহুর্তে গ্রহটা মহাজাগতিক কোন দুর্ঘটনার শিকার হয়ে এমনকি নাও থাকতে পারে। যা আমার চোখে এসে পড়বে আরো ১০০০ বছর পর।
৩) পর্যবেক্ষণ = এমনও হতে পারে তারা আমাদের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করছে। তাদের সময়মত তারা এসে দেখা দিবে। হয়তো তারা আসছে, এসে তাদের দরকারী স্যাম্পল নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমাদের দেখা দিচ্ছে না।আমরা তো আমাদের সাধ্যমত সিগন্যাল পাঠিয়ে যাচ্ছি। এখন ওপাশ থেকে কে কখন সাড়া দেয় সেটাই দেখার বিষয়। ঠিক এই মুহুর্তে মানুষের তার চেয়ে বেশী কিছু করার ক্ষমতা নেই।
তবে আমার মনে হয় না, এখনো আমরা কোন উচ্চ শ্রেণীর প্রাণীর চোখে পড়েছি। কারণ, প্রকৃতির নিয়ম বলে, তারা আমাদের দেখলে অবশ্যই আমাদের ব্যবহার করতে চাইতো। যোগাযোগ করে, অথবা অন্য যে কোনোভাবেই হোক। আমরা আসলে এখনো সভ্যতার অনেক শুরুতে আছি। সময়ের স্রোতটাকে আরো কিছুদিন বইতে দেয়া হোক।”
ভালো কথা! জিরো টু ইনফিনিটির এই সাইট এখনো ছাগুদের কবলে না পড়ায় এলিয়েনকে কখনো ‘নব্য পুঁজিবাদ’, কখনো ‘জীন’ বানানো সেই উত্তরদাতা পেয়েছিলো ৩টা আপ আর ৪টা ডাউনভোট আর আমি কোনো ডাউনভোট ছাড়াই ৪টা আপভোট!
জয় হোক আপভোটের, জয় হোক ছাগুবিহীন সমাজের!