ছোটবেলায় সুর মিলিয়ে কত ছড়াই না পড়েছি! “ঐ দেখা যায় তালগাছ”, কিংবা “জ্যাক অ্যান্ড জিল”। কিন্তু নিচের ছড়াটা কার কার মনে আছে? এরকম একটা ছড়া খুব সম্ভবত আমাদের ইংরেজি পাঠ্যবইয়ে ছিলো।
- Thirty days have September,
- April, June, and November.
- Thirty-one most others date,
- While February has twenty-eight.
- Except each Leap Year, one in four,
- When February adds one more.
কোন মাসে কয়টা করে দিন, সেটা মনে রাখানোর একটা পদ্ধতি ছিলো এই ছড়া। আরো একটা জরুরি তথ্য ছিলো এখানে, লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষের তথ্য। প্রত্যেক চার বছর পরপর ফেব্রুয়ারি মাসে যে একদিন করে বেশি থাকে, সেই তথ্য। কিন্তু এই অধিবর্ষ নিয়ে যে আরো অনেক মজার মজার ব্যাপার আছে, তা এই ছড়া থেকে জানা যায় না। ফেব্রুয়ারি মাসে অধিবর্ষ হয়, চার বছর পরপর অধিবর্ষ হয়, এবং চার বছর পরপর যে বছরকে চার দিয়ে নিঃশেষে ভাগ দেওয়া যায়, সেই বছরই অধিবর্ষ হয় – এই তিনটা তথ্য ছাড়া আর কিছুই আমরা ছোটোবেলায় জানিনি। বড় হয়ে নিজের আগ্রহ থেকে জানতে হয়েছে লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ কেন হয়, কিংবা কে চালু করেছিলেন এই উদ্ভট নিয়ম। আরও জেনেছি, প্রতি চার বছর পার হলেই যে অধিবর্ষ হবে, এমনটা নয়। এখানেও আছে ব্যতিক্রম!
সাদা চোখে আমরা বুঝি, এক বছরে ৩৬৫ টা করে দিন থাকে। কিন্তু প্রতি চার বছর পরপর একটা করে অতিরিক্ত দিন ক্যালেন্ডারে যোগ করতে হয়। ফলে ঐ বিশেষ বছরে দিন হয় মোট ৩৬৬ টা। আর এই অতিরিক্ত দিনটি যোগ করা হয় ফেব্রুয়ারি মাসে। কিন্তু বলুন তো, কেন বাকি এগারোটা মাস রেখে ফেব্রুয়ারিকেই বেছে নেওয়া হলো? উত্তর দিতে পারেন, “কারণ ফেব্রুয়ারি মাসে মাত্র ২৮ টা দিন। একদিন যোগ করে ২৯ দিন করলে অন্যান্য মাসের সাথে সামঞ্জস্য বজায় থাকবে। কিন্তু যে মাসে ৩১ দিন, সেখানে বাড়তি একদিন যোগ করে ৩২ দিন করলে অন্যান্য মাসের সাথে সামঞ্জস্য থাকবে না।” এখন আমি যদি বলি, “জানুয়ারি, মার্চ, মে, জুলাই, আগস্ট, অক্টোবর, ডিসেম্বর – এই সাতটা মাস ছাড়া বাকি চারটা মাস (এপ্রিল, জুন, সেপ্টেম্বর, নভেম্বর) তো ত্রিশ দিন করে। কী ক্ষতি হতো, যদি এদের কারও সাথে একদিন যোগ করে ৩১ দিন করা হতো?” কি, ধন্দে পড়ে গেলেন? জ্বি, আমিও পড়েছিলাম। তারপরই ঘেঁটেঘুঁটে বের করলাম ফেব্রুয়ারি মাসের মাহাত্ম্য।
লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ কেন পালন করা হয়?
সূর্যকে সম্পূর্ণভাবে প্রদক্ষিণ করতে, মানে সূর্যের চারপাশে একবার ঘুরে আসতে পৃথিবীর সময় লাগে মোটামুটি ৩৬৫ দিন। ৩৬৫ দিনের এই সময়কালকে বলে “সৌরবছর” [সৌর অর্থ সূর্য]। এই প্রদক্ষিণ করার উপর নির্ভর করে ঋতুচক্র। অর্থাৎ শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা ইত্যাদি ঋতুর আসা-যাওয়া। তাই ৩৬৫ দিনকে মানদণ্ড ধরে আমরা ক্যালেন্ডার তৈরি করি, এবং সেটা অনুসরণ করে থাকি। কিন্তু সমস্যা হলো, “৩৬৫ দিন”-এর হিসেবটা শতভাগ সঠিক নয়। একদম সঠিক করে বলতে গেলে, সূর্যকে সম্পূর্ণরূপে একবার প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে প্রায় ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট এবং ৪৭ সেকেন্ড! অথবা ৩৬৫.২৪২১৯৯ দিন। এভাবে প্রতি বছর প্রায় ছয় ঘণ্টা সময় (বা ০.২৪২১৯৯ দিন) গণনার বাইরে থেকে যায়।
ছয় ঘণ্টা-ছয় ঘণ্টা করে হিসেব করলে চার বছর পর প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা, বা প্রায় এক দিনের সমান হয়। এখন আপনিই বলুন, আমরা যদি সবসময় ৩৬৫ দিন ধরে এক বছর হিসেব করে যাই, তাহলে এক বছরের বাড়তি “৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড” বা চার বছরের বাড়তি “প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা”-এর হিসেবটা কোথায় যাবে? এটা কি একটা গাদ্দারি হয়ে যাবে না প্রকৃতির সাথে?
এই বাড়তি সময়টুকুকে মানিয়ে নেয়ার জন্যেই প্রতি চার বছর পরপর ক্যালেন্ডারে একটা দিন বাড়তি যোগ করা হয়। আসলে বাড়তি বলতে “উড়ে এসে জুড়ে বসা” বুঝায় না। কারণ এই বাড়তি দিনটি ক্যালেন্ডারে থাকার যোগ্যতা অর্জন করেই এসেছে। তাই মোটা দাগে আমরা “চার বছর পর পর” ৩৬৬ দিন হিসেব করে মহানন্দে “লিপ ইয়ার” পালন করি।
কেন বললাম মোটা দাগ? তাহলে চিকন দাগে লিপ ইয়ার ব্যাপারটা কেমন?
চলুন, জেনে আসি।
লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ পালনে কখন ব্যতিক্রম হয়?
সৌরবছর যেহেতু ঠিক ঠিক ৩৬৫ দিনে হয় না, তাই চার বছর পরপর একটা দিন বাড়তি যোগ করে আমরা এড়িয়ে যাওয়া “৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড”-এর সাথে ভারসাম্য বজায় রাখতে চেষ্টা করি। কিন্তু সমস্যার এখানেই শেষ নয়। বলতে পারেন, আরেকটা সমস্যার স্রেফ শুরু!
কেমন?
এই যে আমরা বাড়তি একদিন যোগ করছি প্রতি চার বছর বাদে বাদে, এতে করে প্রতি বছরের ক্যালেন্ডারে “এগারো মিনিট চৌদ্দ সেকেন্ড” করে বাড়তি সময় যোগ হচ্ছে। ফলে জন্ম নিচ্ছে আরেকটা ত্রুটি। অ্যাঁ! কও কী, মুমিন?
জ্বি। কারণ আমরা “৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড”-এর হিসেব করে চার বছর পর ঠিক ঠিক “২৩.২৫২ ঘণ্টা” যোগ করছি না। যোগ করছি ২৪ ঘণ্টা। ফলে কিছুটা সময় বাড়তি যোগ হচ্ছে। এতে করে বাড়তি সময়ের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এই সমস্যার ফলে প্রতি চারশো বছর পরপর আপনি পাবেন বাড়তি তিনটা দিন!
বলুন তো, এই সমস্যা সমাধানের উপায় কী?
হ্যাঁ, অত্যন্ত সহজ হিসেব। ক্যালেন্ডার থেকে বাড়তি তিনটা দিন বাদ দিতে হবে। তাই প্রতি চারশো বছর সময়কালের ভিতরে আমরা তিনটা বছর কোনো ধরনের লিপ ইয়ার পালন করা ছাড়াই বছর পার করে ফেলবো। এতে করে ফেব্রুয়ারি মাসে তিনটা বাড়তি দিন যোগ হবে না। ফলে চারশো বছরের মধ্যে যে বাড়তি তিন দিন আমরা পেয়েছিলাম, সেটা নাকচ হয়ে যাবে।
ঠিক বুঝলাম না!
স্পষ্টভাবে বুঝার জন্য আপনাকে ধারাবাহিক চারটা শতাব্দী কল্পনা করতে হবে। যেমন, আমি এখন কল্পনা করছি ১৮০০ থেকে ২১০০ পর্যন্ত মোট চারটা শতাব্দীকে (১৮০০, ১৯০০, ২০০০ এবং ২১০০)। এখন এই চার শতাব্দীর ভেতরে কল্পনা করতে হবে চারটা Century Year বা শততম বর্ষকে। কারণ অধিবর্ষ বাদ দেওয়ার ঘটনার সাথে শততম বর্ষের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। আপনি যদি অধিবর্ষ এড়িয়ে যেতে চান, তাহলে এই শততম বর্ষ থেকেই নির্দিষ্ট বছরকে বেছে নিতে হবে।
দেখা যাচ্ছে, ১৮০০ থেকে ২১০০ পর্যন্ত শততম বর্ষ হলো চারটা (১৮০০, ১৯০০, ২০০০ এবং ২১০০)। এখন জানতে হবে, এই চারটা শততম বর্ষের মধ্যে বলি হওয়ার উপযুক্ত বছর কোনগুলো! তাহলে চলুন, বছর বেছে নেওয়ার পদ্ধতিটা জেনে নিই।
কোনো নির্দিষ্ট শততম বর্ষে অধিবর্ষ পালন করা হবে কিনা, এই ব্যাপারটা বের করা হয় উক্ত শতাব্দীকে ৪০০ (চারশো) দিয়ে নিঃশেষে ভাগ করে। তাই ১৮০০, ১৯০০, ২০০০ এবং ২১০০-কে ৪০০ দিয়ে ভাগ করে আপনি বের করতে পারেন, কোন কোন শততম বর্ষে অধিবর্ষ পালন করা হবে। আমি দেখতে পাচ্ছি, ১৮০০ কিংবা ১৯০০-কে ৪০০ দিয়ে নিঃশেষে ভাগ করা যাচ্ছে না। তার মানে এই দুই শততম বর্ষে কোনো অধিবর্ষ পালন করা হয়নি। আবার ২০০০-কে ৪০০ দ্বারা নিঃশেষে ভাগ করা যাচ্ছে। তার মানে এটা ছিলো একটা অধিবর্ষ। আবার ২১০০ সংখ্যাটি ৪০০ দ্বারা নিঃশেষে বিভাজ্য নয়। তাই এটাও অধিবর্ষ হবে না। ফলে চারটা শতাব্দীর ভেতর (অর্থাৎ চারশত বছরের মধ্যে) মোট তিনটা বছর আমরা পেলাম অধিবর্ষ ছাড়া। ফলে এই তিন বছরে যে বাড়তি তিন দিন যোগ করার কথা ছিলো, সেটা বাদ হয়ে গেলো। ফলে আমরা মোটামুটি হিসেব মিলাতে পারলাম।
এ কারণেই উপরে বলেছিলাম, প্রতি চার বছর পর পর অধিবর্ষ পালন করার ব্যাপারটা মোটা দাগের। কারণ ২০৯৬ সালে অধিবর্ষ পালন করা হলেও চার বছর পর ২১০০ সালে গিয়ে কিন্তু আপনি অধিবর্ষ পাচ্ছেন না!
কে তৈরি করেছিলেন লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষের এই এলেবেলে নিয়ম?
সৌরবছরের হিসেব ঠিক রাখার জন্য “অধিবর্ষ” ব্যবস্থা চালু করার কৃতিত্ব আজ রোম সম্রাট জুলিয়াস সিজারকে দেওয়া হয়। কিন্তু এই ব্যবস্থাটি সম্পর্কে সবার আগে চিন্তা করেছিলেন মিশরীয় পণ্ডিতেরা। পরে এই চিন্তাটি রোমানরা লুফে নেয়।
জুলিয়াস সিজারের আমলে “রোমান ক্যালেন্ডার” ব্যবহার করা হতো। এই ক্যালেন্ডার ছিলো চান্দ্রবছরের উপর ভিত্তি করে তৈরি। প্রতি মাসে নতুন চন্দ্রচক্র শুরু হতো যে দিনটি দিয়ে, সেই দিনকে Kalendae বা Calends বলা হতো। ওখান থেকেই এসেছে ক্যালেন্ডার শব্দটি। তবে জুলিয়াস সিজার এই ক্যালেন্ডারে অনেক সমস্যা খুঁজে পান। তাই একে ঘষামাজা করে একটা সঠিক ক্যালেন্ডার তৈরি করতে এগিয়ে আসেন।
ঐ সময়ের বিখ্যাত গ্রিক জ্যোতির্বিদ “সসেজেনেস অফ আলেকজান্দ্রিয়া“-কে জুলিয়াস অনুরোধ করেন, একটা উন্নতমানের ক্যালেন্ডার তৈরি করতে, যেটা হবে সৌরবছর ভিত্তিক। সসেজেনেস সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর আবর্তনের হিসেব মিলানোর জন্য প্রতি চার বছর পরপর একটা দিন করে বাড়তি যোগ করার নিয়ম চালু করেন। ফলে প্রচলন ঘটে লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষের। নতুন এই ক্যালেন্ডারটি পরিচিতি পায় “জুলিয়ান ক্যালেন্ডার” হিসেবে। আজ থেকে প্রায় ২০৬২ বছর আগে (খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে) জুলিয়ান ক্যালেন্ডারকে মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। এর ঠিক এক বছর পর অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ৪৫ সাল থেকে একে অনুসরণ করা শুরু হয়।
প্রায় ২০২৬ বছর আগে হঠাৎ ধরা পড়ে, যেসব যাজক ক্যালেন্ডারের দিনক্ষণ হিসেব করছিলেন, তারা প্রতি চার বছরের পরিবর্তে প্রতি তিন বছর পরপর অধিবর্ষ যোগ করে বসেছেন! এই ভুল সংশোধনের জন্য ৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চার বছর পরপর কোনো বাড়তি দিন যোগ করে অধিবর্ষ পালন করা হয়নি। এরপর ১২ খ্রিস্টাব্দ থেকে আবারও প্রতি চার বছর অন্তর ধুমসে অধিবর্ষ পালন করা শুরু হয়। কিন্তু সসেজেনেসের প্রবর্তিত নিয়মে বিশাল একটা ফাঁক রয়ে গিয়েছিলো।
যদি প্রতি চার বছর পরপর একটা দিন বাড়তি যোগ করা হয়, তাহলে প্রতি বছর হয় ৩৬৫.২৫ দিন ১১ মিনিটে। ফলে প্রতি বছরে ০.০০৭৮ দিনের মতো সময় বেশি আসে। এই বাড়তি দিনগুলো যোগ হতে হতে শতাব্দী শেষে দেখা যায়, একদিনের তিন-চতুর্থাংশ বা তারচেয়েও বেশি সময় বাড়তি চলে এসেছে। কিন্তু সুখের কথা, এই ফাঁক তথা বাড়তি সময়ের ঝামেলা সমাধান করতে এগিয়ে এসেছিলেন পোপ দ্বাদশ গ্রেগোরি।
১৫৮২ সালে পোপ গ্রেগোরি হিসেব করে দেখেন, প্রচলিত জুলিয়ান ক্যালেন্ডারের হিসেব অনুসরণ করে করে হাজার বছরে ১৪টা দিন বাড়তি যোগ হয়ে রয়েছে। এই ত্রুটি দূর করার জন্য তিনি চমৎকার একটা উপায় বাতলান। ১৫৮২ সালের অক্টোবর মাস থেকে দশটা দিন হাপিস করে দেন। ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে ঘোষণা করেন, অক্টোবর মাসের চার তারিখের পর পাঁচ তারিখ না হয়ে হবে পনেরো তারিখ! এক মিনিট নীরবতা তাদের জন্য, যাদের জন্মদিন এই দশদিনের মধ্যে ছিলো।
পোপ গ্রেগোরি সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর একবার আবর্তনের সময়কে ৩৬৫.২৪২৫ দিন ২৭ সেকেন্ডে নামিয়ে আনেন। প্রতি চারশো বছরের মধ্যে তিন দিন বাদ দিয়ে সৌরবছরের হিসেব ঠিক রাখার নিয়মও চালু করেন তিনি। কিন্তু এই হিসেবও একশো ভাগ নির্ভুল নয়। প্রতি ৩,২৩৬ বছর পরপর গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডার থেকে একদিন করে বাদ দিতে হবে সৌরবছরের হিসেব মিলানোর জন্য।
কেন ফেব্রুয়ারি মাসেই অতিরিক্ত একটা দিন যোগ করে অধিবর্ষ পালন করা হয়?
রোমান ক্যালেন্ডারে বছর শুরু হতো মার্চে, শেষ হতো ডিসেম্বরে। মোট দশটা মাস ছিলো এতে। পরে যোগ করা হয় Ianuarius (জানুয়ারি) এবং Februarius (ফেব্রুয়ারি)। ফলে বছরের শেষ মাস দাঁড়ালো ফেব্রুয়ারিতে। সেসময় ফেব্রুয়ারি মাস ছিলো ৩০ দিনে। চাঁদের উপর নির্ভর করে তৈরি হতো বলে রোমান ক্যালেন্ডারে প্রায়ই সংশোধনীর দরকার পড়তো। আর এইসব সংশোধনীর বেশিরভাগই শেষ মাস হবার কারণে বেচারা ফেব্রুয়ারির কাঁধে চাপতো।
যখন জুলিয়াস সিজার রোমের মসনদে বসে “জুলিয়ান ক্যালেন্ডার” চালু করলেন, তখনও ফেব্রুয়ারি মাসে ৩০ দিন রাখা হয়েছিলো। যখন তিনি অধিবর্ষ চালু করলেন, প্রাচীন ঐতিহ্য অনুযায়ী বাড়তি দিনটা যোগ করে দিলেন ফেব্রুয়ারির সাথে।
জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে “জুলাই” মাসের নাম রাখা হয়েছিলো সম্রাট জুলিয়াস সিজারের নামে। সেসময় এই মাসে ছিলো ৩১ দিন, এখনো ৩১ দিনই আছে সেটা। কিন্তু তখন আগস্ট মাসে ছিলো ২৯ দিন। জুলিয়াস সিজারের পর যখন সিজার অগাস্টাস রোমের সম্রাট হলেন, তখন আগস্ট মাসে ২৯ দিন দেখে খুব রেগে গেলেন। কী! জুলিয়াসের জুলাই মাসে ৩১ দিন, অথচ আমার আগস্ট মাসে কেবল ২৯ দিন? “মানি না, মানবো না” বলে ঝটপট তিনি আগস্ট মাসে বাড়তি দুইদিন যোগ করে ৩১ দিন করে ফেললেন। অর্থাৎ জুলাইয়ের সমান। আর হিসেব ঠিক রাখার জন্য প্রাচীন ঐতিহ্য অনুযায়ী আবার ফেব্রুয়ারির ওপরেই খড়গহস্ত হলেন। বাদ দিয়ে দিলেন দুটো দিন। হয়ে গেলো আমাদের পরিচিত ২৮ দিনের ফেব্রুয়ারি মাস। কিন্তু অধিবর্ষের কারণে ফেব্রুয়ারি মাসে বাড়তি একদিন যোগ করার ব্যাপারটা নিয়ে কেউ নাড়াচাড়া করলেন না। তাই শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আমরা এই মাসেই লিপ ইয়ার পালন করে চলেছি।
অধিবর্ষে যদি কারও জন্মদিন হয়?
অধিবর্ষে কারও জন্ম হওয়ার সম্ভাবনা কতো? প্রবাবিলিটি বা সম্ভাব্যতার সূত্র মেনে আমরা সেটা বের করতে পারি। যেহেতু প্রতি চার বছর পরপর অধিবর্ষ হচ্ছে, তাই প্রথম তিন বছরে ৩৬৫ দিন এবং চতুর্থ বছরে ৩৬৬ দিন ধরে চার বছরে হয় মোট ১,৪৬১ দিন। এর মধ্যে অধিবর্ষ হলো মাত্র একটি দিন। তাহলে অধিবর্ষে জন্মানোর সম্ভাবনা হলো প্রতি ১,৪৬১ জনের ভেতরে একজনের। এই ব্যক্তিদের বলে “leaplings” বা “leapers” ।
এখন, যেসব বেচারা এইদিনে জন্মেছেন, তাদের বয়স কি চার বছর পরপর বাড়বে? তাহলে তো তারা বেচারা নন, মহাসুখী! কিন্তু তাদের বয়স যদি প্রকৃতির নিয়মে প্রতি বছরই বেড়ে চলে, তাহলে তো তাদের মন একটু হলেও খারাপ হয় প্রতি বছর জন্মদিন আসে না বলে। নাকি?
বিয়ের জন্য পছন্দের পুরুষকে প্রস্তাব করারও মোক্ষম সময় নাকি এই অধিবর্ষ! অন্তত আয়ারল্যান্ডের নারীদের মধ্যে চালু রয়েছে এমনই কুসংস্কার। এই মিথের উপর ভিত্তি করে একটা চলচ্চিত্রও নির্মিত হয়েছে Leap Year নামে।
লিপ ইয়ারের মতো আছে লিপ সেকেন্ড-ও! আসলে জানার কোনো শেষ নাই, জানার চেষ্টা (বৃথা) করুন তাই!
তথ্য সূত্রঃ
১। কিডস জিও.কম
৪। মেট্রো ইউকে
৬। উইকিপিডিয়া (বাংলা), উইকিপিডিয়া (ইংরেজি)
পড়তে পড়তে হাঁপিয়ে গেলাম! অদ্ভুত! লিপ ইয়ার কেন হয় এই এতোটুকুই জানতাম! অথচ আরও এতো জটিল হিসেবে নিকেশ রয়েছে! অসংখ্য ধন্যবাদ 🙂
আপনার মন্তব্যের প্রথম লাইন পড়ে আমি ভেবেছি, বিরক্তি লাগছে দেখে হাঁপিয়ে উঠেছেন। হাহা!
আপনাকেও ধন্যবাদ লেখাটি পড়ার জন্য।
অনেক অজানা বিষয় জানা হলো।