এই যে! হ্যাঁ, আপনাকে বলছি – চকলেট পছন্দ করেন? কে না করে! বান্ধবীকে চকলেট গিফট দেন? কে না দেয়! আর আপনি, চকলেট গিফট না পেলে ভালই লাগে না, তাই না? এহম! এহম! ( না, আর কাশি দিবো না) এবার আসল কথা বলি। যদি শুনেন, এইসব এবং সব ব্র্যান্ডের সব ধরনের (প্রতি ১০০ গ্রাম) চকলেট বারের ভেতরেই কম বেশি ৬০টার মত তেলাপোকার শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থাকে! তাইলে? হা হা হা! মাথা খারাপ হওয়ার কিছু নাই! এটাই স্বাভাবিক। স্বয়ং U.S. Food and Drug Administration (FDA) এর গাইডলাইন অনুযায়ী ১০০ গ্রাম চকলেট বারে সর্বোচ্চ ৬০টি পর্যন্ত পোকার অংশ পাওয়াকে তারা নিরাপদ মনে করে।
অনেকেই যাদের চকলেটে এলার্জি আছে, তাদের আসলে এলার্জি চকলেটে না, এই তেলাপোকায়। এই পোকা থাকার ব্যাপারটা শুধু চকলেট না, এটা ম্যাকারনি, চিজ, পপকর্নের জন্যেও প্রযোজ্য। হ্যাঁ, আকৃতি হয়তো এতোটাই ছোট হয় যে আপনার চোখেই পড়ে না। কিন্তু তার মানে এ-ই না যে, সেটা নেই।
যদি কেউ মনে করেন, আজ থেকে চকলেট বা পপকর্ন খাওয়া ছেড়ে দেবো তাহলে দুঃখভরা মনে তাকে বলতেই হবে, সব কিছু খাওয়াই ছেড়ে দেন। কারণ, তেলাপোকা বা যে কোনো পোকার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছাড়া খাবার খাওয়ার কোনো সুযোগই নেই। যত বেশি আমরা পোকা ছাড়া খাওয়ার চেষ্টা করবো ততবেশি কীটনাশক আমাদের দিতে হবে। আর এটার ভয়াবহতা পোকার চেয়ে হাজারো লাখো গুণে বেশি। সুতরাং, এখন থেকে চকলেট খাওয়ার সময় এটা ভেবে নিলেই হয়, খানিক প্রোটিন সাথে খেয়ে নিচ্ছি, হোক সেটা তেলাপোকা!
তেলাপোকার খামার এর কনসেপ্ট এখন তুমুল লাভের। লাভের পরিমাণ ৬৫০% ও ছাড়িয়ে যায় অনেক সময়। একটা ট্রাই দিয়ে দেখতে পারেন, সিরিয়াসলি। আমার কিন্তু ইচ্ছা আছে। কারণ, সামনের পৃথিবীতে শুদ্ধ প্রোটিনের চাহিদা পূরণে পোকাদের ভূমিকা থাকবে অসীম। তেলাপোকা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা ওয়াংও কিন্তু আমার মতই শখের বশে পোকা জমাতো, আর জমাতে জমাতে এই শখটাই হয়ে গেল পেশা!

ছবি – এল এ টাইমস থেকে
তেলাপোকার খামারের ভেতরটা দেখতে ভিডিওটার প্লে বাটনে প্রেস করতে পারেন। অন্তত তেলাপোকা-ভক্তরা মজা পাবেন নিঃসন্দেহে।
.
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার রোবোটিসিস্টরা তেলাপোকা (ককরোচ) এর গঠন এর উপর ভিত্তি করে ভেলোসিরোচ নামে এমন এক রোবট বানিয়েছেন যেটা আবার বাস্তব তেলাপোকার চেয়েও জোরে দৌড়ায়! সাধারণ বাস্তব তেলাপোকা দৌড়ায় প্রতি সেকেন্ডে ১.৫ মিটার, আর এইটা ২.৭ মিটার প্রতি সেকেন্ডে। ভিডিওটা দেইখা মাথা নষ্ট হওয়ার অবস্থা! সেই স্পিড! দেইখা নিতে পারেন-
.
আরেক অসাধারণ সুন্দর এই তেলাপোকা রোবটকে দেখুন। কী অসাধারণ ভাবে উঁচু জায়গায় উঠছে। ডানে বামে মোড় নিচ্ছে। এমনকি ৯০ ফিট উপর থেকে সরাসরি সিমেন্টের রাস্তায় পড়ে গিয়েও বিন্দুমাত্র না ভেঙে উঠে দাঁড়াচ্ছে। পাইলে এই ইনজিনিয়াররে চুম্মা দিতাম।
.
তেলাপোকার উপরে রাশিয়ায় তৈরি এই রোবট খানাও দেখতে পারেন –
.
যতই বলা হোক, এইসব প্রযুক্তি দিয়ে দুর্যোগে পড়া মানুষদের রক্ষার কথা, কিন্তু কেন যেন এসবে মন সায় দিতে চায় না। একটা যন্ত্র শরীরে বসাতে কী পরিমাণ কষ্টের ভেতর দিয়ে যায় একেকটা তেলাপোকা তা ভাবতেও কষ্ট হয়। তার চেয়ে রোবটই ব্যবহার করা হোক।
তেলাপোকা তো অনেক দেখেছেন। ভেবেছেন কখনো এমন কোনো তেলাপোকার কথা যেটা ডাইনোসরের মল খেয়ে বেঁচেছিলো? হ্যাঁ, ডাইনোসরদের সময়ে তো আর উন্নত টয়লেট ব্যবস্থা ছিল না। এখানে ওখানে নিজেদের কাজ তাদের সারা শেষ হলে সেই কাজগুলো পরিষ্কারের দায়িত্ব পড়তো কার উপর? এখনকার মত মাছি বা গুবরে পোকা ঐসময়টাতে ছিল না। কী ছিলো তাহলে?
ছিল বর্তমানে বিলুপ্ত Blattulidae গোত্রের তেলাপোকা। মেসোজোয়িক যুগে (আজ থেকে প্রায় ২৫ কোটি বছর আগে থেকে প্রায় সাড়ে ৬ কোটি বছর আগ পর্যন্ত বিস্তৃত যুগ), বিশেষ করে এর ট্রায়াসিক আর জুরাসিক পিরিয়ডে সবচেয়ে কমন পোকা ছিল এই গোত্রের Blattulidae তেলাপোকাগুলোই। উল্লেখ করি, বর্তমান যে তেলাপোকা আমরা দেখতে অভ্যস্ত এদের গোত্র Blattidae।

ছবি- লেবাননে পাওয়া ডাইনোসর-মল খাওয়ারত তেলাপোকার ফসিল। Photograph by Peter Vršanský. (ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক)
তবে, ডাইনোসরের মল খাওয়া তেলাপোকারা কিন্তু অভ্যাস ছাড়তে পারেনি এখনো। তাই তো এখনো অনেক তেলাপোকা পাখির মল খেয়ে বেঁচে থাকে। আর কে না জানে, এই পাখিরাই ডাইনোসরের বিবর্তিত বংশধর! বছর গেল, কিন্তু স্বভাব গেল না! তেলাপোকা যে শুধু অন্যের মল এর উপর বেঁচে ছিল তা না। তারা তাদের নিজেদের মলও খুব সুন্দর ভাবে ব্যবহার করতে শিখেছে। কাঠ তেলাপোকা এমন এক প্রজাতি যারা পচন ধরা গাছে বাস করে। আর ক্ষতিকর ছত্রাকের হাত থেকে বাঁচার জন্য তারা নিজেদের মল দিয়ে পুরো বাসস্থান ঢেকে রাখে।
উইদের পূর্বপুরুষদের নিয়ে অনেকদিন দ্বিধায় ছিলেন বিজ্ঞানীরা। পিঁপড়া আর মৌমাছিদের মত এত সামাজিক, কিন্তু ওদের সাথে আবার মিলে না। তবে শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন উই আসলে এক প্রজাতির “সামাজিক তেলাপোকা”!
একাধিক ড্রাগের উপর প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করা ব্যাকটেরিয়াগুলো ঘায়েল করতে বিজ্ঞানীরা যে এন্টিবায়োটিক এর খোঁজ করছেন, তা পেয়েছেন এই তেলাপোকার মস্তিষ্কের ভেতরেই। আর তাও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াবিহীন!! দেখা গেছে, মানুষের কোষের বিন্দুমাত্র ক্ষতি না করে এরা ৯০% পর্যন্ত সফলভাবে এইসব ব্যাকটেরিয়া সামাল দিচ্ছে! E. coli এবং MRSA এর মারাত্মক সংক্রমণ যেগুলো বর্তমান ওষুধগুলোর উপর যথেষ্ট প্রতিরোধ অর্জন করতে পেরেছে, সেসবের চিকিৎসায় সামনে ব্যবহৃত হতে পারে তেলাপোকার মস্তিষ্কে খুঁজে পাওয়া ৯টি অণু।
যে তেলাপোকার দিকে এতদিন নাক কুঁচকে তাকিয়েছেন এবার তার দিকে শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে তাকানোর পালা। পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম তেলাপোকাটা কত সুন্দর হতে পারে? চিন্তার চেয়েও বেশী সুন্দর? হুম্ম হতে পারে!

ছবি – Peter Vršanský and Dušan Chorvát (http://en.wikipedia.org/wiki/File:Glowing-roaches.jpg)
ছবিটা দেখে কারো অসাধারণ WALL-E মুভির সেই অনিন্দ্য সুন্দর EVE এর কথা মনে পড়ছে?
আচ্ছা, এই যে ব্যাট নিয়ে ব্যাটম্যান, স্পাইডার নিয়ে স্পাইডারম্যান, এবার এসেছে এন্ট নিয়ে এন্টম্যান, কিন্তু ককরোচ নিয়ে ককরোচম্যান কি এসেছে? খোঁজ নিয়েছেন কখনো? আমি নিয়েছি এবং পেয়েও গেছি!

ছবি – ককরোচম্যান / তেলাপোকা-মানব
শেষের আগে একটা ঘটনা শেয়ার করছি।
এই যে, একের পর এক রাসায়নিক দিয়ে জীব দমনের চেষ্টা, আমি এর পুরোপুরি বিপক্ষে। আমাদের ক্ষতি করছে বলেই কোনো প্রাণীকে সম্পূর্ণ ভাবে পৃথিবী থেকে বিদেয় করে দেয়ার কোনো মানেই হয় না। আমরা একই জায়গায় আছি, একই আলো বাতাসে বাঁচছি, একই অক্সিজেনে শ্বাস নিচ্ছি (মানে, যাদের অক্সিজেন লাগে), আর এটাই আমাদের সবার আবাস, আমাদের সবার পৃথিবী। এই পৃথিবীর একমাত্র জীব আমরা না, আমরা এই পৃথিবীর কর্তাও না। যেহেতু বিবর্তনের ধারায় এই মুহূর্তে এই পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতায় আমরা আছি তাই আমাদেরই দায়িত্ব যাতে আমাদের কোনো ভুলের কারণে কোনো প্রাণী নিশ্চিহ্ন হয়ে না যায়। তেলাপোকা হোক কিংবা ইঁদুর কিংবা মশা কিংবা বিষাক্ত সাপ বা মাকড়সা কাউকেই গণহারে হত্যার কোনো অধিকার আমরা রাখিনা। বরং কীভাবে একই পরিবেশে সকলে একসাথে বসবাস করতে পারি সেটা বের করাটাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিৎ। প্রয়োজনে জেনেটিক্যাল রিফর্মেশন বা প্রাকৃতিক বিকল্প ব্যবস্থা বা পারস্পারিক যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরির চেষ্টা চালাতে হবে। যাতে কোনো নির্দিষ্ট জীবের সংখ্যা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে বেড়ে না যায় বা কমেও না যায়, সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। এই ইকোসিস্টেমের প্রতিটা জীবই যেন বেঁচে থাকে নিজের মত করে।
Animals United -এর সেই অসাধারণ সংলাপটুকু মনে পড়ে বারবার- “Man is like a snake who eats his own tail to survive. But the earth does not belong to man. He’s only a tiny part of it. Man did not weave the fabric of life. He’s but a thread within it, for we all share the same breath. The rising mists of the lush green forests, the refreshment of the rocky mountain breezes, the perfumed scent of the wind after a cooling shower of rain, the plants, man and we, the animals. What man doesn’t realize is what he does to the land he ultimately does to himself, and when the land is finally destroyed and the animals are either driven out or killed, man will rule over the Earth alone. Then, lost and forlorn, he too will be wiped from the face of the Earth.”
ছোটবেলা থেকে ইচ্ছেমত তেলাপোকা মারতে মারতে কখন যে ওদের প্রেমে পড়ে গেছি নিজেও জানি না। ওদের অনাবিল সুন্দর পুঞ্জাক্ষীর, ওদের বেঁচে থাকার অপরিসীম শক্তির প্রেমে পড়েছি বার বার। নিজের প্রথম রাজনৈতিক গল্পটার নামও দিয়েছিলাম ‘তেলাপোকা’। ক’দিন আগে অফিসের বাথরুমে ঢুকে বড্ড হৃষ্টপুষ্ট ৪-৫টা তেলাপোকা দেখলাম অনেকদিন পর। চেনা আনন্দে ভেসে গেল মন, মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো হাসি। কারণ, অনেক দিন ওদের দেখি না। মারতে মারতে এমন অবস্থা যে, আমার ঘরে আজ তারা বিলুপ্তপ্রায়। ভাবি এমন এক দিনের কথা, যেদিন আজকের লেখাটার কথাও বলতে পারবো ওদের, বলতে পারবো নিঃস্বার্থ ভালবাসার কথাগুলো।
হিংসা আর ঘৃণা আর যুদ্ধে ভরা এই পৃথিবীতে এখনো যেখানে ‘মনুষ্যত্ব’-ই দাঁড় করাতে পারলাম না, সেখানে ‘জীবত্ব’ প্রতিষ্ঠা করার এই চিন্তা হয়তো অদ্ভুত শোনাবে। কিন্তু চেষ্টা করতে দোষ কোথায়? এই শতাব্দীটা যে জীববিজ্ঞানের শতাব্দী, সেটা তো আগেই বলা হয়েছে। দেখাই যাক, আমরা জীববিজ্ঞানকে কতদূর নিয়ে যেতে পারি, তবে তার আগে মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। শুধু তেলাপোকার নয় আসুন প্রেমে পড়ি সকল জীবের। সকল জীব মিলে একসাথে গড়ি ভালবাসার এক পৃথিবী।
অন্যান্য তথ্যসূত্রঃ
এই প্রাণীটার প্রতি আমার তীব্র অভক্তি আছে। বিশেষতঃ যেগুলো ওড়া শুরু করে। এই গুষ্টির কোন একটারে আশেপাশে দেখলে আমি আর অন্য কোন দিকে মনযোগ দিতে পারি না। সেটাকে না মারা পর্যন্ত কিংবা অন্ততঃ ঘর থেকে না তাড়ানো পর্যন্ত স্বস্তি পাই না। বোধহয় ফোবিয়া, তাই না? সেজন্যই খুব আগ্রহ নিয়ে লেখাটা পড়লাম; যদি আমার এই রোগের কিছুটা উপশম হয়। কোন লাভ হয়নি। লেখা খুবই সুন্দর হয়েছে। কিন্তু আমার কোন উন্নতি হল না। নিরীহ প্রাণীর প্রতি ঘেন্নাবোধ কিংবা ভীতি নিয়ে একটু লিখবেন প্লিজ। বড় বিব্রত হই মাঝে মাঝে। একে মাঝবয়েসী তার ওপর পুরুষ মানুষ। তেলাপোকার সামনে পড়লে আমার হঠাৎ ছিটকে সরে যাওয়া… আরো পড়ুন
এই বিষয়েও সামনে লেখার ইচ্ছে থাকলো।
আপাতত এই লিংকে দেখতে পারেন, বেশ ডিটেইল আছে।
http://www.anxietycare.org.uk/docs/insect.asp
আর ইয়াহু আন্সারের প্রথম উত্তরটিও মজার লেগেছে। চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
https://uk.answers.yahoo.com/question/index?qid=20100705212700AAjyi6X
শেষের কথা গুলো ভালো ছিলো। তবে চকলেটে এটা কীভাবে ব্যবহার করা হয়, সেটা বলেননি।
প্রেমে পড়ে গেছি!!!!!!
WALL-E সিনেমা তে ওই রমণী তেলাপোকা ছিল! আগে ওভাবে একদমি ভেবে দেখিনি। তেলাপোকার প্রেমেই পোড়েছিলাম তাহলে, অ্যা o.O যাইহোক “তাইলে আর টেক্যা টুকা খরচ কইরা চিপস চকলেট খামু না। ডাইরেক্ট তেলাপূকা ধইরা খায়ালামু”