সম্প্রতি কিছু পদার্থবিদ মস্তিষ্কের শিক্ষা প্রক্রিয়ার সাথে এন্ট্রপির যোগসুত্র খুঁজে পেয়েছে। এন্ট্রপি হচ্ছে কোনো একটি আবদ্ধ সিস্টেমে শক্তির বিশৃঙ্খল অংশ যা আর ব্যবহার করা যায় না। তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র থেকে এই এন্ট্রপির ধারণার উদ্ভব।
তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র থেকে জানা যায়, তাপশক্তিকে কখনই পুরোপুরি কাজে লাগানো যাবে না। আর এখান থেকেই আসে এন্ট্রপির ধারণা। তাপশক্তির যে অংশটুকু কাজে লাগানো যাচ্ছে না তা হচ্ছে শক্তির বিশৃঙ্খল হয়ে যাওয়া অংশ। একেই বলে এন্ট্রপি। গাণিতিক প্রমাণ অনুসারে এন্ট্রপি সবসময়ই বৃদ্ধি পাচ্ছে, অর্থাৎ মহাবিশ্বে শক্তির বিশৃঙ্খলা বেড়েই চলেছে।
অনেক সময়ই বলা হয়ে থাকে যে প্রাণির মস্তিষ্কের গঠন এই মহাবিশ্বের মতই জটিল। বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরেই এই জটিল অঙ্গটিকে বোঝার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়ের ক্ষেত্রে আমাদের মস্তিষ্ককে বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এন্ট্রপির সাথে মস্তিষ্কের শিক্ষার সম্পর্ক খুঁজে পাওয়ার ঘটনাটি মস্তিষ্কের শিক্ষা প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণার নতুন দরজা খুলে দিয়েছে।
এই গবেষণায় গবেষকরা হেবিয়ান তত্ত্বের উপর নির্ভর করেছে। এই তত্ত্ব স্নায়ুতন্ত্রে তথ্য সংরক্ষণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা দেয়। এই তত্ত্বের প্রবক্তা ডোনাল্ড হেব। এই তত্ত্ব ব্যবহার করে গবেষকরা দেখিয়েছে, মস্তিষ্কের শিক্ষার কার্যকর দক্ষতা স্নায়ু জালে উৎপাদিত মোট এন্ট্রপির সমান। তারা দেখেছেন যে, যতটা ধীরে কোনো নিউরন শেখে তত কম তাপ এবং এন্ট্রপি এটি উৎপাদন করে।
এই গবেষণা আমাদের ধারণা দেয়, মস্তিষ্কের শিক্ষা প্রক্রিয়া প্রকৃতির সেই নিয়ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত যা দ্বারা সমস্ত মহাবিশ্ব নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে, এমনকি সময়ও। কারণ এন্ট্রপির মাধ্যমেই ব্যাখ্যা করা যায় মহাবিশ্বে সময় কেন শুধু সামনের দিকেই এগিয়ে চলে। এই গবেষণা মস্তিষ্কের শিক্ষা প্রক্রিয়া আরও ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করবে বলে বিজ্ঞানীদের ধারণা। একসময় হয়তো আমরা আমাদের জৈবিক মস্তিষ্কের শিক্ষা প্রক্রিয়ার সম্পুর্ন অ্যালগরিদম উন্মোচন করতে পারবো। বিজ্ঞানীদের ধারণা এন্ট্রপির উপর হয়তো আমাদের চেতনাও (consciousness) নির্ভরশীল। গতবছর কানাডা ও ফ্রান্সের একদল বিজ্ঞানী এই বিষয়ে তাদের ধারণা প্রকাশ করে।
মূল গবেষণাপত্রঃ
http://journals.aps.org/prl/abstract/10.1103/PhysRevLett.118.010601
নোটঃ
স্নায়ুতন্ত্র = nerve system
স্নায়ু জাল = neural network