রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলে আমাদের কৌতুহলী মনে অনেক প্রশ্ন উঁকি মারে। সব প্রশ্নের উত্তর আমরা পাই না।
খালি চোখে আমরা রাতের আকাশে তাকিয়ে থাকলে হাজার হাজার নক্ষত্র, গ্রহ দেখতে পারব। আমাদের নিজ সৌরজগতের অনেক গ্রহ যেমন শুক্র, মঙ্গল, শনি, বৃহস্পতি এগুলোকে আমরা দেখতে পাই। নক্ষত্রগুলো আমাদের সূর্যেরই মতোন। কোনো কোনো নক্ষত্র অনেক অনেক গুণ বড়, আবার কোনোটা আমাদের সূর্যের চেয়ে ছোট। আমাদের নিকটতম নক্ষত্রের নাম প্রক্সিমা সেন্টোরাই। আলো এক বছরে যতটা দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে এক আলোক বর্ষ বলে। প্রক্সিমা সেন্টোরাই থেকে আমাদের পৃথিবীর দূরত্ব প্রায় ৪.৩ আলোকবর্ষ। মানে আমাদের পৃথিবীতে প্রক্সিমা সেন্টোরাই থেকে আলো আসতে ৪.৩ আলোকবর্ষ সময় নেয়। রাতের আকাশে দৃশ্যমান তারকাগুলিকে একটা বন্ধনীতে আবদ্ধ মনে হয়। মনে হয় যেন কোন কালো পর্দার উপরে হীরা ফেলে রাখা হয়েছে যা অনেক দূর থেকে আলোকে প্রতিফলিত করছে।
আমাদের আকাশগঙ্গা ছায়াপথে (Milkyway Galaxy তে) এমন প্রায় ২২০ বিলিয়ন নক্ষত্র রয়েছে। আমেরিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডুইন হাবল দেখেয়েছিলেন যে আমাদের ছায়াপথের মতো আরো অনেক ছায়াপথ মহাবিশ্বে আছে। তিনি ছায়াপথগুলির ভিতরে দূরত্ব নির্ধারণ করেন। আসলে ছায়াপথগুলি এত দূরে অবস্থিত যে তাদেরকে দৃশ্যত স্থির বলে মনে হয়। সেই কারণে হাবল দূরত্ব মাপার জন্য পরোক্ষ পদ্ধতির ব্যবহার করেছিলেন। একটা তারকার আপাতদৃষ্ট উজ্জ্বলতা দুটি কারণের উপর নির্ভর করে থাকে , এক হলো কতটা আলো এর থেকে বিচ্ছুরিত হচ্ছে আর আমাদের থেকে তারকাটি কতটা দূরে অবস্থিত। কাছের তারকা গুলোর তাদের দৃশ্যমান ঔজ্জ্বল্য আর দূরত্ব মাপতে পারি। আর কোনো ছায়াপথের ঔজ্জ্বল্য জানা থাকলে আমরা সেটা মেপে তাদের দূরত্ব বের করতে পারি। হাবল নয়টি ছায়াপথের দূরত্ব এভাবে মাপেন। তারকাগুলো আমাদের কাছ থেকে এত দূরে যে আমাদের পক্ষে তাদের গঠন আর আকার দেখা সম্ভব নয়। তাহলে আমরা তারকাদের কীভাবে আলাদা করি?
আমরা জানি সূর্যের আলোকে প্রিজমের ভিতর দিয়ে বিশ্লেষণ করলে সাতটি রঙের পট্টি পাওয়া যায়। দূরবীক্ষণকে একটা তারকার অথবা ছায়াপথের দিকে নিশানা করা হয় তাহলে ঐ ভাবেই একটা তারকা অথবা ছায়াপথের আলোক বর্ণালী পর্যবেক্ষণ করা যায়। বিভিন্ন তারকার বর্ণালী বিভিন্ন, কিন্তু একটা বস্তুপিণ্ড উত্তাপে লাল বর্ণ হয়ে যখন দীপ্ত হয় তখন তা থেকে বিচ্ছুরিত আলোক দেখে বলা যায় তা থেকে তাপ বিকিরিত হচ্ছে। অনেক সময় পর্যবেক্ষণ কালে অনেক তারকার পর্যবেক্ষিত সব বর্ণালী উপস্থিত থাকে না। আমরা জানি প্রতিটি মৌলিক পদার্থ কয়েকটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ রঙের সেট শোষণ করে নেয়। তারকার বর্ণালীতে যে রং অনুপস্থিত তার সঙ্গে এই রঙগুলি মিলালে আমরা তারকার পরিমণ্ডলে কী কী মৌলিক উপদান আছে সেটা নির্ভুলভাবে বের করতে পারি। আমাদের নিজেদের ছায়া পথের তারকাগুলির ক্ষেত্রে যে রঙের সেট অনুপস্থিত, অন্য ছায়া পথের ক্ষেত্রেও সেই বিশিষ্ট রঙের সেট অনুপস্থিত। তাদের সব কটি ক্ষেত্রেই রঙগুলো বর্ণালীর লাল প্রান্তের দিকে বিচ্যুত এবং সেই বিচ্যুতির পরিমাণ একই। আলোর বিভিন্ন কম্পাঙ্ক বিভিন্ন। সর্বনিম্ন লালের দিকে আর সর্বোচ্চ নীলের দিকে। ধরা যাক স্থির দূরত্ব অবস্থিত তারকার মতো একটা আলোক উৎস এবং সেখান থেকে নির্দিষ্ট তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলো বের হচ্ছে। স্পষ্টতই আমরা সাধারণত যে তরঙ্গ পাই তার সাথে সেই উৎস থেকে বের হওয়া তরঙ্গ হবে অভিন্ন। ধরি উৎসটি আমাদের নিকটে আসছে, সুতরাং তরঙ্গ শীর্ষের আমাদের কাছে পৌঁছাতে যে সময় লাগবে, সেটা উৎস যখন স্থির ছিল তখন যে সময় লাগতো তার চেয়ে কম। অর্থাৎ তরঙ্গশীর্ষদ্বয়ের মধ্যবর্তী সময় হবে অল্প। প্রতি সেকেন্ডে আমাদের কাছে যে তরঙ্গ পৌঁছাবে, তার সংখ্যাটা তারকার স্থির অবস্থার তুলনায় বেশি হবে।
অনুরুপভাবে উৎস যদি আমাদের কাছ থকে দূরে চলে যেতো, তাহলে উলটো ঘটনা ঘটতো, মানে আমরা ক্ষুদ্রতম তরঙ্গ পেতাম। সুতরাং, আলোকের ক্ষেত্রে আমাদের কাছ থেকে দূরে অপসারিত তারকাগুলি থেকে নির্গত আলোক বর্ণালীর লাল প্রান্ত অভিমুখে বিচ্যুত হবে এবং আমাদের অভিমুখে যারা চলমান তাদের বর্ণালীতে থাকবে নীল অভিমুখে। কম্পাঙ্ক আর দ্রুতির মধ্যকার এই সম্পর্কটা ডপলার ক্রিয়া নামে পরিচিত। ছায়াপথের অস্তিত্ব প্রমাণের পর হাবল ছায়াপথ গুলির দূরত্ব তালিকা প্রস্তুত করে এবং তাদের বর্ণালী পর্যবেক্ষণ করেছেন। অনেকের ধারণা ছিল সে সময় যে ছায়াপথগুলি এলোমেলোভাবে বিক্ষিপ্ত বা চলমান। তাই অনেকে এটা ভেবে বসেছিলেন যে লাল আর নীল বিচ্যুতির মান সমান হবে। কিন্তু যখন দেখা গেল অধিকাংশ ছায়াপথ লাল বিচ্যুতি রয়েছে অর্থাৎ সবগুলি আমদের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে তখন অনেক বিজ্ঞানী বিস্মিত হয়েছিলেন। লাল বিচ্যুতির পরিমাণ বিক্ষিপ্ত নয়, বরং সে বিচ্যুতি আমাদের কাছ থেকে ছায়াপথের দূরত্বের সমানুপাতিক অর্থাৎ মহাবিশ্ব স্থির অবস্থায় নেই, চলমান।
এই পোস্ট টা অনেক ভাল লেগেছে|কিন্তু আমি প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই|দয়া করে জানাবেন কি প্ল্যাঙ্কের ধ্রুবক?