পাহাড় বেয়ে বন্ধ গাড়ি উঠে যেতে দেখলেন? কিন্তু কীভাবে?

ফেইসবুক চালাচ্ছেন, হঠাৎ করে একটা নিউজ চ্যানেলের পেইজে ভিডিওর শিরোনাম দেখে থমকে গেলেন- “চুম্বক না জীন রহস্য”! ভিডিও চালিয়ে দেখতে পেলেন – একটা বন্ধ গাড়ি পাহাড়ের গা বেয়ে অনায়াসে উপরের দিকে উঠছে! ভিডিওর শেষের দিকে দাবি করা হলো যে এটা একটা অলৌকিক ঘটনা। একটু দাঁড়ান- ভুল করছেন না তো?

যুক্তির বালখিল্যটা এমন-
ঘটনা ১- যেহেতু মাধ্যাকর্ষণ সবকিছুকে নিচের দিকে টানে।
ঘটনা ২- যেহেতু এসব রহস্যময় স্থানে বন্ধ গাড়ি আর অন্যান্য বস্তু উপরের দিকে চলতে দেখা যায়।

সুতরাং উপসংহার– মাধ্যাকর্ষণ এখানে কাজ করছে না আর অতি-প্রাকৃতিক কোনো ব্যাপার আছে!

বিজ্ঞানের কাছে এর সহজ এবং আমাদের জন্য লজ্জাজনক একটা ব্যাখ্যা আছে।

বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটা হচ্ছে-
আমরা আমাদের অবস্থানের কোণ বুঝতে ইন্দ্রিয় ব্যবহার করি, নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, এক্ষেত্রে, দৃষ্টি ব্যবহার করি। সাধারণত এসব রহস্যময় জায়গা পাহাড়ী এলাকায়, পাহাড় কাটা রাস্তায় হয়। এসব জায়গা থেকে আমরা দিগন্তরেখা ঠিকমত দেখতে পারি না, আর দিগন্তরেখাকে আমাদের মস্তিস্ক প্রসঙ্গ কাঠামো হিসেবে ব্যবহার করে। এজন্য নিচের দিকে নামতে থাকা গাড়িকেও আমরা মনে করি পাহাড় বেয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে।

 যা দেখছেন...

যা দেখছেন…

নিশ্চিত থাকুন- প্রাকৃতিক নিয়ম লঙ্ঘন হচ্ছে না এখানে, অতিপ্রাকৃতও কাজ করছে না; এটা শুধু একটা দৃষ্টিভ্রম। আপনার দৃষ্টির কোণের কারণে আপনার মনে হচ্ছে সবকিছু উপরের দিকে উঠছে। যদিও, বাস্তবে, সবকিছু পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচেই নামছে। পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে আপনার মস্তিস্ক আপনাকে বলছে আপনার গাড়ি, বা বস্তুটি পাহাড়ে চড়ছে।

যা আসলে হয়েছে

যা আসলে হয়েছে

আপনার মস্তিস্ক হয়তো জানা মহাবিশ্বের সবচেয়ে জটিল বস্তু, তবে এটাও বোকা বনতে পারে। এর পরীক্ষা আপনি নিজেও করতে পারেন। একটা দুই ফিট লম্বা যন্ত্র পাওয়া যায় যা দিয়ে আপনি এর পরিমাপ করতে পারেন। যন্ত্রটার নাম Carpenter’s Level.

DSC02315

মাঝের বুদবুদটা যদি কেন্দ্র থেকে কোনো এক দিকে হেলে থাকে তবে বুঝতে হবে জায়গাটা অসমান। যদি বুদবুদটা ডানে থাকে, তার মানে ডানদিক উঁচু। কারণ খুব স্বাভাবিক। বাতাসের আপেক্ষিক গুরুত্ব পানির চেয়ে কম। উঁচু জায়গার দিকেই বুদবুদটি মুখ করে থাকবে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে – গ্র্যাভিটি হিলে বুদবুদটা এক দিকে হেলে থাকে। এবং যেদিকে হেলে থাকে, সেদিকটা খালি চোখে ঢালু মনে হলেও যন্ত্র ঠিকই সেটাকে খাড়াই হিসেবে দেখায়। এটা প্রমাণ করে যে এখানে কোনো রহস্য নাই, আলোচ্য বস্তুটি পদার্থবিদ্যার আইন মেনেই পাহাড়ের গা বেয়ে নামছে। আপনার চোখে যে দৃষ্টিবিভ্রম হচ্ছে, তা অনেকটা এভাবে হচ্ছে…

এর মানে এই না যে অতিপ্রাকৃতিক কোনোকিছুর অস্তিত্ব নাই। থাকতেও পারে। তবে অতিপ্রাকৃত বলে যা চালানো হচ্ছে সেগুলো ব্যাখ্যাতীত নয়, বরং ব্যাখাগুলো বেশী যৌক্তিক এবং প্রমাণলব্ধ। পৃথিবীজুড়ে এমন “Gravity hill”/ “Mystery spot”/ “Spooky hill” অসংখ্য। পাশের দেশ ভারতের লাদাখেও আছে। আমেরিকার মেরিল্যান্ডেও আছে, লোকে মনে করে আমেরিকার গৃহযুদ্ধে নিহতদের আত্মা এই অস্বাভাবিকতার কারণ! ব্যাপারটা বেশ মজার। নিচের ভিডিওটা পেনসিলভ্যানিয়ার পিটসবুর্গ থেকে নেয়া। এখানে কার্পেন্টার লেভেল দিয়েও ব্যাপারটা বোঝানো হয়েছে।

যেখানেই কাউকে এই অলৌকিক ব্যাপারটা প্রচার করতে দেখবেন, অনুগ্রহ করে তাদেরকে সুন্দর করে ব্যাপারটা বুঝিয়ে দেবেন। এই প্রবন্ধটা পড়তে অনুরোধ করতে পারেন।

Comments

আপনার আরো পছন্দ হতে পারে...

0 0 votes
Article Rating
Subscribe
জানান আমাকে যখন আসবে -
guest
2 Comments
সবচেয়ে পুরাতন
সবচেয়ে নতুন সর্বোচ্চ ভোটপ্রাপ্ত
Inline Feedbacks
View all comments
চন্ডাল
চন্ডাল
8 বছর পূর্বে

এটার দরকার ছিলো,
ধন্যবাদ

রণজিৎ কুমার
8 বছর পূর্বে

বিজ্ঞানযাত্রার গ্রুপে এটা নিয়ে সেদিন আলোচনা হলো সেদিন বিষয়টা ঝাপসা ছিলো আজ পুরোপুরি পরিষ্কারভাবে বুঝলাম। শোভন রেজা আপনাকে ধন্যবাদ !

2
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x