পৃথিবী তার নিজ অক্ষে ঘণ্টায় ১৪৭০.২৩ কি.মি. বেগে ঘুরতে থাকে। যদি পৃথিবী হঠাৎ করে ঘোরা বন্ধ করে দেয়, তবুও আমাদের পরিবেশের সবকিছু কিন্তু আগের মত একই বেগে থাকবে। তার ফলে আপনার পাংখা গজাবে এবং আপনি আকাশে উড়ে যাবেন! বুঝতে একটু সমস্যা হলো? একটু বাস্তব উদাহরণ দেয়া যাক – ধরুন আপনি বাসে করে কোথাও যাচ্ছেন এবং আপনার বাসের বেগ ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। হঠাৎ আপনার বাসের সামনে একটা কুকুর এসে গেল এবং চালক কুকুরকে বাঁচাতে হার্ড ব্রেক করলেন। এর ফলে আপনারা সবাই অনেক জোরে সামনে ঝুঁকে যাবেন। দাঁড়ানো সুপারভাইজারটির অবস্থা ডাইভ দিয়ে বল ধরার মত হবে।
ওপরের ঘটনাটা ১২০ কি.মি. এর জন্য ছিলো। কিন্তু ব্যাপারটা যখন ১৪৭০.২৩ কি.মি.-র জন্য হবে, তা নিশ্চয় সুখকর হবে না। এখন বলি আরও কী কী হবে – পৃথিবীর নিজ অক্ষের ঘূর্ণন যখন কমতে থাকবে তার সবচেয়ে বড় খারাপ ফল পড়বে বিমান যাতায়াতে। বেশিরভাগ বিমান জিপিএস ব্যবহার করে থাকে, জিপিএস স্যাটেলাইট থেকে তথ্য নিয়ে থাকে। যখন পৃথিবীর নিজ অক্ষের ঘূর্ণন কমে যাবে, স্যাটেলাইট পৃথিবীর সাথে নিজের অবস্থান ঠিক করতে পারবে না, যার ফল বিমান দুর্ঘটনা। পৃথিবীর একপাশে (যে পাশে সূর্য থাকবে) দিনের পরিমাণ বেড়ে যেতে থাকবে, আর অন্য পাশে একই সাথে রাতের পরিমাণও বেড়ে যাবে। যার জন্য আমাদের সাধারণ ঘুমের সমস্যা হবে। মতিভ্রম হবে, আমাদের শরীরের পেশীগুলো কাজ করা বন্ধ করে দেবে, আমদের মস্তিক তথ্যকে সঠিক ভাবে প্রসেস বা প্রক্রিয়াজাত করতে পারবে না।
আচ্ছা, যদি হঠাৎ করে ঘূর্ণন বন্ধ না হয়ে আস্তে আস্তে গতি কমে, তাহলে কী হবে? যখন ঘূর্ণন গতি ৯০০-৫০০ কি.মি. প্রতি ঘণ্টায় হবে তখন কী হবে? এ সময় ১০-১৩ দিন পর রাত আসবে। রাত থাকবে ১০-১৩ দিন, আবার দিন আসবে। এই ফল পড়বে আমাদের যান্ত্রিক শক্তি বিতরণে। ধান গম উৎপাদন ব্যাপক হারে হ্রাস পাবে, আর এই ধান আর গমের ওপরেই আমাদের খাদ্য নির্ভরতা।
আমাদের পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি পৃথিবীর জলভাগকে একটা আকৃতিতে রাখে, কিন্তু যেহেতু বেগ কমে যাবে তাই জলভাগের অবস্থান (এবং সে কারণেই) আকার পরিবর্তিত হবে; সকল সমুদ্র উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ফিরতে থাকবে। আমাদের পৃথিবী ৩টি স্তর দিয়ে গঠিত যেহেতু গতির পরিবর্তন হবে এবং ভেতরের স্তরগুলো এই পরিবর্তন সামলাতে ধাক্কা খাবে একে অপরের সাথে। এর ফল ভীষণ ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত। টানা রাত হবার ফলে তাপমাত্রা কমে -৫৫ ডিগ্রিতে চলে আসবে, যা সাধারণ শীতের ঠাণ্ডার চেয়ে ২০০ গুণ বেশি। যখন গতি ৫০০-১০০তে নেমে আসবে, তখন দিনের পরিমাণ এবং রাতের পরিমাণ হবে প্রায় ৭২০ ঘণ্টা বা ১ মাসের সমান। মানুষ এই তাপমাত্রার সাথে নিজেদের খাপ খাওয়াতে শুরু করবে। আমাদের পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র বিলীন হবে থাকবে এবং মিলিয়ন মিলিয়ন মানুষ মারা যাবে মহাশূন্য থেকে আসা তেজস্ক্রিয়তার জন্য। কারণ, এই চৌম্বকক্ষেত্র মহাশূন্য থেকে আসা বিকিরণকে মানুষকে রক্ষা করে।
যখন বেগ ১০০-১১ এর ভেতর হবে, তখন পৃথিবীর আবহাওয়া একেবারে বিলীন হয়ে যবে। সব সাগর মহাসাগর দুই ভাগে চলে যাবে উত্তর মেরুতে এবং দক্ষিণ মেরুতে। মাঝে তৈরি হবে হাজার হাজার মাইলের বিস্তীর্ণ ভুমি। আরও মানুষ মারা যাবে খাবারের অভাবে এবং অক্সিজেনের অভাবে।
বেগ ০-১১ হলে পৃথিবী সম্পূর্ণ স্থির, কিন্তু তবুও সে সূর্যের চারিদিকে ঘুরবে এবং ৬ মাস রাত আর ৬ মাস দিন থাকবে। বিষুবরেখার দিকে তাপমাত্রা থাকবে মেরু অঞ্চলের চেয়ে অনেক বেশি। বেঁচে থাকার সব আশা শেষ। ৬ মাস প্রচণ্ড উত্তাপ আর ৬ মাস তাপমাত্রা -৫৫ ডিগ্রীরও নিচে থাকবে। মানুষের শরীর তাকে এই পরিবেশে খাপ খাওয়াতে সাহায্য করবে। এভাবেই চলতে থাবে চলবে, যত দিন না সূর্য “লাল দানবে” পরিণত হয়।