সুখবর! সুখবর! সুখবর!
নাসা ফাটিয়ে দিয়েছে। তাদের জরিপকারী যন্ত্র MRO (Mars Reconnaissance Orbiter) খবর দিয়েছে যে আজকের মঙ্গলে বহতা পানি আছে। জ্বি ভাই, অতীতের কোনো মঙ্গলে নয়, বরং বর্তমান মঙ্গলেই পানি আছে। না ভাই, কোনো বরফের মধ্যে না, অথবা শুধু বাতাসে জলীয়বাষ্প আকারেও না, একেবারে তরল আকারে আছে। কেন বহতা পানির ব্যাপারটা জরুরি, তা নিশ্চয়ই বলতে হবে না। পানি তখনই প্রাণের জন্য অধিক উপযুক্ত, যখন সেটা তরলাকারে থাকে। প্রাণ বলতে আমরা যা বুঝি, সেটা আর কী! ভূ-পৃষ্ঠের নিচের মহাসাগরে বা বরফের মধ্যে তো পানি আমরা পেয়েছিই, আমাদের সৌরজগতেই পেয়েছি (Europa তে)। তবে সেখানে আটকে থাকলে সেটা আমাদের জন্য তেমন সুবিধার না আপাতত! তাই এটা একটা বিশাল আবিষ্কার!
MRO এর অস্ত্র হচ্ছে imaging spectrometer, এই বর্ণালী বীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে পাহাড়ের ঢালের গায়ে সিক্ত মিনারেলের বর্ণালী পাওয়া গেছে। এবং যে কারণে বোঝা গেছে যে এটা বইতে থাকা পানির কারণে হচ্ছে, তা হলো সময়ের সাথে সাথে সিক্ততার মধ্যে একটা পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। গরমকালে বেশি ভেজা, শীতকালে কম ভেজা। মঙ্গলের অনেক জায়গাতেই এমন দেখা যাচ্ছে। নাসার সায়েন্স মিশন ডিরেক্টরেট জন গ্রুনসফেল্ড বলেছেন, “এটা একটা যুগান্তকারী আবিষ্কার। একটু লবণাক্ত হলেও আমরা প্রমাণ করেছি যে, ঠিক আজকের মঙ্গলেও বহতা পানি আছে।”
ঢাল বেয়ে নেমে আসা পানির প্রবাহকে বলে recurring slope lineae (RSL)। একটু আগে ওপরে পানিটাকে লবণাক্ত বললাম না? কারণ, পাহাড়ের ঢালের গায়ে খনিজ লবণ থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এজন্য প্রবাহের জায়গাটাতে ডোরাকাটা দাগ দেখা যাচ্ছে।
সেই ২০০৬ সাল থেকেই ৬টা বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে মঙ্গলকে পর্যবেক্ষণ করছে MRO। আবিষ্কারটার সূত্রপাত হয়েছিলো ৫ বছর আগে, যখন একজন বিজ্ঞানী মঙ্গলের ঢালে এই ডোরাকাটা দাগগুলো দেখেছিলেন। এখন আরো নিশ্চিত হওয়া গেলো। আর এজন্য লেগেছে বছরের পর বছরের অধ্যবসায়, একাধিক মহাকাশযান। নাসার মঙ্গল আবিষ্কার প্রোগ্রামের প্রধান বিজ্ঞানী মাইকেল মেয়ার বলেছেন, “যতই মঙ্গলের ব্যাপারে জানছি, ততই মনে হচ্ছে মঙ্গলে প্রাণের বিকাশের উপযোগী পরিবেশ থাকাটার ব্যাপারে এবং ভবিষ্যতে প্রাণের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে।”
এখানে দেখুন, ঐ প্রবাহ নিয়ে নাসার বানানো এনিমেশন ভিডিও……
আবিষ্কারটা বিখ্যাত সায়েন্স জার্নাল নেচার জিওসায়েন্সে প্রকাশিত হয়েছে। মোট লেখক ৮ জন, তাদের মধ্যে তিনজন লেখকদের নাম -Mary Beth Wilhelm, Scott Murchie, Alfred McEwen. এরা আমাদের যুগের প্রকৃত নায়ক।
মহাকাশপ্রেমী এবং ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব নিয়ে উৎসাহীদের জন্য কি চমৎকার একটা নিউজ, তাই না? ১৯৮০ সালে কার্ল সেগানের কসমস টেলিভিশন সিরিজে পুরো একটা এপিসোড উৎসর্গ করা হয়েছিলো মঙ্গল গ্রহ নিয়ে, নাম ছিলো Blues for a Red Planet. মঙ্গলের প্রথম দিকের আবিষ্কারগুলো শেয়ার করা হয়েছিলো এখানে। সেখান থেকে আজ আমরা এতোদূর এসেছি। শীঘ্রই আমরা মঙ্গলে যাবো। সেখানে আরো নিবিড়ভাবে গবেষণা করবো। এটাই প্রত্যাশা…… সামনে আমরা অর্জন করবো অতীতের অসম্ভবকে।
আরো পড়ুন,
নাসার প্রেস রিলিজ
Journey to Mars
MRO
.