পূর্বকথা
লেখার নাম ‘এলিমেন্ট ১৩৭’ দেখে অনেকে হয়তো ভাবা শুরু করেছেন, বিজ্ঞানযাত্রা সাইটে ‘সায়েন্স ফিকশন’ ক্যাটাগরিতে বুঝি আরেকটা লেখা জমা পড়লো!
তো ভেবেছেন যখন, চলুন কল্পবিজ্ঞান উপন্যাসের আদলে একটা “পূর্বকথা” পড়ে আসি। তারপরে মূল প্লটে ঢুকবো।
১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি রসায়নবিদ ‘আঁতোয়া লাফওয়াযিয়ে’ ৩৩টা রাসায়নিক মৌল নিয়ে সর্বপ্রথম একটা তালিকা প্রকাশ করেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে যতোই বিভিন্ন রকমের আরো মৌলিক পদার্থ আবিষ্কৃত হতে থাকে, ততোই তালিকাটার চেহারা পরিবর্তিত হতে থাকে। বিভিন্ন রসায়নবিদের টানাহেঁচড়া আর চাপাচাপিতে রাসায়নিক মৌলের তালিকাটা একেক সময়ে একেক আকার ধারণ করতে থাকে। এই তালিকার দিকে তাকিয়ে অস্পষ্ট একটা প্যাটার্ন যেন দেখতে পান রসায়নবিদেরা। মৌলগুলো একটা নির্দিষ্ট প্যাটার্নে সজ্জিত হয়ে কী যেন সব মেসেজ দেয়ার চেষ্টা করছে তাদের। কিন্তু কেউই পুরোপুরি পাঠোদ্ধার করতে পারছিলেন না মেসেজগুলো।
কেটে গেলো প্রায় এক শতাব্দী। ১৮৬৫ থেকে ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ‘দিমিত্রি মেন্ডেলিয়েফ’ নামক এক রাশিয়ান রসায়নবিদ একটা নতুন তালিকা প্রকাশ করেন ঐসময় পর্যন্ত আবিষ্কৃত সব মৌল নিয়ে। সেই তালিকার আকৃতি দেখে তখন অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যায় আমাদের কাছে। তালিকাটা দেখেই আমরা উপলব্ধি করতে পারি কোনটা ধাতু, কোনটা অধাতু, কোনটা নিষ্ক্রিয় গ্যাস ইত্যাদি। শুধু তাই নয়, মৌলগুলোর পরমাণুর ভেতরে প্রোটন-ইলেক্ট্রনের সংখ্যাও বলে দেয়া যায় তালিকাটা দেখে। মেন্ডেলিয়েফের তৈরি এই তালিকাটাকে বাংলায় ডাকা হয় ‘পর্যায় সারণী’ নামে।
মেন্ডেলিয়েফ শুধু যে পর্যায় সারণী তৈরি করলেন, তা নয়। তিনি সারণীটার অনেকগুলো নিয়মকানুনও বেঁধে দিলেন। সেই সব নিয়ম অনুযায়ী মৌলগুলোর আসন দখল করে বসার অবস্থাটা আগাগোড়া দেখে বললেন, এখনো বেশ কিছু মৌল আমরা আবিষ্কার করতে পারিনি। কোন মৌল আবিষ্কার হলে সেটার বৈশিষ্ট্য কী হবে, কোন ঘরে সেটা বসবে – সবই ভবিষ্যদ্বাণী করে দিলেন তিনি। যেমন- তিনি বললেন, অ্যালুমিনিয়াম এবং সিলিকনের কাছাকাছি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের আরো ২টা মৌল আমাদের খুঁজে বের করা বাকি আছে, যাদের পারমাণবিক ভর হবে ৬৫ থেকে ৭৫-এর মধ্যে। তাঁর কথা শুনে অনেক ‘রসায়ন ব্রাহ্মণ’ তেলেবেগুনে জ্বলে উঠলেন। বললেন, “ফালতু কথা বোলো না! সব মৌলিক পদার্থ আবিষ্কার করা হয়ে গিয়েছে। বিজ্ঞান অনেকদূর চলে গিয়েছে”।
৫টা বছরও গেলো না, সেই অভিজাতদের লুঙ্গি-ধুতির গিঁট খুলে যেতে শুরু করলো। ১৮৭৫ নাগাদ আবিষ্কৃত হলো ‘গ্যালিয়াম (Ga)’। তার আরও ১০ বছর পরে ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে আবিষ্কৃত হলো ‘জার্মেনিয়াম (Ge)’। মেন্ডেলিয়েফ তাঁর সারণীতে যে যে স্থানে ফাঁকা রেখেছিলেন, ঠিক সেই সেই স্থানেই বসলো নতুন আবিষ্কৃত এই মৌলগুলো। গরীবের কথা বাসি হয়ে ফলার পরে ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে মানুষজন মেন্ডেলিয়েফের পর্যায় সারণীটাকে আস্তেধীরে দাম দেওয়া শুরু করলো।
পরবর্তীতে সভ্যতা যতো এগিয়েছে, আরো নিত্যনতুন রাসায়নিক মৌল আবিষ্কৃত হয়েছে। পর্যায় সারণীর কলেবর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৮-টা মৌলে। কিছু পাওয়া গেছে প্রকৃতিতেই। আর কিছু ঘর ছিলো ফাঁকা। সেগুলোতে বসানোর মতো কোনো মৌল আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না প্রকৃতিতে। তখন বিজ্ঞানীরা ল্যাবে বসে বসে বানিয়েছেন সেগুলো। এভাবেই ২০১৫-তে পর্যায় সারণীর ৭ম সারির সবগুলো মৌল আবিষ্কৃত হবার চূড়ান্ত ঘোষণা এসেছিলো। অনেক সংবাদপত্র ও নিউজ পোর্টাল আবেগের চোটে বলে বসেছিলো, পর্যায় সারণী এখন কমপ্লিট! আসলে ব্যাপারটায় একটু ভুল আছে। পর্যায় সারণী কমপ্লিট হয়নি, হয়েছে এর ৭ম সারিটা। নতুন মৌল আবিষ্কার হলে এখন ৮ম সারিটা ভর্তি হওয়া শুরু হবে।
যাই হোক, আমাদের আজকের লেখার মূল প্রশ্নটা আসলে এখানেই। পর্যায় সারণী কখন পূর্ণাঙ্গতা পাবে? এটার সর্বশেষ মৌল আসলে কোনটা?
সেক্ষেত্রে একটু ঘুরে তাকাই ১৯৬০-এর দশকে। তখন পৃথিবীর মাটিতে চরেফিরে বেড়াচ্ছিলেন ‘ফেইনম্যান’ নামক এক ফানিম্যান, যিনি আবার ভীষণ প্রতিভাধর পদার্থবিদও বটে। যখন টপলেস বারে(!) বসে পদার্থবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করছিলেন না, তখন তিনি হয়তো ব্যস্ত ছিলেন সিন্দুকের কঠিন কঠিন সব তালা ভাঙ্গতে কিংবা তাঁর পাশের রুমের কলিগদের দরজা খুলে নিয়ে সেটা লুকাতে।
এই ফেইনম্যানের মাথায় আসলো একই প্রশ্ন। “পর্যায় সারণীর শেষ মৌল কী হতে পারে?” বেশ খানিকক্ষণ অংক কষে তিনি জবাব দিলেন, মৌল নম্বর ১৩৭ “সম্ভবত” হতে পারে পর্যায় সারণীর শেষ মৌল। এরপরে আর কোনো রাসায়নিক মৌল তৈরি হওয়া সম্ভব নয়। ফেইনম্যানের নামানুসারে মৌলটি আবিষ্কৃত হলে সেটার নাম রাখা হবে ‘ফেইনম্যানিয়াম’। কিন্তু আসলেই কি তাই? পর্যায় সারণীতে কি আসলেই কোনো চূড়ান্ত মৌলের সীমারেখা আছে? চলুন একটু তদন্ত করে দেখি।
পরমাণুর খুঁটিনাটি
প্রথমেই একটু অনেকের স্কুল-কলেজে পড়ে আসা রসায়নের জ্ঞান কপচিয়ে নিই। যারা ব্রাহ্মণ আছেন, তারা নির্দ্বিধায় আগে বাড়ুন।
পর্যায় সারণীর প্রত্যেকটা মৌলের সাথে একটা করে সংখ্যা সংশ্লিষ্ট আছে। যেমন- অক্সিজেন হচ্ছে ৮ নাম্বার মৌল, ক্লোরিন ১৭ নাম্বার, প্লাটিনাম ৭৮ নাম্বার ইত্যাদি। এই সংখ্যাগুলো উড়ে এসে জুড়ে বসেনি। এগুলোকে বলা হয় পারমাণবিক সংখ্যা (Atomic Number)। এই সংখ্যা দ্বারা বুঝায় ঐ মৌলের পরমাণুতে কতগুলো প্রোটন আছে। একটা মৌলের পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে একটা নিউক্লিয়াস। সেই নিউক্লিয়াসের ভেতরে থাকে ধনাত্মক চার্জবিশিষ্ট প্রোটন কণা। ঠিক প্রোটনের সমসংখ্যক এক বা একাধিক ইলেকট্রন কণা থাকে নিউক্লিয়াসের বাইরে। নিউক্লিয়াসকে পাক খায় এরা। ঋণাত্মক চার্জবিশিষ্ট এই কণাগুলোর চার্জের পরিমাণ প্রোটনের সমান সমান। শুধুমাত্র হাইড্রোজেন পরমাণু ব্যতীত বাকি সব মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াসে আরেক প্রকারের কণা থাকে। এরা হচ্ছে নিউট্রন। এদের ভর প্রোটন কণাগুলোর “প্রায়” সমান, কিন্তু এদের কোনো চার্জ নেই। পরমাণুতে সাধারণত প্রোটন (+) ও ইলেকট্রনের (-) সংখ্যা সাম্যাবস্থায় থাকে। পরমাণু ইলেকট্রন ত্যাগ বা গ্রহণ করলে এই সাম্যাবস্থা ভেঙ্গে যায়। ফলে চার্জের সাম্যাবস্থাও ভেঙ্গে যায়। তখন এদেরকে বলা হয় ‘আয়ন’। ইলেকট্রন ত্যাগ করলে পরমাণুর চার্জ ধনাত্মক হয়ে পড়ে (ধনাত্মক আয়ন), আর গ্রহণ করলে চার্জ হয় ঋণাত্মক (ঋণাত্মক আয়ন)।
পরমাণুর প্রোটন সংখ্যা স্থির থেকে যদি নিউট্রন সংখ্যা পালটে যায়, তখন সেগুলোকে বলা হয় ঐ মৌলের আইসোটোপ। যেমন- কার্বনের প্রোটন সংখ্যা ৬টা হলেও এর নিউট্রন সংখ্যা ৬টা, ৭টা এবং ৮টা ইত্যাদি হতে পারে। এভাবে কার্বনের মোট ১৫টা আইসোটোপ আছে।
এখন পরমাণুর প্রোটন সংখ্যাই যদি পরিবর্তিত হয়ে যায়, তাহলে ওটা আর আগের মৌল থাকে না। নতুন মৌলে রূপান্তরিত হয়। যেমন- কার্বনের আইসোটোপ কার্বন-১১ (৬টা প্রোটন এবং ৫টা নিউট্রন) একটা প্রোটন ছেড়ে দিয়ে কার্বন থেকে বোরনে রূপান্তরিত হতে পারে, যার পারমাণবিক সংখ্যা ৫।
নিউট্রন – পরমাণুতে শান্তির পায়রা
কথা হলো, নিউট্রনের কাজ কী? প্রোটন আর ইলেকট্রন, দুই ধরণের চার্জিত কণাই তো পরমাণু ভালোই চালাচ্ছে। সেখানে চার্জবিহীন কণা নিউট্রন কী করছে চুপচাপ বসে? নিউট্রনের মূলত কাজ হচ্ছে পরমাণুর নিউক্লিয়াসে থাকা প্রোটনগুলোকে ধরে রাখা। তা না হলে নিউক্লিয়াসের মতো জায়গায় চাপাচাপি করে থাকতে থাকতে সমআধানবিশিষ্ট প্রোটনগুলো একটা আরেকটাকে বিকর্ষণের কারণে ফ্লাইং কিক মেরে বের করে দিবে। আর প্রোটন ফ্লাইং কিক খেয়ে বের হয়ে যাওয়া মানে মৌলটাই পালটে যাওয়া। সেটা হতে দেয়া যায় না!
কার্বন কিংবা অক্সিজেনের মতো হালকা মৌলতে প্রোটন এবং নিউট্রনের অনুপাত ১ঃ১ থাকলেই চলে। কিন্তু ভারী মৌলগুলোতে প্রোটনের থেকে নিউট্রনের পরিমাণ বেশি হতে হয়। তা না হলে নিউক্লিয়াসের ভেতরে প্রোটন কণাগুলোর বিকর্ষণজনিত কারণে ইট-পাটকেল মারামারি এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঠেকানো যায় না। আরো ভারী সব মৌলের ক্ষেত্রে নিউক্লিয়াসের ভিতরে ঠাসাঠাসি করে অনেকগুলো প্রোটন থাকে এবং জায়গা না পেয়ে একটা আরেকটাকে কিক মেরে বের করে দেয়। তখন প্রোটনের চেয়ে বেশি পরিমাণে থাকা সব নিউট্রন মিলেও প্রোটনগুলোকে ঠেকাতে পারে না। এগুলোকে বলা হয় তেজস্ক্রিয় মৌল। তেজস্ক্রিয় মৌল সর্বদা ক্ষয়প্রাপ্ত হচ্ছে এবং এক মৌল থেকে অন্য মৌলে রূপান্তরিত হচ্ছে। আমাদের শরীরেও প্রতিনিয়ত এই ব্যাপার ঘটছে।
মৌল – হালকা থেকে ভারী
প্রকৃতির একটা নির্দিষ্ট পারমাণবিক ভর পর্যন্ত মৌল তৈরি করার ক্ষমতা আছে। হাইড্রোজেন থেকে শুরু করে বোরন পর্যন্ত সবচেয়ে হালকা ৫টি মৌল তৈরি হয়েছিলো বিগ ব্যাংয়ের সময়ই। এরপরের ভারী সব মৌল তৈরি করতে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের দ্বারস্থ হতে হয়েছিলো নক্ষত্রদের নিকট। বিভিন্ন নক্ষত্রের অভ্যন্তরে কল্পনাতীত চাপ এবং তাপমাত্রায় হালকা মৌলগুলোর নিউক্লিয়াস একটা আরেকটার সাথে জোড়া লেগে তৈরি হচ্ছিলো ভারী সব পদার্থ। এটাকে বলে ‘নিউক্লিয়ার ফিউশন’ বিক্রিয়া।
ভারী থেকেও ভারীতর সব মৌল তৈরি হয় নক্ষত্রদের বিস্ফোরণ বা সুপারনোভা থেকে। নক্ষত্রদের ভেতরের চাপ এবং তাপমাত্রায়ও যেসব নিউক্লিয়াস জোড়া লাগে না তাদের বিকর্ষণী শক্তির কারণে, সুপারনোভার বিস্ফোরণে প্রচণ্ড বেগে ছুটে তারা আঘাত লাগে একটা আরেকটার সাথে। সেই আঘাতে জোড়া লেগে যায় তারা। ফলে তৈরি হয় আরো ভারী সব মৌল। এখন পর্যন্ত প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে তৈরি হওয়া সবচেয়ে ভারী মৌল হিসেবে পাওয়া গেছে ইউরেনিয়ামকে (প্রোটন সংখ্যা ৯২)। এরচেয়ে ভারী আর কোনো পদার্থ প্রকৃতি তৈরি করতে পেরেছে কিনা, জানা নেই। একটা সম্ভাব্য উদাহরণ হতে পারে ‘Przybylski’s Star‘ নামক নক্ষত্রটা। ধারণা করা হয়, flerovium, unbinilium and unbihexium-এর মতো পদার্থ এর অভ্যন্তরে আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ব্যাপারটা প্রমাণ করা যায়নি।
মৌল – ভারী থেকে ভারীতর
এরচেয়েও ভারী সব মৌল প্রকৃতিতে না পাওয়া গেলেও ল্যাবে বসে তৈরি করে নিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। আর এই কাজের জন্যে তারা দ্বারস্থ হয়েছেন ‘পার্টিকেল একসালেরেটর’-এর। একটু আগেই বলেছি, একটা নির্দিষ্ট সীমার পরে ভারী মৌলের নিউক্লিয়াসগুলোকে প্রচণ্ড তাপে চাপ দিলেও আর জোড়া লাগতে চায় না। তখন সেই বিকর্ষণ শক্তির বাধা উপেক্ষা করতে সেগুলোকে একটা আরেকটার বিপরীতে প্রচণ্ড বেগে ছোটাতে হয়। পার্টিকেল একসালেরেটরে এই কাজটাই করা হয়। এখানে আলোর গতির দশভাগের একভাগ গতিতে কণাদের ছুটিয়ে সংঘর্ষ ঘটানো যায়। এভাবে ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়াতে প্রথম তৈরি করা হয়েছিলো এলিমেন্ট-৯৩, যার নাম নেপচুনিয়াম। এরও ২ বছরের মধ্যে তারা ইউরেনিয়ামের নিউক্লিয়াসের মাথার উপরে হাইড্রোজেনের নিউক্লিয়াস ফেলে তৈরি করলেন এলিমেন্ট ৯৪, প্লুটোনিয়াম। এই প্লুটোনিয়ামের তৈরি আণবিক বোমা পরে আমেরিকানরা ফেলেছিলো নাগাসাকিতে, জাপানিজদের মাথার উপরে।
১৯৪৫-এর আগ পর্যন্ত প্লুটোনিয়ামের ব্যাপারে আমেরিকান মিলিটারি বাদে বাকি পুরো বিশ্ব অজ্ঞ ছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে আরো অনেক ভারী মৌল তৈরি করা হয় ল্যাবে। তবে এবারে সাফল্যের খাতায় নাম লেখাতে শুরু করলো রাশিয়া, চীন, জাপানসহ আরো অনেক দেশ। তবে শুরুতে এগিয়ে ছিলো আমেরিকাই। মৌল নম্বর ৯৫-৯৮ গুলোর নাম সেটাই প্রমাণ করে। একপর্যায়ে এসে ৭ম সারির আর ৪টা মাত্র মৌল বাকি ছিলো আবিষ্কার করার। মৌল নম্বর ১১৩, ১১৫, ১১৭ এবং ১১৮। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে এসে সেগুলোও আবিষ্কার করার মাধ্যমে পর্যায় সারণীর ৭ম সারিটা সম্পূর্ণ হয়েছে ঘোষণা করা হয়। এখন পর্যন্ত পর্যায় সারণীর সর্বশেষ মৌল হচ্ছে ‘Element 118 – Oganesson’. এটি একটি নিষ্ক্রিয় পদার্থ।
আইল্যান্ড অব স্ট্যাবিলিটি
পরমাণুর ভিতরে ইলেক্ট্রনগুলো বিভিন্ন শক্তিস্তরে সজ্জিত থাকে। প্রথম শক্তিস্তরে সর্বোচ্চ ২টা ইলেকট্রন থাকতে পারে। পর্যায় সারণীর প্রথম মৌল হাইড্রোজেনে আছে একটা ইলেকট্রন, হিলিয়ামে আছে ২টা ইলেকট্রন। দ্বিতীয় শক্তিস্তরে থাকতে পারে সর্বোচ্চ ৮টা ইলেকট্রন। এইজন্যে পর্যায় সারণীর ২য় সারিতে মোট মৌলের সংখ্যা ৮টা। উপরের শক্তিস্তরে আরো বেশি সংখ্যক ইলেকট্রন থাকতে পারে।
এখন মৌল নম্বর ১১৯ আবিষ্কৃত হলে বুঝাই যাচ্ছে, এটাই হবে প্রথম মৌল যা অষ্টম শক্তিস্তরে ইলেকট্রন ধারণ করতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে পর্যায় সারণীকে নিয়ন্ত্রণ করে, এমন কিছু নিয়মনীতির দফারফা ঘটার সম্ভাবনা আছে। এই সুপার-হেভি এলিমেন্টগুলো ভীষণ রকমের অদ্ভুত কিছু আচরণ শুরু করবে, যা এর আগের মৌলগুলোতে তেমন একটা দেখা যায়নি। এই ব্যাপারে একটু পরেই আসছি।
আবারও একটু স্কুলে পড়ানো রসায়নবিদ্যা ঝালাই করে নিই। একটু আগেই বলেছি, পরমাণুতে ইলেকট্রনগুলো নির্দিষ্ট শক্তিস্তরে বিন্যাস্ত থাকে। কথা হচ্ছে, পরমাণুর একদম বাইরের শক্তিস্তর যতোই ইলেকট্রন দিয়ে ভর্তি হবে, ততই সেটা ভারসাম্যতা বজায় রাখতে শুরু করবে। পর্যায় সারণীর একদম প্রথম কলামে যতগুলো মৌল আছে (Na, K, Rb ইত্যাদি), এগুলোর সবচেয়ে বাইরের শক্তিস্তরে একটা করে ইলেকট্রন থাকে। এই মৌলগুলো একদম বাইরের স্তরে একটামাত্র ইলেকট্রন নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে বিরক্ত হয়। তারা ওটা কাউকে দিয়ে দিতে পারলেই বাঁচে। কারণ এর পরের স্তরটাই ইলেকট্রন দিয়ে আগাগোড়া ভর্তি। খামোখা আরেকটা শক্তিস্তরে শুধু একটামাত্র ইলেকট্রন টানাহেঁচড়া করে লাভ কী! এবং তারা করেও তাই। একটু উসকানি পেলেই ঐ একটা ইলেকট্রন ছেড়ে দিয়ে ঝাড়া হাত-পা হয়ে যায় তারা।
আবার এদিকে Fl, Cl, Br ইত্যাদি ডানদিকে যে কলামে আছে, সেই কলামের মৌলগুলোর সবচেয়ে বাইরের শক্তিস্তর পূর্ণ হবার জন্যে একটা করে ইলেকট্রনের ঘাটতি আছে। ঐ একটা ইলেকট্রন পেয়ে গেলে তারাও শক্তিস্তর পূর্ণ করে একটু ঝাড়া হাত-পা হতে পারে। ফলে দেখা যায় তারা হন্যে হয়ে ঐ একটা ইলেকট্রন খুঁজে বেড়াচ্ছে। ফলাফল, প্রথম কলামের মৌলগুলোর থেকে ইলেকট্রন ধার নিয়ে পরবর্তীতে উল্লিখিত কলামের মৌলগুলো শক্তিস্তর পূর্ণ করে, আর দুইয়ে মিলে তৈরি করে বিভিন্ন যৌগ। মোটামুটি সব পরমাণুই বাইরের শক্তিস্তরের এই ইলেকট্রনগুলো ছেড়ে, গ্রহণ করে কিংবা ভাগাভাগি করে একটা স্থিতাবস্থায় আসার চেষ্টা করে।
এতো কথা কেন বললাম? বললাম, কারণ দেখা গেছে, পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভেতরেও প্রোটন এবং নিউট্রন বিভিন্ন স্তরে সজ্জিত থাকে এবং ইলেক্ট্রনগুলোর মতোই একটা ম্যাজিক নাম্বারে আসার চেষ্টা করে, যেটায় নিউক্লিয়াসটা একটু স্থিতাবস্থায় থাকতে পারে। সুপার-হেভি এলিমেন্টগুলোর সমস্যা হচ্ছে, এগুলো যতো ভারী হতে থাকে, ততই এগুলোর স্থায়ীত্ব কমতে থাকে। আর স্থায়ীত্ব কমা মানেই এগুলোকে হাতের মুঠোয় পাওয়ার আশা দুরাশা। তৈরি হবার সাথে সাথেই বিলীন হয়ে যায় এরা। তেজস্ক্রিয়তার মাধ্যমে ভেঙ্গে গিয়ে হালকা হতে হালকাতর মৌল তৈরি করতে থাকে।
কিন্তু পরমাণুর নিউক্লিয়াস ভীষণ ভারী হলেই যে সবসময় সেটা প্রোটনগুলোকে একে একে ঘাড় ধরে বের করে দিয়ে হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ার চেষ্টা করবে, তা নয়। বরং সেটা যতো ম্যাজিক নাম্বারের কাছাকাছি আসবে, ততো সেটার স্থায়ীত্ব বাড়বে। এই ম্যাজিক নাম্বারটা নির্ভর করে প্রোটন ও নিউট্রনের সংখ্যার উপরে। এটাকেই বলে ‘আইল্যান্ড অব স্ট্যাবিলিটি’। এই আইল্যান্ড অব স্ট্যাবিলিটি খুঁজে পাবার ব্যাপারেই বিজ্ঞানীরা এখন হন্যে হয়ে ঘুরছেন। বর্তমানে তাঁরা ধারণা করছেন, প্রোটন সংখ্যা ১০৮, ১১০ কিংবা ১১৪ এবং নিউট্রন সংখ্যা ১৮৪ বিশিষ্ট কোনো কম্বিনেশন হয়তো ম্যাজিক নাম্বার হিসেবে কাজ করতে পারে, যে কম্বিনেশনে ভারী নিউক্লিয়াসটা হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়বে না। ওটাকে নিয়ে গবেষণার একটু সময় পাওয়া যাবে। এমনকি মৌল নাম্বার ১১৭টার অস্তিত্বও বিজ্ঞানীরা সরাসরি প্রমাণ করতে পারেননি। ওটা তৈরি করতে গিয়ে যেসব বাইপ্রোডাক্ট তৈরি হয়েছিলো, সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করে মৌল নাম্বার ১১৭-এর অস্তিত্ব প্রমাণ করতে হয়েছিলো। মৌল-১১৭ এর পরমাণু তৈরি হবার সাথে সাথেই আলফা রশ্মি (যেটা আসলে ২ প্রোটন ও ২ নিউট্রন বিশিষ্ট হিলিয়াম নিউক্লিয়াস) বিকিরণ করে মৌল-১১৫তে রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছিলো। এই মৌল-১১৫ ও আবার আলফা রশ্মি বিকিরণ করে প্রায় সাথে সাথে আরো হালকা মৌলে রূপান্তরিত হয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছিলো ১০৩ প্রোটন বিশিষ্ট lawrencium-এ, যেটার Half-life (তেজস্ক্রিয় পদার্থ ক্ষয় হতে হতে যতটুকু সময়ে তার মূল পরিমাণের অর্ধেকে নেমে আসে) হচ্ছে ১১ ঘণ্টা। সুপার-হেভি এলিমেন্টের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী বেশ ভালোই।
পরবর্তীতে আবিষ্কৃত সুপার-হেভি এলিমেন্টগুলোর জন্যে এই ‘আইল্যান্ড অব স্ট্যাবিলিটি’ খুঁজে পাওয়া না গেলে সেগুলো নিয়ে গবেষণা করার মতো পর্যাপ্ত পরিমাণে স্যাম্পল আমরা হাতে পাবো না। ফলে সেগুলোর রাসায়নিক বৈশিষ্ট্যও আমরা বের করতে পারবো না। শুধু তা-ই নয়। সমস্যা আছে অন্যদিকেও। একটু আগে যে অদ্ভুত আচরণের কথা বলেছিলাম, সেটাতেই এখন আসছি।
সুপার-হেভি এলিমেন্টগুলোর একদম প্রথম যে ইলেকট্রন স্তর, সেটার ইলেকট্রনগুলো নিউক্লিয়াসের সাথে এতো টাইট অবস্থানে থাকে যে, নিউক্লিয়াসের প্রবল আকর্ষণের বিপরীতে ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে প্রবল গতিবেগে পাক খেতে হয়। এগুলো এতোই দ্রুত গতিতে ঘুরে যে, আইনস্টাইন দাদুর স্পেশাল রিলেটিভিটি থিওরি অ্যাকশনে নামা শুরু করে। এই থিওরি অনুযায়ী কোনো বস্তু আলোর গতিবেগের যতো কাছাকাছি আসতে থাকে, ততোই তার ভর বাড়তে থাকে। অর্থাৎ, সুপার-হেভি এলিমেন্টগুলোর ক্ষেত্রে মৌল যত ভারী হতে থাকে, ওটার প্রথম শক্তিস্তরের ইলেক্ট্রনগুলোর ভর তত বাড়তে থাকে। কিন্তু এতে কী হয়? পরমাণুর একদম বাইরের স্তরের ইলেক্ট্রনগুলোর (যেগুলো কোনো মৌলের রাসায়নিক ধর্ম নির্ধারণ করে) উপরে প্রচণ্ড ভারী হয়ে যাওয়া এই ইলেক্ট্রনগুলোর আছর পড়া শুরু হয়, কারণ তারা তাদের চার্জের কারণে এই ব্যাপারটা টের পায়। তখন দেখা যায়, একই গ্রুপের আগের সব মৌলের চেয়ে এগুলো একটু ভিন্ন আচরণ করতে শুরু করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় – গ্রুপ ১ ও ২ এ যেসব অ্যালকালি ও অ্যালকালাইন আর্থ মেটাল আছে, সেগুলো সাধারণত ১টা বা ২টা ইলেকট্রন ছেড়ে দিয়ে +১ বা +২ অক্সিডেশন স্টেটে চলে যায়। কিন্তু ১১৯ এবং ১২০ নম্বর মৌলের ব্যাপারে ধারণা করা হচ্ছে, উপরে বর্ণিত উপায়ে আইনস্টাইনের স্পেশাল রিলেটিভিটি থিওরি অ্যাকশনে নামার কারণে এই দু’টো মৌল +৩ এবং +৪ অক্সিডেশন স্টেট পর্যন্ত যেতে পারবে। অর্থাৎ, পর্যাপ্ত পরিমাণে স্যাম্পল না পেয়ে আপনি আগের আবিষ্কৃত একই ধরণের মৌলগুলোর চেনাজানা বৈশিষ্ট্য দিয়ে যে কাজ চালিয়ে নিবেন, সেই ভরসাও নেই। আরো ভেঙ্গে বুঝাতে গেলে এখানে যারা রসায়নে অব্রাহ্মণ নাদান পাবলিক আছেন, তারা আগ্রহ হারিয়ে বিজ্ঞানযাত্রা সাইট ছেড়ে চলে যাবেন বিজ্ঞান বিষয়ক সব মিমের পেইজে। সুতরাং এই আলোচনা এখানেই থামিয়ে চলুন আগে বাড়ি।
এরপরে কী?
এতক্ষণ ধরে তো বললাম মৌল ভারী হতে ভারীতর হতে থাকলে কী কী সমস্যা হতে পারে সেগুলো নিয়ে গবেষণায়। কিন্তু এমন কোনো সীমা আছে কি, যেখানে মৌল তৈরি হয়ে আবার সাথে সাথেই ভেঙ্গে পড়া তো দূরে থাক, মৌলটাকে অস্তিত্বে আনাই সম্ভব না?
আমেরিকান পদার্থবিদ রিচার্ড ফেইনম্যান এটা নিয়ে গাণিতিক গবেষণা করে দেখিয়েছিলেন যে, ১৩৭টা প্রোটন বিশিষ্ট মৌল তৈরি করা অসম্ভব। মানে মৌল নাম্বার ১৩৭ পাওয়া অসম্ভব! কারণ তখন প্রথম শক্তিস্তরের ইলেক্ট্রনগুলোর গতি হবে আলোর গতির চেয়ে বেশি। ঐ শক্তিস্তরের ইলেক্ট্রনগুলোর শক্তি হবে ইমাজিনারি নাম্বার বা কাল্পনিক সংখ্যা!
কিন্তু আসলেই কি তাই? এটাই কি তাহলে পর্যায় সারণীর সেই সর্বশেষ মৌল?
নাহ, ব্যাপারটা আসলে তা নয়। প্রতিভাবান এই পদার্থবিদ তাঁর ক্যালকুলেশনে একটু ভুল করেছিলেন। তবে সেটা তাঁর ভুল নয়, তাঁর সময়কার জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা। তিনি পরমাণুর মডেল হিসেবে ধরেছিলেন বোর মডেলকে। রাদারফোর্ড-নিলস বোরের পরমাণুর মডেল মৌল নাম্বার ১৩৭ পর্যন্ত গিয়ে হোঁচট খায়। এরপরের মৌলগুলোর অস্তিত্বকে আর ব্যাখ্যা করতে পারে না। আধুনিককালের জ্ঞানের উপরে ভিত্তি করে মৌলের এই সংখ্যাটা ১৭২ নাম্বার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায়। ১৭৩ নাম্বারে গিয়ে মৌলের পরমাণুর একদম প্রথম শক্তিস্তরের ইলেকট্রনগুলোর শক্তিতে ঝামেলা বেঁধে যায়। কিন্তু তবুও পরমাণু স্থিতাবস্থায় থাকতে পারে, যদিও ভীষণ অদ্ভুত কিছু ঘটনা ঘটতে শুরু করে। আর যেখানেই অদ্ভুতুড়ে ঘটনা, সেখানে আশেপাশেই একটু খুঁজলে দেখা যাবে কোয়ান্টাম মেকানিক্স ইতিউতি ঘুরে বেড়াচ্ছে!
কোয়ান্টাম মেকানিক্স বলে, একদম শূন্য থেকে জোড়ায় জোড়ায় কণা অস্তিত্বে আসতে পারে। এই কণাদুটোর একটা হচ্ছে ম্যাটার, আরেকটা এন্টিম্যাটার। যেমন- ম্যাটার হিসেবে ইলেকট্রন এবং এন্টিম্যাটার হিসেবে পজিট্রন একদম শূন্য হতে আবির্ভূত হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এরা অস্তিত্বে এসেই আবার সাথে সাথে সংঘর্ষ ঘটিয়ে একে অপরকে বিলীন করে দিবে।
হাইপোথিসিস বলে, মৌল নাম্বার ১৭৩-এর একদম প্রথম শক্তিস্তরের ইলেকট্রনগুলো এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে যে, এই ভার্চুয়াল কণাগুলো (ম্যাটার-এন্টিম্যাটার) জোড়ায় জোড়ায় অস্তিত্বে আসতে এবং বিলীন হতে সক্ষম হবে। ফলাফলটা কী হবে বুঝতে পারছেন? এই পরমাণুর কোনো একটা ইলেকট্রন যদি বের হয়ে চলে যায়, সেই ফাঁকা স্থান পূরণ করতে পরমাণুটাকে গতানুগতিক রসায়নবিদ্যার আশ্রয় নিয়ে অন্য পদার্থ হতে ইলেকট্রন ধার করতে হবে না। নিজে নিজেই ইলেকট্রন-পজিট্রন জোড়া তৈরি করবে এক্কেবারে শূন্য হতে। পরে ইলেক্ট্রনটাকে ঐ ফাঁকা জায়গায় বসাবে, আর পজিট্রন নামক এন্টিম্যাটারটাকে কিক মেরে বের করে দিবে। মোদ্দা কথা, মৌল নম্বর ১৭৩-কে কোনোভাবেই আয়নিত করা যাবে না। করলে সেটা নিজে নিজে স্পেস-টাইম হতে ইলেকট্রন বানিয়ে সেই ফাঁকা স্থানে বসাবে, আর বিকিরণ করবে এন্টিম্যাটার!
সুতরাং বলা যায়, পর্যায় সারণীর যদি দ্রুত সমাপ্তি না ঘটে, তবে এমন সব ঘটনা আমাদের জন্যে অপেক্ষা করবে যেটা সায়েন্স ফিকশন কাহিনীকেও হার মানাবে। বলা যায় না, স্পেস-টাইমের দফারফা করে ছেড়ে দেয় কিনা আবার! (সারকাজম এলার্ট! শেষের কথাটার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই এখনো।)
===============================================================================================
ফালতু সব জোকস ছাড়া বিলিতি ভাষায় এ বিষয়ে পড়তে চাইলে ঢুঁ মারুন নিচের লিংকগুলোতে –
১। https://en.wikipedia.org/wiki/Extended_periodic_table#Feynmanium_and_elements_above_the_atomic_number_137
২। http://www.bbc.com/earth/story/20160115-how-many-more-chemical-elements-are-there-for-us-to-find
৩। https://en.wikipedia.org/wiki/Periodic_table
৪। https://en.wikipedia.org/wiki/Island_of_stability
৫। https://www.scientificamerican.com/article/superheavy-element-117-island-of-stability/