দ্বিতীয় পর্বের পর প্রশ্নের সংখ্যা কমে গিয়েছিল। দেখা গিয়েছে অনেকেই কমন প্রস্ন করছিল। তবে বেশ কিছু সুন্দর প্রজ্ঞাময় প্রশ্ন করেছে যা এখানে উত্তর নেয়ার চেষ্টা করব। গত পর্বের মত এটা খুব একটা বড় হবে না। তবে আশা করি আমি ভ্রমঘাতিকা নিজের ও অন্যের ভ্রমকে হত্যা করতে পারবো।
তবে প্রথমে আমার অনুরোধ, যারা বিবর্তন ব্যাপারে নতুন তারা আমার প্রথম দুইপর্ব অবশই পড়বেন।
বিবর্তন ১০১ (কিউ অ্যান্ড এ) পর্ব ১
বিবর্তন ১০১ (কিউ অ্যান্ড এ) পর্ব ২
১। প্রানির লিঙ্গ কিভাবে আসলো? বিবর্তনের এখানে ভুমিকা কি ?
প্রথমে জীবের লিঙ্গ বলতে কিছু ছিল না। তখন দুটি একই প্রজাতির haploid cell একত্রিত হয়ে তাদের আরও ২টি কপি তৈরি করত। এরপর ধিরে ধিরে মিউটেশনের মাদ্ধমে একাধিক ভিন্ন সেলুলার স্ট্রাকচার রেপ্লিকেট করার জন্য একক্রিত হত। সেটাকেও প্রথম সঙ্গম স্তর বলা যায়। সেখান থেকে পুরুষ, স্ত্রি; ধিরে ধিরে প্রানে সেক্স এর জটিলতা বিলিয়ন বছর ধরে এসেছে। যদিও এটা এখনো হাইপথেসিস। কারন সেটা আজ থেকে প্রায় ৩ বিলিয়ন বছর আগে খুবই ভিন্ন একটা পরিবেশে মিলিয়ন মিলিয়ন বছরের ক্রমশ বিবর্তিত হয়েছে। তবে বিজ্ঞানিরা পরিক্ষনের মাদ্ধমে haploid cell এর ব্যাপারটা নিশ্চিত হয়েছে। চাইলে এই ভিডিওটি দেখতে পারেন।
২। কিভাবে প্রাণীদের মধ্যে পুরুষ ও স্ত্রীর অনুপাত প্রায় ১ঃ১? রিপ্রডাকশন তো র্যান্ডম। তাহলে কিভাবে অনুপাতের মাঝে এত মিল ? ( শুধু মানুষের কথাই জানি প্রায় ১০৫ঃ১০০ , অন্যপ্রানির ক্ষেত্রে অনুপাত কেমন জানা নেই)
যদি ম্যাক্রো লেভেলে চিন্তা করি তাহলে পুরুষ ও স্ত্রীর অনুপাত শুধুমাত্র বিবর্তনের উপর নির্ভর করে না। কারন কোন লিঙ্গের life expentency এক জায়গায় হয়তো খুব বেশি অন্য জায়গায় খুব কম। মানুষের ১০৬ জন ছেলের সময় ১০০ জন মেয়ে হয় সেটার পৃথিবীতে প্রায় ১০ মিলিয়নের মত ছেলে বেশি আছে। কিন্তু এমন অনেক দেশ আছে যেখানে ছেলেদের থেকে মেয়ে বেশি। দৈবভাবে ছেলে মেয়ের অনুপাত সব জায়গায় সমান হয় না। হিউম্যান কন্সেপ্সন রেজাল্ট অনুযায়ী এই অনুপাত ১৫০ঃ১০০ হওয়া উচিত। কিন্তু ছেলেদের মৃত্যুহার বেশি। মিসকেরেজ, ভাইটাল রোগ, দুর্ঘটনা এগুলোর সম্ভাবনা মেয়েদের থেকে ছেলেদের বেশি। তাই ছেলে মেয়েদের প্রজননক্ষমতা আসার বয়সে এই সব কারনে ছেলে ও মেয়ের অনুপাত প্রায় সমান হয়ে যায়। এই ভিডিওটি আপনাকে সাহায্য করতে পারে।
৩। সমকামিতা, ট্রান্সসেক্স এগুলোকে বিবর্তন কিভাবে ব্যাখা করে ?
এটা বিবর্তনের সেমিনারগুলোতে করা খুব কমন প্রশ্ন। তবে এর উত্তর একটু জটিল। প্রাণীদের মধ্যে জমজ হওয়ার একটা দৈব সম্ভাবনা থাকে। আর জমজদের মধ্যে mono-zygotic genes থাকে। তাদের একেঅপরকে পছন্দ করার প্রবনতা অনেক বেশি থাকে (হোক সেই জমজ সমলিঙ্গএর অথবা বিপরিত লিঙ্গের)। আর সেই বৈশিষ্ট্য উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্তিসাদ্ধ বা heritable. মানে তাদের জেনেটিক কম্পোনেন্টএ সেই বৈশিষ্ট্যগুলো পরবর্তী প্রজন্মে ছড়িয়ে যায়।
(এই ভিডিওটি সাহায্য করতে পারে)
এর যখন পরবর্তী প্রজন্মে সেই জিন জীবের মধ্যে বেশি প্রভাব বিস্তার করে তার মধ্যে সমকামিতা জৈবিকভাবে তৈরি হয়। আর এটার যথাযথ প্রমান পাওয়া গিয়েছে যে প্রাণীদের মধ্যে শুধু বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণই একমাত্র আকর্ষণ নয়। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি বেশি, মাঝারি, কম ও প্রায় শূন্য আকর্ষণ কাজ করে। এটা পরিবেশের অন্য প্রাণীদের মধ্যেও দেখা যায়। আর ট্রান্সসেক্স এর ব্যাপারটা পুরো মিউটেশনই বলা যায়। যখন ক্রোমোজোম পুরুষ বা স্ত্রীর কম্বিনেশন না পায় তখন অযুগ্মভাবে xxy xyy ইত্যাদি ক্রোমোজোম থেকে ট্রান্সসেক্স হয়।
৪। মিউটেশন যদি র্যান্ডমই হয় তাহলে কিভাবে প্রাণীদের শরীরে অর্গানগুলো সঠিক জায়গায় আছে ? র্যান্ডম হলে তো মাথা এক দিকে কান একদিকে হত।
এটা জেনেটিক ইনফো আর নেচারাল সিলেক্সন এর কারনে বেশি প্রভাবিত হয়েছে। আমাদের শরীরে সেই জেনেটিক ইনফো আছে আমাদের অর্গানগুলো কি অবস্থায় থাকবে। সেটা প্রজননের সময় আমাদের উত্তরাধিকাররা পাবে। আমরাও পেয়েছি আমাদের পূর্বপুরুষ থেকে। তাই আমাদের মাথা একদিকে কান একদিকে থাকার কথা না (যদি না মিউটেশন হইয়) কারন জেনেটিক ইনফোই সেই আকারের সঠিক অবস্থার নির্দেশ দেয়। ঠিক যেমন ন্যাচারাল সিলেকশনে শক্ত জিনগুলো টিকে থাকে ঠিক তেমননি শারীরিক সঠিক আকারও আমরা জিন থেকে পেয়েছি। এ জন্য তৃণভুজি প্রাণীদের চোখ দুইপাশে থাকে যাকে একটা বড় দিগন্ত পর্যন্ত তারা শিকারি বুঝতে পারে। অন্যদিকে মাংসাশী প্রাণীদের মধ্যে ধারালো দাতের জিন টিকে আছে কারন এটা মাংস কাটতে সাহায্য করে। সবই ন্যাচারাল সিলেকসনের জন্য হয়েছে।
৫। এক কোষী প্রাণীর জিন কপি এর এরর থেকে কি জিনে এ ধরণের নতুন এবং জটিল তথ্য ঢুকতে পারে?
একটা জিনিস বললে মনে হয় বিষয়টা ক্লিয়ার হয়ে যাবে। লাইফ আসলে কমপ্লেক্স কেমেস্টি বা রসায়নের অত্যন্ত জটিল একটানা প্রক্রিয়া। একটা সাধারন সালফারের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকে। যখন সেটা হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের সাথে মিলিত হয় তখন সেটা সালফিউরিক এসিড তৈরি করে আর সালফিউরিক এসিড যৌগ হিসেবে ভিন্নভাবে কাজ করে। আমাদের জিনোমও কেমিক্যাল যৌগ। যখন তার মধ্যে কোন পরিবর্তন আসে হোক সেটা খুবই ছোট মাত্রায় আমাদের বৈশিষ্ট্যকে পরিবর্তন করে। পরিবর্তন শুধুকে ইতিমধ্যে গঠিত জিনোমে থাকা মৌলগুলো একস্থান থেকে অন্য স্থানে অবস্থার পরিবর্তন হতে হবে এমন না। সেটা নতুন যৌগ যুক্ত হওয়াও হতে পারে, মুছে যাওয়াও হতে পারে, স্থানান্তরও হতে পারে।
একটা উদাহরন দেই। ধরুন আপনি পরিক্ষার হলে খুব দ্রুত রচনা লিখছেন। আর আপনি নির্ভুলতার দাবীদার নন। রচনায় আপনি বিভিন্ন রকম ভুল করতে পারেন। হতে পারে কোন শব্দ বাদ দিয়েছেন , হতে পারে নতুন কিছু কথা যোগ করা , বানান ভুল করা। প্রজননের সময় জিনোম কপি করাও অনেকটা এমনই । আশা করি বুঝতে পেরেছেন।
৭। একই সময়ে এই পৃথিবীতে এককোষী প্রাণী থেকে মানুষ পর্যন্ত সবাই তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে সেক্ষেত্রে কোন কোন প্রাণির আবার কিছুটা অতীতে দিকে যাওয়াটা স্বাভাবিক ছিলনা কি?
যেমনটা ৫ নং প্রশ্নের উত্তরে বলছিলাম। জিনোমে নতুন যৌগ আসতেও পারে আবার পুরানো যৌগ যেতেও পারে। জিনোম প্রতিনিয়ত লোপ পাচ্ছে বৃদ্ধি পাচ্ছে সাথে সাথে কিছু ইনফো যা আমাদের উন্নত করে যা ন্যাচারাল সিলেকশনে টিকে থাকে প্রসার পায়। । এ জন্যই আমরা এখন এপদের মত গাছে চড়ার ক্ষমতা রাখি না, মাছের মত পানিকে বাস করার ক্ষমতা রাখি না। কারন সেই জেনেটিক ইনফো যেগুলো এক সময় মৌলিক জিনোম ছিল এখন আমাদের মাঝে প্রতিনিধিত্ব করে না।
৮। পাখির পালক , মানুষের চোখ বা মানুষের মস্তিষ্কের মত এত জটিল জিনিস মিউটেশনের মাধ্যমে কিভাবে এমনি এমনি হওয়া সম্ভব ?
মস্তিষ্কের ব্যাপারে কিছু কথা পর্ব ২ তে বলার চেষ্টা করেছি। সেটা পরে থাকলে আশা করি বুঝতে পারবেন। পাখি আর মানুষের চোখের ব্যাপারে খুব সুন্দর করে এই ভিডিও তে বলা আছে। আশা করি এটা দেখলে আর দিধা থাকবে না।