এক এর চেয়ে বড় ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা যার শুধুমাত্র দুটি উৎপাদক ১ এবং সংখ্যাটি নিজে তাই মৌলিক সংখ্যা। ‘১’ মৌলিক বা যৌগিক কোনটিই নয়। প্রথম থেকেই মৌলিক সংখ্যা গণিতের তাৎপর্যপূর্ণ ও রহস্যময় অংশ, এখনো মৌলিক সংখ্যা সম্পর্কিত অনেকগুলো কনজেকচার বা ধারণা রয়েছে।যেমন গোল্ডব্যাক কনজেকচার–
“২ এর চেয়ে বড় সকল জোড় সংখ্যাকে দুটি মৌলিক সংখ্যার যোগফল আকারে প্রকাশ করা যায়। ”
মৌলিক সংখ্যা বিষয়ক সবচেয়ে মৌলিক প্রশ্নটা হচ্ছে- মৌলিক সংখ্যা কি নির্দিষ্ট? দক্ষতার সাথে প্রথম এই প্রশ্নের উত্তর দেন মহান গ্রীক গণিতবিদ ইউক্লিড।
প্রমাণঃ ধরুন মৌলিক সংখ্যা নির্দিষ্ট এবং তারা হল ২,৩,৫,৭,১১,……N.এখন X=১+(২×৩×৫×৭×১১×……×N) সংখ্যাটি বিবেচনা করুন, এই সংখ্যাটি স্পষ্টভাবে ২,৩,৫,৭,১১,………N দ্বারা বিভাজ্য নয়। কারণ এই সংখ্যাটিকে ২,৩,৫,৭,১১,………N এর যেকোন একটি সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে ভাগশেষ ১ থাকবে।
এখন X সংখ্যাটি যদি অন্য কোন যৌগিক সংখ্যা দ্বারা বিভাজ্য হয় তাহলে X কে দুই বা ততোধিক মৌলিক সংখ্যার গুণফল আকারে লেখা যাবে(পাটিগণিতের মৌলিক উপপাদ্য)। অর্থাৎ X কে যেকোনো মৌলিক সংখ্যা নিঃশেষে বিভাজ্য করবে। কিন্তু সে মৌলিক সংখ্যাটি ২,৩,৫,৭,১১,১৩,……N এর কোনটিই নয় কারণ, X কে ২,৩,৫,৭,১১,………N দ্বারা নিঃশেষে ভাগ করা যায় না । সুতরাং নতুন আরেকটি মৌলিক সংখ্যা (মনে করি P)পাওয়া গেল। এভাবে অসংখ্য মৌলিক সংখ্যা পাওয়া যাবে(যেহেতু Pএর মান নির্দিষ্ট নয়) তাহলে আমাদের অনুমান ভূল এবং মৌলিক সংখ্যা অসংখ্য।
মৌলিক সংখ্যার ২য় গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার আসে আরো দুইহাজার বছর পরে ১৮৯৬ সালে, গণিতবিদ HADAMARD এবং Charles-Jean de La Vallee Poussin স্বতন্ত্রভাবে দেখান যে কীভাবে স্বাভাবিক সংখ্যার মাঝে মৌলিক সংখ্যাসমূহ বন্ঠিত থাকে যেটাকে মৌলিক সংখ্যার উপপাদ্য বলা হয়।
“N একটা যথেষ্ট বড় পূর্ণসংখ্যা হলে, 0 থেকে N পর্যন্ত প্রায় Ln(N) সংখ্যক মৌলিক সংখ্যা আছে। ”
মৌলিক সংখ্যা ফ্যাক্ট
- এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় মৌলিক সংখ্যা হল ২^৫৭৮৮৫১৬১-১ যা একটি MERSENNE PRIME যার মোট অংক হল ১৭৪২৫১৭০ টি।
- ১০০ এর চেয়ে ছোট ২৫ টি, ১০০০ এর চেয়ে ছোট ১৬৮ টি, ১০০০০০ এর চেয়ে ছোট ৯৫৯২ টি মৌলিক সংখ্যা আছে।
- জেনিস সংখ্যা ৮৬৭৫৩০৯ একটি মৌলিক সংখ্যা।
- ১০১০১০১০১০১০১০১০১০১০১০১০১০১০১০১০১০১০১ ও ১১১১১১১১১১১১১১১১১১১ দুটি সংখ্যাই মৌলিক সংখ্যা।
কোন সংখ্যা মৌলিক কিনা তা নির্ণয়
কোন সংখ্যা মৌলিক কিনা তা জানতে প্রথমে সংখ্যাটির বর্গমূল নির্ণয় করুন।
এখন প্রাপ্ত বর্গমূলের চেয়ে ছোট মৌলিক সংখ্যাসমূহের তালিকা তৈরি করুন।
এখন যাচাই করুন মূল সংখ্যাটি তালিকার সংখ্যাগুলো দ্বারা বিভাজ্য কিনা। যদি বিভাজ্য না হয় তাহলে সংখ্যাটি মৌলিক।
উদাহরণঃ ৪১৯ সংখ্যাটি মৌলিক কিনা যাচাই করি। ৪১৯ এর বর্গমূল ২০.৪৭ এর চেয়ে ছোট মৌলিক সংখ্যাসমূহ হল ২,৩,৫,৭,১১,১৩,১৭,১৯। এর একটি দ্বারাও ৪১৯ নিঃশেষে বিভাজ্য নয়। সুতরাং ৪১৯ একটি মৌলিক সংখ্যা।
বড় কোন সংখ্যা হলে এই পদ্ধতিতে যাচাই করা অনেক কঠিন কিন্তু দুই লাইনের কম্পিউটার প্রোগ্রামের সাহায্যে সহজে একটি সংখ্যা মৌলিক কিনা তা নির্ণয় করা যায়।
মৌলিক সংখ্যার প্রকারভেদ
গণিতবিদগণ মৌলিক সংখ্যার আকার,ধরন এবং তারা পূর্ণসংখ্যার সাথে কীভাবে সম্পর্কিত তার উপর ভিত্তি করে এগুলোকে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করেন। মৌলিক সংখ্যার অনেক প্রকারভেদ রয়েছে। মৌলিক সংখ্যার কিছু প্রকারভেদ নিয়ে আজকে আলোচনা করব।
MERSENNE PRIME: যে মৌলিক সংখ্যাগুলোকে 2^N-1 আকারে লেখা যায় সেগুলো MERSENNE PRIME. [এখানে N একটি মৌলিক সংখ্যা ও N>1] যেমন 2^3-1=7 একটি MERSENNE PRIME.
FERMAT PRIME: যে মৌলিক সংখ্যাগুলোকে 2^(2^N)+1 আকারে লেখা যায় সেগুলো FERMAT PRIME.[এখানে N একটি স্বাভাবিক সংখ্যা। ] যেমন, 2^(2^2)+1=2^4+1=16+1=17 একটি FERMAT PRIME.
PRIMORIAL PRIME: যে মৌলিক সংখ্যাগুলোকে Pn#+1 অথবা Pn#-1 আকারে লেখা যায় সেগুলো PRIMORIAL PRIME. এখানে Pn# মানে প্রথম n টি মৌলিক সংখ্যার গুণফল। উদাহরণস্বরূপ ২১১ একটি PRIMORIAL PRIME কারণ ২১১ কে P4#+1 আকারে লেখা যায়।
P4#+1=২*৩*৫*৭+১=২১০+১=২১১
SOPHIE GERMAIN PRIME:এই মৌলিক সংখ্যাগুলোকে 2P+1 আকারে লেখা যায়। এখানে P আরেকটি মৌলিক সংখ্যা। যেমনঃ ২৩=২*১১+১ একটি SOPHIE GERMAIN PRIME.
SAFE PRIME:যদি P একটি মৌলিক সংখ্যা হয় এবং (P-1)/2 ও একটি মৌলিক সংখ্যা হয় তাহলে P একটি SAFE PRIME. যেমনঃ ৫,৭,১১,২৩ ইত্যাদি SAFE PRIME.
EMIRP PRIME:একটু লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন “EMIRP” শব্দটি “PRIME” শব্দটির বর্ণগুলোর বিপরীত ক্রমঅনুসারে সাজানো। অর্থাৎ যে সকল মৌলিক সংখ্যাকে উল্টো করে লিখলে অন্য আরেকটি মৌলিক সংখ্যা পাওয়া যায় সেগুলোই EMIRP PRIME. যেমনঃ ১৩-৩১,১৭-৭১ ইত্যাদি।
দূরত্বভিত্তিক প্রকারভেদঃ দুটি ক্রমিক মৌলিক সংখ্যার ব্যাবধান কখনো বিজোড় সংখ্যা হয় না (১ ছাড়া )কারণ ২ একমাত্র জোড় মৌলিক সংখ্যা।শুধুমাত্র ২ ও ৩ এর ব্যাবধান ১।বাকি মৌলিক সংখ্যাগুলো বিজোড় হওয়ায় ব্যাবধান সবসময় জোড় হয়। দুটি ক্রমিক মৌলিক সংখ্যার দূরত্বের উপর ভিত্তি করে মৌলিক সংখ্যার অনেক প্রকারভেদ আছে।
- দুটি ক্রমিক মৌলিক সংখ্যার ব্যাবধান ২ হলে তারা TWIN PRIME.
- দুটি ক্রমিক মৌলিক সংখ্যার ব্যাবধান ৪ হলে তারা COUSIN PRIME.
- দুটি ক্রমিক মৌলিক সংখ্যার ব্যাবধান ৬ হলে তারা SEXY PRIME.