আমাদের চারপাশের এই যে চিরচেনা প্রকৃতি,আমরা কি কখনো ভেবেছি এর সৃষ্টি রহস্য নিয়ে? মানুষ,পশু-পাখি,গাছপালা, সাগর, নদী, পাহাড় কিংবা নানান রকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এই সব কিছুই কিন্তু এই প্রকৃতিরই সৃষ্টি। তাই কেউ যদি প্রকৃতির এই সৃষ্টি রহস্য নিয়ে গবেষণা করতে যায়, তাহলে দেখবে প্রকৃতি তার সৃষ্টির ক্ষেত্রে সর্বদাই একটা নিয়মিত সজ্জা অনুসরণ করছে! প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় তাই এই নিয়মিত সজ্জা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ফিবোনাচি ক্রম
ইটালিয়ান গণিতবিদ ফিবোনাচি (Fibonacci) ত্রয়োদশ শতাব্দীতে “Liber Abaci” নামক গ্রন্থে একটি ধারা প্রকাশ করেন। ধারাটি এরকম – ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১………… (এভাবে চলতে থাকবে)। তিনি এটা প্রস্তাব করেছিলেন খরগোশের সন্তান উৎপাদনের হার গণনা করার জন্য, অবশ্যই সেখানে কিছু স্বীকার্য বা assumption ছিলো। এটা নিয়ে একটু পরে আসছি। যাই হোক, পরবর্তীতে অনেক বিজ্ঞানী তাদের বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে দেখান যে, প্রকৃতির নানা অংশে এই ক্রমটির উপস্থিতি খেয়াল করা যায়। যার দরুণ পরবর্তীতে ফরাসি গণিতবিদ অ্যাডওয়ার্ড লুকাস এই ক্রমটির নাম দেন “Fibonacci Sequence “। এখানে উল্লেখ্য যে, ষষ্ঠ শতাব্দী থেকেই ভারত উপমহাদেশে এই ক্রমটি প্রচলিত ছিলো।
ফিবোনাচি ক্রম গণিতের অন্যতম বিখ্যাত ধারাগুলোর মধ্যে একটা। এই ক্রমের প্রথম পদ ০ এবং দ্বিতীয় পদ ১। ফিবোনাচি ক্রমের যে কোনো পদ তার ঠিক পূর্ববর্তী দুটি পদের সমষ্টির সমান হয়। সুতরাং তৃতীয় পদটি প্রথম পদ ০ ও দ্বিতীয় পদ ১ এর যোগফল ১ এর সমান। আবার চতু্র্থ পদটি দ্বিতীয় পদ ১ ও তৃতীয় পদ ১ এর যোগফল ২ এর সমান। সুতরাং ফিবোনাচি ক্রমটি দাঁড়ায় ০,১,১, ২,৩,৫,৮,১৩,২১…যা আস্তে আস্তে যোগ করতে করতেই সামনের দিকে এগিয়ে চলে। ফিবোনাচি ক্রমটিকে আরো সহজ করে বুঝানোর জন্য, এটিকে আমরা একটা ফাংশন হিসেবে কল্পনা করতে পারি।
n যদি যেকোনো স্বাভাবিক সংখ্যা (Natural Number) হয়, তবে ফিবোনক্কি ক্রমের ফাংশনটি দাঁড়ায় –
Fn+2=Fn+1 + Fn.
সুতরাং যদি n=1 হয় ,তবে ফাংশনটি দাঁড়াবে
F3=F2+F1
যা প্রকাশ করে প্রথম ও দ্বিতীয় ফিবোনাচি পদ যোগকরলে আমরা তৃতীয় পদটি পাবো।
ফিবোনাচি’র খরগোশ ধাঁধা
খরগোশের সন্তান উৎপাদনের হার নিয়ে ফিবোনাচি একটি ধাঁধা প্রকাশ করেন। ধাঁধাটি এ রকম ছিল,
“ধরো, সদ্য জন্মানো দুটি স্ত্রী -পুরুষ খরগোশ কে মাঠে ছেড়ে দেয়া হল। এক মাস পর তারা দুজনই যৌনমিলনের জন্য উপযুক্ত হয় এবং তার পরবর্তী মাসে স্ত্রী খরগোশটি নতুন আরেক জোড়া খরগোশের জন্ম দেয়।যদি ধরা হয় গবেষণার কাজের ব্যবহৃত খরগোশ গুলোর কখনো মৃত্যু হবে না এবং স্ত্রী খরগোশ গুলো যদি জন্মের ঠিক দু মাস পর হতে, প্রত্যেক মাসে সর্বদা এক জোড়া খরগোশের জন্ম দেয়, তবে এক বছর পরে খরগোশের জোড়ার সংখ্যা কত হবে?”
ধাঁধাটির উত্তর আসলে কেমন হবে তার ধারণা কিন্তু প্রশ্নেই বলে দেয়া হয়েছে। ব্যাপার টাকে এভাবে চিন্তা করলে দাঁড়ায়-
- একদম শুরুতে, খরগোশের জোড়ার সংখ্যা এক।
- এক মাস পর, খরগোশ দুটি মিলিত হবে (এখনো বাচ্চা দেয়নি)। খরগোশের জোড়ার সংখ্যা এখনো এক।
- দু মাস পর, স্ত্রী খরগোশ এক জোড়া খরগোশের জন্ম দিবে। সুতরাং, এখন খরগোশের জোড়ার সংখ্যা দুই।
- তিন মাস পর, প্রথম স্ত্রীটি আবার একজোড়া খরগোশের জন্ম দিবে। অতএব মোট খরগোশের জোড়ার সংখ্যা তিন।
- চার মাস পর, প্রথম স্ত্রী খরগোশের পাশাপাশি, দুমাস আগে জন্মানো খরগোশটিও নতুন এক জোড়া খরগোশের জন্ম দিবে।সুতরাং চার মাস পর খরগোশের জোড়ার সংখ্যা দাঁড়াবে পাঁচে।
সুতরাং সেই মাঠে প্রত্যেক মাসে খরগোশের জোড়ার সংখ্যা দাঁড়াবে ১, ১, ২, ৩, ৫, ৮, ১৩, ২১ …. অর্থাৎ, ফিবোনাচি ক্রম!
ফিবোনাচি ক্রম ও সোনালি অনুপাত
এবার গোল্ডেন রেশিও বা সোনালি অনুপাত নিয়ে কিছু বলা যাক। এটি দুটি সংখ্যার অনুপাত মাত্র, কিন্তু এই সংখ্যার উপস্থিতি পৃথিবীতে সম্ভবত সবথেকে আকর্ষণীয়! পৃথিবীতে আর কোনো সংখ্যা নিয়ে এতো গবেষণা হয়নি, যেটা গোল্ডেন রেশিও নিয়ে হয়েছে! গোল্ডেন রেশিও কে Φ (Phi) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। Φ (Phi) বলতে গেলে একটি দুষ্টু সংখ্যা। অন্যদের থেকে বেশ আলাদা। অমূলদ সংখ্যাগুলো আচরণের দিক থেকে একটু দুষ্টু হয় আরকি! তাই Φ (Phi) এর মান ১.৬১৮০৩৩৯৮৮…… এর শেষ খুঁজতে যাওয়া আহাম্মকি ছাড়া আর কিছুই নয়!
গণিতবিদ ইউক্লিড তাঁর, ‘এলিমেন্টাস’ গ্রন্থে প্রথম Φ (Phi) এর জ্যামিতিক ব্যাখ্যা দেন। তিনি একটি রেখার উপর এমন একটি বিন্দু কল্পনা করেন, যাতে রেখাটি এমন ভাবে বিভক্ত হয় যে, ছোট অংশ ও বড় অংশের অনুপাত এবং বড় অংশ ও সম্পূর্ণ অংশের অনুপাত সর্বদা সমান। যার মান সর্বদা Φ ( Phi) এর মানের সমান!
এখন যদি ছোট অংশের দৈর্ঘ্যকে ১ এবং বড় অংশ কে φ ধরা হয়, তবে সমীকরণটি দাঁড়াবে –
১/φ=φ/(১+φ)
সুতরাং φ2 – φ – ১= 0
Quadratic formula অনুসরণ করে φ এর মান বের করতে গেলে পাই –
φ=(১+√৫)/২ =১.৬১৮০৩৩৯…..
আবার সমীকরণ টিকে যদি উল্টানো হয়,তাহলে আর একটি অদ্ভুত জিনিস Golden Ratio এর ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়। ব্যাপারটা একটা উদাহরণ দিলেই বুঝতে পারবেন। যেমন গোল্ডেন রেশিও এর মত আর একটি বিখ্যাত দুষ্টু সংখ্যা হল পাই( π)। যাকেও ২২/৭ ভগ্নাংশ আকারে লেখা সম্ভব। কিন্তু phi কে কখনোই ভগ্নাংশ আকারে লেখা সম্ভব নয়। যেটা সম্ভব, সেটা হল চলমান ভগ্নাংশ(Continuous Fraction) আকারে লেখা।
তাই বলা যায় φ (Phi) বা Golden Ratio অন্যান্য অমূলদ সংখ্যা হতে একটু বেশিই অমূলদ!
ফিবোনাচি ক্রম ও সোনালি অনুপাতের সম্পর্ক
সোনালি অনুপাতকে ফিবোনাচি ক্রমেরই একটা বিশেষ অংশ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। ব্যাপারটা এমন, যদি পর পর দুটি ফিবোনাচি সংখ্যার অনুপাত নেয়া হয়, তবে তার মান ক্রমান্বয়ে সোনালি অনুপাতের দিকেই যেতে থাকে এবং খুব দ্রুতই এই মান পুরোপুরি φ (Phi )এর মানের সমান হয়! যেমন, 55/34 = 1.617647 অথবা সংক্ষেপে 1.618.
ফিবোনাচি আয়তক্ষেত্র ও গোল্ডেন স্পাইরাল
এবার দেখা যাক জ্যামিতিক ভাবে ফিবোনাচি ক্রম ও গোল্ডেন রেশিও এর মাঝে কোন সম্পর্ক আছে কিনা। এজন্য আমরা প্রতি ক্ষেত্রে ফিবোনাচি ক্রমের পদ অনুসারে একটির পিঠে একটি করে বর্গ আঁকব। অর্থ্যাৎ প্রথমে ১ বর্গ একক, তারপর এর পিঠে ২ বর্গ একক, তারপর এর পিঠে ৩,তারপর ক্রমান্বয়ে ৫, ৮, ১৩, ২১ বর্গএকক। এভাবে আঁকতে থাকলে আমরা যেখানেই থামি না কেন, তা সব সময়ই একটি আয়তক্ষেত্র গঠন করবে। এই বিশেষ আয়তক্ষেত্রকে বলে ফিবোনাচি আয়তক্ষেত্র। যাকে অনেকে Golden Rectangle বলে। এই আয়তক্ষেত্রের বিশেষত্ব হল এর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত গোল্ডেন রেশিও φ ( Phi) এর সমান। এখন যদি এই আয়তক্ষেত্রের কর্ণগুলো যুক্ত করা হয়, তবে একটি spiral বা প্যাঁচানো সিঁড়ির আকৃতি পাওয়া যাবে। যাকে বলা হয় Golden spiral এবং এই spiral এর বক্রতার সাথেও φ( Phi) সম্পর্ক রয়েছে। ফিবোনাচি আয়তক্ষেত্রের মাঝে ছোট ছোট যে বর্গক্ষেত্রগুলো আছে, সেখানে প্রত্যেক বর্গে spiral গুলোর দৈর্ঘ্য, ওই স্পাইরাল যে বৃত্তের অংশ তার এক চতুর্থাংশ! এখন প্রত্যেক বর্গে spiral গুলোর কেন্দ্র হতে একটি করে সরলরেখা টানা হলে সেটি প্রতিটি বর্গক্ষেত্রের জন্য φ (Phi) গুণে বৃদ্ধি পেতে থাকে। সুতরাং, একটা গোল্ডেন স্পাইরালের এক চতুর্থাংশে দুটি বিন্দু φ (phi) দূরত্বে অবস্থান করে!
যারা ইতোমধ্যে গণিতের এতো কথা শুনে বিরক্ত, তাদের আর বিরক্ত করছি না। কারণ, এখন বাস্তবতার সাথে এদের মিল কোথায়, সেটা নিয়েই আলোচনা করব।
আপনার চারপাশে যে গাছগাছালিগুলো আছে, কখনো কি তার বেড়ে ওঠার ধরন নিয়ে ভেবে দেখেছেন? একটু গভীরভাবে দেখলেই বুঝতে পারবেন এর কাণ্ড, শাখা-প্রশাখা, এমনকি পাতাগুলো কোন শাখায় কত সংখ্যক, কিভাবে বিন্যস্ত হবে, তা ফিবোনাচি ক্রম মেনে চলে।
যে ফুল নিয়ে এত গুণকীর্তন কাব্যে আর সাহিত্যে – তার সৃষ্টি রহস্য নিয়ে কিংবা তার প্রকাশ নিয়ে একটু চিন্তা করলেই দেখবেন, এদের মাঝেও প্রকৃতির ভাষা গণিতকে খুঁজে পাবেন! ফুলের পাপড়ি সংখ্যা গুণেছেন কি কখনো? গুণলে দেখবেন এখানেও ফিবোনাচি সংখ্যা আছে। ধারণা করা হয়, এই ক্রমে সজ্জিত হলে ফুলগুলো সর্বোচ্চ পরিমাণ সূর্যালোক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো পেয়ে থাকে কিছু উদাহরণ দিলেই বুঝতে পারবেন-
- একটি পাপড়িযুক্ত ফুলঃ calla Lilly
- দুই পাপড়িযুক্ত ফুলঃ Asiatic Dayflower
- তিন পাপড়িযুক্ত ফুলঃ পলাশ, Flower,Mariposa Lily,Tiger Flower
- পাঁচ পাপড়িযুক্ত ফুলঃ জবা,ধুতুরা, হাসনাহেনা, কামিনী, চামেলি
- আট পাপড়িযুক্ত ফুলঃBlue Clematis, Delphiniums
- তের পাপড়িযুক্ত ফুলঃ Ragwort, Corn marigold, cineraria.
- একুশ পাপড়িযুক্ত ফুলঃ Aster, Black-eyed susan, Chicory
ফিবোনাচি আয়তক্ষেত্র আলোচনায় যে Golden spiral পেয়েছিলাম, তা মনে আছে নিশ্চয়ই। শামুকের খোলস, শঙ্খ, ঝিনুক, কিংবা নটিলাসের খোলস এই Golden spiral এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
ছায়া পথ The Milky Way এর চিত্র দেখলেই বুঝাতে পারবেন যে, এর অনেক গুলো সর্পিলাকার বাহু আছে। যেগুলো প্রত্যেকে পরস্পরের সাথে ১২ ডিগ্রি কোণ করে আনত। ছায়াপথের এই সর্পিলাকার বাহু Golden spiral এর সাথে একদম সামঞ্জস্যপূর্ণ!
এমনকি বঙ্গোপসাগরে মাঝে মধ্যেই যে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়, সেগুলোর বাহুও Golden spiral এর আকার ধারণ করেই ঘুরতে থাকে!
আপনারা সবাই পেন্টাকল দেখেছেন, যেটাকে আমরা আকাশের তারার চিহ্ন হিসেবে অথবা বাচ্চাদের পরীক্ষার খাতায় “সেরা” বোঝাতে ব্যবহার করি। অনেক ধর্মে এই প্রতীকটিকে অনেক পবিত্র মানা হয়। এটার মাঝেও গোল্ডেন রেশিও উপস্থিত। চিত্রটি একটু ভালো করে খেয়াল করলেই আপনারা বুঝতে পারবেন।
a/b= ১.৬১৮……
b/c=১.৬১৮……
c/d=১.৬১৮……
মানবদেহে গোল্ডেন রেশিও এর উপস্থিতি
লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চিকে (১৪৫২-১৫১৯) চেনে না, এমন মানুষ কমই পাওয়া যাবে। ধারণা করা হয়,তার শিল্প-কর্মে সবচেয়ে বেশি Golden Ratio এর উপস্থিতি পাওয়া যায়। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি মানব শরীরের ভিতরে এবং বাইরে Golden ratio এর উপস্থিতি বুঝতে পেরেছিলেন। এমনকি ডাক্তারদের চেম্বারে আমরা যে সব মানুষের অঙ্গের ছবি দেখে থাকি সেগুলো প্রথম ভিঞ্চিই ডিজাইন করেছিলেন।
এবার আসা যাক, ভিঞ্চি সাহেব কিভাবে মানবদেহে Golden Ratio এর উপস্থিতি বুঝতে পেরেছিলেন, সেই আলোচনায়। নারী বা পুরুষ সকল বয়সের মানুষের ক্ষেত্রেই, দেহের সম্পূর্ণ অংশের দৈর্ঘ্য ও নাভির নিচ থেকে বাকি অংশের দৈর্ঘ্যের অনুপাত φ (Phi) এর সমান। আবার কাঁধ থেকে হাঁটু পর্যন্ত এবং হাঁটু থেকে পায়ের আঙ্গুলের মাথা পর্যন্ত দূরত্বের অনুপাতও ১.৬১৮……(Phi)।মানুষের বাহু (বাইসেপ্স) এর সাথে সম্পূর্ণ হাত এর অনুপাতের মান হলো ১.৬১৮……(φ)। মানুষের আঙ্গুলের অগ্রভাগ থেকে কনুই এর দৈর্ঘ্য এবং কবজি থেকে কনুই এর দৈর্ঘ্যের অনুপাত ১.৬১৮……( φ)। মানুষের মুখমণ্ডলের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১.৬১৮……(φ)। ঠোঁটের দৈর্ঘ্য ও নাকের প্রস্থের অনুপাত , চোখের দুই প্রান্তের দূরত্বও চুল থেকে চোখের মনির দূরত্বও ১.৬১৮……( φ) ।সারা মুখমন্ডলের সবকিছুতে, শরীরের গিঁটে গিঁটে, মেরুদণ্ডের অভ্যন্তরের অঙ্গে-প্রত্যঙ্গে সবখানে এই φ(Phi) খুঁজে পাওয়া যাবে। গোটা মানবদেহে প্রায় তিন শতাধিক Golden Ratio ( φ) খুঁজে পাওয়া যায়। মুখমণ্ডলেই পাওয়া যায় ৩০টিরও বেশি! চিত্রগুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন, মানুষের চেহারায় কিভাবে Golden Rectangle এবং Golden Spiral পুরো খাপে খাপে বসে যায় ।
এছাড়াও লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি (১৪৫২-১৫১৯) তাঁর বহু চিত্র অঙ্কনের ক্ষেত্রেও সোনালি অনুপাত ব্যবহার করেছেন। এর মধ্যে ভিট্রুভিয়ান ম্যান, দ্য লাস্ট সাপার, ও মোনালিসার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যার জন্য হয়তো মোনালিসার সেই মায়া জড়ানো মুচকি হাসি মানুষকে এখনো তাড়া করে ফেরে!
এছাড়া মাইকেল এঞ্জেলোর ‘দ্য ক্রিয়েশন অফ অ্যাডাম’, রাফায়েলের ‘দ্য স্কুল অফ এথেন্স’, বত্তিচেল্লির ‘দ্য বার্থ অফ ভিনাস’, সালভাদর দালির ‘দ্য স্যাক্রামেন্ট অফ দি লাস্ট সাপার’- ইত্যাদি বিখ্যাত সব চিত্রকর্মে গোল্ডেন রেশিওর ব্যবহার দেখা যায় ।
এবার স্থাপত্য শিল্পে φ(Phi) এর উপস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা যাক।
মিসরের পিরামিডে, আগ্রার তাজমহলে, ফ্রান্সের আইফেল টাওয়ারে , নটরডেমে, পারথেননে, ইউনাইটেড নেশন বিল্ডিং সহ আরও অজস্র স্থাপত্যে φ ( Phi )ব্যবহৃত হয়েছে। φ(Phi) থাকার কারণেই এগুলো এত বেশি দৃষ্টিনন্দন। নিচে কয়েকটি নমুনাঃ
সঙ্গীতের বিভিন্ন নোটের ক্ষেত্রেও φ(Phi) বিদ্যমান। ভায়োলিনসহ আরো অনেক বাদ্যযন্ত্র বানানো হয়েছে φ(Phi) এর সাহায্য নিয়েই!
এবার দেখা যাক, কিছু বিখ্যাত কোম্পানির লোগোতে কী করে φ( phi) কে কাজে লাগানো হয়েছে ।
ফিবোনাচি ক্রম আর Golden Ratio নিয়ে এতো আলোচনা করার উদ্দেশ্যই ছিলো প্রকৃতিতে গণিতের উপস্থিতি ও এর সৌন্দর্য্য তুলে ধরা। গণিত হচ্ছে পুরো বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের ভাষা। এই ভাষার সার্বজনীনতা প্রকৃতি নিজেই নানান রূপে, নানান বৈচিত্র্যে প্রকাশ করে চলেছে। যার সকল স্বাভাবিক প্রকাশে আছে ফিবোনাচি ক্রম আর চরম সৌন্দর্য্যের পিছনে রয়েছে গোল্ডেন রেশিও!
তথ্য উৎস:
https://en.wikipedia.org/wiki/Golden_ratio#History
http://www.maths.surrey.ac.uk/hosted-sites/R.Knott/Fibonacci/fibnat.html
https://en.wikipedia.org/wiki/Fibonacci
http://mathworld.wolfram.com/GoldenRatio.html
দারুণ লিখেছেন! অনেক নতুন কিছু জানলাম! ধন্যবাদ!
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার লেখাটি ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্য