বিবিসি এর কভারেজ অবলম্বনে লিখেছেন – ফয়সল অভি
বিবিসি নিউজ হতে জানা গেল, ফিলিপাইনের প্রায় ১৩০০ মাইল বা ২০৯০ কি.মি. পূর্বে মারিয়ানা দ্বীপপুঞ্জের একটি উপদ্বীপ হল গুয়াম। এর আয়তন ২০৯ বর্গ মাইল।। বিশাল প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে ছোট এই দ্বীপের দৈর্ঘ্য ৫০ কি.মি. ও প্রস্থ ১০ কি.মি.। লোকসংখ্যার ৪০% চামারুজ জাতি। এই ছোট দ্বীপের রয়েছে ২০,০০,০০০ সাপ। যে সাপ গুলোকে স্থানীয়রা বলছেন – Brown tree Snake বা বাদামী গেছো সাপ।
প্রতি বর্গ কিলোমিটারে এত সাপ বিশ্বের আর কোথাও নেই। এই দ্বীপটি প্রথমে স্পেনের দখলে ছিল। পরে স্পেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এক সামরিক সংঘর্ষের পর এটি মার্কিনীরা দখল করে নেয়। পরবর্তীতে ১৯৪১ সালে জাপান দখল করে নেয়। আবার ১৯৪৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই দ্বীপ পুনরায় দখল করে নেয়। তারপর ১৯৫০ সালে মার্কিনীরা এখানে নৌ-ঘাঁটি স্থাপন করে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত গুয়াম মার্কিন নৌ-ঘাঁটি।
ধারণা করা হয়, দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় অন্য কোথাও থেকে জাহাজে করে গুয়াম দ্বীপে বাদামী সাপের আমদানী হয়েছিল। বংশ বিস্তার করতে করতে এখন পুরো দ্বীপটাই সাপের দখলে চলে গেছে। এখন এই সাপের অত্যাচারে দ্বীপবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। সেখানে গাছ পালা থেকে সাপ ঝরে ঝরে পড়ছে। সাপের কারনে শর্ট-সার্কিট হয়ে বিদ্যুতের লাইন কেটে যাচ্ছে। স্থানীয়রা একে ব্লাক আউট না বলে, বলছেন ব্রাউন আউট। এটা এখন সেখানকার নিত্যদিনের ঘটনা।
লোকজন এখন তাদের বিছানাতে ও সাপ দেখতে পাচ্ছে। অর্থাৎ মানুষের ঘরে ও সাপ যাচ্ছে। তবে সব চেয়ে বেশি ক্ষতি করছে বন্য প্রাণীর। এ ধরনের গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বনে আপনি প্রচুর পাখির শব্দ শুনতে পাবেন। কিন্তু সাপের আগ্রাসনে সেখানে পাখির কোন শব্দ নেই। বন একেবারে নিঃশব্দ। সেখানকার বেশির ভাগ পাখি এই সাপের পেটে গেছে। গুয়ামের কোকো পাখি এই সাপের কারণে বিলুপ্ত। এই কোকো পাখি জাপানে জনপ্রিয় ও জাতীয় পাখি। গত ৩০ বছরে ১২ প্রজাতির পাখির মধ্যে ১০টি প্রজাতি এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছিলেন, পাখির প্রজাতি বিলুপ্ত হবার পর, খাবারের সংকটে পড়বে এই বাদামী গেছো সাপ। ফলে সাপের সংখ্যা ও কমবে। কিন্তু তারা অবাক হয়ে দেখলেন তা ঘটছে না। এরা খাদ্যাভ্যাস পাল্টিয়েছে। এরা এখন যা পায় তাই খায়। প্রথমে এরা ছোট ছোট পাখি শিকার করে খেত। এর পর পাখি শেষ। এরা এখন ইঁদুর,টিকটিকি থেকে শুরু করে ছোট ছোট স্তন্যপায়ী সবই শিকার করে খাচ্ছে। তবে এই সাপ নিয়ন্ত্রণে গুয়াম দ্বীপের কর্তৃপক্ষ কোন চেষ্টাই বাদ রাখেনি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত তারা আকাশে হেলিকপ্টার থেকে ইঁদুর বোমা ফেলছেন। এগুলোকে বলতে পারেন বিষাক্ত ইঁদুর বোমা। তারা মরা ইদুরের দেহে প্যারাসিটামল ভরে দিচ্ছেন। এই প্যারাসিটামল মানুষের জন্য কোন ক্ষতিকর না। তবে এই সাপের জন্য সেটা মারাত্বক বিষাক্ত জিনিষ।
এই বিষাক্ত মরা ইঁদুর হেলিকপ্টারে থেকে প্যারাসূটের সাহায্যে গুয়ামের জঙ্গলে ফেলা হচ্ছে। বাদামী সাপ নিধনে এই প্যারাসিটামল খুবই কার্যকর হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Reference:
BBC – News
Image: Wikipedia
Very fearful information.