যৌথভাবে লিখেছেনঃ নির্ঝর রুথ ঘোষ এবং রিজওয়ানুর রহমান প্রিন্স
আমরা সবাই কমবেশি প্রিন্টেড কাপড় পছন্দ করি, কিনি, পরি। কিন্তু কখনও কি ভেবেছি, এই প্রিন্ট করার প্রক্রিয়া কতোটা জটিল? ঠিক জটিল নয়, বলা চলে ঘোরপ্যাঁচওয়ালা। কারণ অনেকগুলো ধাপ একের পর এক সম্পন্ন হয়ে তৈরি করে এক একটা প্রিন্টেড ফেব্রিক।
খেয়াল করলে দেখবেন, আপনার সব জামায় কিন্তু একই ধরনের (Type) প্রিন্ট ব্যবহার করা হয়নি। যেমন, কমলা রঙের একটা জামার পুরোটা জুড়ে হয়ত সবুজ রঙের পাতার ছাপ মারা আছে।
আবার একটা কালো রঙের টিশার্টের ঠিক মাঝ বরাবর হয়ত আছে ব্যাটম্যান বা হাল্কের ছবির ছাপ।
এই দুই ধরনের প্রিন্ট পরস্পর আলাদা। এদের নাম যেমন আলাদা, তেমনি প্রয়োগ পদ্ধতিও আলাদা। সবুজ পাতার যে প্রিন্টটা কমলা রঙের জামার পুরোটা জুড়ে আছে, তাকে আমরা বলতে পারি অলওভার প্রিন্ট (All over print)। আর কালো রঙের টিশার্টের শুধু মাঝখানে যে প্রিন্ট আছে, সেটা হতে পারে “রাবার প্রিন্ট (Rubber print)/পিগমেন্ট প্রিন্ট (Pigment print)” ইত্যাদি।
[আপনার কিউরিয়াস মাইন্ড নিশ্চয় ওয়ান্টস টু নো, হঠাৎ করে আমরা এত প্রিন্ট নিয়ে পড়লাম কেন? ব্যাপার হচ্ছে, কিছুদিন আগে আমি (নির্ঝর) একটা প্রিন্ট ফ্যাক্টরিতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে অলওভার প্রিন্ট করার পদ্ধতি দেখে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে, নতুন অভিজ্ঞতাকে টাটকা টাটকা বিতরণ না করা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছিলাম না। অবশ্য আমি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার নই, টেক্সটাইলের উপর নন-একাডেমিক কোনো পড়াশোনাও নেই। তাই বস্ত্র প্রকৌশলী রিজওয়ানুর রহমান প্রিন্সকে পাকড়াও করেছিলাম যৌথভাবে এই ছবি ব্লগটা লেখার জন্য। প্রিন্স আপনাদের জন্য অতি সরল ভাষায় বিভিন্ন পয়েন্ট ব্যাখ্যা করেছেন। ফলে লেখাটা হয়েছে সুস্বাদু আর সমৃদ্ধ। তার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই]।
তো শুরু করি!
প্রথম কথা
সাদা বাংলায় ফেব্রিক মানে “কাপড়”। কীভাবে একটা ফেব্রিককে নানা রঙে রাঙানো হয়, সেটা টেক্সটাইল সেক্টর বা বস্ত্রশিল্পের বি-শা-ল জগতের একটা ছোট্ট অংশ মাত্র। এই অংশটা পরিচালনা করে থাকে প্রিন্টিং ডিপার্টমেন্ট। আবার এই অংশেরও অত্যন্ত ছোট একটা অংশ নিয়ে আমাদের আজকের আলেখ্যানুষ্ঠান। লেখাটার মাঝে মাঝে কিছু টেকনিক্যাল ব্যাপার পেশ করা হয়েছে। তাতে লেখার কলেবর খানিকটা বেড়ে গেলেও পুরো প্রক্রিয়া মনের চোখে ঝালাই করে নিতে ব্যাপারগুলো সহায়ক হবে।
টেক্সটাইল প্রিন্টিং এবং প্রিন্টিং মেশিন
প্রথমে টেক্সটাইল ফেব্রিক প্রিন্টিং সম্পর্কে কিছু বলে নেওয়া দরকার।
বস্ত্রশিল্পের জগতে বহু পদ্ধতিতে প্রিন্টিং হতে পারে। প্রধান কয়েকটা পদ্ধতির নাম হলোঃ
হ্যান্ড ব্লক প্রিন্টিং
বাসা বাড়িতে কিংবা ক্ষুদ্র কুটিরশিল্পে এই পদ্ধতিতে কাপড় প্রিন্ট করা হয়। এটা অনেকটা কাগজের উপরে সিল দিয়ে ছাপ মারার মতো। একটা কাঠের ব্লকে ডিজাইন করা থাকে। সেই ব্লকে রঙ মাখিয়ে পরে সেটা কাপড়ের উপর চাপ দিয়ে ধরে ছাপ মারা হয়। অনেক সময় স্পঞ্জ কেটেও ব্লক তৈরি করে নেওয়া যায়। এতে সুবিধা হলো, স্পঞ্জের উপর আপনি নিজের ইচ্ছেমত ডিজাইন করে সে অনুযায়ী নিজেই কেটে নিতে পারবেন। আর ব্লক দিয়ে জামায় ডিজাইন করাটা অনেক মজার একটা বিষয়।
স্টেন্সিল প্রিন্টিং
একটা খুব লম্বা কাগজের শিটে কাঁচি বা ব্লেড দিয়ে কেটে ডিজাইন করা হয়। পরে সেই শিট ফেব্রিকের উপরে বিছিয়ে তাতে দেয়াল রঙ করার মতো ব্রাশ দিয়ে রঙ ঘষতে থাকা হয়। ডিজাইনের কাটা অংশ দিয়ে রঙ লাগে কাপড়ে। আর বাকি রঙ লেপ্টে থাকে কাগজের গায়। পরে শিটটা সরিয়ে নিলেই কাপড়ের গায়ের মূল নকশাটা বেরিয়ে আসে। পাইকারি হারে রঙ ঘষা হয় বিধায় অনেক রঙ নষ্ট হয় এ পদ্ধতিতে (কাগজের গায়েও অনেক রঙ লেগে থাকে, যা পুরোপুরি অকেজো)। ফলে ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহারের উপযোগী নয় এই পদ্ধতি।
ডিজিটাল টেক্সটাইল প্রিন্টিং
কম্পিউটারের সাথে ইংকজেট প্রিন্টার দেখেছেন? এটাও তাই। তবে আকারে অনেক বড়। কম্পিউটারে ইনপুট দেয়া ডিজাইন অনুযায়ী প্রিন্টারটার কার্টিজ ফেব্রিকের নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে নির্দিষ্টি রঙ ছাড়তে থাকে।
সিলিন্ডার প্রিন্টিং
এটা বেশ জটিল একটা প্রক্রিয়া। অতি সহজ ভাষায় বলতে গেলে, স্টিল সিলিন্ডারের উপরের ইলেক্ট্রোপ্লেটিং পদ্ধতির মাধ্যমে কপারের স্তর তৈরি করা হয়। পরে সেই কপারের স্তরে লেজার দিয়ে ডিজাইন খোদাই করা হয়। পরে সেই সিলিন্ডারগুলো মেশিনে সেট করা হয়। কাপড় সিলিন্ডারের মাঝ দিয়ে যাবার সময় সেই খোদাই করা অংশগুলোর থেকে কাপড় রঙ নিয়ে নেয় আর নকশা তৈরি হয়। এই পদ্ধতিতে যে কোনো ডিজাইন তৈরি করা সম্ভব। এদের উৎপাদন ক্ষমতাও অত্যধিক হয়ে থাকে।
ডিসচার্জ প্রিন্টিং
এটা একটু ব্যতিক্রমী পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে পুরো কাপড়টাই ডাই (Dye) বা রঙ করে ফেলা হয়। পরে ডিসচার্জিং কেমিক্যাল ব্যবহার করে কাপড়ের নির্দিষ্ট জায়গা হতে ডিজাইন অনুযায়ী রঙ তুলে ফেলা হয়। ফলে রঙ তোলা জায়গাটায় একটা ডিজাইন তৈরি হয়ে যায়। অর্থাৎ অন্যান্য পদ্ধতিতে যেখানে রঙ লাগিয়ে কাপড় প্রিন্ট করে, সেখানে এই পদ্ধতিতে কাপড় হতে রঙ তুলে ফেলে কাপড় প্রিন্ট করা হয়। রঙ তুলে ফেলা অঞ্চলে সাদা ডিজাইন তৈরি হয়।
স্ক্রিন প্রিন্টিং
সর্বাধিক প্রচলিত পদ্ধতি। টেক্সটাইল প্রিন্টিং ইন্ডাস্ট্রিগুলোর অধিকাংশই এই পদ্ধতি অনুসরণ করে। স্ক্রিন প্রিন্টিংয়ে থাকে একটা পর্দার মতো জিনিস, যেটাকে বলা হয় মেশ (Mesh)। এই মেশের একপাশে পুরোটা জুড়ে লাগানো হয় ইমালশন। এই ইমালশন ভেদ করে মেশের এক পাশ হতে আরেক পাশে রঙ যেতে পারে না। পরে এই মেশের কিছু জায়গা হতে ইমালশন উঠিয়ে ফেলা হয়। ঐ ইমালশন উঠিয়ে ফেলা জায়গা দিয়েই রঙ মেশের ঐপারে গিয়ে কাপড়ে লাগতে পারে। বুঝাই যাচ্ছে, ইমালশন উঠানোর পরে মেশের সেই জায়গাটা আমাদের প্রত্যাশিত ডিজাইনের মতো দেখাবে।
এই মেশটা একটা কাঠের ফ্রেমে টানটান করে লাগানো থাকে। এই ফ্রেমটাই হচ্ছে স্ক্রিন, আর এটার নামেই পদ্ধতিটার নামকরণ। হয়ে গেলো স্ক্রিন প্রিন্টিংয়ের প্রাথমিক প্রস্তুতি। এবার স্ক্রিনটাকে কাপড়ের উপরে রেখে সেটায় পেস্টের মতো থকথকে রঙ ঢালা হয়। তারপর একটা রাবারের স্কুইজার দিয়ে [এটাকে বলা হয় ‘স্কুইজি (Squeegee)’] মেশের বিপরীতে বল প্রয়োগ করে পেস্টটাকে একবার বা দুইবার করে স্ক্রিনের এমাথা-ওমাথা ঘষা হয়। মেশের ডিজাইন করা (ইমালশন উঠানো) অংশ দিয়ে রঙ বেরিয়ে লাগে কাপড়ে। ব্যস, হয়ে গেলো স্ক্রিন প্রিন্টিং!
এই স্ক্রিন প্রিন্টিংটাই আমরা আজকে দেখবো আমাদের এই আর্টিকেলে। তবে সেটা উপরের ছবির মতো মানুষের হাত দিয়ে হচ্ছে না। হচ্ছে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় মেশিনে। তবে বলে রাখি, স্ক্রিন প্রিন্টিং কিন্তু আবার কয়েক প্রকারের হতে পারে। তার মধ্যে দুটো হলোঃ
ক) রোটারি স্ক্রিন প্রিন্টিং – ছবি দেখলেই বুঝবেন। রিজার্ভার হতে রোলারে রঙ সাপ্লাই দেয়া হয়। রোলারের স্ক্রিনে আগেই ডিজাইন অনুযায়ী ইমালশন উঠানো থাকে। প্রতিটা রোলারের ভেতরে থাকে আরেকটা ‘স্কুইজি রোলার’। সেটার চাপে স্ক্রিন রোলারের ভেতরে থাকা রঙ বেরিয়ে এসে কাপড়ে লাগে। রোলারগুলো এগিয়ে-পিছিয়ে থাকে কাপড়ের নির্দিষ্ট অংশে ডিজাইন অনুযায়ী রঙ পৌঁছে দেবার জন্যে। সবগুলো রোলারের রঙ মিলে একটা সম্পূর্ণ নকশা তৈরি হয়।
খ) ফ্ল্যাট বেড স্ক্রিন প্রিন্টিং – উপরে বর্ণিত চারকোণা স্ক্রিনগুলোই এখানে ব্যবহৃত হয়। ব্যাপারটা ঘটে পুরোপুরি মেশিনে।
আমরা মূলত এই ফ্ল্যাটবেড স্ক্রিন প্রিন্টিংটাই আজ দেখবো।
চলুন, শুরু করা যাক।
বিশাল এই মেশিনের প্রথমাংশে আছে প্রিন্ট পদ্ধতি শুরু করার কারিকুরি। এখানে অনেকগুলো রড আকৃতির অবয়বের ভেতর দিয়ে কাপড় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এগুলো যখন রোলিং করে (ঘুরতে থাকে), তখন কাপড় একটু একটু করে এগিয়ে যায় পরের ধাপে। এটাকে বলে ফিডিং (Feeding) মেকানিজম।
পরের ধাপে আছে অনেকগুলো স্ক্রিন। এই স্ক্রিনের মধ্যেই প্রিন্টের ডিজাইন বা নকশা কাটা থাকে। স্ক্রিনের উপর রঙ ঢালা হয়। তারপর যখন কাপড় স্ক্রিনের তলে এসে কয়েক মুহূর্তের জন্য থামে, তখন স্ক্রিনটা কাপড়ের উপর নেমে আসে আর স্ক্রিনের সাথে সংযুক্ত স্কুইজি ঢেলে রাখা রঙের উপরে চাপ দেয়। ফলে চাপ খেয়ে স্ক্রিনের ডিজাইন করা ইমালশনবিহীন অঞ্চলের মধ্য দিয়ে রঙ বের হয়ে কাপড়ে লেগে যায়।
যে মেশিনের ছবি এখানে দেখছেন, এখানে মোট আটটা স্ক্রিন ব্যবহার করা যায়। তার মানে একই সময়ে আপনি কাপড়ে আটটা রঙ দিয়ে আটটা নকশার ছাপ মারতে পারবেন।
যন্ত্রের শেষ প্রান্তেও রড আকৃতির অবয়ব আছে। ছাপ মারা শেষ হলে কাপড় এই রডের ভেতর দিয়ে অটো ইস্ত্রি হয়ে বেরিয়ে এসে মেঝেতে স্তূপাকারে জমতে থাকে। এটাকে বলে ‘ডেলিভারি মেকানিজম’। এরপর আরও কিছু প্রক্রিয়া শেষে কাপড়টা গার্মেন্টস তৈরি করার জন্য উপযুক্ত হয়।
বিভিন্ন ধাপের সচিত্র বর্ণনা
১) একদম প্রথমে দেখা গেলো যে, একটা ট্রে থেকে একরঙা কাপড় (Solid colored fabric) সেট করা হচ্ছে একটা প্রিন্টিং মেশিনের মধ্যে। “সেট করা” মানে, ভাঁজ খুলে টানটান করে বিছিয়ে দেওয়া। একরঙা কাপড়ের রঙটাকে বলে বেইস কালার (Base Color)। কারণ এই রঙটা থাকে ভিত্তি হিসেবে, আর এর উপর ছাপ মারা হয় অন্যান্য রঙের। এই একরঙা থান কাপড়টিকে যেভাবে রাঙানো হয়, সেই প্রক্রিয়াকে প্রিন্টিং বলে না। বরং এর গালভরা নামটা হলো “ডাইং (Dyeing)”।
এই ডাইং অংশটা প্রিন্টিং প্রসেস হতে প্রায় আলাদা এবং বলা যায় ফেব্রিক উৎপাদনের ‘স্ট্যান্ড অ্যালোন’ একটা ডিপার্টমেন্ট। সাধারণত “কটন কাপড়” যখন বোনা হয়, তখন কটনের প্রাকৃতিক রঙের কারণে কাপড়ের রঙ দেখতে হয় ক্রিম কালারের। এদের বলা হয় ‘গ্রে ফেব্রিক’। টেক্সটাইলের ভাষায় গ্রে ফেব্রিক মানে, যে কাপড় বোনা হয়েছে, কিন্তু এখনো রঙ করা হয়নি। কিন্তু কোন আহম্মক গঞ্জিকা টেনে ক্রিম রঙা ফেব্রিকের নাম দিয়েছে গ্রে ফেব্রিক? হে হে, ব্যাপারটা হলো, গ্রে বানানটা আসলে Grey নয়, Greige। আর এর সঠিক উচ্চারণ হবে “গ্রেশ”। কিন্তু মানুষ সবসময় সহজ উচ্চারণ খুঁজে নেয়। এজন্য রিকশা হয়ে যায় রিশকা, স্কুল হয়ে যায় ইশকুল, গ্রেশ ফেব্রিক হয়ে যায় গ্রে ফেব্রিক!
এই ক্রিম কালারের গ্রে কাপড়গুলোকে পরে যখন বিভিন্ন রঙে ডাই করা হয়, তখন তা হয়ে যায় এমন।
এবারে এসব ফেব্রিক আপনি সরাসরি কেটে জামা বানাতে পারেন। অথবা জামা বানানোর আগে এগুলোর উপরে প্রিন্টিং করতে পারেন। কিংবা জামা বানিয়ে সেই সব জামার উপরে প্রিন্টিং, এম্ব্রয়ডারি ইত্যাদি রঙ ঢঙ করতে পারেন। যে রঙের কাপড়ের উপরে আপনি প্রিন্টিং করছেন, সেটাই হচ্ছে সেই কাপড়ের বেইজ কালার। যেমন, নিচের ছবির কাপড়ের বেইজ কালার হলুদ।
কী বুঝলাম? বেইস কালার যা হবে, সেই রঙেই প্রথমে থান কাপড়কে (গ্রে ফেব্রিক) ডাই করা হয়। আমরা যে প্রিন্টিং পদ্ধতির ছবি দেখবো, সেখানকার ফেব্রিকের Base Color ছিলো হলুদ। অর্থাৎ প্রথমে উৎপাদিত গ্রে ফেব্রিককে হলুদ ডাই (Dye) দিয়ে রাঙিয়ে অলওভার প্রিন্টের জন্য নিয়ে আসা হয়েছে।
কুইজঃ মনে আছে, একদম প্রথমে বলেছিলাম আপনার কাছে সবুজ পাতার প্রিন্ট মারা একটা জামা আছে? বলুন তো সেটার বেইজ কালার কী?
- কমলা সুন্দরী!
২) দ্বিতীয় ধাপে দেখা যাচ্ছে, প্রিন্টিং মেশিনের প্রথম প্রান্ত থেকে হলুদ কাপড়টা অনেকগুলো রডের মধ্য দিয়ে (ফিডিং মেকানিজম) চলে যাচ্ছে প্রথম রঙের স্ক্রিনের কাছে।
[এই লেখায় প্রচুর ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করতে হয়েছে, কারণ টেক্সটাইল সেক্টরে বাংলার চেয়ে ইংরেজি ভাষাই ব্যবহৃত হয় বেশি। এই দেখুন, আমি নিজেও “বস্ত্রশিল্প” না বলে টেক্সটাইল সেক্টর বলে পার পেতে চাচ্ছি]।
৩) নিচের ছবিতে দেখুন, টান টান করে বিছানো হলুদ কাপড়টা রোলিং করে ডানপাশে এগিয়ে গেলেই নীল রঙের স্ক্রিনের তলে গিয়ে পড়বে। যদিও এই প্রিন্টিং মেশিনটায় একসাথে আটটা স্ক্রিনে আটটা আলাদা রঙের নকশা করার সুযোগ আছে, কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই হলুদ কাপড়টায় আট রঙের ছাপ্পা মারা হবে না।
৪) হ্যাঁ, উপরে এই নীল স্ক্রিনের কথাই বলছিলাম। আসলে স্ক্রিনটা নীল নয়। বরং স্ক্রিনের মেশের উপর নীল রঙ ঢালা হয়েছে। কারণ যারা এই ফেব্রিক প্রিন্ট করতে দিয়েছেন, তাদের চাহিদা ছিলো নীল রঙের নকশার। তেমনি, বায়ারের (ক্রেতার) সরবরাহ করা নকশা থেকেই ফ্যাক্টরি স্ক্রিন বানিয়ে নেয়।
৫) দেখুন, নীল রঙের স্ক্রিনের ছাপ্পা খেয়ে হলুদ রঙের একরঙা কাপড়টি কেমন “তারা” মার্কা নকশায় ভরে গেছে! তার মানে, স্ক্রিনের মেশ হতে ঠিক এই নকশা অনুযায়ী ইমালশন তুলে ফেলে ফুটো করা হয়েছিলো। তাই স্কুইজির চাপা খেয়ে নীল রঙটা ঐ ফুটো দিয়ে বের হয়ে কাপরের উপর নকশা অনুযায়ী বসে গেছে।
৬) এখন দেখুন পরবর্তী স্ক্রিনের কারবার। এটার ছাঁচে আরেক ধরনের নকশা কাটা (গোলাকার নকশা)। এখানের রঙও প্রথম রঙটা থেকে ভিন্ন। প্রথম স্ক্রিনের তল থেকে বেরিয়ে ডান পাশে এগিয়ে আমাদের কাপড়টা এই ছাঁচের তলে এসে থামবে।
৭) এরপর কাপড়টা আসছে আরেক ধরনের স্ক্রিনের নিচে, যাতে দেয়া আছে সাদা রঙের পেস্ট। এই স্ক্রিনের ছাঁচে যে নকশা আছে, সেটা ঠিক ঐ গোলাকার নীল রঙের ফোঁটাগুলোর উপর বসবে। ফলে নীল রঙের ফোঁটার উপরে সাদা রঙের ফোঁটা ওভারল্যাপ করে ডিজাইনটা আরেকটু উন্নত করে নিবে।
ফাইনাল প্রোডাক্ট দেখলে বুঝবেন, তিনটা ছাঁচ মিলে কেমন রঙের প্রিন্ট তৈরি করলো।
৮) ব্যস, এখানেই এই ফেব্রিককে প্রিন্ট করে রাঙানো শেষ। অর্থাৎ আমাদের কাপড়টির বেইজ কালার হলুদ, এবং হলুদের উপর তিন ধরনের ছাঁচের তিনটি নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যে নকশাগুলোর রঙ ভিন্ন ভিন্ন। চলুন দেখি, চূড়ান্ত ফলাফল কী দাঁড়ালো।
পাঁচ নাম্বার ছবিটার সাথে এই ছবিটার নিশ্চয় কিছু অমিল দেখতে পাচ্ছেন? কারণ এখানে “তারা” আকৃতির বদলে গোল গোল প্রতিকৃতি দেখা যাচ্ছে, যার উপর সাদা রঙের ওভারল্যাপও দেখা যাচ্ছে।
৯) এবার আসুন ছাপ্পা মারা শেষে কাপড়কে কী করা হয়, সে বিষয়ে। প্রিন্টিং শেষ হওয়ার পর কাপড়টিকে ঐ মেশিনের আরেকটা অংশে পাঠানো হয়, যার নাম ড্রায়ার (Dryer)। এই ড্রায়ারে উচ্চ তাপমাত্রায় সদ্য প্রিন্ট করা কাপড়টাকে শুকিয়ে ফেলা হয়।
১০) এরপর টাটকা গরম অবস্থায় কাপড়টি আরও কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মেশিনের ‘ডেলিভারি সেকশন’ অংশটায় আসে। এখান থেকে নিচে নেমে জমা হতে থাকে।
১১) অবশেষে কাপড়টা ক্রেতার কাছে হস্তান্তরযোগ্য হয়। কিংবা রোল আকারে প্রিন্টিং ডিপার্টমেন্ট হতে গার্মেন্টস সেকশনে পাঠিয়ে দেয়া হয়, যেখানে কাপড়গুলোকে কেটে জামা বানানো হয়।
১২) আসুন একটু কাছ থেকে দেখি, সব প্রক্রিয়া শেষে আমাদের প্রিন্টটা কেমন হলো।
ছাপ মারার রঙ (প্রিন্ট কালার)
এরপর দেখতে গেলাম ছাপ বসানোর জন্য যে রঙ ব্যবহার করা হয়, সেটা। বিশাল বিশাল মটকাতে আলকাতরার মতো নানা রঙের ভারী তরল রাখা। দেখে হোলি খেলার কথা মনে হলো। কিন্তু এই রঙ গায়ে ছিটালে সারা জীবনের সঙ্গী হয়ে যায় কিনা, কে জানে!
রঙের পাশেই বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক তরল রাখা। এগুলো নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে রঙকে ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়। কারণ অত ভারী তরল দিয়ে হোলিও খেলা যাবে না, প্রিন্টও করা যাবে না। রাসায়নিক পদার্থগুলো মিশিয়ে ভারী রঙকে পাতলা করা হয়। কী পরিমাণ রাসায়নিক মেশানো হচ্ছে, তার উপর নির্ভর করে রঙ কতোটা হালকা হবে। যেমন, ভিন্ন ঘনত্বের কারণে এক নীল রঙেরই অনেকগুলো শেড আপনি পাবেন – নেভি ব্লু, চেলেস্তে, ব্লু গ্যাস, ব্লুয়েত্তে, পেট্রলিও ইত্যাদি।
কিন্তু কী কী কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয় রঙের পেস্ট তৈরি করতে? চলুন দেখা যাক।
** ডাই – এটা তো লাগবেই। উপায় নাই! এটাকে পানিতে গুলে নেয়া হয়। সাথে যোগ করা হয় নিচের জিনিসগুলো।
- থিকনার (Thickener) – এটাই পুরো মিক্সচারটাকে চটচটে পেস্টের মতো করে।
- বাইন্ডার (Binder) – এটা তাপ পেলে পলিমারের আকার ধারণ করে। ডাই কণারা ফেব্রিক আর এই পলিমারের স্তরের মাঝে স্যান্ডউইচ হয়ে আটকে থাকে। খেয়াল করে দেখবেন, শুধু ডাই করা কাপড়ের থেকে প্রিন্ট করা কাপড়েরা সাধারণত বেশি দৃঢ় হয়। এটা বাইন্ডারের তৈরি করা পলিমার স্তরের কারণে ঘটে।
- ওয়েটিং এজেন্ট (Wetting agent) – ডাইগুলো সাধারণত পানির সারফেস টেনশনের কারণে পানির সাথে ভালোমত মিশতে পারে না। ফলে দেখা যায় অনেকখানি ডাই সল্যুশনের নিচে পড়ে আছে। ওয়েটিং এজেন্ট দিয়ে পানির সারফেস টেনশন কমিয়ে ফেলা হয়, যাতে ডাইয়ের অণুগুলো নিচে চুপচাপ পড়ে না থেকে পানির মধ্যে ভালোমতো গুলে যেতে পারে।
- সলভেন্ট (Solvent) – ডাইয়ের অণুগুলো যাতে জমাট না বেঁধে যায় আর পানিতে একে অপরের কাছ হতে সুষম দূরত্বে থাকে, সেজন্য এটা ব্যবহার করা হয়।
- ডি-ফোমিং এজেন্ট (De-Foaming agent) – পুরো প্রিন্টিং প্রক্রিয়াটা চলাকালে পেস্টগুলো বেশ ভালোই ঝাঁকুনি খায়। তখন যাতে ফোম বা ফেনা তৈরি না হয় সেজন্যে এই প্রতিরোধী ব্যবস্থা।
- ফিক্সার (Fixer) – এটা ডাই কণাগুলোকে ফেব্রিকের একেবারে ফাইবারের ভিতরে ঢুকে থাকতে বাধ্য করে। ফলে আপনি পাবেন আরো মজবুত প্রিন্টের কাপড়, পরতে পারবেন বছরের পর বছর! নইলে দেখবেন এক ধোয়াতেই কাপড়ের রঙ গায়েব, বানাতে হবে ঘর মোছার ন্যাকড়া।
- ইউরিয়া (Urea) – হ্যাঁ, ইউরিয়া। এটার কাজ হলো পানির প্রতি কিছু শ্রেণির ডাই কণার (যেমন, অ্যাসিড ডাই) আকর্ষণ বাড়ানো, কম পানিতে বেশি ডাই গুলানোর ব্যবস্থা করা। আর যত বেশি ডাই কণা, তত উজ্জ্বল ডিজাইনের প্রিন্ট।
- সফনার (Softener) – কাপড়ের সারফেস মসৃণ করতে সহায়তা করে। মূল কাপড় যে পরিমাণ খসখসে হয়, সেটা পরলে আপনার গায়ের চামড়াই উঠে যাবে।
উপরের সবগুলো অবশ্য প্রিন্টিং পেস্টের জন্যে আবশ্যক নয়। শুধু ডাই, বাইন্ডার, থিকনার এবং ইউরিয়া হলেই চলে। কিন্তু বাকিগুলো দিতে পারলে আরও ভালো। এতে কাপড়ের কোয়ালিটি বাড়ে, প্রোডাকশনেও অনেক ঝামেলা এড়ানো যায়।
এতক্ষণ যে স্ক্রিনের কথা বললাম, সেই স্ক্রিনের ছাঁচের একটা ছবি হল এটা। আপনার মস্তিষ্ক প্রসূত নকশা গোলাকার, চারকোণা, তিনকোণা, ডিমের মতন, বা আয়তাকার যাই হোক না কেন, সব নকশাই এরকম আয়তাকার স্ক্রিনে বন্দী করা হয়। কারণ ‘ফ্ল্যাট বেড স্ক্রিন প্রিন্ট’ করার মেশিনটা আয়তাকার। আর সেই মেশিনে খাপে খাপ আব্দুল্লাহর বাপ হয়ে বসতে গেলে ছাঁচকেও একই আকৃতির হতে হবে।
ছাঁচ দেখে প্রশ্ন জাগতে পারে, চারপাশের লাঠিগুলো কী দিয়ে তৈরি? ভেতরের পর্দা, যেটাকে মেশ বলছি আমরা, সেটাই বা কী জিনিস?
- চারদিক দিয়ে ঘিরে ভেতরের কাপড়টাকে শক্ত করে ধরে টানটান করে রেখেছে যে বস্তু, সেটা প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি। অনেক সময় হালকা কাঠ দিয়েও স্ক্রিনের ফ্রেমগুলো তৈরি হয়।
- আর ভেতরের কাপড়টা সাধারণত তৈরি হয় পলিয়েস্টার কাপড় দিয়ে। অনেক সময় এগুলো সিল্ক বা নাইলন কাপড় দিয়েও তৈরি হয়। চলুন, আরেকটু কাছ থেকে দেখি মেশটাকে।
এই ছবিটায় যে কাপড়টাকে দেখতে পাচ্ছেন, সেটায় অনেকগুলো ছোট ছোট ফুটোও দেখা যাচ্ছে। এই ফুটোগুলোতে লাইট সেন্সিটিভ ইমালশন লাগানো ছিলো। পরে সেগুলো তুলে ফেলে এই ফোঁটা ফোঁটা ডিজাইনটা বানানো হয়েছে। এগুলো ক্রেতার সরবরাহকৃত নকশা অনুযায়ী তৈরি করা হয়েছে।
নিচের ছবিতে দেখতে পাবেন, কীভাবে মেশিনের মাধ্যমে মেশের পলিয়েস্টার কাপড়ে নকশাটা ফুটিয়ে তোলা হলো।
এই মেশিন চলে কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে। অর্থাৎ আপনার দেওয়া নকশার সফট কপি নিয়ে প্রথমে কম্পিউটারে জারিজুরি করা হবে। এরপর কম্পিউটারের নির্দেশ মোতাবেক এই যন্ত্র সেই নকশাকে ফুটিয়ে তুলবে কাপড়ে। অর্থাৎ পুরো কাপড়ে লাইট সেন্সিটিভ ইমালশন অ্যাপ্লাই করার পর ডিজাইন অনুযায়ী কিছু কিছু জায়গা হতে ইমালশন তুলে ফেলা হবে।
নকশাটা ফুটিয়ে তোলার পর দেখা হয়, সেটায় কোনো খুঁত রয়ে গেলো কিনা। যেমন, কোনো অংশে নকশা নাও কাটা হতে পারে, ফলে ঐ অংশ দিয়ে রঙ না বের হওয়ায় ডিজাইনই বদলে যাবার সম্ভাবনা থাকে। আবার দেখা যায় কাপড়ে সূক্ষ্ম ছেঁড়া-ফাটা থাকতে পারে, তখন উলটো রঙ বেরিয়ে পড়ে ডিজাইন বরবাদ করে দিবে। এসব খতিয়ে দেখার জন্য এইরকম ইনফ্রারেড আলোতে কাপড়টা বিছিয়ে পরীক্ষা করা হয়।
যদি কাপড়টা প্রিন্ট করার কাজে ব্যবহার করার উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়, তাহলে তার চারপাশে প্লাস্টিকের বা কাঠের ফ্রেম লাগিয়ে চূড়ান্ত স্ক্রিন তৈরি করা হয়। এরপর প্রিন্টিং মেশিনে স্ক্রিনটা সেট করে কাপড়ে প্রিন্ট মারার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
নির্দিষ্ট রঙের শেড তৈরি করা
এরপর দেখলাম একটা রঙের সাথে কী অনুপাতে আরেকটা রঙ মেশালে নতুন রঙ তৈরি হয়।
ক্রেতার চাহিদানুযায়ী একটা রঙ তৈরি করতে গেলে দেখা যায়, অনেকবারের চেষ্টায় সেই রঙ আসে। এটাকে বলা হয় ‘কালার রেসিপি’। এই রেসিপিটা ডেভেলপ করা হয় ল্যাবে। ল্যাবে ছোট ছোট সাইজের (৬x৬ ইঞ্চি) স্যাম্পল কাপড়ের উপরে বিভিন্ন অনুপাতে ডাই মিশিয়ে প্রত্যাশিত শেড পাওয়ার চেষ্টা করা হয়। বিশেষজ্ঞদেরই খবর হয়ে যায় কী অনুপাতে লাল, নীল এবং হলুদ ডাই মেশালে বায়ারের দেয়া শেডটা পাওয়া যাবে। একবার অনুপাতটা বের করে ফেলতে পারলেই কেল্লা ফতে! তখন চূড়ান্ত অনুপাতটা লিখে ফাইলবন্দী করা হয়, যাতে পরে এই ধরনের শেডের আরো অর্ডার আসলে শুধু ফাইলটা বের করেই ডাইয়ের অনুপাতটা দেখে নেয়া যায়। এটাকে বলা হয় ‘ল্যাব-ডিপ (Lab Dip)’। এভাবে একটা রেজিস্ট্রার খাতায় অসংখ্য অনুপাত দেখতে পেলাম। এইসব অনুপাত অনুযায়ী রঙ মেশালে আপনার দুনিয়াটা আর সাদাকালো থাকবে না।
সবশেষে আরেকটা ছাপ্পা মারার প্রক্রিয়া দেখে শেষ করলাম আমার প্রিন্টিং ফ্যাক্টরি দর্শন। নিচে সেটার ছবি দিলাম। এই প্রিন্টিংটা প্রথম প্রিন্টিংয়ের চেয়ে ভিন্ন, কারণ এখানে পর পর সাতটা রঙ ব্যবহার করে প্রিন্ট করা হয়েছে। অর্থাৎ সাতটা স্ক্রিন ব্যবহার করে কাপড়ের উপর নকশা বসানো হয়েছে। এবার যেন মেশিন বাবাজির সদ্ব্যবহার করা হলো।
সাত রঙা স্ক্রিন দিয়ে প্রিন্ট করার ছবি
১) এইবার আমাদের বেইজ কালার হবে সাদা। তাই সাদা রঙের কাপড়টাকে সেট করা হয়েছে মেশিনের ফিডিং মেকানিজমের ভেতর।
২) দেখুন, ডান দিক থেকে সাদা কাপড়টা এসে পড়ছে আমাদের প্রথম স্ক্রিনের নিচে। এই স্ক্রিনটির উপর ঢালা হয়েছে গাঢ় নীল রঙ (নেভি ব্লু)।
৩) দেখুন, নীল রঙের স্ক্রিনের তল থেকে চাপ খেয়ে সাদা কাপড়টা কী হয়ে বেরিয়ে এসেছে!
৪) এখন নকশাদার কাপড়টা রোলিং করে বামদিকে অবস্থিত ২য় স্ক্রিনের তলে চলে আসছে।
৫) এরপর রোলিং করে ৩য় স্ক্রিনের তলে…
৬) এরপর রোলিং করে ৪র্থ স্ক্রিনের তলে…
৭) এরপর রোলিং করে ৫ম স্ক্রিনের তলে।
ডানের ফাঁক দিয়ে একটু করে দেখা যাচ্ছে আগের চারটা রঙের ছাপ খাওয়ার পর কাপড়টাকে কেমন দেখাচ্ছে।
৮) এরপর রোলিং করে ৬ষ্ঠ স্ক্রিনের তলে…
৯) এরপর রোলিং করে ৭ম ও শেষ স্ক্রিনের তলে…
১০) ডানপাশের হলুদ রঙ পার হয়ে আসার পর কাপড়টার প্রিন্টিং শেষ হয়েছে। এখন আবার আগের মতো কাপড়টা অটো ইস্ত্রি হবে মেশিনের ‘ড্রায়ার’ নামক অতি উত্তপ্ত চেম্বারের ভেতর। তারপর সেটা উপর থেকে ধীরে ধীরে নিচের দিকে নেমে আসবে, আর ডেলিভারি অংশে স্তূপাকারে জমতে থাকবে।
নিচের ছবিটা চূড়ান্ত কাপড়ের ছবি। এই নকশাওয়ালা কাপড়কেই গার্মেন্টসে কেটেকুটে তৈরি করা হবে রপ্তানিযোগ্য জামা কাপড়।
দেখলেন, কীভাবে একটা সাদা কাপড় রাঙিয়ে উঠলো সাতটা রঙ দিয়ে? যখন আমরা এই প্রিন্টের কাপড় পরবো, আদৌ কি চিন্তা করবো এখানে কয়টা রঙ ব্যবহার করা হয়েছে? নিশ্চয় না! শুধু পরেই খালাস হয়ে যাবো। কিন্তু কৌতূহল থাকা ভালো। কী বলেন? কৌতূহল থাকলেই জানা সম্ভব, আপনার গায়ে একটা প্রিন্টেড ফেব্রিকের জামা উঠাতে কী পরিমাণ সময়, কী পরিমাণ উপাদান, কী পরিমাণ শ্রম ব্যয়িত হয়। তাও এখানে শুধু এক ধরনের প্রিন্টিং প্রসেস নিয়ে বকবক করেছি। আরও কতো ধরনের প্রিন্টের কাপড় যে ছোটবেলা থেকে পরে এসেছেন, সেগুলো নিয়ে বলতে গেলে তো মহাভারত ফেইল! তার উপর গার্মেন্টসে জামা বানানোর ব্যাপক প্রক্রিয়া দেখলে মাথা পল্টি খাবে নিশ্চিত। যারাই প্রথমবার দেখে, তারাই এই অনুভূতিতে আক্রান্ত হয় কিনা!
যা হোক, ছবি ব্লগটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, কৌতূহলকে জাগিয়ে তুলুন।
দারুণ লেখা। অনেক কিছুই জানতে পারলাম। তবে বিশাল বড় আর্টিকেল।
একদম শুরুতে যে কাপড়ের ছবি টা আছে ওটা তো স্কিন প্রিন্টিং এ করা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না। ওটা কিসে করা? তবে বাজারের অধিকাংশ কাপড়ই মনে হচ্ছে স্কিন প্রিন্টিং ব্যবহার করে করা হয়। এবং আমার ধারনা অন্য প্রিন্টিং এ করা কাপড় গুলোর তুলনামূলক ভোক্তা খরচ স্কিন প্রিন্টিং থেকে বেশি। ভুল হয়ে থাকলে শুধরে দেওয়ার অনুরোধ রইলো।
ওটাও স্ক্রিন প্রিন্টিংই। আর হ্যাঁ বাজারের অধিকাংশ কাপড়েই স্ক্রিন প্রিন্টিং করা হয়। এই পদ্ধতিতে রঙের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত হয়। এই লিংকে গেলে আরো কিছু এমন প্রিন্টিং-এর কাজ দেখতে পারবেন।
http://www.thedesignsheppard.com/interviews/interview-textile-designer-sam-pickard#sthash.7i9363vX.dpbs
কি বলব!!! আপনি এতো বড় এক টা পোস্ট লিখছেন, তাও এতো গুছিয়ে, যেখানে তেমন কোন কিছুই বাদ পড়েনি। তাও আবার নন- টেক্সটাইল!!!! ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবো না। সময়ে পেলে আবারো টেক্সটাইল এর অন্য কোন সেক্টরে ঘুরতে যাবেন আর আমাদের জন্য আরো নতুন পোস্ট নিয়ে হাজির হবেন। শুভ কামনা রইলো।
এত বড় পোস্টটা ধৈর্য ধরে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ! আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য আরও একমুঠো ধন্যবাদ।
আমি আর রিজওয়ানুর প্রিন্স যৌথভাবে লিখেছি বলে এত গুছানো হয়েছে। আমি একা লিখলে এত সুন্দর হতো না। তাছাড়া প্রিন্স যেহেতু টেক্সটাইল থেকে এসেছেন, তাই আমার মতো নন-টেক্সটাইল ব্যক্তি এই পোস্ট নিয়ে মাঠে নামতে সাহস পেয়েছি।
ভালো থাকুন!
কাপড়ের উপর এই প্রিন্টগুলো সাধারণত কোন এলাকায় করা হয়ে থাকে? দু-একটি কারখানার ঠিকানা দেওয়া যায় কি?
অনেক কিছু জানলাম, অনেক ধন্যবাদ এতো সুন্দর করে গুছিয়ে লিখার জন্য
onek kicu janlam dhonnobad apnake………….