লেখার শিরোনাম দেখেই অনেকে ভাবছেন, এ আবার কেমন ধারা কথা! এতকাল শুনে এসেছি, পানির অপর নাম জীবন। আজ আবার হাইড্রোজেন বন্ড কোথা হতে এলো? আপনারা কেউ ভুল শেখেননি আসলে। পানির অপর নাম জীবন ঠিকই, কিন্তু এই পানি বা H20 কে জীবনের সম্মান এনে দিয়েছে হাইড্রোজেন বন্ড। এখন আসা যাক, হাইড্রোজেন বন্ড কী – সে কথায়।
হাইড্রোজেন বন্ড: হাইড্রোজেন মৌলের আণবিক সংখ্যা এক। এর কেন্দ্রের নিউক্লিয়াসে একটি প্রোটন আছে, আর সেই প্রোটনের চারপাশে নির্দিষ্ট গোলাকার কক্ষপথে একটি ইলেকট্রন ঘুরতে থাকে। হাইড্রোজেনের সাথে অন্য মৌলের বন্ধন তৈরির সময় আরেকটি বিষয় জানা জরুরি, তা হলো তড়িৎ ঋণাত্মকতা। কোনো অণুতে অবস্থিত পরমাণুর নিজের দিকে আকর্ষণ করার প্রবণতাই তড়িৎ ঋণাত্মকতা। যখন কোনো হাইড্রোজেন পরমাণু নিজের চেয়ে অধিক তড়িৎ ঋণাত্মকতা সম্পন্ন মৌলের (যেমন – নাইট্রোজেন, ফ্লোরিন, অক্সিজেন ইত্যাদি) পরমাণুর সাথে বন্ধন তৈরি করে, তখন তারা একে অপরের একটি করে ইলেকট্রন শেয়ার করে। এমন বন্ধনকে সমযোজী বন্ধন বলা হয়, আর এই শেয়ারকৃত ইলেকট্রনকে বলে ইলেকট্রন জোড়। সমযোজী বন্ধনের শেয়ারকৃত ইলেকট্রন জোড় অধিক তড়িৎ ঋণাত্মকতাসম্পন্ন মৌলের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকে। পানির ক্ষেত্রে জোড়টি অক্সিজেনের কাছে সরে এসে আংশিক ঋণাত্মক চার্জ সৃষ্টি করে। আর হাইড্রোজেন থেকে দূরে সরে তার ওপর আংশিক ধনাত্মক চার্জ সৃষ্টি করে। নিচের ছবিটিতে হাইড্রোজেন আর অক্সিজেনের সমযোজী বন্ধনের আংশিক চার্জগুলো দেখানো হয়েছে।
-
ছবি: অধিক তড়িৎ ঋণাত্মকতাসম্পন্ন মৌলের দিকে শেয়ারকৃত ইলেকট্রন জোড় বেশি ঝুঁকে আছে
একই ভাবে অক্সিজেন পরমাণুর অপরদিকেও আরেকটি হাইড্রোজেন পরমাণু যুক্ত হয়, এবং সেখানেও শেয়ারকৃত ইলেকট্রন জোড়টি অক্সিজেনের দিকে সরে আসে। তাহলে দুইটি আংশিক ঋণাত্মক চার্জ অক্সিজেনের দিকে, আর দুইটি আংশিক ধনাত্মক চার্জ দুই হাইড্রোজেন পরমাণুর দিকে সৃষ্টি হয়। এভাবে পানির অণুটির মধ্যে দুইটি মেরুর সৃষ্টি হয়। কোনো জায়গায় অনেকগুলো অণু একসাথে থাকলে অণুগুলোর মধ্যে সৃষ্ট হওয়া বিপরীত মেরুগুলো কাছাকাছি আসে। তখন একটি অণুর হাইড্রোজেন প্রান্ত (আংশিক ধনাত্মক) অন্য অণুর আংশিক ঋণাত্মক প্রান্তের দিকে দুর্বল আকর্ষণ অনুভব করে। এভাবে পানির অণুগুলো পরস্পরের সাথে দুর্বল আকর্ষণ বলের মাধ্যমে যুক্ত থাকে।
ছবি: পানির অণুগুলোর হাইড্রোজেন বন্ড
উপরের ছবির মতো পানির অণুগুলোর বিপরীত প্রান্তগুলো একে অপরের দিকে আকর্ষিত হয় এবং অনেকগুলো পানির অণু একত্রিত হয়ে বিরাট আণবিক গুচ্ছ তৈরি করে। ফলে পানির অণুগুলোকে আলাদা করতে প্রচুর শক্তির প্রয়োজন হয়। এ কারণেই পানি কক্ষ তাপমাত্রায় তরল অবস্থায় থাকে আর এর হাইড্রোজেন বন্ড ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভেঙে যায়। যদি পানির অণুতে হাইড্রোজেন বন্ড না থাকতো তাহলে পানি গ্যাসীয় অবস্থায় বিরাজ করত। তরল পানির অভাবে জীবন সৃষ্টি হতো না কিংবা জীবনধারণ করাও সম্ভব হতো না। আর এই H2O-কে জীবনধারণের উপযোগী তথা তরল করে রাখার কাজ করছে হাইড্রোজেন বন্ড। তাই হাইড্রোজেন বন্ডের গুরুত্ব বিবেচনা করে বলা যায়, হাইড্রোজেন বন্ডের অপর নাম জীবন।
সহায়ক বইয়ের তালিকাঃ
১। রসায়ন – ড. রণজিৎ দাশ
২। রসায়ন – ড. মু: আব্দুস সালাম
এই পোস্টের সর্বমোট পাঠকসংখ্যা:
7,203
Comments