লিপ ইয়ারের নাম আমরা শুনেছি। এটা কেন হয়, কবে হয়, সেটাও জানি। কিন্তু লিপ সেকেন্ডের (Leap Second) নাম কি এতোটা শুনেছি? অনেকে হয়ত এইমাত্রই শুনলেন।
তো? শোনাটাই আসল। এরপর আসে জানার পালা। জেনে নিন যে, লিপ ইয়ারের মত এটিও সময় অ্যাডজাস্ট করার একটি প্রক্রিয়া। মজার ব্যাপার হল, এ বছরের (২০১৫) ৩০ জুন ছিল লিপ সেকেন্ডের দিন!
লিপ সেকেন্ড কী?
লিপ সেকেন্ড মানে হল, রাত পার হয়ে নতুন একটা দিন শুরু হবে ২৩ ঘণ্টা ৫৯ মিনিট ৬০ সেকেন্ড পার হয়ে ০০.০০.০০ সেকেন্ডে। এক্ষেত্রে বাড়তি এক সেকেন্ডটিই লিপ সেকেন্ড। আবার, সেকেন্ডের হিসেব থেকে এক সেকেন্ড হাপিশও হয়ে যেতে পারে! মানে, রাত পার হয়ে নতুন একটা দিন শুরু হবে ২৩ ঘণ্টা ৫৯ মিনিট ৫৮ সেকেন্ড পার হয়ে একেবারে ০০.০০.০০ সেকেন্ডে। এক্ষেত্রে যে সেকেন্ডটি কাটা পড়ল, সেটিও লিপ সেকেন্ড।
আরেকটু খোলাসা করে বলি। ধনাত্মক (পজিটিভ) লিপ সেকেন্ড হল, ঊনষাট সেকেন্ডের সাথে বাড়তি এক সেকেন্ড যোগ হয়ে ষাট সেকেন্ড হবে, এবং তারপরই পরবর্তী মাসের প্রথম দিন শুরু হবে। যেমনঃ প্রতিদিন ঘড়িতে ২৩:৫৯:৫৯-এর পরই ০০:০০:০০ অর্থাৎ পরের দিন হয়। কিন্তু ধনাত্মক লিপ সেকেন্ড যেদিন হিসেব করা হবে, সেদিন ২৩:৫৯:৫৯ এর পর হবে ২৩:৫৯:৬০। এবং তার পরে হবে ০০:০০:০০, অর্থাৎ পরের দিনের শুরু। কিন্তু ঋণাত্মক (নেগেটিভ) লিপ সেকেন্ডের ক্ষেত্রে টাইম অ্যাডজাস্টমেন্টের জন্য ২৩ ঘণ্টা ৫৯ মিনিট ৫৮ সেকেন্ডের পরেই ০০.০০.০০ সময় ধরে পরবর্তী দিন শুরু করা হবে। অর্থাৎ ঊনষাট সেকেন্ড পর্যন্তও আপনাকে যেতে দেওয়া হবে না। ফলে আপনি হারাচ্ছেন স্বাভাবিক একটা সেকেন্ড।
সাধারণত এক দিন হয় ২৪ ঘণ্টায়, অর্থাৎ ৮৬,৪০০ সেকেন্ডে। কিন্তু যেদিন ধনাত্মক লিপ সেকেন্ড গণনা করা হবে, সেদিন ২৪ ঘণ্টা হবে ৮৬,৪০১ সেকেন্ডে। অর্থাৎ সেদিনের মেয়াদ ১ সেকেন্ড বেশি হবে। আর যেদিন ঋণাত্মক লিপ সেকেন্ড গণনা করা হবে, সেদিন ২৪ ঘণ্টা হবে ৮৬,৩৯৯ সেকেন্ডে।
উল্লেখ্য যে, আজ পর্যন্ত সবই ধনাত্মক লিপ সেকেন্ডের কাহিনীই ঘটেছে।
লিপ সেকেন্ড কেন গণনা করা হয়?
নিশ্চয় আপনাদের মাথায় প্রশ্ন গিজগিজ করছে লিপ সেকেন্ডের “কারণ” নিয়ে? চলুন, এ ব্যাপারে নাসার ব্যাখ্যা শুনি।
এ বছর যখন আমরা ধনাত্মক লিপ সেকেন্ড উদযাপন করছিলাম, তখন সে বিষয়ে মেরিল্যান্ডের গ্রিনবেল্ট-এর নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের তরফ থেকে ড্যানিয়েল ম্যাকমিলান বিস্তারিত বিবৃতি দিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছিলেন, আহ্নিক গতির সঙ্গে তাল মেলানোর জন্য এই জুন মাসে অতিরিক্ত ১ সেকেন্ড যোগ করা হবে। কাজেই আজ ৩০ জুন রাত ১১ টা ৫৯ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের পর ১ জুলাইয়ের সূচনা হবে না। আরো এক সেকেন্ড অপেক্ষা করতে হবে বিশ্বের সবখানে।
তিনি আরো বলেছিলেন, পৃথিবীর গতি ক্রমশ ধীর হচ্ছে। তাই কো-অর্ডিনেটেড ইউনিভার্সাল টাইম, বা ইউটিসি (UTC) এবং অ্যাটমিক টাইম একই রাখতে ইউটিসি-তে ১ সেকেন্ড যোগ করা হবে।
গ্রহের সঙ্গে গ্রহের আকর্ষণ বলের কারণে ১৮২০ সাল থেকে কোনো সৌর দিন পুরোপুরি ৮৬,৪০০ সেকেন্ড স্থায়ী হয় না। মাত্র ২ মিলিসেকেন্ড করে কম হচ্ছে দিনের সময়। এটাকে খুব বেশি সময় বলে মনে হয় না। কিন্তু এই সামান্য ২ মিলিসেকেন্ড যোগ হয়ে বছর শেষে এক সেকেন্ড সময় পূর্ণ করে। সাধারণত আবহাওয়া, জলবায়ু, ঋতুর পরিবর্তন, সমুদ্রের অবস্থা, ভূগর্ভস্থ পানি এবং পৃথিবীতে বরফের মজুদের নানা পরিবর্তনে দিনের সময়সূচির হের-ফের হয়। সেই সামান্য সময় একসময় ১ সেকেন্ড পূর্ণ করে।
কবে লিপ সেকেন্ড হবে, সেটা কে ঠিক করে?
International Earth Rotation and Reference Systems Service (IERS) লিপ সেকেন্ড নির্ধারণ করে থাকে।
কবে থেকে শুরু হয়েছে লিপ সেকেন্ডের গণনা?
১৯৭২ সাল থেকে লিপ সেকেন্ড গণনা শুরু হয়েছে। ৩০ জুন ২০১৫ তারিখেরটা নিয়ে মোট ২৬ বার হবে লিপ সেকেন্ড পালনের ঘটনা। কিন্তু বিষয়টি যে প্রতি বছরই ঘটবে, তা নয় (যেমন, শেষবার লিপ সেকেন্ড উদযাপিত হয়েছিল ২০১২ সালের ৩০ জুন)। বরং এটি একটি অনিয়মিত ঘটনা এবং আগে থেকে বুঝা যায় না যে, পরবর্তীতে কোন সালে ঘটবে। কোনো একটি নির্দিষ্ট বছরের সাধারণত ছয় মাস পূর্বে IERS সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে উক্ত বছরে সময় অ্যাডজাস্টমেন্টের জন্য সেকেন্ড যোগ করতে হবে, না বিয়োগ!
[…] ইয়ারের মতো আছে লিপ সেকেন্ড-ও! আসলে জানার কোনো শেষ নাই, জানার চেষ্টা […]