যদিও বাংলাদেশে ইবোলা ভাইরাসের আগমন ঘটেনি, তবুও আগাম সাবধান থাকা জরুরী। জেনে রাখা ভালো ইবোলা রোগের লক্ষণসমূহ। হঠাৎ যদি শোনেন এদেশে কেউ আক্রান্ত হয়েছে, তাহলে যেন প্যানিকে না ভুগে প্রয়োজনমত সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে পারেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ইবোলা মহামারীকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক সতর্কতা বা গ্লোবাল অ্যালার্ট ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ ব্যাপারটাকে এখন শুধু সাব-সাহারা আফ্রিকান অঞ্চলের মহামারী হিসেবে গণ্য করার পরিস্থিতি নেই। এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে স্পেনে এবং উত্তর আমেরিকার টেক্সাসে। যদিও ১৭ অক্টোবরে WHO-এর ঘোষণা মতে, সেনেগালে ইবোলা মহামারীর সমাপ্তি ঘটেছে, কিন্তু ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত গিনি, লাইবেরিয়া, নাইজেরিয়া এবং সিয়েরা লিওনের ৯,২১৬ জনকে এ ভাইরাসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হয়েছে যাদের মধ্যে ৪,৫৫৫ জন মারা গেছে। ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতি সপ্তাহে আরও ১০,০০০ জন করে আক্রান্ত হতে পারেন বলে ধারণা করছে WHO!
১৯৭৬ সালে দক্ষিণ সুদানে সর্বপ্রথম ইবোলা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। কিন্তু ২০১৪ সালের এই মহামারীই (প্রথম কেইসটি ধরা পড়ে মার্চে) এ পর্যন্ত সৃষ্ট সবচেয়ে ভয়ংকর পরিস্থিতি।
ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সাধারণত ২-২১ দিনের ভেতর লক্ষণ প্রকাশ পায়। লক্ষণ প্রকাশের আগ পর্যন্ত আক্রান্তরা রোগটি ছড়াতে উপযুক্ত থাকেন না। কিন্তু একবার লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া শুরু করলে তিনি সংক্রমণাত্মক হয়ে উঠেন।
এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণের মধ্যে আছে – হঠাৎ জ্বর (তাপমাত্রা সাধারণত ১০০.৯ ডিগ্রী ফারেনহাইটের উপরে থাকে), তীব্র ক্লান্তি, পেশীতে-মাথায়-গলায় ব্যথা। এরপর আসে বমি এবং ডায়রিয়া (উভয় ক্ষেত্রেই মাঝে মাঝে রক্তসহ) এবং লিভার ও কিডনির কাজ বিঘ্নিত হওয়ার ফলে তলপেটে ব্যথা। এরপর হতে পারে শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা এবং শরীরে পানি চলে আসা। অনেক সময় চামড়ায় লাল ফুসকুড়ি দেখা দেয়।
মানুষ থেকে মানুষে ইবোলা ভাইরাস ছড়ানোর একমাত্র মাধ্যম হলো লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া কারো দেহের রক্ত অথবা অন্যান্য ফ্লুয়িডের সংস্পর্শে আসা। এসব ফ্লুয়িডের মধ্যে আছে থুথু, শ্লেষ্মা, বমি, মল, ঘাম, চোখের পানি, বুকের দুধ, প্রস্রাব এবং বীর্য। যেসব পয়েন্টের মাধ্যমে এগুলো দেহে প্রবেশ করে তার মধ্যে আছে নাক, মুখ, চোখ, খোলা ক্ষত, কেটে যাওয়া স্থান এবং ছিলে যাওয়া ত্বক। ভাইরাসের সংস্পর্শে আসা সূচ এবং সিরিঞ্জের মাধ্যমেও রোগটি ছড়াতে পারে। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিকেও স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে, কারণ তখনো পর্যন্ত ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা বহাল থাকে।
– স্বাস্থ্যকর্মী
– পরিবারের সদস্য অথবা যারা আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি অবস্থান করেন
– সমাধিস্থ করার জন্য যারা আক্রান্ত ব্যক্তির মৃতদেহের সংস্পর্শে আসেন।
এখনো পর্যন্ত ইবোলা ভাইরাসের বিরুদ্ধে কোনো লাইসেন্সড ওষুধ বা ভ্যাক্সিন পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এ বছরের সেপ্টেম্বরে GlaxoSmithKline এবং NIH যৌথভাবে একটি পরীক্ষামূলক ভ্যাক্সিন (cAd3-ZEBOV) তৈরি করেছে যেটা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে জরুরী ভিত্তিতে পশ্চিম আফ্রিকায় পাঠানো হবে। রাশিয়াও দাবী করেছে তারা ইবোলার বিরুদ্ধে Triazoverin নামক ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করেছে যা ২০১৫ সালের প্রথমদিকে পশ্চিম আফ্রিকায় সরবরাহ করা সম্ভব হবে। কানাডাও তাদের তৈরিকৃত ভ্যাক্সিনের ৮০০ ভায়াল WHO এর অফিসে পাঠাচ্ছে, যা বিভিন্ন উপায়ে ট্রায়ালের পর উপযুক্ত প্রমাণিত হলে ব্যবহৃত হবে ইবোলা প্রতিকারে।
আপনি যদি ইবোলা ভাইরাসে আক্রান্ত এলাকায় উপস্থিত থাকেন বা কোনো প্রয়োজনে ঐ এলাকায় যেতে হয়, তাহলে কীভাবে আক্রান্ত হওয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন, কিংবা ইবোলার সংস্পর্শে এলে কীভাবে সেটা প্রতিকার করতে পারেন, চলুন সেই নিয়মগুলো জেনে নিইঃ
– পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সতর্ক হোন। সাবান-পানি অথবা এলকোহল জাতীয় জীবাণুনাশক দিয়ে হাত ধোন এবং যেকোনো ধরণের রক্ত ও দেহ নিঃসৃত তরল পদার্থকে এড়িয়ে চলুন।
– আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা কোনো বস্তু ধরবেন না, যেমন – জামাকাপড়, বিছানা, সূচ, সিরিঞ্জ এবং চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত অন্যান্য যন্ত্রপাতি।
– আক্রান্ত ব্যক্তির মৃতদেহ সমাধিস্থ করার জন্য সেটাকে স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন।
মনে রাখতে হবে, প্রতিরোধ সবসময়ই প্রতিকারের চেয়ে ফলপ্রসূ।
লক্ষণ প্রকাশিত হওয়ার ৬-১৬ দিনের ভেতর রোগী মারা যায় (প্রধানত দেহ হতে তরল পদার্থের অতিরিক্ত নিঃসরণে সৃষ্ট নিম্ন রক্তচাপের কারণে)। আবার সেরে ওঠার পর্যায় শুরু হয় লক্ষণ প্রকাশের ৭-১৪ দিনের ভেতর।
তথ্য সূত্রঃ
উইকিপিডিয়া, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন, সেন্টার ফর ডিজিজ কনট্রোল, বিবিসি
Very important discussion. ❤❤❤❤♥️♥️♥️💕💕💕💕💕