Internet.org – এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে সারা বিশ্বে ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলো ফেসবুক। জুলাই ৩০, ২০১৫ তারিখে এসে ফেসবুকের সিইও মার্ক জুকারবার্গ ঘোষণা দিলেন – তারা এমন একটা বিমান তৈরি করেছে, যা আকাশ থেকে লেজারের মাধ্যমে ইন্টারনেট কানেকশন পাঠাবে বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। বিমানটা চলবে সৌরশক্তিতে, কোনো মানুষ লাগবে না পাইলট হিসেবে। এই বিমানের নাম অ্যাকুইলা (Aquila).
একবার মাটি ছাড়লে এটা ৩ মাসের জন্য আকাশে ভেসে থাকতে পারবে। এটা উড়বে ৬০,০০০ ফুটের ওপর দিয়ে। অর্থাৎ, সাধারণ যাত্রীবাহী বিমান যে উচ্চতা দিয়ে ওড়ে, তার চেয়ে আরো অনেক ওপরে।
বিমানটার প্রস্থ অনেক বিশাল, বোয়িং ৭৩৭ জাম্বো জেটের মত। কিন্তু এটার ওজন অনেক কম, একটা প্রাইভেট কারের চেয়েও কম। এই এতো কম ওজনের রহস্য কী? রহস্যটা হচ্ছে এটার উপাদানের মধ্যে। এটা ৮৮ গ্রাম টি-৭০০ কার্বন ফাইবার দিয়ে তৈরি, যা অত্যন্ত পাতলা অবস্থাতেও অত্যন্ত উচ্চ দৃঢ়তা প্রদর্শন করে।
জুকারবার্গ তার ঘোষণার মধ্যে বলেছে, ওরা এই বিমানের পাশাপাশি লেজারের মাধ্যমে যোগাযোগের প্রযুক্তিতেও একটা অভাবনীয় সাফল্য লাভ করেছে। একটা নতুন লেজার পদ্ধতিতে ওরা সেকেন্ডে ১০ গিগাবিট তথ্য আদান-প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে। এটা পূর্বের সর্বোচ্চ প্রযুক্তির চেয়েও ১০ গুণ বেশি দ্রুত প্রযুক্তি। ঐ ৬০,০০০ ফুট (১০ মাইলের বেশি) উচ্চতা থেকেও আমেরিকান দশ পয়সা আকারের (বাংলাদেশের চার আনা কয়েনের সাইজের) যে কোনো যন্ত্রের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারবে।
বিশ্বের ১০% মানুষ এখনো এমন জায়গায় থাকে, যেখানে স্যাটেলাইট বা অন্য কোনো মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাথে যোগাযোগ করার কোনো উপায় নেই। এই অবস্থায় সম্পূর্ণ নতুন এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন এক নতুন দিগন্তের সূচনা করলো। প্রযুক্তির জগতের আরেক মহারথী Google সেই ২০০৮ সালেই এই ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলো, ওদের প্রজেক্টের নাম ছিলো Project Loon. ওরা চেয়েছিলো, বিশাল এক বেলুনের মাধ্যমে এই কাজটা সারতে। ২০১১ সালে কাজ শুরুও করেছিলো, এবং ২০১৩ সালে বেশ কিছু বেলুন উড়িয়েছিলো নিউজিল্যান্ডে। ওরা বেশ কিছু অপ্রত্যাশিত দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছিলো। ফেসবুক ২০১৫ এর জুলাইতে এসে, তাদের বিমানটা বানানো সম্পন্ন করেছে বলে ঘোষণা দিলো। জুকারবার্গ বললো, “শুনতে অনেকটা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর মতই মনে হচ্ছে। কিন্তু প্রায় সময়েই, সায়েন্স ফিকশন মানেই তো সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা বিজ্ঞান!
আমার কেন যেন শুধু বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলার কথা মনে পড়ছে। টেসলা লেজার, মেকানিকস, আর ইলেকট্রিসিটির জাদুকর ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, পুরো পৃথিবীকে এমন একটা প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। তার মৃত্যুর এখনো ১০০ বছরও পেরোয়নি। আমরা তার স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত হতে দেখছি আস্তে আস্তে। কী জাদুময় এক সময়ে আমাদের বসবাস!