চাঁদের তৈরি হওয়ার ব্যাপারটা বিজ্ঞানীদের জন্য সবসময়েই একটা মধুর রহস্য হয়ে ছিলো। আমাদের সবচেয়ে সুন্দর অনুমানটা হচ্ছে, Giant Impactor Hypothesis অর্থাৎ ব্যাপক সংঘর্ষ প্রকল্প। সংক্ষেপে এই প্রকল্পটা বলা যায় এভাবে, চাঁদ তৈরি হয়েছে যখন একটা ছোটো গ্রহ পৃথিবীর সাথে ধাক্কা খেয়েছে। সেই গ্রহটার আকার হয়তো মঙ্গলের সমান। এই সংঘর্ষের ফলে প্রচুর পরিমাণ ধ্বংসাবশেষ ছড়িউয়ে পড়ে মেঘের মত তৈরি করেছিলো, সেগুলোর অনেকগুলো চক্কর খাচ্ছিলো পৃথিবীকে ঘিরে, এবং সেগুলোই শেষ পর্যন্ত জড়ো হয়ে জমাট বেঁধে চাঁদে পরিণত হয়েছিলো।
আজ আমরা চাঁদের ব্যাপারে যা যা জানি, এই ব্যাখ্যাটা দিয়ে তার ব্যাখ্যা দেয়া যায়। এই সংঘর্ষের ফলে পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠের (ওপরের দিকের) অংশ ছিটকে পড়ার কথা। অর্থাৎ, মাটির অনেক নিচের দিকে যে গলিত লোহার যে গোলক আছে, সেটা থেকে যাবে; ছিটকে বের হয়ে যাবে বাইরের অংশ। এখান থেকে আপনি মনে করতে পারেন যে, তাহলে চাঁদের ভূ-তত্ত্ব পৃথিবীর ভূ-পৃষ্ঠের মত হবার কথা, লোহা কম থাকার কথা। এবং তেমনই দেখা গেছে। চলছে ভালোই……
যাই হোক, চাঁদের রাসায়নিক গঠনও কিন্তু পৃথিবীর পৃষ্ঠের মত, একেবারে মৌলগুলোর আইসোটপিক গঠন পর্যন্ত। একটু বেশিই মিল! এতো বেশি মিল যে, যে গ্রহটা পৃথিবীর সাথে ধাক্কা খেয়ে চাঁদ তৈরি করেছিলো, সেটাকে পৃথিবীর যমজ বোন হতে হবে। সেটা ঘটার সম্ভাবনা এতোদিন ধরা হতো ১% এরও কম। অর্থাৎ, ঐ ব্যাপক সংঘর্ষ প্রকল্পটাকে ধরা হচ্ছিলো প্রায় অসম্ভব ক্যাটাগরিতে।
২০১৫ এর এপ্রিলের প্রথম দিকে সায়েন্স জার্নাল Nature-এ একটা গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছিলো, যেখানে উচ্চমানের কম্পিউটার মডেল ব্যবহার করা হয়েছে আমাদের সৌরজগতের আদি গঠন বোঝার জন্য। তারা পৃথিবীর যমজ বোন থাকার এবং সেই সংঘর্ষ ঘটার সম্ভাবনা যাচাই করে দেখেছেন সেই মডেল দিয়ে। মডেল দেখিয়েছে, এমনটা ঘটার সম্ভাবনা বেশ ভালোই। ঐ মডেল বলছে, আদি সৌরজগতে প্রায় একই স্থান থেকে জন্ম নেয়া গ্রহগুলোর রাসায়নিক গঠন এক হবার সম্ভাবনা বেশ প্রবল। কারণ, তারা যেন একই মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নিয়েছে – সূর্য থেকে একই দূরত্বে, একই ভিত্তিপ্রস্তর থেকে।
সম্ভাব্যতার বিচারে ঐ ব্যাপক সংঘর্ষ হবার সম্ভাবনা ২০% থেকে ৪০%…… প্রায় অসম্ভব ক্যাটাগরি থেকে বেরিয়ে অনুমানটা চলে এসেছে “মোটামুটি সম্ভব” ক্যাটাগরিতে। অগ্রগতি বেশ ভালোই হয়েছে, বলা যায়। আরো জানার অপেক্ষায় রইলাম।
Reference:
Written by – OB, The Earth Story
http://goo.gl/PhBJyf,
http://goo.gl/2blKx9,
http://goo.gl/k6HarI,
http://goo.gl/8wS6zf,
http://goo.gl/CaupMB