২০১৫ সালের ২৩শে জুলাই, নাসার ওয়েবসাইটে একটা নতুন গ্রহ আবিষ্কার নিয়ে একটা প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে। এই নতুন আবিষ্কৃত গ্রহটিকে ডাকা হচ্ছে কেপলার-৪৫২বি নামে। আমাদের সৌরজগতের বাইরে প্রচুর গ্রহই তো দেখা যায়, সেগুলোকে exoplanet বলে। তাহলে কেপলার-৪৫২বি নামক এক্সোপ্ল্যানেটের আবিষ্কার কেন ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে? কেন এটাকে Earth 2.0 (সহজ বাংলায়, দ্বিতীয় পৃথিবী) বলা হচ্ছে? আচ্ছা, বুঝলাম – এটার নাকি পৃথিবীর মত বৈশিষ্ট্য আছে। কিন্তু সেটা দিয়ে আসলে কী বোঝাচ্ছে?
এটা বোঝার জন্য প্রথমেই দুটো শব্দ বুঝতে হবে। একটা হচ্ছে Habitable Zone বা Goldilock Zone, অন্যটা হচ্ছে Habitability Index. এই দুটো টার্ম নিয়ে মোটামুটি ডিটেইলসে একটা পোস্ট আছে আমাদের ওয়েবসাইটে, কেমন গ্রহে প্রাণ থাকতে পারে শিরোনামে। তবে এখানে সংক্ষেপে বলে যাই, প্রাণের উৎপত্তি ও টিকে থাকার জন্য পানি প্রয়োজন। আর তাই নক্ষত্র থেকে গ্রহের দূরত্ব এমন হতে হবে, যেখানে পানির তরল অবস্থা সম্ভব। সেটাকেই Goldilock বা Habitable zone বলে। আর গ্রহের তাপমাত্রা, কক্ষপথ, বাহ্যিক ও রাসায়নিক গঠন – এগুলো মিলিয়ে শূন্য থেকে এক এর মধ্যে একটা নাম্বার দেয়া হয়। সেটাই হচ্ছে Habitability Index. যত বেশি একের দিকে যাবে, সেটা প্রাণ বলতে আমরা যা বুঝি, সেই প্রাণের জন্য বেশি উপযোগী।
এই ছবিটা দেখলে বুঝতে পারবেন, নক্ষত্র থেকে কেপলার-৪৫২বি এর কক্ষপথের সাথে সূর্য থেকে আমাদের পৃথিবীর কক্ষপথের কতটা মিল! এই ছবিতে আনুপাতিক হারে আকারটাও বোঝানো হয়েছে। দেখা যাচ্ছে যে আকারে যদিও কেপলার-১৮৬এফ পৃথিবীর বেশি কাছাকাছি, কিন্তু নক্ষত্রের সাথে দূরত্ব বিবেচনা করলে কেপলার-৪৫২বি প্রাণ ধারণের জন্য বেশ পাংখা দাবিদার।
এর আগেও হ্যাবিটেবল জোনের মধ্যে বেশ কিছু গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে। কিন্তু কেপলার-৪৫২বি এর বৈশিষ্ট্যগুলো আরো বেশি আকর্ষণীয়। এখন পর্যন্ত নক্ষত্রের বাসোপযুক্ত সীমার মধ্যে যতগুলো গ্রহের সন্ধান পাওয়া গেছে, তার মধ্যে এটিই সবচেয়ে ছোট। গ্রহটির ব্যাস আমাদের পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ৬০% বেশি, এর ভর আর গঠন যদিও এখনো ঠিকমতো জানা যায়নি, কিন্তু আগের গবেষণাগুলোতে দেখা গেছে এই ধরণের বড় গ্রহগুলো সাধারণত পাথুরে হয়ে থাকে। এর নক্ষত্রের চারিদিকে একবার ঘুরে আসতে কেপলার-৪৫২বি এর সময় লাগে ৩৮৫ দিন, যা পৃথিবীর চেয়ে মাত্র ৫% বেশি। কেপলার- ৪৫২ নক্ষত্রটির বয়স প্রায় ৬ বিলিয়ন বছর, যা আমাদের সূর্যের চেয়ে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন বছর বেশি, সূর্যের মত প্রায় একই তাপমাত্রা এবং এর ব্যাস সূর্যের চেয়ে ১০% বেশি। এখানে পৃথিবীর চেয়ে অধিকতর ঘন বায়ুমণ্ডল আর সক্রিয় আগ্নেয়গিরি থাকার সম্ভাবনা আছে।
জন জেনকিন্স, ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত নাসার এমস রিসার্চ সেন্টারের কেপলার ডাটা অ্যানালিসিস এর প্রধান, যিনি কেপলার ৪৫২-বি এর আবিষ্কারক দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাঁর মতে আমরা কেপলার-৪৫২বি কে আমাদের পৃথিবীর কাজিন হিসেবে চিন্তা করতে পারি, যার বয়স পৃথিবীর চেয়ে একটু বেশি, আকারেও সে পৃথিবীর চেয়ে একটু বড়। আমাদের পৃথিবীর ক্রমাগত পরিবর্তনশীল পরিবেশকে বোঝার জন্য এটি অনেক বড় একটা সুযোগ। চিন্তা করে দেখলে আপনি আশ্চর্য হতে বাধ্য যে কেপলার-৪৫২বি তার নিজের নক্ষত্রের বাসোপযুক্ত সীমার মধ্যে ৬ বিলিয়ন বছর কাটিয়েছে, যা পৃথিবীর চেয়েও ১.৫ বিলিয়ন বছর বেশি। তাই এতে প্রাণের উৎপত্তি আর বেড়ে ওঠার সব উপাদান আর প্রাণের বিবর্তনের উপযোগী পরিবেশ থাকতেই পারে।
অনেকেই আছেন, যারা এই পর্যায়ে এসে বলবেন – আচ্ছা, তাহলে এই জিনিস কত দূরে? এবং যখন বিজ্ঞানীরা বলবেন, প্রায় ১৪০০ আলোকবর্ষ (অর্থাৎ, আলো ১৪০০ বছর সময় নেয় ওখান থেকে এখানে আসতে, অথবা আলোর বেগে ছুটলেও ১৪০০ বছর লেগে যাবে ওখানে পৌঁছাতে), তখন ওরা বলবে – “ও, তাইলে আর লাভ কী?”
লাভটা এখানে – ব্রহ্মাণ্ড অত্যন্ত বিশাল। সেই তুলনায় ১৪০০ আলোকবর্ষ হচ্ছে আমাদের প্রতিবেশীর মত। একদিন আমরা এই দূরত্ব অতিক্রম করবো। একদিন, আমাদের কোনো এক প্রজন্ম রওনা দেবে, আর তাদের অনেক অনেক পরের প্রজন্ম সেখানে গিয়ে পা রাখবে। পৃথিবী নিয়ে আমরা যা করে চলেছি, তাতে এ ধরনের সম্ভাবনা যে একদিন দেখা দেবে, তা নিয়ে কোনো দ্বিধা নেই। এক সময় আমাদের সূর্যটা হলুদ নক্ষত্র থেকে সাদা বামন নক্ষত্রে পরিণত হবে। তখন পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। সে না হয় বিলিয়ন বছর পরের কথা। কিন্তু আজ থেকে কয়েক হাজার বছরের মধ্যেই যে কোনো গ্রহাণু বা ধূমকেতু আঘাত করে পৃথিবী ধ্বংস করে দেবে না, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। আমাদের একটা স্পেস প্রোগ্রাম দরকার। That is what exactly a species with survival tendency should do.
মানুষ একদিন সব কিছুকে জয় করবে।
কেপলার ৪৫২-বি যে নক্ষত্র কে কেন্দ্র করে ঘুরছে তার নাম কী দেওয়া হয়েছে? আর যেহেতু এর ব্যাস সূর্য্য থেকেও ১০ শতাংশ বেশী, তাহলে সেখানে বেশী তাপের উদ্ভব হবেনা কেন? কেন সূর্য্যের সমান হবে?
Kepler-452 হচ্ছে নক্ষত্রের নাম, কেপলার-৪৫২বি হচ্ছে গ্রহের নাম