অধিক পুত্র সন্তান প্রত্যাশী? কিন্তু সমকামী বিদ্বেষী। তাহলে নিশ্চিত থাকুন প্রকৃতি আপনাকে নিয়ে এক রহস্যময় খেলা খেলছে।
পাঠক প্রথমে আপনাকে একটা জরিপের সাথে পরিচয় করাই। জরিপটা হলো ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুকের, [১] এই পরিসংখ্যান করার মূল উদ্দেশ্য হলো পৃথিবীর প্রতিটা দেশে ছেলে এবং মেয়ের অনুপাত কেমন তা নির্ণয় করা। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী পৃথিবীতে একেবারে প্রত্যেকটা দেশে ৫৫ বছর পর্যন্ত মেয়ের তুলনায় ছেলে বেশি থাকে। এরপর থেকে পুরুষের সংখ্যা কমতে থাকে; কারণ ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় কম জীবনকাল অতিবাহিত করে। এই যে প্রকৃতিতে মেয়ের তুলনায় ছেলে সন্তান অধিক জন্ম নেয়। সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটা উন্নত বিশ্বে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ সেখানে সবাই মেধাকেই ব্যবহার করে, মেধারই মূল্য বেশি। কিন্তু অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশে এটা একটা সুখবর বটে। ধর্ম আর দারিদ্রের আধিক্য আর শিক্ষার স্বল্পতার কারণে সেখানে শারীরিক পরিশ্রমটাই গুরুত্বপুর্ণ। তাই ছেলে সন্তানের একটা চাহিদা সেখানে লক্ষ্য করা যায়। মজার বিষয় হলো, এই ধরনের সমাজগুলোতে সমকামিতার প্রতি এক ধরনের বিদ্বেষও বেশ প্রকট ভাবে দেখা যায়। পরিসংখ্যান থেকে এটা তো নিশ্চিত; প্রকৃতি বৈষম্য করে ছেলে সন্তান অধিক সৃষ্টি করে। কিন্তু এই বৈষম্য আপাতদৃষ্টিতে অনুন্নত বিশ্বে আশীর্বাদ মনে হলেও, বাস্তবে সেই প্রকৃতিই এক রসিকতা করছে হয়তো। কিভাবে? আজকে সেই পাঠটাকেই দেখব।
সমকামিতাঃ কী বলছে সাম্প্রতিক গবেষণা?
১১ ডিসেম্বর এমন একটি গবেষণার খবর বিশ্ব মিডিয়ায় আলোচিত হয়েছে; যার এক শতাংশও যদি বাংলাদেশের মিডিয়ায় প্রকাশিত হত, তাহলে নিশ্চিতভাবে স্রোতের মত ধেয়ে আসত, হাজারো গালিগালাজ। তো গবেষণার কী তথ্য প্রকাশিত হলো, তা নিয়ে কিছু বলার আগে বলি, এই প্রসঙ্গের পিছনের কথা। পাঠককে প্রসঙ্গটা বুঝার আগে বুঝতে হবে Fraternal birth order effect বা বাংলায় জন্মসুত্রে ভ্রার্তৃসম্পর্কিত প্রভাব সম্পর্ককে। বাংলা উইকিপিডিয়ায় এটি নিয়ে একটি আর্টিকেল আছে; যদিও অসম্পূর্ণ, কিন্তু আছে।[২] রেয় ব্ল্যানচার্ড [২২] এই পদটি প্রথম ব্যবহার করেন। বিভিন্ন জায়গায় একে Older brother effect বলেও অভিহিত করা হয়। ১৯৫৮ সালে সর্বপ্রথম এই সংক্রান্ত গবেষণা করা হয়।
জন্মসূত্রে ভ্রার্তৃসম্পর্কিত প্রভাব কি?
স্বল্প কথায় বলি, একজন মায়ের যদি একটি পুত্র সন্তান থাকে; এবং তার পর আরো একটি পুত্র সন্তান জন্মায় তবে পরবর্তী ছোট ছেলেটির সমকামী হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। ২০০৬ সালের একটি গবেষণা মতে এ সম্ভাবনা প্রায় ৩৩ শতাংশ [৩]। এটি কেন হয়, এমন উত্তর দিতে গিয়ে এইচ-ওয়াই এন্টিজেন নামক হাইপোথিসিসকেও প্রস্তাব করা হয় [৪]
রেয় ব্ল্যানচার্ড রা বলেছেন, যখন একজন মা পুত্র সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেন, তখন মায়ের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) পুরুষ ফিটাসকে (যেহেতু পুরুষ ফিটাসে ওয়াই ক্রোমোজম কার্যকর) বহিরাগত ভেবে কার্যকরী হওয়া শুরু করে। প্রথম ছেলে সন্তানে তা তেমন একটা প্রভাব না ফেললেও পরবর্তী ছেলে সন্তানের বেলায় তা আরো সক্রিয় হয়ে উঠে। কিন্তু এই সবকিছুই ছিল একধরনের হাইপোথিসিসের ন্যায়। কারণ এই প্রভাবটা যে কার্যকরী তা বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত ছিলেন, কিন্তু কেন আর কিভাবে হচ্ছে, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা ছিলেন এক ধাঁধার মধ্যে।
তবে ১১ ডিসেম্বর প্রোসিডিংস অব ন্যাশনাল একাডেমী অব সায়েন্সে [৫] প্রকাশিত গবেষণার কারণে বলা যায়; প্রথমবারের মত এই রহস্য উন্মোচনে দেখা গিয়েছে আলোর দিশা। ব্রক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্যবিজ্ঞান ও মনোবিজ্ঞানের অধ্যক্ষ এন্থনি বোগার্ট (৬) এবং তার টিম এই গবেষণাটি করেন। তারা বলেন, আমাদের শরীরের আছে নিজস্ব রোগ প্রতিরোধক ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম)। যখনি বহিরাগত কোনো বস্তু যেমন বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করে, তখন শরীর একে স্বাভাবিকভাবে চিনতে পারে না; গণ্য করে বহিরাগত হিসেবে। তখন শরীরের এন্টিবডি একে নাশ করার জন্য সক্রিয় হয়ে উঠে। এটা সবসময় ভালো হলেও, কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটাই যৌন অভিমুখিতাকে নির্ধারণ করে দিতে পারে। আর তেমনটাই দেখা গিয়েছে, এন্থনি বোগার্টের গবেষণায়।
বোগার্ট ও তার সহযোগীরা ১৪২ জন নারী ও ১২ জন পুরুষকে (১৮ থেকে ৮০ বছর) নির্বাচিত করে রক্ত সংগ্রহ করেন ও শুধুমাত্র পুরুষে তৈরি হওয়া প্রোটিনকে পর্যবেক্ষণ করেন। তারা দেখতে পান, ছেলে সন্তানকে গর্ভধারণ করা অবস্থায় নারী এন্টিবডির যে ক্রমবিকাশ ঘটে, তার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয় ওয়াই ক্রোমোজম দ্বারা উৎপাদিত এনএলজিএন৪ওয়াই প্রোটিন (৬) (NLGN4Y)। পিতা এবং মাতার ব্লাড গ্রুপ যদি না মিলে, তাহলে ফিটাসের অণুর (মলিকিউলের) বিরুদ্ধে এন্টিবডি সৃষ্টি হয়। এরকমটা হরহামেশাই দেখা যায়। তাই এটা ততটা গুরুত্ব বহন করতো না। যদি না এন্টিবডির শিকার সুনির্দিষ্টভাবে NLGN4Y প্রোটিন হতো। আর এটাই গবেষকদের আগ্রহী করে তুলে।
NLGN4 হল মস্তিষ্কের কোষের পৃষ্ঠতলে ওয়াই ক্রোমোজম দ্বারা উৎপন্ন; ব্রেইন নেটওয়ার্কের ক্রমবিকাশে ভুমিকা রাখা এক ধরনের প্রোটিন। এই প্রোটিন পুরুষ ফিটাসের মস্তিষ্কের ক্রমবিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে। গবেষকদের অনুমিত ধারণা এই যে, এই প্রোটিন মস্তিষ্কের সেই এলাকাকে প্রভাবিত করে; যেখানে আকর্ষণ নিয়ন্ত্রিত হয় এবং উচ্চ মাত্রার এন্টি-NLGN4Y এর স্তর; সম লিঙ্গকে আকর্ষণ করতে ভূমিকা রাখে। নিউরনের একে অপরের সাথে সংযোগ স্থাপনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
গবেষণাটির ফলাফল কেমন ছিল?
বোগার্ট ও তার সহযোগীরা এই গবেষণা থেকে দেখতে পান যে…
ক) পুরুষের তুলনায় নারীদের মধ্যে NLGN4Y নামক প্রোটিনের প্রতি উচ্চহারে এন্টিবডির ক্রিয়া রয়েছে।
খ) সন্তানহীন মায়েদের চেয়ে দ্বিতীয় পুত্রসন্তান সমকামী (প্রথম সন্তানও পুত্র) এমন মায়েদের মধ্যে উক্ত প্রোটিনের প্রতি এন্টিবডির ক্রিয়ার হার উচ্চ।
গ) বিষমকামী সন্তানের মায়েদের চেয়ে দ্বিতীয় পুত্রসন্তান সমকামী (প্রথম সন্তানও পুত্র) এমন মায়েদের মধ্যে উক্ত প্রোটিনের প্রতি এন্টিবডির ক্রিয়ার হার উচ্চ।
এই ফলাফল থেকে তার টিম অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, একজন নারী প্রথমবারের মত গর্ভবতী হন, তখন ওয়াই ক্রোমোজম দ্বারা উৎপাদিত প্রোটিন রক্তস্রোতে মিশে যায়। মায়ের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা (ইমিউন সিস্টেম) (৮) সেই প্রোটিনটিকে বহিরাগত ধরে নেয়; ফলে উৎপন্ন করে এন্টিবডি। যদি নারীতে পর্যাপ্ত পরিমাণ এন্টিবডি উৎপন্ন হয়ে থাকে এবং তিনি পুনরায় আরো একটি ছেলে সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেন, তাহলে সেই এন্টিবডিগুলো অমরার দেয়াল ভেদ করতে পারে, ও দ্বিতীয় ছেলে-ফিটাসের মস্তিষ্কের প্রোটিনের উপর তা প্রভাব [৯] ফেলতে পারে। আর এভাবেই তিনি যতটা পুত্র সন্তান গর্ভে ধারণ করবেন, তার ছোট সন্তানের ক্রমান্বয়ে সমকামী হবার সম্ভাবনা বাড়তেই থাকবে। বোগার্টের মতে NLGN4; মস্তিষ্কের কোষের একে অপরের সাথে সংযোগ স্থাপনে ভুমিকা রাখে, ফলে এর উপর প্রভাব আকর্ষণকে পরিবর্তন করে দিতে পারে।
এই ধরনের গবেষণা বোগার্ট এবং তার সহযোগীরা মিলে প্রায় ২০ বছর ধরে করে যাচ্ছেন(১০)। প্রাথমিক ফলাফলগুলো এই বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করলেও কিছু ফলাফল ভিন্ন (১১) বৈশিষ্ট্য নির্দেশ করে। একটি গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে, যদি একাধিক ভাই থাকে এবং অপেক্ষাকৃত ছোট ভাইকে আলাদা ভাবে বড় করা হয় তবুও সেই ভাইটি সমকামী হবার সম্ভাবনা থাকে। (১২) দত্তক নেওয়া ছেলে শিশুরা যদি বড় ভাইয়ের সাথে বড় হয় (১৩); তাহলে গবেষকরা সেই পরিবারে এই বিন্যাস দেখেননি। তাই বিজ্ঞানীরা এটা ভাবতে শুরু করেছিলেন যে; নিশ্চয়ই এর সাথে মায়ের দিকের কোনো প্রভাবে সংযোগ আছে। গবেষকরা নারী সমকামী, উভকামী, বা নিষ্কামীদের নিয়ে কোনো ব্যাখ্যাই দেন নি।[১৪]
বিভিন্ন গবেষকদের মতামতঃ
নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের শিক্ষক জে মাইকেল বেলী(১৫) মনে করেন, এই গবেষণাটি তাৎপর্যপূর্ণ। বেলী এই গবেষণার সাথে ছিলেন না, কিন্তু তিনি এই সংক্রান্ত কাজ করেছেন। তিনি জেনেটিক ফ্যাক্টর পেয়েছেন যা যৌন অভিমুখিতার কিছু পার্থক্যকে ব্যাখ্যা করতে পারে। ব্যালীর সাম্প্রতিক পেপার যা এই ডিসেম্বরেই নেচারে প্রকাশিত হয়েছে (১৬), তিনি মানুষের জিনোম নিয়ে কাজ করেছেন এবং তিনি ও তার টিম খুজেঁ দেখেছেন যে, সমকামী এবং বিষমকামী পুরুষদের তুলনায় সমকামীদের সিঙ্গেল লেটার ডিএনএ’তে পরিবর্তন (বিষমকামীদের তুলনায় change) আছে কিনা। তিনি দুটি জিন পেয়েছেন; যা সত্যিই পরিবর্তিত। এই অন্বেষণ যৌন অভিমুখিতার ক্রমবিকাশের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। ব্যালে বিশ্বাস করেন, তার গবেষণাটি অনেক বেশি গুরুত্বপুর্ণ হয়ে উঠবে, যদি এই পরীক্ষাটি পুনপ্রমাণিত হয়। তিনি বলেছেন,
আমাদের গবেষণা শুধুমাত্র এটা দেখায় যৌন অভিমুখিতা নিয়ন্ত্রণের জন্য জিন থাকতে পারে। এটি খুবই গুরুত্বপুর্ণ কাজ হয়ে উঠবে, যদি দেখা যায় পুনঃগবেষণায় এটি সত্যি বলে প্রমাণিত হয়েছে।
বোগার্ট নিউ সায়েন্টিসকে বলেছেন যে,
আমি এটা বলব না যে, আমরা জন্মসুত্রে ভ্রার্তৃসম্পর্কিত প্রভাব নামক প্রহেলিকার সমাধান করেছি, তবে এই কলাকৌশল সমাধানের আমরা খুবই কাছাকাছি।[১৭]
মিশিগান স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্ক ব্রেডিলাভ [১৮] বলেছেন,
এটি খুবই গুরুত্বপুর্ণ গবেষণা কারণ এটি জন্মসুত্রে ভার্তৃসম্পর্কিত প্রভাবকে ব্যখ্যা করতে সম্ভাবনীয় কলাকৌশলকে উপস্থাপন করে। সম্ভবত, মানুষের যৌন অভিমুখিতার সাথে সম্পর্কিত সবচেয়ে বেশি দৃঢ় বৈশিষ্ট্যকে উপস্থাপন করে।” তিনি আরো বলেন, “এই প্রোটিনটা সাইনাপ্স গঠনে গুরুত্বপুর্ণ। আপনি দেখতে পারেন, কিভাবে মার্তৃ এন্টিবডি ফিটাল ব্রেইনে প্রভাব ফেলছে। যা ব্যাখ্যা করছে; কেন পরবর্তী ছেলে সন্তানগুলো সমকামী হয়ে বেড়ে উঠছে।“[১৭]
যৌন অভিমুখিতায় জৈব নির্ধারণ সংক্রান্ত গবেষণার পথপ্রদর্শক [১৯] ডিন হ্যামার বলেছেন “এই তাৎপর্যমণ্ডিত প্রারম্ভিক পরীক্ষাটি যদি পুনঃপরীক্ষায় প্রমাণিত হয়, তাহলে এটি মস্তিষ্কের সুনির্দিষ্ট অংশকে শনাক্ত করবে যা সমকামী ও বিষমকামী উভয়ের ক্রমবিকাশে গুরুত্বপুর্ণ হয়ে উঠতে পারে।” তিনি আরো বলেছেন, ” এই গবেষণাটি মানুষের নিউরোবায়োলজি ও জিনগত ক্রমবিকাশের ক্ষেত্রে চমৎকার পথের সুচনা করবে।
উপসংহারঃ
বেশ কিছু ফ্যাক্টর কারো যৌন অভিমুখিতা নির্ধারণ করতে পারে, কিন্তু এই ক্ষেত্রে গবেষকরা এমন একটি বিন্যাস লক্ষ্য করেছেন যার সাথে মার্তৃগর্ভের সংযোগ আছে [২০] তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে
- কারো অনেকগুলো ভাই থাকলেই কি আপনি দৌড়ে গিয়ে বলবেন, “ওহ আচ্ছা তুমি তো সমকামী। তোমাকে এখনি দেশ ছেড়ে ভাগতে হবে।”
- কেও যদি বলে সে সমকামী তাহলে তাকে প্রশ্ন করবেন, কয় ভাই আছে? যদি এক মায়ের এক ছেলে হয়, তাহলে কি বলবেন? ওহ! না, তোমার তো ভাই ই নেই, তাহলে তুমি সমকামী নও, এটা তোমার ফ্যাশন?
- এই গবেষণার ফলই কি শেষ কথা এই বিষয়ে???
প্রথম প্রশ্নের উত্তরঃ যেমনটা দেখা যাচ্ছে, একটি গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে, একাধিক ভাই থাকা মানেই ছোট ভাই সমকামী হবে তা নয়, বড় ভাই থাকলে, ছোট ভাইয়ের সমকামী হবার সম্ভাবনা মাত্র ৩৩ শতাংশ।[৩] অর্থাৎ একশ জনে ৩৩ জন। তাও সেটা সম্ভাবনা, আরো কমও হতে পারে।
দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর, যারা বাস্তবিক অর্থেই সমকামী, তাদের সবারই বড় ভাই থাকবে; এমনটা নয়। একটি হিসাব থেকে দেখা গিয়েছে, যারা সমকামী হয়, তাদের মাত্র ১৫ শতাংশের ক্ষেত্রে এই প্রভাব কার্যকরী।[২১] অর্থাৎ, বাকি ৮৫ শতাংশ, এপিজেনেটিক্স, এনভাইরোম্যান্টাল ফ্যাক্টর, মস্তিষ্কের কিছু প্রত্যঙ্গ, বা জেনেটিক্যাল কারণেও সমকামী হয়ে থাকতে পারে।
তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর, অবশ্যই এই গবেষণার ফলাফল টাই, এই প্রভাব সম্পর্কে শেষ কথা নয়। কারণ এর স্যাম্পল সাইজটা স্বল্প। ফলে, মেটা এনালাইসিসে ভিন্ন রকম ফলাফল ও আসতে পারে। এটা যেমন একটা সমস্যা, তার চেয়েও বড় সমস্যা পিয়ার রিভিউ করার পরেও অনেক গবেষণা পুনঃপরীক্ষা করলে একই ফলাফল আসে না। তাই পুর্বের গবেষণাগুলো সেক্ষেত্রে মুল্যহীন হয়ে পরে। বিবিসির প্রতিবেদনে[২৩] উঠে এসেছে, এধরনের অনেক পিয়ার রিভিউড গবেষণার মধ্যে অন্তত দুই তৃতীয়াংশ গবেষণা পরবর্তীতে গিয়ে আর একইরুপ ফলাফল প্রদর্শন করে না। তাই এ গবেষণাটি পুনঃপরীক্ষার পরেই, বাস্তবতার আরো কাছে যাওয়া যাবে।
তথ্যসুত্র
১) https://www.cia.gov/library/publications/the-world-factbook/fields/2018.html
২) https://bn.m.wikipedia.org/wiki/জন্মসূত্রে_ভ্রাতৃসম্পর্ক_এবং_পুরুষ_যৌন_অভিমুখিতা
৩) http://www.pnas.org/content/103/28/10771.full
৪) https://bn.m.wikipedia.org/wiki/এইচ-ওয়াই_এন্টিজেন
৫) http://www.pnas.org/cgi/doi/10.1073/pnas.1705895114
৬) https://brocku.ca/applied-health-sciences/health-sciences/faculty-research/faculty-directory/anthony-f-bogaert-phd/
৭) http://www.genecards.org/cgi-bin/carddisp.pl?gene=NLGN4Y
৮) http://www.sciencedirect.com/science/article/pii/S1044532304000247?via%3Dihub
৯) https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC4745584/
১০) https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/8540587
১১) http://www.tandfonline.com/doi/abs/10.1080/00224490802398357
১২) https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed/20039114
১৩) http://www.pnas.org/content/103/28/10771.full
১৪)https://www.researchgate.net/publication/306345098_Gay_Male_Only-Children_Evidence_for_Low_Birth_Weight_and_High_Maternal_Miscarriage_Rates
১৫) http://faculty.wcas.northwestern.edu/JMichael-Bailey/personal.html
১৬) https://www.nature.com/articles/s41598-017-15736-4
১৭) https://www.newscientist.com/article/2156010-we-may-know-why-younger-brothers-are-more-likely-to-be-gay/
১৮) https://msu.edu/~bjlab/
১৯) https://www.newscientist.com/article/mg13918830-300-gene-hunters-sound-warning-over-gay-link/
[২০] https://academic.oup.com/endo/article/152/8/2937/2457178
২১)http://www.scielo.cl/scielo.php?script=sci_arttext&pid=S0716-97602010000300012&lng=en&nrm=iso&tlng=en
২২)https://en.m.wikipedia.org/wiki/Ray_Blanchard
২৩)http://www.bbc.com/news/science-environment-39054778
সমকামের পক্ষে লিখলেন নাকি বিপক্ষে?
বিজ্ঞানের পক্ষে। (: