বছর কয়েক আগে Western Cave Conservancy তে সেখানকার কিছু বিজ্ঞানীদের এক দল southern Oregon এর এক গুহার মধ্যে এক বড়সড়, অদ্ভুতদর্শন মাকড়শা আবিষ্কার করেন।তারা এটিকে California ‘র বিজ্ঞানীদের নিকট পাঠিয়ে দেন। সম্প্রতি, ঐ বিজ্ঞানীগণ প্রকাশ করেছেন যে ঐ মাকড়শা হল এক নতুন প্রজাতি, Trogloraptor, এবং মাকড়শার নতুন এক বর্গের সদস্য এটি।
ব্যপারটা সোজাসাপটা লাগছে, তাই না ?
ভুল!
জ্যুডি স্কট্চ্মৌর্ :
“বিজ্ঞন একদমই সরলরৈখিক ধাপে ধাপে গড়া কোন কায়দা নয়। আর বিজ্ঞান সার্বিকভাবে কিছু নিশ্চিত করে না, এটা চলমান। এবং আমি মনে করি না যে এটি কখনও শেষ হয়। এটি কেবল চলতেই থাকে।”
বিজ্ঞানের আসল প্রক্রিয়াকে এক সূত্রে গাঁথার জন্য, জ্যুডি এবং তার সহকর্মীরা বিজ্ঞানের এ ধারাচিত্রটি বানিয়েছেন যাতে করে এটি আরও ভালো করে বোঝানো যায় যে বিজ্ঞান কিভাবে কাজ করে।
লিসা ড. হোয়াইট্, পিএইচডি :
“তুমি এক স্থান থেকে শুরু করলে আর বুঝলে যে, বিজ্ঞানীদের সাথে যোগাযোগ করা দরকার যাদের কাছে হয়তো বাড়তি বা আরও কিছু ধারণা থাকতে পারে এবং এর সব কিছুই সাহায্য করে এখানে বিজ্ঞান আসলে কি সেটি বোঝাতে এবং কীভাবে আমরা বিজ্ঞানের প্রক্রিয়ায় এগোতে পারি তা নিয়ে।”
তো এবার ফিরে তাকানো যাক Trogloraptor আবিষ্কারের প্রবাহচিত্রের দিকে।
এটি রৈখিক প্রবাহের মত কম দেখাচ্ছে ও বেশি দেখাচ্ছে পিনবল মেশিনের মত। তো মাকড়শার সূত্র ধরে এগোনো যাক যেটিকে স্থানীয় বিজ্ঞানীগণ পিনবলের মত পেয়েছিলেন। তাঁরা এটিকে বিজ্ঞানী Tracy Audisio এর কাছে পাঠিয়ে দেন, যিনি ঐ গুহার মধ্যে কি থাকে তা নিয়ে বেশ কৌতূহলী। তিনি এটিকে এক রাতে দুঘণ্টা ধরে পরীক্ষা করলেন, আর এটিকে সনাক্ত করার চেষ্টা চালালেন পর্যবেক্ষণ আর এর সহকর্মীর সাথে আলোচনা করে। তাঁরা কূলকিনারা পেলেন না। এ দু’জন গবেষক কাজ করতেন একাডেমীর Charles Griswold এর সাথে এবং এনার কাছে নমুনাটি নিয়ে গেলেন। তিনি তার নিজের পর্যবেক্ষণ শুরু করলেন।
চার্ল্স্ গ্রিসঔল্ড, পিএইচডি :
“আমি বোতলের মধ্যে এটিকে দেখলাম, মাইক্রোস্কোপের নিচে নয়, এবং আমি ভাবলাম, ওহ্, এ তো এক বাদামী recluse. আকারটা একই ছিলো কিন্তু যখন আমি এটিকে খুঁটিয়ে দেখলাম, ঐ যে বাদামী recluse বৈশিষ্ট্যগুলো, এর মানে দাঁড়ালো, এর দৈহিক গঠনতন্ত্রের নানান বিবরণ আর মিলছে না। চোখ সাজানো আছে ভুল জায়গায়, মুখের দাঁড়া মিলছে না, জাল তৈরির অঙ্গ মিলছে না, এর সবকিছুতেই অমিল ছিল।”
বিজ্ঞান প্রায়ই “ট্রায়াল এন্ড এরর”এর সম্মুখীন হয়। বিজ্ঞানীগণ ধারণাগুলোকে আদানপ্রদান করে থাকেন আর তারপর…
চার্ল্স্ গ্রিসঔল্ড, পিএইচডি :
“তো, প্রথমে আমরা বইয়ের কাছে গেলাম এবং এতে এর কিছুই মিলছে না। এর পরে, আমরা নতুন মাকড়শাকে ভালোভাবে তুলনা করতে থাকলাম এর বিবরণের সাথে অদ্যাবধি জানা পৃথিবীর আর সকল মাকড়শা বর্গের সাথে এবং আরও দেখতে থাকলাম মাকড়শা জীবাশ্বের বইগুলি।”
এপথ ধরে, গবেষকগণ হাইপোথিসিস নির্ধারন করেন এই যে, এ মাকড়শাটি কি এবং কি নয়। Charles একাডেমী’র সংগ্রহ ও অন্যান্য জিনিস দেখলেন।
চার্ল্স্ গ্রিসঔল্ড, পিএইচডি :
“আমরা যতোই একে দেখলাম, ততোই বুঝলাম যে, এর খুঁটিনাটি অদ্যাবধি জানা জীবিত ও বিলুপ্ত প্রত্যেক বর্গের সাথে অমিল ছিল।”
বিজ্ঞানে আর কি করবে যদি তোমার দেয়ালের পিঠ ঠেকে যায়? চলে যাও বিজ্ঞানী মহলের কাছে।
চার্ল্স্ গ্রিসঔল্ড, পিএইচডি :
“তোমার সহকর্মীদের সাথে পরামর্শ করো যারা জ্ঞানসম্পন্ন, যারা তোমার চাইতে কিছুটা ভালোই জানেন এবং এক কিনারা করে দেন তোমার উপসংহারের, প্রমাণ, জিজ্ঞাসা, এ ব্যাপারে কি মনে হয়? উত্তর যা এলো তা হল, না, আমরা এমন আগে কখনও দেখিনি।”
তারা এক হাইপোথিসিস বানালেন :
চার্ল্স্ গ্রিসঔল্ড, পিএইচডি :
“আমাদের মনে হয় এটি নতুন এক বর্গ, গবলিন মাকড়শার সাথে এক সম্পর্ক আছে, কিন্তু নতুন বর্গের বলাটা বেশ ঝুঁকির ব্যাপার। এমনটি মাঝেমধ্যে ঘটে না, এবং শেষবার যখন এমন হয়েছিলো উত্তর আমেরিকাতে, তা ছিল শতাধিক বছর আগে।”
সময় হয়েছে বিজ্ঞান মহল থেকে আরও কিছু নেবার।
চার্ল্স্ গ্রিসঔল্ড, পিএইচডি :
“তাই আমরা প্রকাশনার নিকট লিখলাম; তারা এক কাগজ পাঠালেন এবং তাতে নানান বিজ্ঞানীর মন্তব্য ছিলো। আর তারা স্বীকারও করেছিলেন যে, আমরা বেশ ভালোই কাজ করেছি।”
বেশ চলো ফুর্তি করা যাক্! দাঁড়াও। মনে আছে জ্যুডি কি বলেছিলেন?
জ্যুডি :
“এবং আমি মনে করি না যে এটি কখনও শেষ হয়। এটি কেবল চলতেই থাকে। চলতেই থাকে। চলতেই থাকে।”
আর এটি Trogloraptor এর ক্ষেত্রেও সত্য।
চার্ল্স্ গ্রিসঔল্ড, পিএইচডি :
“California Academy of Sciences এর arachnology ল্যাবে আমরা মাকড়শার এই বিশেষ শ্রেণীকে নিয়ে বেশ উৎসাহী ছিলাম। আর আমাদের বড় এক দল ছিল– বিজ্ঞানীদের, শিক্ষার্থীদের, ডক্টরউত্তর ডিগ্রীধারী গবেষকগণের– যারা বুঝতে চান গবলিন মাকড়শার বিবর্তনের ব্যাপারে।”
তাই তারা আরও প্রশ্ন তুলে ধরলেন, আরও হাইপোথিসিস্ এবং পর্যবেক্ষণ সামনে আনলেন, আরও পরীক্ষা করতে থাকলে Troglorapto এর ওপরে।
চার্ল্স্ গ্রিসঔল্ড, পিএইচডি :
“এর শ্বসনযন্ত্রের এক বিস্ময়কর প্রক্রিয়া আছে, যেভাবে এটি শ্বাস-প্রশ্বাস করে। লক্ষণীয় থাবা, যার কারনে আমাদের এর এক নাম দিতে হয় অঙ্গব্যবচ্ছেদ-বিদ্যা এর মাধ্যমে। Facundo Labarque আসলেই ছিন্নবিচি্ছন্ন করেছিলেন Trogloraptor এর পা এবং দেখেছিলেন এর পেশীতন্তুর সংযোগ। আমার পিএইচডি শিক্ষার্থিরা ঝুঁকেছিলেন Haplogyne মাকড়শার phylogeny বোঝার প্রচেষ্টাতে, বিশেষকরে গবলিন মাকড়শাদের, ক্ষুদ্রাণুবিক তথ্যের ব্যাবহার করে।”
এবং Trogloraptor রা স্বাভাবিকভাবে? এসব মাকড়শাগুলো ঐ গুহায় বেশ সুখেই জীবন কাটাচ্ছে এবং এবং সম্ভবত পাশের অন্য গুহাগুলিতেও।
চার্ল্স্ গ্রিসঔল্ড, পিএইচডি :
“গুহাগুলি সুরক্ষিত।”
সুতরাং সেই পদ্ধতিটা আবার দেখা যাক্, এবার গতিটা বেশি। পিনবল মেশিন, ঠিক আছে? এবং এই পদ্ধতি কেবল বিজ্ঞানীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়, বরং আমাদের প্রত্যেকের জন্যই প্রযোজ্য।
লিসা ড. হোয়াইট্, পিএইচডি :
“আমরা সবাই প্রতিদিন বিজ্ঞানমূলক কিছু না কিছু করি। জানো তো, আমরা সবাই পর্যবেক্ষণ করি, আমরা প্রশ্ন করি, আমরা আমাদের ধারণাকে মানুষের কাছে বলে যাচাই করি, আমরা ঠিকঠাক ধারণায় চলে আসি। তো আমি এটি ভাবতে ভাল লাগে যে, এটি বিজ্ঞানের দুর্বোধ্যতাকে অনেকটাই ভেদ করে। সবাই বিজ্ঞানমূলক কাজ করতে পারে।”
বিজ্ঞান নিয়ে পড়া হয়নি।তবে, আপনাদের কল্যাণে অনেক কিছু জানতে পেরেছি। সেজন্য ধন্যবাদ না জানিয়ে পারলাম না।♥️♥️♥️♥️♥️♥️♥️