আমার একজন শিক্ষক একবার ক্লাসে বলেছিলেন “Google is the best scholar”। আমি আমার জীবনে অনেক ক্ষেত্রে এই কথাটার সত্যতা পেয়েছি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজে আমরা গুগলকে ব্যাবহার করি। গুগল একটা বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি। গুগল প্রতিনিয়ত তাদের কর্মপরিধি বাড়িয়েই চলেছে। যার অনেকগুলো আমরা প্রচুর ব্যবহার করি। যেমন ধরুন – গুগল প্লেস্টোর, মেইল সার্ভিস, ম্যাপ, ড্রাইভ, স্কলার ইত্যাদি, আবার কতগুলো খুবই কম। এই ছোট পোস্টটায় আসলে আমি গুগলের সার্চ ইঞ্জিনের বাইরেও কম পরিচিত, কিন্তু চমৎকার, কিছু জিনিস নিয়েই কথা বলবো। তবে আগে একটু জানিয়ে রাখি এই জিনিসগুলো ব্যবহার করতে হলে কিংবা দেখতে হলে আপনার ইন্টারনেট সংযোগ মোটামুটি দ্রুতগতির হলে ভালো হয়। কম্পিউটারের বড় স্ক্রিনেই এগুলো দেখতে বেশ ভালো লাগে। গুগল ক্রোম ফায়ারফক্স ব্রাউজারেই ভালোভাবে দেখতে পারবেন। আর মোবাইলে গুগল ক্রোম অথবা সবচেয়ে আপডেটেড ইউসি ব্রাউজার ব্যবহার করেও মজাটা উপভোগ করতে পারবেন।
আপনি কি মহাকাশের অসীমতায় হারিয়ে যেতে চান? টেলিস্কোপ আছে কি? না থাকলে আপনার টেলিস্কোপের বিকল্প হতে পারে গুগল স্কাই। বিভিন্ন গ্রহ, নক্ষত্র, কন্সটেলেশন, গ্যালাক্সি ইত্যাদি আপনার মনোরঞ্জনের সবকিছুই পাবেন। আপনার যদি জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর একেবারেই ধারণা না থাকে, তাহলেও এখান থেকে ভালোভাবে শিখতে পারবেন ।

Google Sky
চাঁদের আলোয় কেবল উদ্ভাসিত হয়েই সন্তুষ্ট না হলে আপনার চাঁদের বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখার ব্যবস্থা রেখেছে গুগল। গুগল মুন থেকে আপনি চাঁদের অনেকটা ঘুরে দেখতে পারেন। আর সাথে পড়তে পারেন চাঁদে এখনো পর্যন্ত পাঠানো সকল নভোচারী ও নভোযানের উপর খুঁটিনাটি তথ্য। এমনকি আ্যপলো ১১ এর নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন যেখানে নেমেছিলেন ওই জায়গাটাও দেখতে পারবেন উপর থেকে।

Google Moon
চাঁদের মাটিতে ঘোরাঘুরি শেষে ঘুরতে পারেন মঙ্গলের উপরে। অবশ্য চাঁদের মত অত ছবি পাবেন না। কিন্তু যা পাবেন, সেটাও অল্প না। দেখতে পারেন সৌরজগতের সবচেয়ে বড় আগ্নেয়গিরি অলিম্পাস মনস’কে যার ব্যাপ্তি প্রায় ৬৪৮ কিলোমিটার। কিংবা যে জায়গায় পানি পাওয়া গেছে সেখানটায়ও ঘুরে দেখতে পারেন। আজ পর্যন্ত আবিষ্কার হওয়া মঙ্গলের সকল অঞ্চল, গিরিখাত, আগ্নেয়গিরি ইত্যাদির সর্বশেষ তথ্য পাবেন সাইটটিতে। একেবারে মার্কিং পয়েন্ট সহকারে দেয়া থাকে বলে আপনার ভুল তথ্য পাবার সম্ভাবনা কম।

Google Mars
৪. গুগল ডেজার্ট (Google Desert)
পৃথিবীর বাইরে ঘুরাফেরা করায় সামান্য ফুরসৎ পেলে ঘুরে আসতে পারেন মরুভূমি থেকে। সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার হলো এই মরুভূমির ম্যাপিং বা ছবি তোলার কাজগুলো করা হয়েছে উটের সাহায্যে। এজন্য এটার আরেক নাম ক্যামেল ভিউ।

Camel view
৫. গুগল গ্রাভিটি (Google Gravity)
ঘোরাঘুরি ভালো না লাগলে গ্রাভিটি নিয়ে খেলতে পারেন। গুগল গ্রাভিটির সবচেয়ে বেস্ট এক্সপেরিয়েন্স পাবেন মোবাইল থেকে। যে কোনো ব্রাউজার থেকেই পারবেন। তবে ইউসি এক্ষেত্রে জোস। কম্পিউটারে ট্রাই না করলেই ভালো হয়। ঘাবড়ে যেতে পারেন। লিংকটাতে গিয়ে সার্চ বাটনে চাপ দিয়েই দেখুন ম্যাজিক।

Google Gravity
৬. কিংবা বাজাতে পারেন গিটার ( Guitar), খেলতে পারেন পুরনো স্নেক গেম।

Guitar
ভয়েস সার্চ এ গিয়ে OK google বলে এর পর যা কিছু বলবেন তাই পড়ে শোনাবে খানিকটা। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর চমৎকার ব্যবহার। স্মার্টফোনের বাই ডেফল্ট যে গুগল সার্চ আ্যপ থাকে ওইটা দিয়ে বেস্ট এক্সপেরিয়েন্স পাবেন। যেমন ভয়েস সার্চে গিয়ে স্পষ্টভাবে বলুন “Ok google Chittagong” তাহলে দেখবেন আপনাকে চট্টগ্রামের ব্যাপারে কিছু কথা শোনাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। নির্দিষ্ট গানের নাম স্পষ্টভাবে বললে গানও শোনাবে।
৮. থিংক উইথ গুগল (Think With Google)
এটা ঠিক এন্টারটেইনমেন্টের জন্য নয়। গুগলের নিত্যনতুন টেকনোলজি সম্পর্কে জানতে পারবেন এখান থেকে। কনট্রিবিউটও করা যায় এখান থেকে।
৯। গুগল ক্লাসরুম (Google Classroom)
শিক্ষা বিষয়ক। অতটা জনপ্রিয় নয়, তবে কার্যকরী। কনট্রিবিউট অথবা শেখা দুটোরই সুযোগ আছে। তবে অবশ্যই কিছু শিখতে চাইলে বিভিন্ন কোর্সের কোড নম্বর জানতে হয়। ওইটার জন্য সামান্য খোঁজাখুজি করতে হতে পারে।
১০। গুগল স্লাইডস ( Google Slides)
অনলাইনেই তৈরি করতে পারেন প্রেজেন্টেশনের স্লাইডগুলো। যখন খুশি। বেশ সোজা ও দ্রুত। এছাড়াও আপনার গুগল ড্রাইভে সেভ করে রাখা প্রেজেন্টেশন স্লাইডগুলিও এখানে এডিট করতে পারবেন।

Google Slides
মূলত প্রোগ্রামারদের জন্য। ফায়ারবেস সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় তার অত্যাধুনিক পুশ নোটিফিকেশন টেকনোলজির কারণে। যারা অ্যান্ডয়েডে বিভিন্ন রকমের অ্যাপ ব্যবহার করেন তাদের পুশ নোটিফিকেশন কি সেটা জানারই কথা।
১২. গুগল আর্থে সর্বশেষ সংযোজন থ্রিডি ভিউ। নতুন সংস্করণে বেশ কিছু জায়গার, বেশকিছু স্থাপনা এই মনোমুগ্ধকর ভঙ্গিতে দেখার সুযোগ আছে, ছবিও তুলতে পারেন পছন্দমাফিক এঙ্গেল থেকে। আরো যুক্ত করা হয়েছে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনের ভেতরটাও ঘুরে দেখার সুবিধা।

International Space Station
১৩. গুগল লোকাল গাইড ( Google Local Guide)
এটা মোটামুটি পরিচিত একটা ফিচার। গুগল ম্যাপে সরাসরি কন্ট্রিবিউট যেমন বিভিন্ন স্থান, স্থানের ছবি, কনট্যাক্ট নম্বর ইত্যাদি যুক্ত করার সুযোগ আছে। তবে আমি যখন এটা নিয়ে কিছু ঘাঁটাঘাটি করেছি তখন মনে হয়েছে এটা আমাদের দেশে কনট্রিবিউটর খুব একটা বেশি নয়। আর গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছুই বাকি রয়ে গেছে। পাঠকদের জানানোর লোভটা সামলাতে পারছি না যে আমি পুরো বাংলাদেশের অধিকাংশ পুলিশ স্টেশনের ( প্রায় ৪৫০) ফোন নম্বর যুক্ত করার কাজটা করেছি। ভালোই লাগে। ইচ্ছা আছে হাসপাতালেরও করার। গুগল লোকাল গাইডের বিভিন্ন লেভেল আছে। একেক লেভেলে বেশকিছু সুবিধা পাওয়া যায় যেমন গুগলের বৈশ্বিক লোকাল গাইড টেলিকনফারেন্সে অংশগ্রহন, অনলাইন স্টোরেজ( কখনো কখনো এক টেরাবাইট) , গুগলের দেশভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পাওয়া ইত্যাদি।

Local Guide
১৪. গুগলের আবহাওয়া পূর্বাভাস ( Google Weather Forecast)
আপনি যে শহরে থাকেন সেই শহরের নাম সার্চবারে লিখে তারপর “Forecast” শব্দটা লিখে সার্চবাটনে ক্লিক করলেই ওই শহরের আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্যগুলো পেয়ে যাবেন সহজেই।

Google Forecast
একইভাবে আপনি চাইলে আপনার পছন্দের আন্তর্জাতিক টিভি সিরিয়ালের এপিসোডের দিন-তারিখ কিংবা পছন্দের মুভির রিলিজ ডেট জানতে পারবেন Release বা Episode এই দুটি কী-ওয়ার্ড সিরিয়াল বা সিনেমার নামের পরে যুক্ত করে, খুবই দ্রুত এবং সহজেই।
আজকে এতটুকুই। আপনি যদি গুগলের আরো ব্যতিক্রমী কিছু দিক সম্পর্কে জানেন তাহলে জানাতে ভুলবেন না। ভবিষ্যতে গুগলের কেবল প্রোগ্রামিং রিলেটেড ব্যাপারগুলো নিয়েই লেখার ইচ্ছা আছে। আশা করি, দ্রুতই শেষ করবো।
বিদায়।