গত পর্বে ফেইথ হিলিং পর্যন্ত অপবিজ্ঞান দেখেছি আমরা- ফেইথ হিলিং নিয়ে আরো জানতে জন অলিভারের লাস্ট উইক টুনাইটের এই পর্বটি দেখতে পারেন।
আজ আরো কিছু অপবিজ্ঞান জানবো আমরা। অপবিজ্ঞান সম্পর্কিত আমার পড়া সেরা বই- The Demon Haunted World: Science as a Candle in the Dark সবাইকে পড়তে বলবো।
Psychics (সাইকিক)
সাইকিকদের দাবি – তারা মানুষের চিন্তা পড়তে পারেন। অনেক ক্ষেত্রে তারা তাদের মনের শক্তি দিয়ে পদার্থের পরিবর্তন ঘটাতে পারেন। ১৯৮০র দশকে ইসরাইলি ইউরি গ্যালার ছিলেন লাইফ অফ দ্যা পার্টি, টক অফ দ্যা টাউন সাইকিক। তিনি “মনের শক্তি” দিয়ে স্টিলের চামচ বাঁকাতে পারতেন, ১২টি পাত্রের মাঝে একটি পাত্রে থাকা পানির অস্তিত্ব বের করতে পারতেন- তবে তা শুধু তার নিজের সেট আপ করা মঞ্চে!
প্ল্যান নিয়ে হাজির হলেন জেমস “দ্যা এমেজিং” রান্ডি।
জনি কারসনের টুনাইট শোর অতিথি হয়ে আসেন গ্যালার- রান্ডীর পরামর্শে কারসন কিছু পরীক্ষার আয়োজন করেন গ্যালারের অজান্তে। আশানুরূপ- গ্যালার পারলেন না, নিজের মঞ্চে হাজার বার করা কাজটা কারসনের মঞ্চে করতে পারলেন না! সন্দেহজনক, তাই না? সেগানও তাঁর জীবন উৎসর্গ করেন এসব অপবিজ্ঞানে বিশ্বাস করা মানুষের সাহায্য করতে- কিন্তু মানুষ বোকা হতেই কেন যেন ভালোবাসে।
কোয়ান্টাম প্রতিকার-
কোয়ান্টাম প্রতিকার বা কোয়ান্টাম হিলিং কিছুটা ভারতীয় “চক্র”র সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যেটা স্বাভাবিক- কারণ এটা ভারতীয় একজনের মাথা থেকে বের হয়েছে। এই মতবাদের মূল কথা হচ্ছে চিন্তা শক্তি দিয়ে মহাবিশ্বের পরিবর্তন ঘটানো যায়। এর সাথে বেদান্তিক আয়ুর্বেদের যোগসাজশ আছে। দিপক চোপড়া কোয়ান্টাম হিলিংয়ের মুখপাত্র। তাঁর মতে মহাবিশ্ব সচেতন একটি সত্তা। আর মানুষ তার চিন্তা দিয়ে মহাবিশ্বের পরিবর্তন ঘটাতে পারে।
পদার্থবিদ্যার কোয়ান্টামের সাথে এর কোনো যোগসাজশ নেই বলে স্বীকার করেছেন দিপক চোপড়া, রিচার্ড ডকিন্সের কাছে। কিছুটা মেনসোর এই কমিকসের মতো। (অনুবাদ করা)
টুইটারে এক সন্দেহবাদী বলেন- “যদি আমার চিন্তা মহাবিশ্বকে প্রভাবিত করে আমার ইচ্ছা পূরণ করতে পারতো তবে দিপক চোপড়া এতোদিনে চুপ হয়ে যাওয়ার কথা।”
কোয়ান্টাম হিলিং আরো কিছু অপবিজ্ঞানের জন্ম দিয়েছে, যা একে ভালো মাপের অপবিজ্ঞান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। “ল’ অফ এট্রাকশন” এদের মধ্যে একটি। এর মূল কথা হচ্ছে- “যদি জোর দিয়ে কোনো কিছু চান তবে মহাবিশ্ব আপনার ইচ্ছাপূরণ করে।”
ওম শান্তি ওম, সেই ডায়লগ, মনে আছে? হা হা হা!
হোমিওপ্যাথি
“বিকল্প ঔষধের” কথা হবে আর হোমিওপ্যাথির নাম আসবে না, তা কিভাবে হয়? হোমিওপ্যাথি হ্যানিম্যানের আবিষ্কার, এবং সম্ভবত সর্বোচ্চ প্রচলিত “বিকল্প মেডিসিন”।
রোগ হচ্ছে শরীরের প্রতিকার ক্ষমতার কমে যাওয়া। হ্যানিম্যান মনে করেন কিছু “স্টিম্যুলাস” ব্যবহার করে সেটার প্রতিকার করা সম্ভব। সেই স্টিম্যুলাস কিভাবে পাওয়া যাবে? সহজ তো! সুস্থ মানুষের শরীরে যে দ্রব্য দিলে কোনো বিশেষ রোগের লক্ষণ দেখা যায়, সে দ্রব্য ব্যবহার করে অসুস্থ মানুষের সেই রোগেরই চিকিৎসা করা সম্ভব। না, ভুল পড়েননি, আমিও গুলিয়ে ফেলিনি, ঠিকই পড়েছেন!
তো, স্টিম্যুলাস পাওয়া যাওয়ার পর সেই দ্রব্যকে এ্যালকোহল বা পানিতে কয়েক দফা দ্রবীভূত করে সেবন করা হয়। পরীক্ষা করে দেখা গেছে দ্রবনে বা ঔষধে স্টিম্যুলাসের অস্তিত্ব শূন্যের কাছাকাছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, অস্ট্রেলিয়া- ব্রিটেন- সুইজারল্যান্ডের মেডিকেল এন্ড হেলথ রিসার্চ কাউন্সিল হোমিওপ্যাথির জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন। মেনসোর আরেকটি কমিকস দেখুন-
হোমিওপ্যাথিকে খুব বেশি হলে প্লাসিবো-র সম্মান দেয়া যায়! Placebo হচ্ছে এমন কিছু যেটা রোগী ঠিকই ওষুধ মনে করে খাচ্ছে, আসলে এর ভেতরে কিছু নেই। এর কার্যকারিতা মানসিক পর্যায়ে শুধু, অনেকটা রাশিচক্রের মতো।
আকুপাংচার
Speaking of placebos- আপনার শরীরের বিভিন্ন “প্রেসার পয়েন্টে” সুঁই ঢুকিয়ে চিকিৎসা করার ব্যাপারে আপনার কি মতামত? বিশেষ করে যদি প্রক্রিয়াটির কোনো বৈজ্ঞানিক গ্রহণযোগ্যতা না থাকে?
জ্বি, প্রাচীন চীনা মতবাদ- জীবনদায়ী শক্তি “চী” এর অস্তিত্বের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করে গড়ে ওঠা বিকল্প চিকিৎসাব্যবস্থা হচ্ছে আকুপাংচার। অবশ্যই উল্লেখ্য, এটার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নাই। আকুপাংচারের উপর হাজারের উপর পরীক্ষা হয়েছে, এবং সিংহভাগ পরীক্ষা প্রমাণ করেছে আকুপাংচার কাজ করে না। আবারো মেনসো-
বিজ্ঞানের সবচেয়ে ভালো দিকটা হচ্ছে এটা স্বচ্ছ। বিজ্ঞান হচ্ছে সার্বজনীন কাব্যের মত যা একটু প্রয়াসেই বোঝা যায়। বিজ্ঞান সবকিছুর সুন্দরতম আর সহজতম ব্যাখা দেয়, আমাদের বানোয়াট ব্যাখার চেয়ে হাজার গুণ ভালো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা। তবে বৈজ্ঞানিক ধারণার অপব্যবহারও কম নয়। সচেতন থাকলেই বোকা বনবেন না, মনে রাখবেন- বিজ্ঞান পরীক্ষিত সত্যের সমষ্টি, বিশ্বাসের কোনো স্থান বিজ্ঞানে নাই।
আজ এ পর্যন্তই। পরবর্তীতে আবারো হাজির হবো আরো কিছু অপবিজ্ঞান নিয়ে। কারণ অপবিজ্ঞান হচ্ছে ব্যাঙের ছাতার মতো, মানুষের বিশ্বাস করার প্রবণতার উপর নির্ভর করে জন্মাতে থাকবেই।
বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ক্রায়োসার্জারীর পরিচিতি পড়ানো হচ্ছে। এই চিকিৎসা পদ্ধতিটা কতটুকু কার্যকর?
Cryosurgery হচ্ছে ঠান্ডা ব্যবহার করে শরীরের অনাকাঙ্ক্ষিত টিস্যু নষ্ট করে ফেলা। এটির বৈজ্ঞানিক গ্রহণযোগ্যতা আছে। সার্জিক্যাল এই প্রসেসের নাম cryoablation।
এখানে দেখতে পারেন- https://skeptoid.com/blog/2014/11/30/cryotherapy-what-works-and-what-doesnt/
ধন্যবাদ।
লেখা ভাল লেগেছে। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। বিভিন্ন পাথর ব্যবহার নিয়ে কিছু লিখতে পারেন যদি সম্ভব হয়। দু’একদিন আগেই একজনের সাথে এই বিষয়ে তর্ক করছিলাম!
ধন্যবাদ। সাথেই থাকুন, হাত দিয়েছি। 🙂
আত্মা র সাথে বাহ্যিক সত্তার একটা গভীর যোগসূত্র আছে বলে আমি মনে করি।
বিজ্ঞান এখানে হার্ডওয়্যার এর মত কাজ করে।
I don’t see the relevance here. Soul is a metaphysical concept, as far as I am concerned. Thank you.
হোমিওপ্যাথি নিয়ে সাইটে আরো বিস্তারিত লেখা আসা দরকার।
লিখে ফ্যালো পড়াশুনা করে।
দিলাম একটা। দেখবেন।