আমাদের সমাজ আমাদের শিখিয়েছে, ভোগ বিলাসিতার জীবনের পিছে না ছুটতে, শিখিয়েছে, অর্থই অনর্থের মূল, শিখিয়েছে কোনোমতে দিন গুজরান করে দুইটা ডালভাত খেয়ে জীবন পার করাটাই সুখ। কিন্তু বিজ্ঞান আমাদের পুর্বপুরুষদের এই বাণীকে পুরা উল্টিয়ে দিয়ে বলছে একেবারে ভিন্ন কথা। কী? চলুন স্টার্ট করি।
[ অঃ বঃ মানে হলো অনুবাদকের অতিরিক্ত বক্তব্য]
পরিবেশগত ধকল (stress), নিম্নমুখী জীবনব্যবস্থা ও কষ্টদায়ক ঘটনার ফলাফল হিসেবে ডিএনএতে ক্রমাগত পরিবর্তনের দরুণ; আমাদের জিনগত ত্রুটি তৈরি হতে পারে। এই যে ডিএনএতে পরিবর্তন একে বলা হয়, এপিজেনেটিক চেঞ্জ। বিজ্ঞানীরা এতদিন ধরে ভেবে এসেছেন; এই এপিজেনেটিক চেঞ্জ শুক্রাণু বা ডিম্বাণুর মাধ্যমে কখনোই পরিবাহিত হয় না। কিন্তু ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বলছে এই পরিবর্তন বংশপরম্পরায় আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে প্রবাহিত হতে পারে।
পুর্বের গবেষণা থেকে দেখা গিয়েছে, দুর্ভিক্ষের মত বিপর্যয়কর ঘটনা; ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে, তাদের মধ্যে স্থূলতা ও ডায়াবেটিসের মত নানান প্রবৃত্তি পরবর্তীতে পরিলক্ষিত হয়। (অঃবঃ অর্থাৎ পিতামাতা যদি দুর্ভিক্ষ কবলিত দেশের মধ্যে থাকে, তবে তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের এই ধরনের রোগে আক্রান্ত হবার আশঙ্কা তৈরি হয়)। যাই হোক, এবারই প্রথম এই কাহিনীর জৈবনিক ক্রিয়াকৌশল বোঝা গেছে।
যদিও একই জিন পিতামাতা থেকে; প্রজন্মে থেকে প্রজন্মে পরিবাহিত হয়; কিন্তু বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন, ক্রমাগত পারিপার্শ্বিক অবস্থা, দুর্বিষহ জীবন ও পীড়াদায়ক ঘটনার জন্য এই জিনে ক্রমাগত পরিবর্তন ঘটে; যার ফলে এই পরিবর্তনগুলো পরবর্তী প্রজন্মতে নানা ধরনের রোগের সুচনা করবে; তারা বয়সের আগে বুড়িয়ে যাবে ও তাদের অকাল মৃত্যু হবে।
যাইহোক, পূর্বে এটা বিশ্বাস করা হতো যে, এই ত্রুটিগুলো ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে প্রবাহিত হবে না। কিন্তু ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ডিএনএর এমন কিছু স্থান; (যা মানসিক বৈকল্য ও স্থুলতার সাথে সম্পৃক্ত) খুঁজে পেয়েছেন, যেখানের ত্রুটিগুলো অপসারিত হয় না, বরং প্রজন্মে থেকে প্রজন্মে তার অস্তিত্ব থাকে।।
প্রকৃতপক্ষে আমাদের জেনেটিক কোডের ৫ শতাংশে আমাদের অতীতের ঘটনার সাক্ষ্য-চিহ্ন থাকে। এর অর্থ হলো আমরা যদি দরিদ্র জীবনযাপন করি; স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ঔদাসীন্য প্রদর্শন করি; বা মানসিক পীড়ার মধ্য দিয়ে যাই; তাহলে আমাদের যে মানসিক সমস্যা গুলো তৈরী হবে; তা আমাদের সন্তান-সন্ততি এবং আমাদের নাতি- নাতনীর মধ্যে বিধ্বংসী উত্তরাধিকার হিসেবে পরিবাহিত হতে পারে।
ক্যাম্ব্রিজ ইউনির ‘ওয়েলকাম ট্রাস্ট/ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে গার্ডেন ইন্সটিউটের’ অধ্যাপক আজিম সুরানি বলেছেন,
দ্বিতীয় এবং নবম সপ্তাহের মধ্যে, ভ্রূণের ক্রমবিকাশের সময় পিতামাতার জেনেটিক কোডে যে পরিবর্তন হয়; তা মুছে ফেলা হয় এবং নতুন করে পুনঃলিখিত হয়। [অঃবঃ এ থেকে আমাদের মনে হতে পারে, আরে সমস্যা কী? আমার পিতা-মাতার জেনেটিক কোডে যা ইচ্ছা পরিবর্তন হোক না কেন, আমি যখন ভ্রুণ ছিলাম, তখন তো এই জেনেটিক কোড নতুন করে পুনঃলিখিত হয়েছে, অর্থাৎ বাবা মা কষ্টের সময়, ডিএনএ তে যেসব ত্রুটি সৃষ্টি হয়েছে, তা তো আমার মধ্যে আসে নাই। কারণ তা নতুন ভাবে লিখা। তাহলে তো আমার কোনো সমস্যাই হবে না। আমার জেনেটিক কোড তো একদম ফ্রেশপাত্তি, কিন্তু তা না।]
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভ্রুণ তৈরির সময় পিতামাতার পরিবর্তিত জেনেটিক কোড মুছে ফেলার যে প্রক্রিয়া হয়, সে প্রক্রিয়ায় সকল জেনেটিক কোড মুছে যায় না। মোট ডিএনএর ৫ শতাংশ এই রিপ্রোগ্রামিং এ বাধা দেয়।
জিনোমের এই যে ঘাড়ত্যাড়া অংশটা এমন কিছু জিনকে ধারণ করে; যা সুনির্দিষ্টভাবে নিউরনের কোষে সক্রিয়। গবেষকরা বিশ্বাস করেন, এটা ক্রমবিকাশের সময় গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে।
এই জিনগুলো স্কিৎজোফ্রেনিয়া, বিপাকীয় জটিলতা ও স্থূলতার মত কন্ডিশনের সাথে সংযুক্ত।
এই গবেষণার প্রবন্ধকার পিএইচডি স্টুডেন্ট ওয়ালফ্রেড ট্যাং বলেছেন,
আমাদের গবেষণা থেকে যে বিষয়টা দেখা যাচ্ছে, এই পরিবর্তিত তথ্য শুধুমাত্র যে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে অতিবাহিত হবে; তা নয়। বরং তা অতিবাহিত হবে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে।
এই গবেষণা থেকেই এটাই বলা যায় যে,
আমাদের শুধু পিতামাতা থেকে সুস্থ ডিএনএ পেলেই চলবে না। বরং নিজেদের প্রজন্মের জন্য নিজেদের ডিএনএকেই সুস্থ রাখতে হবে।
জার্নাল রেফারেন্স 1) http://www.cell.com/abstract/S0092-8674%2815%2900564-4
2) যারা বিজ্ঞান ভিত্তিক পেইজ থেকে পড়তে চান https://www.sciencealert.com/new-evidence-suggests-you-can-pass-poor-lifestyle-choices-onto-future-generations
3) আর যারা দুর্ভিক্ষে মেটাবলিক ডিসঅর্ডার দেখা যায় কিনা জানতে চান
https://www.upi.com/Health_News/2016/12/12/Study-shows-metabolic-effects-of-famine-on-future-generations/4921481566472/
টেলিগ্রাফের রেফারেন্স https://www.telegraph.co.uk/news/science/science-news/11652003/DNA-carries-traces-of-past-events-meaning-poor-lifestyle-can-affect-future-generations.html