আজ আপনাদের পরিচয় করে দেবো প্রকৃতির এক আশ্চর্য সৃষ্টির সাথে, নাম তার গ্লো ওয়ার্ম (Arachnocampa luminosa)। এরা তৈরি করে অত্যন্ত মোলায়েম এক ধরণের আলো, যেটার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকা ছাড়া কোন উপায় নেই। একমাত্র নিউ জিল্যান্ডের Waitomo Glowworm Cave নামের গুহাতেই এই ওয়ার্মটি পাওয়া যায়। তবে এরা যে শুধু আলো তৈরি করে ক্ষান্ত হয়, তা নয়। এরা বুনে যায় নীচের ছবির মতো আশ্চর্য সুন্দর কিছু সুতার মতো বস্তু।
কিন্তু কেন? কেন এতো পরিশ্রম?
হু হু বাবা, জানতে হলে পড়তে হবে!
প্রকৃতিতে আমরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে কী দেখি? কীটপতঙ্গরা লার্ভা অবস্থায় শিকার করে খেতে পারে না। কিন্তু অদ্ভুত এই গ্লো ওয়ার্ম যা করার, লার্ভা অবস্থায়ই করে। প্রাপ্তবয়স্ক হলে এরা খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেয় এবং কয়েকদিন পরই মারা যায়। পুরোই হ য ব র ল কেস!
লার্ভাগুলো মুখনিঃসৃত মিউকাস দিয়ে গুহার ছাদে বাসা বানায়। এরপর ঐ মিউকাস দিয়েই পুঁতির মতো দেখতে এক ধরণের বস্তু তৈরি করতে থাকে। একটার পর একটা পুঁতি তৈরি করে বলে সেটা দেখতে হয় লম্বা সুতার মতো। সুতোগুলো ছাদ থেকে ঝুলতে থাকে। এভাবে একটি লার্ভা ৭০টার মতো ৩০-৪০ সেন্টিমিটার লম্বা সুতা তৈরি করে। এগুলোকে বলে snare । অবশ্য বনে বসবাসকারী লার্ভাগুলোর সুতো ৫ সেন্টিমিটারের চেয়ে বড় হয় না। কারণ বাতাসের জন্য লম্বা সুতোয় জট লেগে যায়।
এ তো গেলো সৌন্দর্য সৃষ্টির কাহিনী। কিন্তু কথা হল, এতো কষ্ট করে এসব বানানোর মানে কী? হে হে… এটাই তো মজা! সুতোগুলো দেখতে যতই সুন্দর হোক, এদের উদ্দেশ্য খুবই খারাপ। শিকার ধরার জন্য লার্ভাগুলোর হাতিয়ার এই সুতো।
এখন আসুন আরও মজার ব্যাপারে।
গুহার ভেতরে যেসব পতঙ্গ ঘুরে বেড়ায়, তারা তো অন্ধকারে এসব সুতো নাও দেখতে পারে! আর সুতো না দেখলে উড়ে এসে তারা বসবেই বা কীভাবে? আর না বসলে তো সুতো তৈরির পুরো উদ্দেশ্যটাই ভেস্তে যাবে। এতো মর্মান্তিক ঘটনা তো আর লার্ভারা ঘটতে দিতে পারে না। তাই তারা নিজেদের দেহে উপস্থিত luciferin নামক রাসায়নিক পদার্থের সাহায্যে আলো উৎপন্ন করে।
এই আলো উৎপন্ন হয় লার্ভার দেহের শেষভাগে। আর পোকারা এই আলো দেখে ভাবে, এগুলো গুহা থেকে বেরোনোর পথ। কারণ আলোর কারণে গুহার ছাদ দেখতে হয় একেবারে রাতের আকাশে জ্বলতে থাকা নক্ষত্রের মতো। ফলে তারা উড়াল মারে আর আটকে যায় মৃত্যুফাঁদে। একবার ফাঁদে পা দিলে আর ছাড়াছাড়ি নেই। মরতে তাকে হবেই।
আরেকটা মজার বিষয় হল, প্রাপ্তবয়স্ক গ্লো ওয়ার্ম “গ্লো” করে ঠিকই, কিন্তু লার্ভার তুলনায় অনেক কম। পুরুষরা আলো তৈরি করে যৌন মিলনের জন্য এবং মহিলারা ডিম পাড়ার জন্য। ডিম পাড়ার কিছুক্ষণ পরই মহিলা ওয়ার্ম মারা যায়।
শেষ মজার কথাটা হল, মাত্র খেয়েছে এমন লার্ভার চেয়ে একটি ক্ষুধার্ত লার্ভা বেশী আলো উৎপন্ন করে। যখন সুতোয় খাদ্য আটকা পড়ে, তখন লার্ভারা পুঁতিগুলো আবার গিলতে শুরু করে। একটা একটা করে গিলতে গিলতে তারা নাগাল পায় খাদ্যের!
বাঃ দারুন তো! প্রাকৃতিক আলোক-সজ্জ্যা :v :v
সুবহানআল্লাহ