মহাকাশে আমরা কি একা?
প্রশ্নটা সম্ভবত গত পঞ্চাশ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিবার জিজ্ঞাসিত প্রশ্নগুলোর মধ্যে একটি। আবার এমনভাবেও বলতে পারেন এটি এমন প্রশ্নগুলোর একটি যার উওর আজো নিশ্চিতভাবে দেয়া সম্ভব হয়নি। এই অজানা রহস্যটির ব্যাপারে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম জবাব মেলে তবে। যেমন মহাকাশে প্রাণের খোজ আর অস্তিত্ব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান সেটির (S.E.T.I. : Search For Extra-Terrestrial Intelligence) মহাপরিচালক ও জ্যোতির্বিদ জিল টার্টার বলেনঃ
“মহাকাশে প্রাণীর অস্তিত্ব আছে কি না সেটা সরাসরি বলার সময় এখনো আসেনি। আপনি যদি এই বিশ্বব্রম্মাণ্ডের বিশালত্ব আর এর গঠন সম্পর্কে সামান্য কিছুও জেনে থাকেন তাহলে এতটুকু বোঝার কথা যে মহাকাশে প্রাণ আছে এটা প্রমাণের চেয়ে মহাকাশে প্রাণ নেই এটা প্রমাণ করাও কতবড় কঠিন একটা কাজ।”
আবার কিংবদন্তী সায়েন্স ফিকশন লেখক আর্থার সি ক্লার্কের এ বিষয়ে বলেন:
“দুটো ব্যাপার হওয়া সম্ভব, হয় আমরা একা,নয়ত আমরা একা নই।দুটো ব্যাপারই সমানভাবে আনন্দের আবার ভয়েরও।”
ঊওর যথাযথভাবে না পাওয়া গেলেও এ নিয়ে মাতামাতি আসলে কখনোই থেমে থাকেনি। মানবজাতির ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে আসলে আমরা কখনোই একা থাকতে চাইনি। আমরা সবসময়ই চেয়েছি আমাদের সমকক্ষ বা আমাদের চেয়েও শ্রেষ্ঠতর কেউ থাকুক। এজন্য ভূত,প্রেতাত্মা,দানব,পরী ইত্যাদি নানা রকমের সত্বাকে হরহামেশা তৈরি করে এসেছি। যাদেরকে কখনো আমাদের বন্ধু বলে পাশে টেনেছি কিংবা প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখেছি।তবে বিজ্ঞানের জয়জয়কারের দিনে আমরা আগের সবাইকে বাদ দিয়ে ধীরে ধীরে অন্য আরেক সত্বাকে নিজেদের মানসপটে আনছি।আর তারা হল “এলিয়েন”বা ভীনগ্রহের প্রাণি। বিজ্ঞানের ভাষায় আমরা যাদেরকে এক্সট্রাটেরিস্ট্রীয়াল লাইফ বা বহির্জাগতিক প্রাণ বলি।
এখন এলিয়েন বা ভীনগ্রহের প্রাণি বললেই আমাদের চোখে হলিউডের তৈরি কিছু বিচিত্র প্রাণির ছবিই ভাসতে থাকে।বিজ্ঞানের ভাষায় এলিয়েন বা বহিঃজাগতিক প্রানী বলতে ওই ধরনের প্রাণকেই বুঝানো হয় যাদের জন্ম অবশ্যই পৃথিবীতে হয়নি,এবং যাদের শারীরীবৃত্তিক কার্যকলাপ পৃথিবীর সাথে সম্পর্কিত নয়। এই হিসেবে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের বাইরের একটা ব্যাকটেরিয়াও একটি এলিয়েন। যদিও আজ পর্যন্ত পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের বাইরে একটা ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্বও প্রমাণ করা সম্ভবপর হয়ে উঠেনি । কিন্তু তার মানে এই নয় যে কখনোই তা মিলবে না।
আমরা মহাবিশ্বে প্রাণের ব্যাপারে এত আশাবাদী কেন?
এটার জবাবটা লুকিয়ে আছে বিশ্বব্রম্মাণ্ডের বিশালতার মাঝে। ইউনিভার্স বা বিশ্বব্রম্মান্ড এতটাই বড় যে আমাদের সৌরজগতও তার কাছে এক ক্ষুদ্র বালুকণার মত।
নক্ষত্রদের সম্মিলন ক্ষেত্র যে গ্যালাক্সি,তাদের সংখ্যাও পৃথিবীর মানুষের সংখ্যার চেয়েও বেশী। আমরা যে সুর্যের বিশালতার কথা ভাবি সেটাও কিন্তু একটা গড়পড়তা আকারের নক্ষত্রের চেয়েও ছোট। পৃথিবীর কথা নাই বা বললাম। আর এতসব গ্যালাক্সির অভ্যন্তরীন গ্রহ নক্ষত্রের মাঝে রয়েছে অসংখ্য বিন্যাস।আর সেই বিন্যাসের মাঝে আমাদের সৌরজগতের মত নক্ষত্রকেন্দ্রীক বিন্যাস থাকা খুবই সম্ভব ।এটাও সম্ভব অগণিত সৌরজাগতিক বিন্যাসের মাঝে আমাদের পৃথিবীর মত কোন এক গ্রহের উপস্থিতি । যার অভ্যন্তরে হয়ত বিকাশ ঘটেছে প্রাণের।গত দুই দশকে এই যুক্তির পালে অনেকহাওয়া এসেও লেগেছে। হাবল বা কেপলারের মত অত্যাধুনিক টেলিস্কোপ দিয়ে এটা বের করা সম্ভব হয়েছে যে হুবহু পৃথিবীর মত না হোক অন্তত এর কাছাকাছি বৈশিষ্টের গ্রহের অস্তিত্ব আছে।এদেরকে বলা হয় এক্সোপ্লানেট । যেমন কেপলার ৩৩৮এফ, গ্লিসে ১৩২সি, কেপলার ৩২বি ইত্যাদি। তবে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত এক্সোপ্লানেটগুলোর মধ্যে কেপলার টুটু বি, কেপলার ১৮৬এফই পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি বৈশিষ্টের গ্রহ বলেই বিবেচিত।চিত্রে কেপলার টুটুবির সাথে পৃথিবীর আকৃতিগত মিল দেখানো হয়েছে।
কিছু কিছু গবেষণা অনুযায়ী বলা হয়ে থাকে পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ আসলে একটা চরমতম অলৌকিকত্ব ছাড়া আর কিছু নয়..
“Life on earth is either very common or an extremely rare phenomena of the universe”
আমাদের কেন্দ্রীয় নক্ষত্র সুর্যের সাথে পৃথিবীর বিন্যাসটাই বিচিত্র রকমের । পৃথিবী তার নিজ অক্ষের সাথে ৬৬দশমিক পাঁচ ডিগ্রী কোনে অবস্থান করে।এই কৌনিক অবস্থান আর সুর্য থেকে আমাদের মডারেট ডিস্টেন্স বা পরিমিত দুরত্ব পৃথিবীতে ‘নয় গরম নয় ঠান্ডা’ এরকম একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেছে এবং বার্ষিক গতির সাহায্যে ঋতু পরিবর্তন নিশ্চিত করেছে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম পরিবেশ।প্রাণের বিকাশের জন্য যেসব উপাদানগুলোর প্রয়োজন তা কেবলমাত্র পৃথিবীতেই পর্যাপ্ত পরিমানে রয়েছে।কার্বণ, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন আর হাইড্রোজেনের মত উপাদানগুলোর পরিমানমত সহাবস্থান নিশ্চিত করেছে প্রান সৃষ্টির প্রথম উপাদান এমাইনো এসিডের উত্থানের। আর ঘন বায়ুমন্ডল সুর্যের বিভিন্ন ক্ষতিকারক রশ্মিগুলোকে আটকে দিয়ে প্রয়োজনীয় তাপকে দিনের বেলা প্রবেশের সুযোগ দিয়েছে আবার এই বায়ুমণ্ডলই রাতে প্রয়োজনীয় তাপকে আটকে রেখে পৃথিবীকে হিমশীতল বরফখন্ডে পরিণত হওয়া থেকে রক্ষা করছে, যেটা প্রানধারণের জন্য একান্ত জরুরী ছিল। এই ধরনের অভাবনিয় বৈশিষ্ট কেবল আমাদের পৃথিবীরই আছে, অন্য কোন গ্রহে আজ অবধি এমন বৈশিষ্টের কথা শোনা যায়নি।
তার মানে কি কেবল অনুকূল পরিবেশেই কেবলমাত্র প্রাণের বিকাশ বা প্রজনন সম্ভব? অন্য কোন পদ্ধতি নেই?
ব্যাপারটা আসলে পুরোপুরি এমনটা নয়। অভিযোজন ক্ষমতা আর বিবর্তনজনীত কারণেও ভিন্ন পরিবেশে প্রানের অস্তিত্ব সম্ভব।আর এর উদাহরণ ছড়িয়ে আছে পৃথিবীজুড়ে…..
আর্জেন্টিনার উওর পশ্চিমাঞ্চলে সাগরপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪ হাজার ৭০০ মিটার উপরে লেক ডায়ামান্ট নামের হ্রদে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে।এই লেকের পাশেই আছে মাইপো আগ্নেয়গিরি ।আগ্নেয়গিরির উত্তপ্ত লাভা আর প্রায় অক্সিজেনের শুন্যতা নিয়েও ব্যাকটেরিয়াগুলো দিব্যি টিকে থাকে, বংশবিস্তারও করে।
চিলির এটাকেমা মরুভুমিতে কিছু কিছু মাইক্রো অর্গানিজম যেমন Dunaliella algae জন্ম নেয় মাকড়শার জালের এক কোণায় এসব অর্গানিজমের পানির কোন প্রয়োজন পড়ে না। এরা পানির বদলে মাকড়শার জালের উপর সকালে যে ঘনীভূত অতিক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র শিশিরের আস্তরণ পড়ে সেটাকেই গ্রহণ করে টিকে থাকে। Halobacterium halobium নামের ব্যাকটেরিয়া সচরাচর যে লবণাক্ততা দেখা যায় তার চেয়েও প্রায় দশ গুন বেশি লবনাক্ততা সইতে পারে। এক্সট্রিমোফিল ও পলিএক্সট্রিমোফিল গোত্রের বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া অনেক বেশী তাপ ও চাপ সহ্য করতে পারে।
এছাড়াও waterbear বা Tardigrades এর কথা আমরা অনেকেই জানি। এই অদ্ভুত প্রাণিটি অবিশ্বাস্যভাবে পরম শুন্য তাপমাত্রায়, পানির স্ফুটনাঙ্কে,সমুদ্রের তলদেশ এমনকি ভ্যাকুয়ামের মত প্রতিকূল পরিবেশেও বেচে থাকে। মানুষের চেয়ে প্রায় দশ গুন বেশী মাত্রার তেজস্ক্রীয়তা সহ্য করতে পারে প্রাণীটি। আর এ সব উদাহারণ চরম প্রতিকুল পরিবেশেও প্রাণের অস্তিত্বের স্বপক্ষে রায় দেয়
যদিও এখনো পর্যন্ত আমরা পৃথিবীর বাইরের প্রানের অস্তিত্বকে প্রমাণ করতে পারিনি তবে এই সম্পর্কিত বেশ কিছু ধারণা প্রতিষ্ঠা করা গেছে । যেমন ফার্মির প্যারাডক্স বা ফার্মির হেঁয়ালি । এটি আসলে একধরণের অসামঞ্জস্যতাকে নির্দেশ করে। এর পূর্ণতর সংজ্ঞা এভাবে দেওয়া যেতে পারে:
“মহাবিশ্বের আকার এবং বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করে বহু সংখ্যক উন্নত বহির্জাগতিক প্রাণের সম্ভাব্য উপস্থিতি।কিন্তু এই ধারণা অযুক্তিযুক্ত প্রতীয়মান হয়, কারণ পর্যবেক্ষণগত ফলাফল তা সমর্থন করে না।’
এর পরেই বলা যেতে পারে বিজ্ঞানী ফ্রাঙ্ক ড্রেকের কথা। তিনি একটি সমীকরণ দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছিলেন ফার্মির প্যারাডক্সের বিপরীতে। তিনি তার সমীকরণে তারকা সৃষ্টির হার, গ্রহ সংবলিত তারকা সৃষ্টির হার, বাসযোগ্য গ্রহ সৃষ্টির হারের মত বিভিন্ন জটিল গাণিতিক হিসাবকে একত্রিভূত করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে তার সমীকরণটি যতটা না গাণিতিক তার চেয়ে অনেকটাই অনুমান আর সম্ভাব্যতাকেন্দ্রিক। ড্রেক ,কার্ল সেগানদের মত বিজ্ঞানিদের হাত ধরেই গড়ে উঠে মহাকাশে বুদ্ধিমান প্রাণী খোজার সংস্থা সার্চ ফর এক্সট্রাটেরিস্ট্রিয়েল ইন্টেলিজেন্স বা সেটি’র।এই সংস্থা নিরন্তরভাবে মহাকাশ পর্যালোচনা করে যাচ্ছে,খুজে চলেছে উন্নত কোন সভ্যতার।
SETI PROJECT জোরেশোরে খবরে এসেছিল ১৯৭৫ সালে ।ওই বছরের ১৫ই আগস্ট তারা মহাকাশ থেকে আগত একটা সরু বেতার সংকেত চিহ্নিত করতে সমর্থ হয়।এটি শনাক্ত করেন Jerry R. Ehman নামের এক মহাকাশবিজ্ঞানী৭২ সেকেন্ড স্থায়ী এই সংকেত আলোড়ন তোলে গোটা বিশ্বজুড়ে, কেননা এই বেতার সংকেত আপাতদৃষ্টিতে কোন বুদ্ধিমান সভ্যতার থেকে আগত বলেই বিবেচনা করা হয়েছিল। এটার নাম দেয়া হয়ছিল ওয়াও সিগন্যাল।পরবর্তীতে এই সংকেতের অর্থ বা মহাকাশের যে অংশ থেকে সংকেতটি এসেছিল ওই অংশে গবেষণা চালিয়েও কিছু বের করা সম্ভব হয়নি।
মহাকাশ থেকে আগত সংকেত পাওয়ার জন্য আমরা যে অন্য বুদ্ধিমান প্রজাতির টার্গেটে আছি কি না সেটাও একটা ব্যাপার। তারা যদি আকাশগঙ্গার এই অংশকে টার্গেট না করে থাকে তাহলে আমাদের তাদের থেকে বার্তা পাবার সম্ভাবনা অত্যন্ত ক্ষীণ। আবার তারা ঠিক যে পদ্ধতিতে তাদের বার্তা পাঠাবে সেটা ঠিক আমাদের প্রযুক্তির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে তাও কিন্তু জোরালোভাবে বলা যায় না। এমনও হতে পারে যে আমরা তাদের পাঠানো বার্তা ধরতে পারছি না কিংবা তারাও পারছে না। তারা হয়ত আমাদের চেয়েও শক্তিশালী কোন পদ্ধতি বের করে ফেলেছে যেটা হয়ত আমাদের পক্ষে এখনো সম্ভবপর হয়ে উঠেনি।
তবে এগুলো আসলে নিছকই আশার বাণী। যতটা না দৃশ্যমান তারচেয়ে অনেক বেশী সম্ভাব্যতাকেন্দ্রীক,অন্তত আমাদের কাছে।
মহাকাশে প্রাণের অনুসন্ধান আর যোগাযোগের ক্ষেত্রে জ্যোতির্বিদ কার্ল সেগানের নামটা একটু আলাদাভাবেই নিতে হয়।
অসামান্য প্রতিভাধর এই বিজ্ঞানী তার জীবনের একটা বড় অংশ ব্যয় করেছেন মহাকাশে উন্নত সভ্যতার সন্ধানের গবেষণায়। কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপকের হাত ধরেই নির্মিত হয়েছিল ভয়েজার গোল্ডেন রেকর্ড । এটি ছিল সোনার তৈরি একপ্রকারের ডিস্ক,এতে ছিল ১১৬ টি স্থিরচিত্র যাতে পৃথিবীর মানুষের অবয়ব, পৃথিবীর পরিবেশগত আচরণ, পৃথিবী বা সৌরজগতের মহাজাগতিক অবস্থান,মানুষের দৈনন্দিন জীবন, পশু,পাখী,পোকামাকড়, ডিএনএ সম্পর্কিত ধারণা ইত্যাদি দেয়া হয়েছে ।দেয়া হয়েছিল বাতাস-ঢেউ-বৃষ্টির শব্দ, পাখির কূজন,মেঘের বজ্রধ্বনি ইত্যাদি । এছাড়াও প্রাচীণ গ্রিক আর আ্ধুনিক মিলিয়ে মোট ৫৫টি ভাষায় একটি শুভেচ্ছা বার্তা রেকর্ড করা হয়েছিল। এতে বাংলা ভাষাও ছিল।১৯৭৭ সালে নাসার ভয়েজার-১ নামের মহাকাশযান এই গোল্ডেন ডিস্ক নিয়ে যাত্রা শুরু করে। বর্তমানে ভয়েজার-১ প্রথম মনুষ্যসৃষ্ট নভোযান হিসেবে ইন্টারস্টেলার স্পেস বা সৌরজগতের প্রভাব বহির্ভূত স্থানে পৌছেছে। আশা করা হচ্ছে ভয়েজার-২ ও ২০১৬ সালে ইন্টারস্টেলার স্পেসে পৌছবে। এই গোল্ডেন রেকর্ডের উদ্দেশ্য ছিল একটাই।যদি এটা কোন এক সময় গিয়ে কোন এক উন্নত সভ্যতার হাতে গিয়ে পড়ে এবং তারা যেন আমাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা চালায় । আদৌ সে অবধি পৌছবে কি না বা তারা আমাদের তথ্যগুলোর মর্মোদ্ধার করতে পারবে কি না সেটাও কিন্তু একটা বড় প্রশ্ন। সেই গোল্ডেন রেকর্ডের একটা ছবি
মহাকাশে উন্নত প্রাণি সন্ধানের বড় সমস্যা অবশ্যই দূরত্বএবং প্রযুক্তির অপ্রতুলতা। আমরা এখনো মহাকাশীয় দূরত্বকে সফলভাবে জয় করতে পারিনি। আমাদের পা কেবল চাঁদেই পড়েছে আর মঙ্গলে পড়ার অপেক্ষায় আছে। গতিও বড় একটা বাধা। এছাড়াও আমাদের জানা নেই যে ঠিক কোন দিকে বা পথে গেলে আমরা অন্যকোন সভ্যতার দেখা পাব ।এজন্য আমাদের সব দিকেই নজর দিতে হচ্ছে।আর আমরা মূলত কার্বন নির্ভর সভ্যতা। বিশাল বিশ্বব্রম্মান্ডের কোন এক কোনে যদি অন্য কোন উপাদান যেমন নাইট্রোজেন বা সিলিকন নির্ভর সভ্যতা গড়ে ওঠে তাহলে তাদের কিভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হবে বা তাদের সাথে যোগাযোগই বা কিভাবে হবে তা নিয়েও বিস্তর প্রশ্ন আছে। স্টিফেন হকিংস এ ব্যাপারে বলেন
“ মহাকাশে যোগাযোগ একটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, ধরুন আমরা ধরেই নিলাম আমরা একটা উন্নত সভ্যতার কাছে একটা তথ্য পাঠালাম, তথ্যটা তারা পেল এবং সে অনু্যায়ী জবাবও পাঠালো। জবাবটা আমাদের কাছে পৌছবে বহুকাল পরে, এটাও ধরে নিলাম যে ওই জবাবটাও আমরা পেলাম এবং আরেকটা তথ্য পাঠালাম। তথ্যটা তাদের কাছে পৌছাতে পৌছাতে তারা হয়ত ব্যাপারটা ভুলে যেতে পারে কিংবা দীর্ঘসুত্রীতার কারণে আগ্রহও হারিয়ে ফেলতে পারে।”
আধারের বিপরীতে আলোও থাকে।অতি সম্প্রতি কিছু উল্কাপিন্ডের গায়ে পোকামাকড়সদৃশ প্রাণীর ছাপ পাওয়া গেছে।মঙ্গলগ্রহে দিনের আলোয় মিলেছে লবনাক্ত পানির ধারা । Who knows something very interesting yet to be discovered…
নাসার নিউ হরাইজন আমাদের দেখিয়েছে প্লুটোর মাঝে পাহাড়ী আর সমতল ভূমির ছবি।
এছাড়াও শনির উপগ্রহ টাইটানেও রয়েছে প্রাণসঞ্চারের জন্য কিছু উপাদান। নাসার পাঠানো যান ক্যাসিনি থেকে প্রাপ্ত তথ্যানু্যায়ী টাইটানের আবহমন্ডলে হাইড্রোজেন গ্যাস প্রবাহিত হচ্ছে এবং তা ভুপৃষ্ঠের কাছাকাছি এসে মিলিয়ে যাচ্ছে। এটা থেকে আন্দাজ করা হচ্ছে যে হয়ত টাইটানে হাইড্রোজেন শোষনকারী কোন জীবের উত্থান ঘটেছে ।কারণ একই ধরণের ঘটনা ঘটে পৃথিবীতে অক্সিজেনের বেলায়।গত ১৬ই মার্চ নাসা আরো তিনটি নতুন এক্সোপ্ল্যানেট বা পৃথিবীসদৃশ গ্রহের আবিষ্কারের কথা বলেছে।
অল্পকিছুদিন আগেই একটা নক্ষত্রকে ঘিরে বহির্জাগতিক প্রাণীদের তৈরি দানবাকার কোন সোলার এনার্জি কালেক্টর যন্ত্র বা সহজভাষায় এলিয়েন মেগাস্ট্রাকচারের অস্তিত্ব থাকার ব্যাপারে জোরালো দাবী তোলা হয়েছে।এই জিনিসটার উপর জোরেসোরে গবেষণা শুরু হয়েছে।
নাসা দাবি করেছে যে তারা আগামী ২০ বছরের মধ্যে খুজে বের করবে মহাকাশে আমরা ছাড়া আর কোন প্রাণী আছে কি না। এছাড়াও ফিউশন ইঞ্জিন রকেট আর ওয়ার্মহোলের মত ব্যাপারগুলোতে যদি সাফল্য আসে এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে যদি মহাকাশের কোথাও কোন সভ্যতা বিকশিত হয়ে থাকে আমরা তাদেরকে খুজে পাবই।
ততদিন পর্যন্ত মহাকাশে আমরা একা কি না সেটা নিয়ে জল্পনা কল্পনা চলুক না! কিছু কথা না’হয় তোলাই থাকল সময়ের কাছে।